হায়েজ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য

হায়েয

পরিপূর্ণ বয়স না হওয়া পর্যন্ত মেয়েদের হায়েয হয় না। হায়েয শুরু হওয়া মাত্রই মনে করতে হবে মেয়েটির দেহাভ্যন্তরে যৌবনের পদাপর্ণ শুরু হয়েছে। তখন তাকে আর বালিকা বলা চলেনা, হায়েযের পরবর্তী পর্যায় থেকে মেয়েদের যৌন সঙ্গমের ইচ্ছা প্রকাশ পায়। বয়স অনুপাতে এটা প্রবল থেকে প্রবলতর হয়। বিশেষ করে বিবাহিত পুরুষদের এ অধ্যায়টি একান্ত মনযোগ সহকারে জানার প্রয়োজন রয়েছে। অনেকেই অজ্ঞতার কারনে অথবা অধিক যৌন প্রবলতায় পতিত হয়ে হায়েয-নিফাস অবস্থায় সঙ্গমে লিপ্ত হয়। এটা শুধু দোষণীয়ই নয় বরং আল্লাহর বিধানের পরিপন্থি কাজ। এজন্য কোরআন হাদীসে শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।


শরীয়তের পরিভাষায়, হায়েয বা ঋতুস্রাব বলা হয় এসব রক্তকে যা একজন সুস্থ সাবালিকা মেয়ের জরায়ু থেকে স্বাভাবিকভাবে যৌনাঙ্গ দিয়ে প্রবাহিত হয়। যা রোগ বা সন্তান প্রসবের কারণে বের হয় না। বরং প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর থেকে বের হতে শুরু করে। কুরআনে হায়েয সম্পর্কে বলা হয়েছে—

“তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করবে; হায়েয সম্পর্কে নির্দেশ কি? তুমি বল, সেটা একটা অপবিত্র ও ময়লাযুক্ত অবস্থা। কাজেই তখন স্ত্রীদের থেকে দূর থাকবে এবং তাদের কাছে  গমন করবে না, যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়। অতঃপর তারা যখন পবিত্র হবে, তখন তাদের কাছে গমন করবে ঠিক সেভাবে যেভাবে আল্লাহ তোমাদের আদেশ করেছেন। যারা পাপ কাজ থেকে বিরত থাকে এবং পবিত্রতা অবলম্বন করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন।”—(সূরা- আল-বাক্বারাঃ ২২২)

আল্লাহ তা’আলা হায়েয-বিশেষভাবে মেয়েদের প্রকৃতিগত করে দিয়েছেন। রাসূল (সাঃ) তার একটি বাণীতে একথাটি বলেনঃ

“এটা এমন এক বস্তু যা আল্লাহ তা’আলা আদমের কন্যাদের উপর নির্ধারিত করে দিয়েছেন।” বনী ইসরাঈলের লোকদের জন্যে হায়েযের যে বিধান ছিল, ইসলামের বিধি-বিধান ও মাসআলা-মাসায়েল তার চেয়ে ভিন্ন ধরনের এবং ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। ইমাম মুসলিম ও ইমাম তিরমিযি (রহঃ) হযরত আনাস (রাঃ) হতে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, -“ইহুদীরা ঋতুবতীকে ঘর থেকে বের করে দিত, পানাহারের সময় তাদেরকে সাথে রাখত না এবং তারা ঘরে অপর কারো সাথে থাকতে পারত না। আরব এবং আশে-পাশের লোকেরাও ঋতুবতীদের সাথে ইহুদীদের এ অভ্যাসকে নিজেদের অভ্যাসে পরিণত করে নিয়েছিল। তারাও ঋতুবতীদের সাথে অবস্থান ও পানাহার পরিত্যাগ করতে থাকে। এ প্রসঙ্গে যখন নবী করীম (সাঃ)-কে প্রশ্ন করা হল, তখনই আল্লাহ তা’আলা (আরবী) আয়াত শেষ পর্যন্ত নাযিল করেন।

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় রাসূল (সাঃ) দিয়েছেনঃ “ঋতুবতীর সাথে সহবাস ছাড়া আর সব কিছুই জায়েয।” ইহুদীরা তার এ বক্তব্য জানতে পেরে বলে উঠলঃ “এ লোকটি কি চায়? সেট আমাদের রীতি—নীতির কোনটিরই বিরোধিতা করতে বাদ দেয়নি।”

বস্তুত ইহুদীদের এ উক্তি ছিল অত্যন্ত অশোভন ও অন্যায়। কারণ ইসলামী শরীয়তের কোন আইন অমুসলিমদের বিরোধিতার জন্যে প্রয়োগ করা হয়নি। ন্যায় ও বাস্তবতার ভিত্তিতেই শরীয়তের  নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। জীবনে চলার পথে মানুষ যে সকল সমস্যার সম্মুখীন হয়, ইসলাম যে সব সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে। কুরআন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব। দুনিয়ার সকল কুপ্রথা ও কুসংসারের মূলে কুঠারাঘাত করে কুরআন দুনিয়াবাসীকে এমন একটি উজ্জ্বল পথ দেখিয়েছে, যে পথে চললে কোন লোক বিপদগ্রস্ত হবে না বরং ইহ ও পরকালে চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হবে।


হায়েযের রক্ত সংক্রান্ত রং-এর বিবরণ

হায়েযের নির্দিষ্ট দিনগুলোতে একমাত্র সাদা ব্যতীত লাল, কাল, হলদে, মেটে, সবুজ এবং ধুসর ইত্যাদি যে কোন বর্ণের রক্ত আসুক না কেন, তাকে হায়েযের বলেই গণ্য করতে হবে।–(হিদায়া)

নিয়মিত হায়েযের পরিচয়

স্ত্রীলোকের সর্ব প্রথম অবস্থায় যে কয়েকদিন হায়েয থাকে, সে কয়দিনই তার নিয়মিত মুদ্দত (সময়) বলে জানতে হবে। এটা ইমাম আবু আবু ইউসুফ (রাঃ) ও ইমাম মুহাম্মদ (রাঃ)-এর অভিমত। এ মতের উপরই ফতোয়া হয়েছে। (গায়াতুল-আওতার) ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম মুহাম্মদ (রাঃ)-এর মতে সর্বপ্রথম পরপর দু’মাস যে নিয়মে হায়েয আসে, সে নিয়ম অনুযায়ী অপবিত্র দিনগুলোকে হায়েযের নিয়মিত সময়সীমা হিসেবে গণ্য করা হবে। (দুরুসে তিরমিযী)

হায়েযের রক্ত চিনার উপায়

১। সাদা রং ছাড়া অন্য যে কোন রং হবে, যেমন—লাল, কাল, ধুসর, মেটে, হলুদ, সবুজ ইত্যাদি। কোন মেয়ের জরায়ু দিয়ে সাদা কোন পদার্থ বা তরল সাদা পানি বের হলে তা হায়েয হবে না।

২। গর্ভবতী মহিলার রক্তস্রাবকে হায়েয বলা যাবে না।

৩। দুই হায়েযের মধ্যে কমপক্ষে ১৩ দিন পাক থাকতে হবে, এর কম সময়ের মধ্যে রক্তস্রাব আসলে তা হায়েয হবে না, বরং ইস্তেহাযা বা রোগজনিত রক্ত বলে গণ্য হবে।–(শামী)


জরায়ুর রক্ত

মহিলাদের জরায়ু থেকে তিন প্রকারের রক্ত প্রবাহিত হতে পারে।

হায়েয
ইস্তিহাযা
নিফাস
হায়েযঃ সাবালিকা হওয়ার পর জরায়ু থেকে স্বাভাবিক ভাবে যে রক্ত নির্গত হয়, তাকে হায়েয বলা হয়।

ইস্তিহাযাঃ বিভিন্ন কারণে রোগের অনিয়মিত রক্তস্রাবকে ইস্তিহাযা বলা হয়।

নিফাসঃ সন্তান জন্মের পরে যে রক্তস্রাব হয় তাকে নিফাস বলা হয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post