মধ্যপ্রাচ্যের আর দশজন সাধারণ ভদ্রমহিলার মত তিনিও একজন। পরিবারের দেখভাল করেন। স্বামী অফিস থেকে ফেরার পথে তাকে ফোন দিলে তিনি খাবার গুছিয়ে বসেন ঘরে ফেরার অপেক্ষায়। একসাথে খাওয়া। ঘুম। রাত তিনটার সময় অ্যালার্ম বেজে ওঠে তার। ঘুম ঘুম চোখে শব্দের উৎস লক্ষ্য করে হাত বাড়ান। বন্ধ করে ফের চোখ বুজবেন এমন সময় সূরা ত্ব-হা এর আয়াতটা মনে আসে তার।
عَجِلْتُ إِلَيْكَ رَبِّ لِتَرْضَىٰ
মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন কথাটা আল্লাহকে। তার অনুসারীরা হেটে নাগাল পায়নি মুসার। তিনি একাই চলে এসেছেন সবার আগে। আল্লাহ জানেন সবই তাও জিজ্ঞাসা করলেন, বাকিরা কোথায়? পেছনেই আছে; আসছে—জানালেন মুসা।
আমি তাড়াহুড়ো করেছি – عَجِلْتُ
إِلَيْكَ – আপনার দিকে
رَبِّ – রব্—বিশ্ব চরাচরের মালিক, প্রভু, আহারদাতা, পালনকর্তা, পূর্ণতাদানকারী, সংরক্ষণকারী, নিয়ন্ত্রণকারী, পরিচালনাকারী....
لِتَرْضَىٰ – সন্তুষ্টির জন্য
তড়িঘড়ি করে বিছানা ছাড়েন ভদ্রমহিলা। সলাতে দাঁড়ান। রব্কে সন্তুষ্ট করার জন্য। সেই রব্ যিনি আমাদের কাছে খাদ্য চান না, অর্থ চান না। যাকে দেওয়ার মতো আমাদের কোন সম্পদ নেই। যিনি খালি দেনই, কোনো কিছুর বিনিময় ছাড়াই দেন। আমাদের রব্ আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অমুখাপেক্ষী। কিন্তু আমরা কৃতজ্ঞ হলে তিনি খুশি হন। আমরা তাকে খুশি করতে চাই। এ জীবন এবং যা দিয়ে তিনি এ জীবনটা সাজিয়ে দিয়েছেন তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই।
এ কথাগুলোই ভদ্রমহিলা বলেন তার কুরআন ক্লাসের ছাত্রীদের। যখন সলাতের সময় হবে, আযানের আহবান শোনা যাবে তখন সব কাজ ফেলে ছুটবে সলাত আদায়ের জন্য। ত্রস্ত পায়ে আল্লাহর দিকে এগিয়ে এলে হয়তোবা তিনি সন্তুষ্ট হবেন।
মাহশি একটি মেডিটারেনিয়ান খাবারের একটি বিখ্যাত পদ। ভাত-মাংশ মাখানো হয় রসুন, দারচিনি, গোলমরিচ আর লেবুর রস দিয়ে। এরপরে আঙুর পাতায় মুড়ে রান্না করতে হয়।
কুরআন শিক্ষিকার স্বামী একদিন আবদার করলেন মাহশি খাবেন বলে। কাজটা করতে সময় লাগে অনেক। আর মাত্র তিনটা আঙুর পাতা বাকি এমন সময়ে আযান পড়ল। ভদ্রমহিলা হাতের কাজটা সেভাবেই রেখে গেলেন সলাত আদায় করতে।
ফোনের পর ফোন বেজে চলেছে, কেউ ধরছে না। চিন্তিত স্বামী কাজ থেকে ঘরে ফিরলেন। টেবলের ওপরে রান্না না করা মাহশিগুলো সাজান। স্ত্রী ঘরের কোণে সিজদায় অবনত। অনুযোগের স্বরেই বললেন স্বামী, বাকি তিনটা পাতা শেষ করে চুলোর রান্নাটা বসিয়ে তো সলাত পড়তে পারতে। সেই কখন থেকে ফোন করছি, কতক্ষণ থাকা লাগে সিজদায়?
ভদ্রমহিলা যেমন আছেন তেমনই রইলেন।
অজানা আশঙ্কায় ভদ্রলোকের বুক কেঁপে গেল। স্ত্রীর দেহ স্পর্শ করে দেখলেন হিম শীতল। বুঝলেন অনেকক্ষণ আগে সিজদাতেই মারা গেছেন তার স্ত্রী। হয়ত হাতের কাজ শেষ করার জন্য অপেক্ষা করতে হলে রান্নাঘরেই মৃত্যু হতো তার।
আল্লাহর কাছে দ্রুত ফিরে যাওয়া মানুষটিকে আল্লাহ তার সবচেয়ে কাছে থাকা অবস্থাতেই তুলে নিলেন।
আমরা পার্থিব কাজগুলোর জন্য ব্যস্ত হই। সেসব আঙুর পাতার জন্য ব্যস্ত হই যার পরিণতি অপবিত্রতায়। অপার্থিব, অনন্ত জীবনের কাজগুলোর বড় অনাদর। পবিত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে যাত্রায় আমরা ধীর, উদাসীন।
অসুস্থতা নেই আমাদের এখন। ব্যাথা নেই দেহের কোথাও। ক্ষুধার জ্বালাও নেই। আছে মাথার ওপর একটা ছাদ। আছে দেহে চমৎকার পোশাক। ঠিক এই মূহুর্তে একটু চোখটা বন্ধ করি। আরো কী কী নি’আমত ভোগ করছি আল্লাহর এক লহমায় ভেবে নেই।
চোখ খুলি। নিজেকে প্রশ্ন করি, আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কী করি?
আমরা যা প্রতিনিয়ত যা করি তার প্রতিবিম্ব পাওয়া যাবে আমাদের মৃত্যুতে। আমাদের মৃত্যুর প্রতিফলন ঘটবে আমাদের পুনরুত্থানে। আল্লাহ যেন আমাদের তার সন্তুষ্টিতে বাঁচা আর তার তুষ্টিতে মরার তাওফিক দেন আমাদের। আমীন।
লিখেছন: শরিফ আবু হায়াত অপু
عَجِلْتُ إِلَيْكَ رَبِّ لِتَرْضَىٰ
মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন কথাটা আল্লাহকে। তার অনুসারীরা হেটে নাগাল পায়নি মুসার। তিনি একাই চলে এসেছেন সবার আগে। আল্লাহ জানেন সবই তাও জিজ্ঞাসা করলেন, বাকিরা কোথায়? পেছনেই আছে; আসছে—জানালেন মুসা।
আমি তাড়াহুড়ো করেছি – عَجِلْتُ
إِلَيْكَ – আপনার দিকে
رَبِّ – রব্—বিশ্ব চরাচরের মালিক, প্রভু, আহারদাতা, পালনকর্তা, পূর্ণতাদানকারী, সংরক্ষণকারী, নিয়ন্ত্রণকারী, পরিচালনাকারী....
لِتَرْضَىٰ – সন্তুষ্টির জন্য
তড়িঘড়ি করে বিছানা ছাড়েন ভদ্রমহিলা। সলাতে দাঁড়ান। রব্কে সন্তুষ্ট করার জন্য। সেই রব্ যিনি আমাদের কাছে খাদ্য চান না, অর্থ চান না। যাকে দেওয়ার মতো আমাদের কোন সম্পদ নেই। যিনি খালি দেনই, কোনো কিছুর বিনিময় ছাড়াই দেন। আমাদের রব্ আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অমুখাপেক্ষী। কিন্তু আমরা কৃতজ্ঞ হলে তিনি খুশি হন। আমরা তাকে খুশি করতে চাই। এ জীবন এবং যা দিয়ে তিনি এ জীবনটা সাজিয়ে দিয়েছেন তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই।
এ কথাগুলোই ভদ্রমহিলা বলেন তার কুরআন ক্লাসের ছাত্রীদের। যখন সলাতের সময় হবে, আযানের আহবান শোনা যাবে তখন সব কাজ ফেলে ছুটবে সলাত আদায়ের জন্য। ত্রস্ত পায়ে আল্লাহর দিকে এগিয়ে এলে হয়তোবা তিনি সন্তুষ্ট হবেন।
মাহশি একটি মেডিটারেনিয়ান খাবারের একটি বিখ্যাত পদ। ভাত-মাংশ মাখানো হয় রসুন, দারচিনি, গোলমরিচ আর লেবুর রস দিয়ে। এরপরে আঙুর পাতায় মুড়ে রান্না করতে হয়।
কুরআন শিক্ষিকার স্বামী একদিন আবদার করলেন মাহশি খাবেন বলে। কাজটা করতে সময় লাগে অনেক। আর মাত্র তিনটা আঙুর পাতা বাকি এমন সময়ে আযান পড়ল। ভদ্রমহিলা হাতের কাজটা সেভাবেই রেখে গেলেন সলাত আদায় করতে।
ফোনের পর ফোন বেজে চলেছে, কেউ ধরছে না। চিন্তিত স্বামী কাজ থেকে ঘরে ফিরলেন। টেবলের ওপরে রান্না না করা মাহশিগুলো সাজান। স্ত্রী ঘরের কোণে সিজদায় অবনত। অনুযোগের স্বরেই বললেন স্বামী, বাকি তিনটা পাতা শেষ করে চুলোর রান্নাটা বসিয়ে তো সলাত পড়তে পারতে। সেই কখন থেকে ফোন করছি, কতক্ষণ থাকা লাগে সিজদায়?
ভদ্রমহিলা যেমন আছেন তেমনই রইলেন।
অজানা আশঙ্কায় ভদ্রলোকের বুক কেঁপে গেল। স্ত্রীর দেহ স্পর্শ করে দেখলেন হিম শীতল। বুঝলেন অনেকক্ষণ আগে সিজদাতেই মারা গেছেন তার স্ত্রী। হয়ত হাতের কাজ শেষ করার জন্য অপেক্ষা করতে হলে রান্নাঘরেই মৃত্যু হতো তার।
আল্লাহর কাছে দ্রুত ফিরে যাওয়া মানুষটিকে আল্লাহ তার সবচেয়ে কাছে থাকা অবস্থাতেই তুলে নিলেন।
আমরা পার্থিব কাজগুলোর জন্য ব্যস্ত হই। সেসব আঙুর পাতার জন্য ব্যস্ত হই যার পরিণতি অপবিত্রতায়। অপার্থিব, অনন্ত জীবনের কাজগুলোর বড় অনাদর। পবিত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে যাত্রায় আমরা ধীর, উদাসীন।
অসুস্থতা নেই আমাদের এখন। ব্যাথা নেই দেহের কোথাও। ক্ষুধার জ্বালাও নেই। আছে মাথার ওপর একটা ছাদ। আছে দেহে চমৎকার পোশাক। ঠিক এই মূহুর্তে একটু চোখটা বন্ধ করি। আরো কী কী নি’আমত ভোগ করছি আল্লাহর এক লহমায় ভেবে নেই।
চোখ খুলি। নিজেকে প্রশ্ন করি, আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কী করি?
আমরা যা প্রতিনিয়ত যা করি তার প্রতিবিম্ব পাওয়া যাবে আমাদের মৃত্যুতে। আমাদের মৃত্যুর প্রতিফলন ঘটবে আমাদের পুনরুত্থানে। আল্লাহ যেন আমাদের তার সন্তুষ্টিতে বাঁচা আর তার তুষ্টিতে মরার তাওফিক দেন আমাদের। আমীন।
লিখেছন: শরিফ আবু হায়াত অপু
Post a Comment