মুসলিমদের বিজয় কেমন হবে ?

আলহামদুলিল্লাহ, আস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসূলিল্লাহ।


প্রকৃতপক্ষে 'বিজয়' শব্দটার মধ্যে এমন একটা উপলব্ধি রয়েছে, যা অন্য কিছুর মধ্যে নেই। এই যেমন নতুন হাটতে শেখা একটা বাচ্চা দৌড়ে গিয়ে তার মা'কে ধরতে পারার মধ্যে যে বিজয়ের আনন্দ পায়, তা কেবল সেই বুঝে। আবার মৃত্যুর পর জান্নাত পাওয়ার আনন্দ কেবল ঐ বিজয়ী (জান্নাতী) ব্যক্তিই বুঝবে। তবে বিজয় শব্দটা ইতিবাচক হলেও প্রায় সময় নেতিবাচক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এই যেমন একজন চুর সফলভাবে চুরি সম্পন্ন করাকেও বিজয় মনে করে। তবে নেতিবাচক বিজয় কেবল পৃথিবীতেই সম্ভব। কারণ পরকালে কোন জাহান্নামী ব্যক্তি নিজেকে বিজয়ী বলে দাবি তো করবেই না বরং হতাশায় আচ্ছন্ন হবে।

আর মুসলিম সম্প্রদায়ের বিজয়টা খুব সহজ। কারণ এর রূপ রেখা স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা নির্ধারণ করে দিয়েছেন এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। তাই এই সহজ বিজয়টা কেন কঠিন করে ফেলবো? তাহলে আসুন সংক্ষেপে জেনে নেই মুসলিমদের বিজয় মূহর্তগুলো কেমন হতে পারে-


● কে হবে নেতা ?

"মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তাঁকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে এক সুন্দর ও সুদৃঢ় জীবন ব্যবস্থাসহ সুন্দর ও সরল পথের সন্ধান দিয়ে। তিনি সৃষ্টিকুলের সেরা ও মুত্তাকীনদের মহান নেতা। আর তাঁর আগমনের পর জান্নাতে যাওয়ার একমাত্র পথটি কেবল তাঁর দেখানো পথ । অন্য কোন পথ আর উন্মুক্ত নেই।" - (যাদুল মা'আদ)

[সুতরাং মুসলিমদের বিজয়ের নেতৃত্ব দিবে সেই ব্যক্তিই, যে রাসূলুল্লাহ (সা:) এর দেখানো পথকেই সকল সমস্যা সমাধানের জন্য বেছে নিবে। যেখানে থাকবে না নিজের স্বার্থ রক্ষা কিংবা ক্ষমতা লাভের মিশ্রিত পন্থা]


● কারা হবে ইসলামী নেতার সঙ্গী ?

আল্লাহর উত্তম সৃষ্টি 'মানবকুল' দু'ভাগে বিভক্ত। একদল সৎ ও সাধু, অপরটি অসৎ ও কুলষিত। আল্লাহ তা'আলার সাহায্য কেবল সৎ ও সাধু ব্যক্তির উপর নিপতিত হয়। আর এ দৃষ্টিকোণ থেকেই মানুষের মধ্যে কে ভাগ্যবান এবং কে হতভাগ্য তা চিনতে পারা যায়। যে ব্যক্তি আল্লাহর বিচারে ভাগ্যবান, সে ব্যক্তি সবসময়ই নিজেকে পবিত্রতার দিকে রাখবে। সে আল্লাহর ইচ্ছা ও সন্তুষ্টিকে নিজের প্রবৃত্তির উপর স্থান দিবে। ঠিক একইভাবে তাঁর বন্ধু-বান্ধব ও সঙ্গী-সাথীরাও হবে সৎ মানুষ। - (যাদুল মা'আদ)

[একজন আদর্শ ইসলামী নেতার নেতৃত্ব মেনে নেওয়ার সৌভাগ্য কেবল আল্লাহর পক্ষ হতে বাছাইকৃত লোকদেরই হয় । যেমনটি হয়েছিল সাহাবীগণের (রা:)। আর হতভাগ্যদের নেতৃত্বের দায়িত্ব শয়তানের হাতে বর্তায়।]


● মক্কার সেই দিনগুলো:

মক্কার মুশরিকরা ইসলামের প্রচার ও প্রসারকে থামিয়ে দিতে সেই শুরু থেকেই নানা পরিকল্পনা করে আসছিলো। কখনো রাসূল (সা:) কে যাদুকর, কখনো পাগল অপবাদ দিতো এবং নানারকম ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করতো। কিন্তু তাঁরা যখন এটা বুঝতে পারলেন যে, তাঁদের ঐ কৌশল ও ব্যবস্থাপনা ইসলামী আন্দোলনের ব্যাপ্তিলাভের বিরুদ্ধে তেমন কার্যকর হচ্ছে না, তখন তাঁরা সকলে পুনরায় এক আলোচনা চক্রে মিলিত হন এবং মুসলিমদের শাস্তি প্রদান ও তাদেরকে ইসলাম থেকে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রত্যেক গোত্রপতি তার গোত্রের ইসলাম গ্রহণকারীদের শাস্তি প্রদান করা শুরু করে দিলো।

আবু জাহল যখন কোন সম্ভ্রান্ত বা শক্তিধর ব্যক্তির মুসলিম হওয়ার কথা শুনত তখন সে তাকে ন্যায়-অন্যায় বলে গালি গালাজ করত, অপমান-অপদস্থ করতো এবং ধন-সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি করবে বলে ভয় দেখাতো। জ্ঞাতী গোষ্ঠীর যদি কোন দুর্বল ব্যক্তি মুসলিম হতো, তাহলে তাকে সে অত্যন্ত নির্দয়ভাবে মারধোর করত এবং মারধোর করার জন্য অন্যদের প্ররণচিত করত।

উসমান বিন আফ্ফানের চাচা তাঁকে খেজুর পাতার চাটাইয়ের মধ্যে জড়িয়ে রেখে আগুন লাগিয়ে ধোঁয়া দিতো।

মুস'আব বিন উমায়ের (রা) এর মা যখন তাঁর (ছেলের) ইসলাম গ্রহণের কথা শুনতে পেল তখন সে তার খানা-পিনা (আহারাদি) বন্ধ করে দিলো এবং তাঁকে বাড়ি থেকে বেড় করে দিলো।

বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু, উমাইয়া বিন খালাফ জুমাহীর ক্রীতদাস ছিলেন। তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় উমাইয়া তাঁর গলায় দড়ি বেঁধে ছোকরাদের হাতে ধরিয়ে দিতো। তারা সেই দড়ি ধরে তাঁকে পথে প্রান্তের টেনে হিঁচড়ে নিয়ে বেড়াতো। তাঁকে খানা-পিনা না দিয়ে ক্ষুধার্থ ও পিপাসার্ত রাখতো । এসবের চেয়েও অনেক বেশি কঠিন ও কষ্টকর হতো তখন, যখন দুপুর বেলা প্রখর রৌদ্রে আগুনের মতো উত্তপ্ত কংকর ও বালির মধ্যে শুইয়ে দিয়ে বুকের উপর পাথর চাপা দেয়া হতো। - (আর-রাহীকুল মাখতুম)

[ইসলামের শত্রুরা মুসলিমদের সিংহের চেয়েও বেশি ভয় পায়। তাই সুযোগ পেলেই তারা মুসলিমের উপর চেপে বসে । কিন্তু এই আদর্শের লড়াই মুসলিমরা কখনোই ধৈর্য্যহারা হয় না। কারণ তারা জানে চুড়ান্ত বিজয় তাদেরই এবং এর পুরস্কার স্বয়ং আল্লাহ দিবেন। ]



● মদীনার সেই দিনগুলো:

অশান্তি এবং উপহাসের লক্ষ্য বস্তু থেকে নিষ্কৃতিলাভই শুধু হিজরতের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিলো না। বরং এ উদ্দেশ্যও নিহিত ছিলো যে, এক শান্তিপূর্ণ এলাকায় ইসলামী আন্দোলনের জন্য স্বস্তি ও শান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি করা। এ কারণে সকল সমর্থ মুসলিমগণের উপর এটা ফরজ করে দেয়া হয়েছিলো যে, এ নতুন দেশ ও নতুন রাষ্ট্রের নির্মাণ কাজে তারা সাধ্যমত অংশগ্রহণ করবেন এবং একে রক্ষণাবেক্ষণ ও মর্যদার উচ্চশিখরে সমাসীন করার ব্যাপারে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন।

মদীনাতে সাহাবীগণ (রা:) সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে যে সব সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো তা হচ্ছে- তাদের জন্য মদীনার অবস্থা অবশ্যই মক্কার অবস্থার বিপরীত ছিলো। যদিও তাঁদের দ্বীন সম্পর্কিত ধ্যান ধারণা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অভিন্ন ছিল, কিন্তু মক্কা জীবনে তারা বসবাস করতেন বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত অবস্থায়। আর তাঁরা ছিলেন নিরুপায়, অপমানিত ও দুর্বলতর। তারা আত্মিক ও নৈতিক বলে চরম বলীয়ান হলেও লৌকিক শক্তি সামর্থ্য কিংবা ব্যক্তি স্বাধীনতা বলতে তেমন কিছুই ছিলো না। পক্ষান্তরে মদীনার জীবনের প্রথম থেকেই নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব ছিলো মুসলিমদের হাতে।

সময় ও সুযোগ এসেছিল মুসলিমদের জন্য এমন এক জীবন-ধারা প্রবর্তনের যা ছিলো জাহেলিয়াত যুগের জীবন-ধারা থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। এমনকি পৃথিবীর কোথাও এমন কোন জীবন ধারা ছিলো না যার সঙ্গে এর কোন তুলনা করা যেতে পারে।

এই মদীনাতেই রাসূলুল্লাহ (সা:) মসজিদে নববী নির্মাণ করে মুসলিমদের ইবাদাতের একটি স্থায়ী জায়গা নির্ধারণ করেন । অতঃপর মুসলিমদের মধ্যে ভাতৃত্ববোধ সৃষ্টির ব্যাপারেও খুব জোর দেওয়া হয় এই মদীনাতেই । মুসলিমদের এ ভাতৃত্ব বন্ধনকে 'মুহাজির ও আনসারগণের ভাতৃত্ব বন্ধন' নামেও অভিহিত করা হয় । আর এই ভাতৃত্বের উদ্দেশ্য ছিলো মূর্খ যুগের বংশীয় সম্পর্ক ছিন্নকরে আত্মীয়তা বা অনাত্মীয়তার সম্পর্ক যা কিছু হবে সবই হবে ইসলামের জন্য। এরপর থেকে মানুষে মানুষে বংশ, বর্ণ ও দেশের সম্পর্ক মুছে যাবে । উঁচু, নীচু ও মানবত্বের মাপকাঠি হবে কেবলমাত্র তাকওয়ার ভিত্তিতে। -(আর-রাহীকুল মাখতুম)

[মুসলিমদের দুঃখ ও দুর্দশা কখনো স্থায়ী হয় না, বরং তা একজন মুসলিমকে দ্বীনের জন্য মজবুত করে তুলে। আর এর শ্রেষ্ঠ উদাহরণ রাসূলুল্লাহ (সা:) এর জীবদ্দশায় মক্কার অত্যাচার, অবিচার এর পর মদীনার সফলতা। যেখান থেকে মুসলিমরা অর্জন করে নিজেদের মধ্যে ভাতৃত্ববোধ ও নেতৃত্ব দেওয়ার শিক্ষা ।]



● আল্লাহর উপর ভরসা:

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেছেন, বদরের যুদ্ধের দিন আল্লাহর নবী (সা:) দোয়া করতে গিয়ে বললেন, হে আল্লাহ! আমি তোমার ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতি পূরণ করার জন্য প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! তুমি যদি চাও (কাফিররা) আমাদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করুক তাহলে তোমার ইবাদাতের লোক আর থাকবে না। এতটুকু কথা বলার পর আবু বকর (রা:) তাঁর হাত ধরে বললেন, যথেষ্ট হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ উঠলেন এবং এ আয়াত পড়লেন, শত্রুদল অচিরেই পরাস্ত হবে এবং পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে। -(বুখারীঃ ৩৬৬২; আ: প্র:)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, বদরের যুদ্ধের দিন আল্লাহর নবী (সা:) বললেন, এই তো জীবরাঈল। ঘোড়ার মাথায় হাত দিয়ে চেপে ধরে যুদ্ধাস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তিনি এসে গেছেন । -(বুখারীঃ ৩৬৯৯; আ: প্র:)

[ব্যক্তিগত প্রয়োজন থেকে শুরু করে শত্রুর মোকাবালাতেও আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রাখতে হবে। আর আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠায় আল্লাহর সাহায্য আসবেই । তা আমাদের বুঝে আসুক কিংবা না আসুক।]


● নেতার প্রতি উপদেশ:

সুলাইমান ইবনু বুরাইদাহ (রা) হতে বর্ণিত; তিনি তার পিতা বুরাইদাহ (রা) হতে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) যখন কোন ছোট বা বড় সৈন্যদলের জন্য কাউকে নেতা নির্বাচন করে দিতেন তখন বিশেষভাবে তাকে আল্লাহকে ভয় করার, মুজাহিদ মুসলিমদের সাথে কল্যাণ করার জন্য উপদেশ দিতেন । তারপর বলতেন, আল্লাহর নামে আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর, যে আল্লাহর সাথে কুফরী করেছে তার সাথে যুদ্ধ কর, যুদ্ধ করবে, গণিমতের মালে খিয়ানত করবে না, প্রতারণা করবে না, অঙ্গহানী করবে না, বালকদের হত্যা করবে না, যখন তুমি মুশরিক শত্রুদের সাথে মুকাবিলা করবে তখন তাদেরকে তিনটি বিষয়ে দা'ওয়াত দিবে, তার যে কোন একটি ক্ববুল করে নিলে তুমি তা মেনে নিবে এবং তাদের উপর হাত উঠাবে না।

(১) তাদেরকে ইসলাম ক্ববুল করার দাওয়াত দিবে। যদি তারা তা ক্ববুল করে তুমি তাদের এ স্বীকৃতি মেনে নিবেে। তারপর তাদেরকে মুহাজিরদের কাছে হিজরত করে আসার জন্য দাওয়াত দিবে, তারা সাধারণ গ্রাম্য মুসলিমদের সমশ্রেণীভুক্ত হয়ে থাকবে আর গণিমত ও ফাই (বিনা যুদ্ধে শত্রুপক্ষের যে মাল হস্তগত হয়) এর মালে তাদের জন্য কোন অংশ হবে না, তবে যদি তারা মুসলিমদের সাথে জিহাদে অংশগ্রহণ করে (মাত্র তখন পাবে)।

(২) যদি তারা ইসলাম ক্ববুল করতে রাজি না হয় তবে তাদের কাছে জিযইয়া (এক প্রকার ট্যাক্স) দাবি করবে । যদি তারা স্বীকার করে তবে তাদের এ স্বীকৃতি মেনে নিবে (আর তাদের দিকে আক্রমণের হাত বাড়াবে না) । আর যদি তারা জিযইয়া কর দিতে অস্বীকার করে তবে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করবে ও তাদের সাথে যুদ্ধ করবে ।

(৩) আর যখন কোন দুর্গবাসীদের অবরোধ করবে তখন যদি তারা আল্লাহ ও তার রাসূলের জিম্মায় আসার কোন প্রস্তাব তোমার কাছে পেশ করে, তবে তুমি তা স্বীকার করবে না । বরং তুমি তোমার নিজের জিম্মায় তাদের নিতে পারবে । কেননা তোমাদের জিম্মা নষ্ট করা অনেক সহজ ব্যাপার, আল্লাহর জিম্মাকে নষ্ট করার চেয়ে ।


আর যদি তারা আল্লহর ফয়সালায় উপনীত হওয়ার প্রস্তাব দেয় তবে তুমি তা করবে না। বরং তুমি নিজের ফয়সালার অধীনে তাদেরকে আশ্রয় দিবে। কেননা তুমি অবগত নও যে, তুমি আল্লাহর ফয়সালা তাদের উপর সঠিকভাবে করতে পারবে কি, পারবে না । -(মুসলিমঃ ১৭৩১; তিরমিযীঃ ১৪০৮; আবু দাউদঃ ২৬১২; বুলুগুল মারামঃ ১২৬৯)

[একজন নেতাকে অবশ্যই তার অধিনস্থ সঙ্গীদের সাথে উত্তম ব্যবহার করতে হবে এবং নিজের আদর্শকে রক্ষা করে উপরে উল্লিখিত তিনটি বিষয়ের প্রতি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে]


● ইসলামী শাসন ব্যবস্থার নমুনা:

হযরত আবু বকর (রা:)র খেলাফত কাল। মদীনায় বসবাস করতো এক অন্ধ মহিলা। মহিলার আপনজন কেউ নাই। তার উপর সে বৃদ্ধা। তাই তার চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়ায় খুব কষ্ট হতো। ইসলামী শাসনে এ রকম একজন মহিলা মানবেতর জীবন- যাপন করবে, তা হয়না। তাই হযরত ওমর (রা:) এই মহিলার তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নিলেন।

হযরত ওমর (রা:) প্রতিদিন যথা সময়ে মহিলাকে খাবার পৌঁছানোসহ যাবতীয় কাজ করতেন। এভাবে কিছু দিন গেল। একদিন হযরত ওমর (রা:) খাবার নিয়ে এলেন। এসেই বললেন-

- বুড়ি মা! আপনার জন্যে খাবার নিয়ে এসেছি।

- কে! কে আবার খাবার নিয়ে এসেছো? আমি তো একটু আগেই খাবার খেলাম।

হযরত ওমর (রা:) ভাবনাই পড়লেন। ব্যাপার কি? আমিইতো প্রতি দিন তাকে খাবার দিই। এখন শুনছি অন্য কেউ খাবার খাইয়ে গেছে। হযরত ওমর (রা:) কিছুই বুঝতে পারলেন না। শুধু এ টুকুই বুঝলেন যে, অন্য কেউ এসে এই মহিলাকে খাবার খাইয়ে যায়।

হযরত ওমর কিছু না বলে চলে গলেন। পরদিন ওমর যথা সময়ে এলেন। সে দিনও কে যেন বুড়িয়ে খাইয়ে গেল। সেদিনও ওমর (রা:) চলে গেলেন। এর পরদিন হযরত ওমর আবারও বুড়ির কাজ করতে এলেন।

বুড়িকে বললেন-
আমি কাজ করতে এসেছি।

বুড়ি বলল-
আমার কাজ তো কে যেন একটু আগেই করে দিয়ে গেল।

এবার হযরত ওমর (রা:) ঠিক করলেন। কে এই লোক। যে প্রতিদিন আমার আগে এসে কাজ করে দিয়ে যায়। তাকে আমার বের করতেই হবে। যেই ভাবা, সেই কাজ।

হযরত ওমর (রা:) একতদিন গোপনে লুকিয়ে থাকলেন। দেখলেন ইসলামী প্রজাতন্ত্রের মহান শাসক আবু বকর (রা:) এসে আজ বুড়ির কাজ করে দিয়ে যাচ্ছে। খেলাফতের কঠিন দায়িত্বও তাকে এই বুড়ির কাজ করা থেকে ফেরাতে পারে নি। -(আমরা সেই সে জাতি)

[ইসলামী শাসনব্যবস্থার অধীনে থাকার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, শাসক তার অধিনস্থ মানুষদের ব্যাপারে এতটাই সচেতন থাকেন, যা ঐ ব্যক্তি নিজেও নিজের প্রতি এতটা সচেতন নন । তাইতো দেখি বিশাল রাজ্যের শাসক হয়েও সেই অন্ধ মহিলার দায়িত্ব নিতে কোন সংকোচ বোধ করে না । বরং ঐ মহিলাকে সাহায্য করতে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে । তাই আজও যদি ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম হয়, তাহলে ফুটপাতের দরিদ্র মানুষগুলোর সাথে শাসকের রাত কাটাতে কোন সংকোচ বোধ করবে না । কারণ ইসলাম এটাই শিখায়- এক মুসলিমের দুঃখে অপর মুসলিমও দুঃখিত হবে।]


● যদিও এখানে খুবই অল্প বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, তবে চেষ্টা করা হয়েছে মূল বিষয়গুলো তুলে ধরতে। আর উল্লিখিত বিষয়গুলো থেকে অন্তত এতটুকু শিক্ষা নেওয়া উচিত যে, 'আল্লাহ আমাদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন কেবল তাঁর ইবাদাত করতে এবং সর্ব বিষয়ে তাঁর এককত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করতে'। তাই রঙিন পতাকার ছায়াতলে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আল্লাহর আইনকে উপেক্ষা করে মানুষের তৈরী আইন প্রতিষ্ঠা করার নাম বিজয় নয় বরং ব্যর্থতা। আর এই ব্যর্থতাকে মুছে দেওয়ার মধ্যেই মুসলিমের স্বার্থকতা। ইন শা আল্লাহ্।

পরিশেষে উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর একটি কথা দিয়ে শেষ করছি-

"আমরা এমন জাতি যাদের কোন অস্তিত্ব ছিলনা, সম্মান ছিলনা। আল্লাহ আমাদের ইসলামের মাধ্যমে সম্মান দিয়েছেন। আমরা যদি ইসলামকে ছেড়ে অন্য কোন কিছুর মাধ্যমে সম্মান পেতে চাই তাহলে আল্লাহ আমাদের আবার লাঞ্ছিত করবেন।"


লিখেছেন: আরিফুল ইসলাম দিপু

Post a Comment

Previous Post Next Post