রাসূল (সা:) সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন: মহানবী (সা:) কি আমাদের মতো মানুষ ছিলেন?

উত্তর: মহানবী (সা:) আমাদের মতো রক্ত, মাংস ও অস্থির গড়া মানুষ ছিলেন । আমাদের মত পিতার ঔরসে ও মাতার গর্ভে তাঁর জন্ম হয়েছিল । আমাদের মত তিনি খেতেন, পান করতেন । বিবাহ-শাদী করেছেন, তাঁর একাধিক স্ত্রী ছিলো  । তিনি সন্তানের জনক ছিলেন । ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন । দুঃখ-শোক, ব্যথা ও যন্ত্রণা অনুভব করতেন । তাঁর প্রস্রাব-পায়খানা হতো এবং তা অপবিত্র ছিল । তাঁর নাপাকীর উযূ-গোসলের প্রয়োজন হতো । (তিরমিযী:২৪৯১)

তিনি জীবিত ছিলেন এবং ইন্তেকাল করেছেন । আল্লাহ্ তাঁর নবী (সা:) কে বলেছেন: 'তুমি বল, আমি তো তোমাদের মতই একজন মানুষ; আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের উপাস্যই একমাত্র উপাস্য; সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে ।' (কাহফ: ১১০; হা-মীম সাজদাহ: ৬)

পক্ষান্তরে কোন মানুষই তার মতো (সমান) নয় । আমরা তাঁর মতো মানুষ নই । অতিপ্রাকৃত বিষয়ে কেউই তাঁর মতো নয় । তিনি একটানা রোযা রাখতেন । সাহাবীগণ তাঁর মতো রোযা রাখতে চাইলেন । তিনি বললেন, এ বিষয়ে তোমরা আমার মতো নও । আমি তো রাত্রি অতিবাহিত করি, আর আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করান । (মুসলিম: ১১০৩)

তাঁর দেহের ঘাম ছিলো শ্রেষ্ঠ সুগন্ধি । তিনি বিশেষ করে নামাযে সামনে যেমন দেখতেন, তেমনি পিছনেও দেখতেন ।

তাঁর চক্ষু নিদ্রাভিভূত হতো, কিন্তু হৃদয় নিদ্রাভিভূত হতো না । (বুখারী: ৮৫৯)

তাঁর দেহ ও দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন চুল, থুথু, তাঁর ব্যবহৃত জিনিস ইত্যাদি বরকতময় ছিলো । (মুসলিম: ৩২১৩)


প্রশ্ন: নবী (সা:) কি মাটির তৈরী ছিলেন, নাকি নূরের তৈরী ছিলেন?

উত্তর: নূরের তৈরী ফিরিশতামন্ডলী । মহানবী (সা:) আদমের অন্যতম সন্তান । সুতরাং তাঁরও আদিসৃষ্টি মাটি থেকেই ।

তিনি আল্লাহর তরফ থেকে অন্ধকারে নিমজ্জিত পথভ্রষ্ট মানুষের জন্য প্রেরিত নূর (আলো) ছিলেন । সেই নূর বা আলোতে জাহেলিয়াতের তমসাচ্ছন্ন যুগ ও সমাজ আলোকিত হল । অন্ধকারে দিশাহারা মানুষ সেই আলোকবর্তিকায় সরল পথের দিশা পেল । তাঁর দেহ নূরানী ছিলো, কিন্তু তিনি নূর থেকে সৃষ্টি ছিলেন না । মহান আল্লাহর সৃষ্টি বৃত্তান্তে একমাত্র ফিরিশতাই নূর থেকে সৃষ্টি । আর নবী মুস্তফা (সা:) ফিরিশতা ছিলেন না । (ক্বুর'আন: ৬/৫০)


প্রশ্ন: নবীর জন্য সারা বিশ্বজগৎ সৃষ্টি হয়েছে' -এ ধারণা কি সঠিক?

উত্তর: না । এ হাদীস মনগড়া । ভক্তির অতিশয্যে মানুষ এমন অত্যুক্তি রচনা করে প্রচার করেছে । মহান আল্লাহ্ এ বিশ্ব রচনা করেছেনন তাঁর ইবাদাতের জন্য । তিনি বলেছেন, "আমি সৃষ্টি করেছি জ্বিন ও মানুষকে কেবল এজন্য যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে ।' (যারিয়াত: ৫৬)

আর নবী (সা:) কে পাঠিয়েছেন সেই ইবাদাতের পদ্ধতি জানিয়ে দেওয়ার জন্য ।


প্রশ্ন: আল্লাহর নবী (সা:) কি হাযির-নাযির ?

উত্তর: না । আল্লাহর নবী (সা:) এর ইন্তেকালের পর তাঁর দেহ মা আয়িশার (রা:) ঘরে সমাহিত আছে এবং তাঁর রুহ আছে জান্নাতে । সে এক ভিন্ন জগৎ । সে জগৎ থেকে তিনি এ জগতের কোথাও হাযির (উপস্থিত) ও নাযির (পরিদর্শক) হতে পারে না । তিনি না বিদআতী মিলাদের সময়, আর না কোন শুভ সন্ধিক্ষণে এসে উপস্থিত হতে পারেন । কারণ এমন কিছুর (ক্ষমতার) দলিল ইসলামে নেই ।

__________________
বই: দ্বীনি প্রশ্নোত্তর
লেখক: আবদুল হামীদ ফাইযী



প্রশ্ন: রাসুল (সা:) কি গায়েব জানতেন ?

উত্তর : আল্লাহ বলেন,
"নিঃসন্দেহে কিয়ামতের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর নিকটেই রয়েছে। আর তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন। এবং তিনিই জানেন যা কিছু গর্ভাধারে রয়েছে। কেউ জানে না যে, সে আগামীকাল কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না যে, সে কোন স্থানে মৃত্যুবরণ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সর্বজ্ঞ, সর্ব বিষয়ে অবহিত। (সূরা লুকমান-৩৪)

শানে নুজুল - ইবনে জারীর ও ইবনে আবী হাতিম মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা এক বেদুইন সাহাবী রাসূল (সাঃ) এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বললেন - “হে আল্লাহর রাসূল! আমার স্ত্রী গর্ভবতী, আমাকে বলুন, সে কি সন্তান জন্ম দেবে? আর আমাদের এলাকায় অনাবৃষ্টি চলছে, বলুন কখন বৃষ্টি হবে? আমার জানা আছে আমি কখন জন্ম গ্রহণ করেছি, এখন আমাকে বলুন আমি কখন মারা যাব? তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উক্ত আয়াত নাজিল করলেন। (আসহাবুন নুযুল-২৬২, তাফসীরে ইবনে কাসীর-৩/৫৯৬)

সুতরাং বুঝা গেল আল্লাহ ছাড়া কেউ গায়েব জানেনা। নবীজী ততটুকুই গায়েব জানেন যতটুকু ওহীর মাধ্যমে তাঁকে জাননো হয়েছে। আর তার প্রতি ওহী হিসেবে পাঠানোর পর তিনি তা সাহাবাদেরকে তথা উম্মতকে জানিয়ে দিয়েছেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post