কুরবানী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল

১. যাকাতের নিছাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়াঃ

কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য শর্ত হলো, যাকাতের নিছাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া । তবে এই সম্পদ এক বৎসর অতিবাহিত হওয়ার প্রয়োজন নেই বরং ১০ই জিলহজ্জের ফজর হতে ১২ই জিলহজ্জের সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যাকাতের নিছাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেই তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব ।


২. কুরবানী নিজের ও পরিবারের সবার পক্ষ থেকে করাঃ

হযরত আবু হুরায়রা ও আয়িশা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) কুরবানীর ইচ্ছা করলে দু'টি মোটা তাজা, মাংসে ভরা, শিংযুক্ত, ধূসর বর্ণের মেষ ক্রয় করতেন । অতঃপর দুটির একটি নিজ উম্মতের জন্য যারা আল্লাহর একত্বের সাক্ষ্য দেয় এবং তাঁর নবুওয়াতের সাক্ষ্য দেয় তাদের পক্ষ হতে এবং অপরটি মুহাম্মদ (সা) ও তাঁর পরিবারের সবার পক্ষ থেকে কুরবানী করতেন । -(ইবনে মাজাহঃ ৩১২২)

হযরত আয়িশা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বিদায় হজ্জ্বে তাঁর পরিবারের সবার পক্ষ থেকে একটিমাত্র (দুম্বা/গরু) কুরবানী করেছেন । -(ইবনে মাজাহঃ ৩১৩৫)


৩. ভাগেও কুরবানী করা যায়ঃ

নাবী (সা) বলেন, একটি গরু সাতজনের পক্ষ হতে এবং একটি উটও সাতজনের পক্ষ হতে কুরবানী করা যেতে পারে । -(আবু দাউদঃ ২৮০৮)

তবে এটা ছিলো দ্বিতীয় অবকাশ বা সুযোগ । কিন্তু কারো হাতে প্রথম সুযোগ থাকতে দ্বিতীয় সুযোগ গ্রহণ করা উচিত নয় । অর্থাৎ সামর্থ্য থাকলে ভাগে কুরবানী করার চেয়ে অন্তত একটি ছাগল কিংবা একটি মেষ একাই কুরবানী করা উত্তম । আর একটি কুরবানীই নিজের ও পরিবারের সবার পক্ষ থেকে করা যথেষ্ট ।


৪. খোঁড়া, অন্ধ, রুগ্ন পশু কুরবানী করা যাবে নাঃ

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, খোঁড়া জন্তু যার খোঁড়ামী সুস্পষ্ট, অন্ধ পশু যার অন্ধত্ব সুস্পষ্ট, রুগ্ন জন্তু যার রোগ সুস্পষ্ট এবং ক্ষীণকায় পশু যার হাঁড়ের মজ্জা পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে তা কুরবানী করা যাবে না । -(তিরমিযীঃ ১৪৩৭)


৫. নির্ধারিত বয়সের নিচে পশু কুরবানী করা যাবে নাঃ

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, তোমরা (কুরবানীর জন্য) মুসিন্না (অর্থাৎ পাঁচ বছরের উট, দুই বছরের গরু এবং এক বছরের ছাগল বা মেষ) ছাড়া জবেহ করবে না । কিন্তু তা সংগ্রহ করা তোমাদের জন্য কষ্টসাধ্য হলে ছয় মাস বয়সের মেষ বা ভেড়া জবেহ করতে পারো । -(মুসলিমঃ ৪৯২৬)

৬. ঈদের সালাতের পর কুরবানী করাঃ

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, যে লোক ঈদের সালাতের পূর্বে কুরবানীর পশু জবেহ করলো, সে নিজের জন্যই জবেহ করলো । আর যে ব্যক্তি সালাতের পর জবেহ করলো, তার কুরবানীই পূর্ণ হলো এবং সে মুসলমানের রিতিনীতি অনুযায়ী কাজ করলো । -(বুখারীঃ ৫১৩৯)


□□□ এছাড়া আরো কিছু বিষয় জেনে রাখা উত্তমঃ


● ধারালো ছুরি দিয়ে দ্রুত জবেহ করা ।

● কুরবানীর পশু জবেহ করার সময় কুরবানীদাতা সংশ্লিষ্ট সবাই উপস্থিত থাকা ।

● কুরবানীর সাথে আক্বীক্বা না করা ।

● জিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর থেকে ১০ই জিলহজ্জ তারিখে কুরবানী করা পর্যন্ত কুরবানী দাতা শরীরে কোন প্রকার ক্ষৌরকর্ম না করে, চুল ও নখ না কাটা ।

● জিলহজ্জের নয় তারিখ ফজর থেকে তের তারিখের আছ্বর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরয সালাতের পর তাকবীর (আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর কাবীরান) পাঠ করা ।

● কুরবানীর দিন ঈদের সালাতের পূর্ব পর্যন্ত কিছু না খাওয়া ।

● সম্ভব হলে নিজ হাতে কুরবানী করা ।

● হালাল উপার্জন থেকে কুরবানী করা ।


Post a Comment

Previous Post Next Post