বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
১.
সালাতের গুরুত্ব অনুধাবন করা:
রাসূল (সাঃ) বলেনঃ "মুসলিম বান্দা এবং কাফের-মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য হল সালাত পরিত্যাগ করা।" -(মুসলিম,কিতাবুল ঈমান)
২.
পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার সাথে সালাতে উপস্থিত হওয়া:
আল্লাহ্ সুবহানহুওয়া তা'আলা বলেন:
নবী করীম (সা:) বলেন:
৩.
যথাসময়ে সালাত আদায় করা:
৪.
সালাতে রসূলের সুন্নাহ্ অনুসরণ করা:
৫.
কুর'আন থেকে অন্তত কিছু সূরার অর্থ জেনে নেওয়া:
৬.
যিকর ও দু'আতে সচেতন হওয়া:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
৭.
আল্লাহকে সর্বোচ্চ ভয় করা:
আল্লাহ্ সুবহানহুয়া তা'আলা বলেন:
".....আল্লাহর সামনে একান্ত অবনত মনে আদবের সাথে দাঁড়াও" - (সূরা আল বাক্বারাহ: ২৩৮)
তিনি আরো বলেন:
৮.
পরবর্তী সালাতের জন্য অপেক্ষা করা:
"নিঃসন্দেহে সালাত মানুষকে অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।" -(সূরা আন-কাবুত, আয়াত ৪৫)
_______
আল্লাহ্ আমাদেরকে সালাতে নিয়মিত করে দিন, সালাতে মনযোগ বৃদ্ধি করে দিন এবং তা কবুল করে নিন । আমীন ।
আলহামদুলিল্লাহ্। আস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রসূলুল্লাহ্। যেহেতু সালাত ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি রূকন এবং এর মধ্যেই রয়েছে আল্লাহ্ সুবহানওয়াকে সবচেয়ে কাছে পাওয়ার সুযোগ এবং তা ঈমানের বহিঃপ্রকাশও বটে সেহেতু এই ইবাদাতটিকে অন্তর থেকে উপলব্ধি করা এবং গুরুত্বের সাথে আদায় করা আমাদের কর্তব্য। তাই আমরা যারা নিয়মিত সালাত আদায় করছি কিংবা চেষ্টা করছি কিন্তু সালাতকে তেমন উপলব্ধি করতে পারছিনা কিংবা সালাতে মনযোগ স্থির করতে পারছিনা তাদের জন্য কিছু পরামর্শ এখানে উল্লেখ করতে যাচ্ছি। যেগুলো আমাদেরকে সালাতের মধুরতা উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে, ইন শা আল্লাহ্।
১.
সালাতের গুরুত্ব অনুধাবন করা:
সালাতে অধিক মনযোগী হওয়াতে প্রাথমিকভাবে যে বিষয়টি সাহায্য করে কিংবা প্রভাব ফেলে তা হলো সালাতের গুরুত্ব অনুধাবন করা। কেন আমি সালাত আদায় করবো? সালাত আদায় না করলে কেমন শাস্তি রয়েছে? সালাত আদায় করলে আমি কি পুরস্কার পাবো? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর যখন আমার জানা থাকবে তখন সালাতের গুরুত্ব বুঝতে পারবো এবং সালাত আদায়ে সচেতন হব। যা আমাকে অধিক মনোযোগী হতেও সাহায্য করবে, ইন শা আল্লাহ্।
জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের উদাহরণ ঠিক প্রবাহিত নদীর ন্যায়, যা তোমাদের কোন ব্যক্তির দরজার পাশে থাকে, যাতে সে প্রত্যহ পাঁচবার গোসল করে থাকে।" -(মুসলিমঃ ২৩৩; তিরমিযীঃ ২১৪; রিয়াদুস স্বা-লিহীনঃ ১০৫০)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সকাল অথবা সন্ধায় মসজিদে যায়, তার জন্য আল্লাহ মেহমানের উপকরণ প্রস্তুত করেন। যখনই সে সেখানে যায়, তখনই তার জন্য ঐ মেহমানের উপকরণ প্রস্তুত করা হয়।” -(সহীহুল বুখারী ৬৬২ ও মুসলিম ৪৬৭,৬৬৯)
রাসূল (সাঃ) বলেনঃ "মুসলিম বান্দা এবং কাফের-মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য হল সালাত পরিত্যাগ করা।" -(মুসলিম,কিতাবুল ঈমান)
২.
পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার সাথে সালাতে উপস্থিত হওয়া:
সালাতে মনযোগ বৃদ্ধির আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার সাথে সালাতে উপস্থিত হওয়া। যেহেতু যেকোন ইবাদাতের প্রাথমিক শর্ত পবিত্রতা অর্জন করা সেহেতু সালাত আদায়ের পূর্বে পরিপূর্ণ পবিত্রতা জরুরী। আর পবিত্রতার সাথে যখন পরিচ্ছন্নতার যোগ হবে তখন সালাতে আমার মনযোগ স্থির হতে সুবিধা হবে। কারণ পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার মধ্যে শয়তানের ক্ষমতা লোপ পায়।
আল্লাহ্ সুবহানহুওয়া তা'আলা বলেন:
হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নামাযের উদ্দেশ্যে দণ্ডায়মান হও তখন (নামাযের পূর্বে) তোমাদের মুখমণ্ডল ধৌত কর এবং হাতগুলোকে কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও, আর মাথা মাসেহ কর এবং পাগুলোকে টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে ফেল। -[সূরা আল-মায়িদাহঃ ৬]
নবী করীম (সা:) বলেন:
‘পবিত্রতা অর্জন ব্যতীত কারো ছালাত কবুল হয় না এবং হারাম মালের ছাদাক্বা কবুল হয় না’। -(মুসলিম)
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেনঃ "ফিরিশতাগণ তোমাদের প্রত্যেকের জন্য দোয়া করেন, যতক্ষণ সে সেই স্থানে অবস্থান করেন, যেখানে সে সালাত আদায় করেছে, যতক্ষণ না তার ওযু নষ্ট হয়েছে। তারা বলেন, হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দাও, হে আল্লাহ! তার প্রতি সদয় হও।" -(বুখারীঃ ৪৪৫; মুসলিমঃ ৬৪৯)
৩.
যথাসময়ে সালাত আদায় করা:
সালাতে মনযোগ বৃদ্ধি কিংবা মনযোগ স্থির করার একটি কার্যকারী উপায় হলো যথাসময়ে সালাত আদায় করা। অর্থাৎ ওয়াক্তের শেষ মূহর্তে কিংবা জামাতের শেষ মূহর্তে দৌড়ে এসে সালাতে উপস্থিত না হয়ে এর পূর্বেই উপস্থিত হওয়া। এতে শরীর ও মন দুটিই স্থির থাকবে, ইন শা আল্লাহ্।
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ "সবচেয়ে উৎকৃষ্টতর পুণ্য কাজ হচ্ছে ওয়াক্তের প্রথমভাগে সালাত আদায় করা।" -(তিরমিযীঃ ১৭৩; হাকিমঃ ১৮৮)
আবু কাতাদা (রাঃ) বলেন, একদা আমরা নবী (সাঃ) এর সাথে সালাত আদায় করছিলাম, এমন সময় শোরগোল শুনা গেল। সালাত শেষে নবী (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন (তোমাদের কি হয়েছে?) তারা বলল, সালাতের জন্য তাড়াহুড়া করছিলাম। নবী (সাঃ) বলেন, এমন করো না; যখন সালাতে আসবে, তখন শান্ত ভাবে আসবে; যা পাবে তা পড়ে নেবে, আর যা ছুটে যাবে তা পূরন করে নিবে। (বুখারী)
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন তোমরা ইক্বামত শুনতে পাবে, তখন সালাতের দিকে চলে আসবে, তোমাদের উচিত স্থিরতা ও গম্ভীর্যতা অবলম্বন করা । তাড়াহুড়া করবে না । ইমামের সাথে যতটুকু পাও তা আদায় করবে, আর যা ছুটে যায় তা পূর্ণ করবে। -(বুখারীঃ ৬৩৬; মুসলিমঃ ৬০২; তিরমিযীঃ ৩২৭; বুলুগুল মারামঃ ৪২২)
৪.
সালাতে রসূলের সুন্নাহ্ অনুসরণ করা:
আমাদের প্রতিটা কর্মের উত্তম আদর্শ রয়েছে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাঝে। তাই সালাতে মনযোগ বৃদ্ধিতে তাঁকেই অনুসরণ করতে হবে। যেমন, ফরযের পূর্বে সুন্নাত সালাতগুলো আদায় করে নেয়া, সালাতে দৃষ্টিকে সিজদাহর স্থানে স্থির করা, ধীর-স্থীরতার সাথে সালাত আদায় করা ইত্যাদি।
উম্মে হাবীবাহ রামলা বিনতে আবু সূফিয়ান (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, "যে কোন মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহর (সন্তুষ্টি অর্জনের) জন্য প্রত্যহ ফরয সালাত ছাড়া বারো রাকাত সুন্নাত সালাত পড়ে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি গৃহ নির্মাণ করবেন।" -(মুসলিম, তিরমিযী, নাসায়ী, রিয়াদুস স্বা-লিহীনঃ ১১০৪)
আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সা.) বলেছেন, 'নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা কাতার মিলিয়ে সালাত আদায়কারীদের উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং যে মাঝের ফাঁকা বন্ধ করে আল্লাহএ কারণে তাঁর একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেন।' -(ইবনু মাজাহ হা: ৯৯৫; মুসনাদে আহমাদ: ৬/৮৯)
আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কে সালাতে এদিক ওদিক তাকানো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ এটা এক ধরণের ছিনতাই, যার মাধ্যম শয়তান বান্দার সালাত হতে অংশ বিশেষ ছিনিয়ে নেয়। -(বুখারীঃ ৭৫১; ৩২৯১; তিরমিযীঃ ৫৯০; বুলুগুল মারামঃ ২৪৩)
মু'আবিয়াহ বিন হাকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেছেনঃ "অবশ্যই সালাত মানুষের কথা-বার্তা বলার ক্ষেত্র নয়, এটা তো কেবল তাসবীহ, তাকবীর ও কুরআন পাঠের জন্য সুনির্দিষ্ট।" -(মুসলিমঃ ৫৩৭; বুলুগুল মারামঃ ২২০)
৫.
কুর'আন থেকে অন্তত কিছু সূরার অর্থ জেনে নেওয়া:
সালাত আদায় অবস্থায় মনযোগ ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ একটি উপায় হলো সালাতে পাঠকৃত সূরাগুলোর অর্থ বুঝতে পারা। তাই আমাদের উচিত প্রায় তিলাওয়াত হয় এমন সূরাগুলোর অর্থ জেনে নেয়া। এতে ইমামের তিলাওয়াতের সাথে মনযোগ স্থির থাকবে এবং আল্লাহ্ সুবহানওয়ার বরকতময় কথাগুলো বুঝা যাবে, সাথে আমাদের ঈমানও বেড়ে যাবে, ইন শা আল্লাহ্।
"..... আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় পরওয়ারদেগারের প্রতি ভরসা পোষণ করে।" [সূরা-আনফাল-২]
৬.
যিকর ও দু'আতে সচেতন হওয়া:
সালাতে দু'আ ও যিকর এর স্থানগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে দু'আ কবুলের বিশেষ সুযোগও রয়েছে। তাই রূকু ও সিজদায় আল্লাহর প্রশংসার সময় মনে রাখবো, আমি মহান স্রষ্টা আল্লাহ্ সুবহানওয়ার নিকট মাথা নত করে তাঁর তাওহীদের সাক্ষ্য দিচ্ছি। তাই এখানে যেন কোন প্রকার চুরি না হয় অর্থাৎ আমরা হেয়ালিপনা না করি। আর সালাতের মধ্যে আল্লাহ্ সুবহানওয়ার নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ কামনা করতে যেন কোন প্রকার কার্পণ্য না করি। যখন এই বিষয়গুলোতে আমরা সচেতন থাকবো তখন সালাতে মনযোগও স্থির থাকবে এবং আল্লাহর নৈকট্যও লাভ হবে, ইন শা আল্লাহ্।
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “বান্দা যখন সিজদায় থাকে তখন তার রবের সবচাইতে নিকটবর্তী হয়। কাজেই তোমরা (সিজদায় গিয়ে) বেশি করে দু’আ কর।” -(মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীন- ১৪৯৮)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“সবচেয়ে জঘন্য চোর হল যে তার সালাতে চুরি করে। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কিভাবে সালাতে চুরি করে? তিনি বললেন, রুকু ও সিজদা পূরা করে না” (আহমাদ ৫/৩১০; সহীহ আল-জামে ৯৯৭)
৭.
আল্লাহকে সর্বোচ্চ ভয় করা:
যাবতীয় ইবাদাত-বন্দেগী শুদ্ধ হওয়ার মূলে রয়েছে আল্লাহ্ সুবহানওয়ার ভয়। অর্থাৎ যখন আল্লাহকে ভয় করে ইবাদাত করবো তখন তা লোক দেখানো আমল থেকে পবিত্র থাকবে। আর সালাতের ব্যপারটাও ঠিক তাই। অর্থাৎ সালাতকে লোক দেখানো আমল থেকে পবিত্র রাখতে আল্লাহকে ভয় জরুরী। আর না হয়তো লোকে কি ভাবছে তা সালাতের ভিতরেও কাজ করবে এবং সালাত থেকে মনযোগ হারিয়ে যাবে। তাই সালাতের পুরো সময়টাতেই আল্লাহভীতির সাথে বিনয়ী থাকার চেষ্টা করতে হবে।
আল্লাহ্ সুবহানহুয়া তা'আলা বলেন:
".....আল্লাহর সামনে একান্ত অবনত মনে আদবের সাথে দাঁড়াও" - (সূরা আল বাক্বারাহ: ২৩৮)
তিনি আরো বলেন:
"ধৈর্য্যর সাথে সাহায্য প্রার্থনা কর সালাতের মাধ্যমে। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু সে সমস্ত বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব।" -(সূরা আল বাকারাহ্: ৪৫)
৮.
পরবর্তী সালাতের জন্য অপেক্ষা করা:
স্বাভাবিকভাবেই একটি কাজ তখনই সহজ হয় যখন তা আগে থেকে পরিকল্পনা করা হয়। সালাতের ব্যাপারেও ঠিক তাই করা উচিত। এতে পূর্ব থেকে প্রস্তুতি হয়ে যাবে এবং আল্লাহভীতি কাজ করবে। ফলশ্রুতিতে মন্দ কাজ থেকে পবিত্র থাকাও সহজ হয়ে যাবে, ইন শা আল্লাহ্।
"নিঃসন্দেহে সালাত মানুষকে অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।" -(সূরা আন-কাবুত, আয়াত ৪৫)
_______
আল্লাহ্ আমাদেরকে সালাতে নিয়মিত করে দিন, সালাতে মনযোগ বৃদ্ধি করে দিন এবং তা কবুল করে নিন । আমীন ।
আমিন
ReplyDeletePost a Comment