শরীয়ত সম্মত ওযুর পদ্ধতি কি?
উত্তরঃ শরীয়ত সম্মত ওযুর পদ্ধতি দু’ভাগে বিভক্তঃ
প্রথম ভাগ হচ্ছে: ওয়াজিব পদ্ধতি। যা না করলে ওযুই হবে না। আর তা হচ্ছে পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত বিষয় সমূহ। আল্লাহ্ বলেনঃ
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ
“হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা ছালাতের ইচ্ছা কর, তখন তোমরা মুখমন্ডল ও হাত দু’টি কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং দু’পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর।” (সূরা মায়িদা- ৬)
এর বর্ণনা হচ্ছে, মুখমন্ডল একবার ধৌত করতে হবে। কুলি করা ও নাক ঝাড়া মুখমন্ডল ধৌত করার অন্তর্গত। হাত ধৌত করার সীমানা হচ্ছে মধ্যমা আঙ্গুলের প্রান্ত সীমা থেকে কনুই পর্যন্ত একবার ধৌত করা। হাত ধৌত করার সময় কব্জি ধৌত করা হল কি না এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। অনেক লোক অসতর্কতা বশত: শুধু হাতের উপর অংশ ধৌত করে এবং কব্জি ছেড়ে দেয়। এটা বিরাট ভুল। তারপর একবার মাথা মাসেহ করা। কান মাসেহ করা মাথা মাসেহের অন্তর্গত। শেষে দু’পা টাখনু পর্যন্ত একবার ধৌত করা। এটা হচ্ছে ওযুর সর্বনিম্ন ওয়াজিব পদ্ধতি।
দ্বিতীয় ভাগ হচ্ছেঃ মুস্তাহাব পদ্ধতি। প্রথমে বিস্মিল্লাহ্ বলে ওযু শুরু করবে। দু’হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবে। তারপর তিন চুল্লু পানি দ্বারা তিনবার কুলি করবে ও নাক ঝাড়বে। তিনবার মুখমন্ডল ধৌত করবে। এরপর দু’হাত কনুইসহ তিন বার করে ধৌত করবে। প্রথমে ডান হাত তারপর বাম হাত। একবার মাথা মসেহ করবে। মাথা মাসেহের নিয়ম হচ্ছেঃ দু’হাত পানিতে ভিজিয়ে, ভিজা হাত মাথার সামনের দিক থেকে শুরু করে পিছনের দিকে নিয়ে যাবে, অতঃপর আবার তা সামনের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। এরপর কান মাসেহ করবে। দু’তর্জনী দু’কানের ছিদ্রে প্রবেশ করিয়ে ভিতরের অংশ মাসেহ করবে এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে কানের বাইরের অংশ মাসেহ্ করবে। সব শেষে দু’পা টাখনুসহ তিনবার করে ধৌত করবে। প্রথমে ডান পা তারপর বাম পা।
ওযু শেষ হলে এই দু’আটি পাঠ করবেঃ
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِينَ
“আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু। আল্লাহুম্মাজ্ আলনী মিনাত্ তাওয়াবীনা ওয়াজ্ আলনী মিনাল মুতাতাহ্হেরীন।”
অর্থ- “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত উপাসনার যোগ্য কোন মা‘বুদ নেই। তিনি একক তাঁর কোন শরীক নেই। এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দাহ ও রাসূল। হে আল্লাহ্! আমাকে তওবাকারীদের অন্তর্ভূক্ত কর এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের মধ্যে শামিল কর।”
যে ব্যক্তি ইহা পাঠ করবে তার জন্য বেহেস্তের আটটি দরজাই খুলে দেয়া হবে। যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এভাবেই নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে ছহীহ্ সনদে হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে।[13]
ওযুর সময় কেউ যদি কোন একটি অঙ্গ ধৌত করতে ভুলে যায়, তবে তার বিধান কি?
উত্তরঃ ওযু করার সময় কেউ যদি একটি অঙ্গ ভুলে যায়, তবে যদি অচিরেই তা মনে পড়ে, তাহলে তা ধৌত করবে এবং তার পরবর্তী অঙ্গ ধৌত করবে। যেমন কেউ ওযু করল, কিন্তু বাম হাত ধৌত করতে ভুলে গেল এবং শুধু ডান হাত ধৌত করে মাথা ও কান মাসেহ্ করে ফেলল। দু’পা ধৌত করার পর খেয়াল হল তার বাম হাত ধৌত করা হয়নি। তাকে আমরা বলব, আপনি বাম হাত ধৌত করুন, মাথা ও কান মাসেহ্ করুন এবং দু’পা ধৌত করুন। এই অঙ্গগুলো পুনরায় ধৌত করা এজন্যই ওয়াজিব যে, ওযুতে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আবশ্যক। কেননা ওযুর অঙ্গগুলো যেরূপ ধারাবাহিক ভাবে আল্লাহ্ উল্লেখ করেছেন, সেভাবেই ধারবাহিকতা বজায় রেখে তা করতে হবে। আল্লাহ্ বলেন,
فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ
“তোমরা মুখমন্ডল ধৌত কর, দু’হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, মাথা মাসেহ্ কর এবং দু’পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর।” (সূরা মায়েদা- ৬)
কিন্তু যদি দীর্ঘ সময় পর স্মরণ হয়, তবে পুনরায় ওযু করবে। যেমন কেউ ওযু করার সময় বাম হাত ধৌত করতে ভুলে গেল এবং এভাবেই ওযু শেষ করে ফেলল। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর স্মরণ হল সে তো বাম হাত ধৌত করেনি। তখন তার উপর আবশ্যক হচ্ছে পুনরায় প্রথম থেকে ওযু করা। কেননা ওযুর অঙ্গ সমূহ ধৌত করার ক্ষেত্রে পরম্পরা রক্ষা করা আবশ্যক। বরং ওযু বিশুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত।
জেনে রাখা উচিত, যদি সে সন্দেহে থাকে অর্থাৎ- ওযু শেষ হওয়ার পর সন্দেহ হল, সে ডান হাত বা বাম হাত ধৌত করেছে কি না? কুলি করেছে কি না? নাক ঝেড়েছে কি না? তখন এ সন্দেহের প্রতি গুরুত্বারোপ করবে না। বরং সামনে অগ্রসর হবে এবং নামায আদায় করবে। কেননা ইবাদত শেষ হওয়ার পর কোন সন্দেহ দেখা দিলে সে দিকে ভ্রুক্ষেপ করবে না, তার কোন মূল্য নেই। এ ধরণের সন্দেহের প্রতি গুরুত্বারোপ করলে মানুষের সামনে শয়তানের ওয়াস্ওয়াসার দরজা উম্মুক্ত করা হয়। তখন প্রত্যেক মানুষ নিজ নিজ ইবাদতে সন্দেহ করা শুরু করবে। অতএব আল্লাহর রহমতের অন্তর্ভূক্ত হচ্ছে, ইবাদত সম্পন্ন করার পর কোন সন্দেহ দেখা দিলে মানুষ সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করবে না, তার প্রতি গুরুত্বারোপ করবে না। অবশ্য সন্দেহ যদি দৃঢ়তায় পরিণত হয়, তবে তার ব্যবস্থা নেয়া ওয়াজিব।
নখ পালিশ ব্যবহার করে ওযু করার বিধান কি?
উত্তরঃ নখ পালিশ হচ্ছে এক প্রকার রং যা নারীরা তাদের নখে ব্যবহার করে থাকে। এটি গাঢ় হয়ে থাকে। নারী যদি নামাযী হয় তবে তার জন্য তা ব্যবহার করা জায়েয হবে না। কেননা এটা নখে থাকলে ওযুর পানি নখে পৌঁছবে না। আর কোন বস্তুর কারণে যদি পানি পৌঁছতে বাধার সৃষ্টি হয়, তবে তা ওযু ও গোসলকারীর জন্য ব্যবহার করা জায়েয নয়। কেননা আল্লাহ বলেন, “তোমরা মুখমন্ডল ও হাতদ্বয় ধৌত কর।” (সূরা মায়েদা-৬) অতএব নারীর নখে যদি নখ পালিশ থাকে তবে তা তো পানি পৌঁছতে বাধা দিবে। সুতরাং তা থাকা অবস্থায় ওযু বা গোসল করলে তো তার একটি অঙ্গ শুস্কই রয়ে গেল এবং ওযু বা গোসলের একটি ফরয কাজ পরিত্যাগ করল।
কিন্তু নারী নামাযী না হলে, যেমন ঋতুবতী বা নেফাস বিশিষ্ট হলে, সে এগুলো ব্যবহার করতে পারবে। তবে এ কাজ কাফের নারীদের বৈশিষ্টের অন্তর্গত। তাই উহা ব্যবহার না করাতেই কল্যাণ। কেননা এতে তাদের সাথে সদৃশ্য হয়ে যায়।
আমি শুনেছি, কোন কোন মানুষ নাকি ফতোয়া দিয়েছে যে, এটা হাত মোজা পরিধান করার ন্যায়। সুতরাং গৃহে অবস্থান করলে নারী তা একদিন একরাত, আর সফরে থাকলে তিনদিন তিন রাত ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু এটি ভুল ফতোয়া ও অজ্ঞতা। মানুষের শরীর আচ্ছাদিত করে এমন প্রত্যেক বস্তুকেই মোজার সাথে তুলনা করা উচিত নয়। ইসলামী শরীয়তে যে মোজার উপর মাসেহ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে তা শুধুমাত্র পায়ের মোজার সাথে সংশ্লিষ্ট। আর তা প্রয়োজনের সময়। কেননা ঠান্ডার কারণে বা ময়লা-আবর্জনা থেকে সংরক্ষণ প্রভৃতির জন্য পায়ে মোজা পরিধাণ করার প্রয়োজন পড়ে। এজন্য শরীয়ত মানুষের প্রতি সহজ করে এর উপর মাসেহ করা বৈধ করেছে।
অনেক সময় ওরা নখ পালিশ ব্যবহারকে পাগড়ীর উপর মাসেহ করার সাথে তুলনা করে। এটা আরেক অজ্ঞতা। কেননা পাগড়ীর স্থান হচ্ছে মাথা। আর মাথার ক্ষেত্রে আগে থেকেই সহজ করা রয়েছে। তা ধৌত করতে হবে না। সেখানে মাসেহ করতে হবে। কিন্তু হাত এর বিপরীত। হাতের ফরয হচ্ছে তা ধৌত করা। এ কারণে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারীদের হাত মোজাতে মাসেহ করা বৈধ করেননি। অথচ তা হাত ঢেকে রাখে। অতএব পানি পৌঁছতে বাধাদানকারী যে কোন পর্দা হলেই তাকে পাগড়ী বা মোজার সাথে তুলনা করা জায়েয নয়।
প্রত্যেক মুসলমানের উপর ওয়াজিব হচ্ছে সত্য উদ্ঘাটনের জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করা। এমন কোন ফতোয়া না দেয়া যার জন্য আল্লাহ্র সামনে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। কেননা এটা আল্লাহর দ্বীন ও শরীয়ত, এখানে অনুমান ও ধারণা করে কোন কিছু বলার অবকাশ নেই। (আল্লাহ্ তাওফীক দাতা ও সঠিক পথ প্রদর্শক।)
অসুস্থ ব্যক্তির পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি:
১) অসুস্থ ব্যক্তির উপর আবশ্যক হল ছোট নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জনের জন্য পানি দ্বারা ওজু করা এবং বড় নাপাকী থেকে পবিত্রতা হাসিলের জন্য পানি দ্বারা গোসল করা।
২) পানি দ্বারা যদি পবিত্রতা অর্জন করতে না পারে- অপারগতার কারণে বা রোগ বেড়ে যাবে এই আশংকার কারণে বা ভয় করে সুস্থ হতে দেরী হয়ে যাবে- তবে এহেন পরিস্থিতিতে সে তায়াম্মুম করবে।
৩) তায়াম্মুমের পদ্ধতি হল- হাত দুটিকে পবিত্র মাটিতে একবার মারবে তারপর তা দিয়ে সমস্ত মুখমন্ডল মাসেহ করবে। অতঃপর উভয় হাতকে কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করবে। আগে ডান হাত পরে বাম হাত।
৪) রুগী নিজে যদি পবিত্রতা অর্জন করতে অক্ষম হয়, তবে অন্য ব্যক্তি তাকে ওযু বা তায়াম্মুম করিয়ে দিবে।
৫) ওযু বা গোসলের কোন অঙ্গে যদি যখম থাকে আর পানি দিয়ে ধৌত করলে তাতে ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকে, তবে পানি দিয়ে হাতকে ভিজিয়ে সে স্থানকে মুছে দিবে। এভাবে মুছে দেয়াতেও যদি ক্ষতির আশংকা হয়, তবে তার জন্য তায়াম্মুম করে নিবে।
৬) ভাঙ্গা-মচকা ইত্যাদি কারণে যদি শরীরের কোন অঙ্গে পট্টি বা ব্যান্ডেজ থাকে তবে সে স্থান ধৌত করার পরিবর্তে পানির মাধ্যমে তার উপর মাসেহ করে নিবে। এক্ষেত্রে তায়াম্মুম করবে না। কেননা মাসেহ ধোয়ার পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে।
৭) কোন বস্তু দিয়ে তায়াম্মুম করবে? দেয়াল বা অন্য কোন বস্তু যেখানে ধূলা লেগে আছে তা দিয়ে তায়াম্মুম করা যাবে। দেয়াল যদি মাটি জাতীয় বস্তু ছাড়া অন্য কোন বস্তু দ্বারা লেপন করা থাকে যেমন রং বা পেইন্ট, তবে সেখানে তায়াম্মুম জায়েয হবে না। কিন্তু যদি উক্ত দেয়ালে ধূলা লেগে থাকে তবে তাতে তায়াম্মুম করতে অসুবিধা নেই।
৮) যমিনের উপর হাত রেখে বা দেয়াল থেকে বা যে বস্তুতে ধূলা আছে তা থেকে তায়াম্মুম করা সম্ভব না হয় তবে কোন পাত্র বা রুমালের মধ্যে কিছু মাটি রেখে দিতে পারে। তারপর তা দিয়ে তায়াম্মুম করবে।
৯) এক ওয়াক্তের ছালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে তায়াম্মুম করার পর যদি তায়াম্মুম অবশিষ্ট থাকে তবে তা দিয়ে আরেক ওয়াক্তের ছালাত আদায় করতে পারবে। এক্ষেত্রে পরবর্তী ছালাতের জন্য আবার তায়াম্মুম করার দরকার নেই। কেননা সে তো পবিত্রই আছে। আর পবিত্রতা ভঙ্গকারী কোন কারণও ঘটেনি। এমনিভাবে বড় নাপাকী থেকে যদি তায়াম্মুম করে তবে পরবর্তী বড় নাপাকীতে লিপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত আর তায়াম্মুম করতে হবে না। কিন্তু এর মাঝে ছোট নাপাকীতে লিপ্ত হলে তার জন্য তায়াম্মুম করতে হবে।
১০) অসুস্থ ব্যক্তির উপর ওয়াজিব হল সকল প্রকার নাপাকী থেকে স্বীয় শরীরকে পাক-পবিত্র করা। যদি পাক-পবিত্র হতে সক্ষম না হয়, তবে সংশ্লিষ্ট নাপাকী নিয়েই ছালাত আদায় করবে। তার উক্ত ছালাত বিশুদ্ধ হবে এবং পুনরায় উক্ত ছালাত দোহরাতে হবে না।
১১) পবিত্র কাপড় নিয়ে ছালাত আদায় করাও অসুস্থ ব্যক্তির উপর ওয়াজিব। কাপড় নাপাক হয়ে গেলে তা ধৌত করা অথবা তা বদলিয়ে অন্য কাপড় পরিধান করা ওয়াজিব। কিন্তু এরূপ করা ঐ যদি সাধ্যাতীত হয় তবে সংশ্লিষ্ট নাপাকী নিয়েই ছালাত আদায় করবে। উক্ত ছালাত বিশুদ্ধ হবে এবং তা আর ফিরিয়ে পড়তে হবে না।
১২) পবিত্র স্থান ও পবিত্র বস্তুর উপর ছালাত আদায় করাও রুগীর উপর ওয়াজিব। যদি ছালাতের স্থান নাপাক হয়ে যায় তবে তা ধৌত করা বা কোন পবিত্র বস্তু দ্বারা পরিবর্তন করা বা সেখানে কোন পবিত্র বস্তু বিছিয়ে দেয়া ওয়াজিব। যদি এর কোনটাই সম্ভব না হয় তবুও ঐ অবস্থায় ছালাত আদায় করবে এবং তার ছালাত শুদ্ধ হবে। অন্য সময় তা ফিরিয়ে পড়ারও দরকার হবে না।
১৩) পবিত্রতা হাসিল করতে অপারগতার কারণে কোন রুগীর জন্য ছালাত পরিত্যাগ করা বা কাযা করা কোন ক্রমেই বৈধ নয়। সাধ্যানুযায়ী সে পবিত্রতা অর্জন করবে। তারপর সময়ের মধ্যেই ছালাত আদায় করে নিবে- যদিও তখন তার শরীরে বা কাপড়ে বা ছালাতের স্থানে নাপাকী লেগেই থাকে যা দূরীভূত করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। কেননা আল্লাহ্ তাআলা বলেন: فاَتَّقُوا اللهَ ماَ اسْتَطَعْتُمْ অর্থ: তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহ্কে ভয় কর। (সূরা তাগাবূন: ১৬)
১৪) কোন মানুষ যদি বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত থাকে, তবে সে ছালাতের ওয়াক্ত আসার আগে যেন ওযু না করে। যখন ছালাতের ওয়াক্ত আসবে তখন তার লজ্জাস্থান ধৌত করবে, তারপর উক্ত স্থানে পবিত্র কোন বস্তু বেঁধে দিবে যাতে পেশাব কাপড় বা শরীরে ছড়িয়ে না যায়। তারপর ওযু করে ছালাত আদায় করবে। এরূপ সে প্রত্যেক ফরয ছালাতের সময় করবে। এরূপ করা যদি তার উপর অধিক কষ্টকর হয় তবে দু্লছালাতকে একত্রে পড়া তার জন্য জায়েয আছে। যোহর এবং আছর একত্রে এবং মাগরিব ও এশা একত্রে আদায় করে নিবে। আর ফরয ছালাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সুন্নাতের জন্য আলাদা ওযু দরকার নাই তবে অন্য কোন নফল ছালাত আদায় করতে চাইলে তাকে ফরযের নিয়মে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে।
____
[13] মুসলিম, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ ওযুর পর মুস্তাহাব দু’আ। তিরমিযী, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, হা/ ৫০।
উত্তরঃ শরীয়ত সম্মত ওযুর পদ্ধতি দু’ভাগে বিভক্তঃ
প্রথম ভাগ হচ্ছে: ওয়াজিব পদ্ধতি। যা না করলে ওযুই হবে না। আর তা হচ্ছে পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত বিষয় সমূহ। আল্লাহ্ বলেনঃ
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ
“হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা ছালাতের ইচ্ছা কর, তখন তোমরা মুখমন্ডল ও হাত দু’টি কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং দু’পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর।” (সূরা মায়িদা- ৬)
এর বর্ণনা হচ্ছে, মুখমন্ডল একবার ধৌত করতে হবে। কুলি করা ও নাক ঝাড়া মুখমন্ডল ধৌত করার অন্তর্গত। হাত ধৌত করার সীমানা হচ্ছে মধ্যমা আঙ্গুলের প্রান্ত সীমা থেকে কনুই পর্যন্ত একবার ধৌত করা। হাত ধৌত করার সময় কব্জি ধৌত করা হল কি না এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। অনেক লোক অসতর্কতা বশত: শুধু হাতের উপর অংশ ধৌত করে এবং কব্জি ছেড়ে দেয়। এটা বিরাট ভুল। তারপর একবার মাথা মাসেহ করা। কান মাসেহ করা মাথা মাসেহের অন্তর্গত। শেষে দু’পা টাখনু পর্যন্ত একবার ধৌত করা। এটা হচ্ছে ওযুর সর্বনিম্ন ওয়াজিব পদ্ধতি।
দ্বিতীয় ভাগ হচ্ছেঃ মুস্তাহাব পদ্ধতি। প্রথমে বিস্মিল্লাহ্ বলে ওযু শুরু করবে। দু’হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবে। তারপর তিন চুল্লু পানি দ্বারা তিনবার কুলি করবে ও নাক ঝাড়বে। তিনবার মুখমন্ডল ধৌত করবে। এরপর দু’হাত কনুইসহ তিন বার করে ধৌত করবে। প্রথমে ডান হাত তারপর বাম হাত। একবার মাথা মসেহ করবে। মাথা মাসেহের নিয়ম হচ্ছেঃ দু’হাত পানিতে ভিজিয়ে, ভিজা হাত মাথার সামনের দিক থেকে শুরু করে পিছনের দিকে নিয়ে যাবে, অতঃপর আবার তা সামনের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। এরপর কান মাসেহ করবে। দু’তর্জনী দু’কানের ছিদ্রে প্রবেশ করিয়ে ভিতরের অংশ মাসেহ করবে এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে কানের বাইরের অংশ মাসেহ্ করবে। সব শেষে দু’পা টাখনুসহ তিনবার করে ধৌত করবে। প্রথমে ডান পা তারপর বাম পা।
ওযু শেষ হলে এই দু’আটি পাঠ করবেঃ
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِينَ
“আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু। আল্লাহুম্মাজ্ আলনী মিনাত্ তাওয়াবীনা ওয়াজ্ আলনী মিনাল মুতাতাহ্হেরীন।”
অর্থ- “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত উপাসনার যোগ্য কোন মা‘বুদ নেই। তিনি একক তাঁর কোন শরীক নেই। এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দাহ ও রাসূল। হে আল্লাহ্! আমাকে তওবাকারীদের অন্তর্ভূক্ত কর এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের মধ্যে শামিল কর।”
যে ব্যক্তি ইহা পাঠ করবে তার জন্য বেহেস্তের আটটি দরজাই খুলে দেয়া হবে। যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এভাবেই নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে ছহীহ্ সনদে হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে।[13]
ওযুর সময় কেউ যদি কোন একটি অঙ্গ ধৌত করতে ভুলে যায়, তবে তার বিধান কি?
উত্তরঃ ওযু করার সময় কেউ যদি একটি অঙ্গ ভুলে যায়, তবে যদি অচিরেই তা মনে পড়ে, তাহলে তা ধৌত করবে এবং তার পরবর্তী অঙ্গ ধৌত করবে। যেমন কেউ ওযু করল, কিন্তু বাম হাত ধৌত করতে ভুলে গেল এবং শুধু ডান হাত ধৌত করে মাথা ও কান মাসেহ্ করে ফেলল। দু’পা ধৌত করার পর খেয়াল হল তার বাম হাত ধৌত করা হয়নি। তাকে আমরা বলব, আপনি বাম হাত ধৌত করুন, মাথা ও কান মাসেহ্ করুন এবং দু’পা ধৌত করুন। এই অঙ্গগুলো পুনরায় ধৌত করা এজন্যই ওয়াজিব যে, ওযুতে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আবশ্যক। কেননা ওযুর অঙ্গগুলো যেরূপ ধারাবাহিক ভাবে আল্লাহ্ উল্লেখ করেছেন, সেভাবেই ধারবাহিকতা বজায় রেখে তা করতে হবে। আল্লাহ্ বলেন,
فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ
“তোমরা মুখমন্ডল ধৌত কর, দু’হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, মাথা মাসেহ্ কর এবং দু’পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর।” (সূরা মায়েদা- ৬)
কিন্তু যদি দীর্ঘ সময় পর স্মরণ হয়, তবে পুনরায় ওযু করবে। যেমন কেউ ওযু করার সময় বাম হাত ধৌত করতে ভুলে গেল এবং এভাবেই ওযু শেষ করে ফেলল। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর স্মরণ হল সে তো বাম হাত ধৌত করেনি। তখন তার উপর আবশ্যক হচ্ছে পুনরায় প্রথম থেকে ওযু করা। কেননা ওযুর অঙ্গ সমূহ ধৌত করার ক্ষেত্রে পরম্পরা রক্ষা করা আবশ্যক। বরং ওযু বিশুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত।
জেনে রাখা উচিত, যদি সে সন্দেহে থাকে অর্থাৎ- ওযু শেষ হওয়ার পর সন্দেহ হল, সে ডান হাত বা বাম হাত ধৌত করেছে কি না? কুলি করেছে কি না? নাক ঝেড়েছে কি না? তখন এ সন্দেহের প্রতি গুরুত্বারোপ করবে না। বরং সামনে অগ্রসর হবে এবং নামায আদায় করবে। কেননা ইবাদত শেষ হওয়ার পর কোন সন্দেহ দেখা দিলে সে দিকে ভ্রুক্ষেপ করবে না, তার কোন মূল্য নেই। এ ধরণের সন্দেহের প্রতি গুরুত্বারোপ করলে মানুষের সামনে শয়তানের ওয়াস্ওয়াসার দরজা উম্মুক্ত করা হয়। তখন প্রত্যেক মানুষ নিজ নিজ ইবাদতে সন্দেহ করা শুরু করবে। অতএব আল্লাহর রহমতের অন্তর্ভূক্ত হচ্ছে, ইবাদত সম্পন্ন করার পর কোন সন্দেহ দেখা দিলে মানুষ সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করবে না, তার প্রতি গুরুত্বারোপ করবে না। অবশ্য সন্দেহ যদি দৃঢ়তায় পরিণত হয়, তবে তার ব্যবস্থা নেয়া ওয়াজিব।
নখ পালিশ ব্যবহার করে ওযু করার বিধান কি?
উত্তরঃ নখ পালিশ হচ্ছে এক প্রকার রং যা নারীরা তাদের নখে ব্যবহার করে থাকে। এটি গাঢ় হয়ে থাকে। নারী যদি নামাযী হয় তবে তার জন্য তা ব্যবহার করা জায়েয হবে না। কেননা এটা নখে থাকলে ওযুর পানি নখে পৌঁছবে না। আর কোন বস্তুর কারণে যদি পানি পৌঁছতে বাধার সৃষ্টি হয়, তবে তা ওযু ও গোসলকারীর জন্য ব্যবহার করা জায়েয নয়। কেননা আল্লাহ বলেন, “তোমরা মুখমন্ডল ও হাতদ্বয় ধৌত কর।” (সূরা মায়েদা-৬) অতএব নারীর নখে যদি নখ পালিশ থাকে তবে তা তো পানি পৌঁছতে বাধা দিবে। সুতরাং তা থাকা অবস্থায় ওযু বা গোসল করলে তো তার একটি অঙ্গ শুস্কই রয়ে গেল এবং ওযু বা গোসলের একটি ফরয কাজ পরিত্যাগ করল।
কিন্তু নারী নামাযী না হলে, যেমন ঋতুবতী বা নেফাস বিশিষ্ট হলে, সে এগুলো ব্যবহার করতে পারবে। তবে এ কাজ কাফের নারীদের বৈশিষ্টের অন্তর্গত। তাই উহা ব্যবহার না করাতেই কল্যাণ। কেননা এতে তাদের সাথে সদৃশ্য হয়ে যায়।
আমি শুনেছি, কোন কোন মানুষ নাকি ফতোয়া দিয়েছে যে, এটা হাত মোজা পরিধান করার ন্যায়। সুতরাং গৃহে অবস্থান করলে নারী তা একদিন একরাত, আর সফরে থাকলে তিনদিন তিন রাত ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু এটি ভুল ফতোয়া ও অজ্ঞতা। মানুষের শরীর আচ্ছাদিত করে এমন প্রত্যেক বস্তুকেই মোজার সাথে তুলনা করা উচিত নয়। ইসলামী শরীয়তে যে মোজার উপর মাসেহ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে তা শুধুমাত্র পায়ের মোজার সাথে সংশ্লিষ্ট। আর তা প্রয়োজনের সময়। কেননা ঠান্ডার কারণে বা ময়লা-আবর্জনা থেকে সংরক্ষণ প্রভৃতির জন্য পায়ে মোজা পরিধাণ করার প্রয়োজন পড়ে। এজন্য শরীয়ত মানুষের প্রতি সহজ করে এর উপর মাসেহ করা বৈধ করেছে।
অনেক সময় ওরা নখ পালিশ ব্যবহারকে পাগড়ীর উপর মাসেহ করার সাথে তুলনা করে। এটা আরেক অজ্ঞতা। কেননা পাগড়ীর স্থান হচ্ছে মাথা। আর মাথার ক্ষেত্রে আগে থেকেই সহজ করা রয়েছে। তা ধৌত করতে হবে না। সেখানে মাসেহ করতে হবে। কিন্তু হাত এর বিপরীত। হাতের ফরয হচ্ছে তা ধৌত করা। এ কারণে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারীদের হাত মোজাতে মাসেহ করা বৈধ করেননি। অথচ তা হাত ঢেকে রাখে। অতএব পানি পৌঁছতে বাধাদানকারী যে কোন পর্দা হলেই তাকে পাগড়ী বা মোজার সাথে তুলনা করা জায়েয নয়।
প্রত্যেক মুসলমানের উপর ওয়াজিব হচ্ছে সত্য উদ্ঘাটনের জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করা। এমন কোন ফতোয়া না দেয়া যার জন্য আল্লাহ্র সামনে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। কেননা এটা আল্লাহর দ্বীন ও শরীয়ত, এখানে অনুমান ও ধারণা করে কোন কিছু বলার অবকাশ নেই। (আল্লাহ্ তাওফীক দাতা ও সঠিক পথ প্রদর্শক।)
অসুস্থ ব্যক্তির পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি:
১) অসুস্থ ব্যক্তির উপর আবশ্যক হল ছোট নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জনের জন্য পানি দ্বারা ওজু করা এবং বড় নাপাকী থেকে পবিত্রতা হাসিলের জন্য পানি দ্বারা গোসল করা।
২) পানি দ্বারা যদি পবিত্রতা অর্জন করতে না পারে- অপারগতার কারণে বা রোগ বেড়ে যাবে এই আশংকার কারণে বা ভয় করে সুস্থ হতে দেরী হয়ে যাবে- তবে এহেন পরিস্থিতিতে সে তায়াম্মুম করবে।
৩) তায়াম্মুমের পদ্ধতি হল- হাত দুটিকে পবিত্র মাটিতে একবার মারবে তারপর তা দিয়ে সমস্ত মুখমন্ডল মাসেহ করবে। অতঃপর উভয় হাতকে কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করবে। আগে ডান হাত পরে বাম হাত।
৪) রুগী নিজে যদি পবিত্রতা অর্জন করতে অক্ষম হয়, তবে অন্য ব্যক্তি তাকে ওযু বা তায়াম্মুম করিয়ে দিবে।
৫) ওযু বা গোসলের কোন অঙ্গে যদি যখম থাকে আর পানি দিয়ে ধৌত করলে তাতে ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকে, তবে পানি দিয়ে হাতকে ভিজিয়ে সে স্থানকে মুছে দিবে। এভাবে মুছে দেয়াতেও যদি ক্ষতির আশংকা হয়, তবে তার জন্য তায়াম্মুম করে নিবে।
৬) ভাঙ্গা-মচকা ইত্যাদি কারণে যদি শরীরের কোন অঙ্গে পট্টি বা ব্যান্ডেজ থাকে তবে সে স্থান ধৌত করার পরিবর্তে পানির মাধ্যমে তার উপর মাসেহ করে নিবে। এক্ষেত্রে তায়াম্মুম করবে না। কেননা মাসেহ ধোয়ার পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে।
৭) কোন বস্তু দিয়ে তায়াম্মুম করবে? দেয়াল বা অন্য কোন বস্তু যেখানে ধূলা লেগে আছে তা দিয়ে তায়াম্মুম করা যাবে। দেয়াল যদি মাটি জাতীয় বস্তু ছাড়া অন্য কোন বস্তু দ্বারা লেপন করা থাকে যেমন রং বা পেইন্ট, তবে সেখানে তায়াম্মুম জায়েয হবে না। কিন্তু যদি উক্ত দেয়ালে ধূলা লেগে থাকে তবে তাতে তায়াম্মুম করতে অসুবিধা নেই।
৮) যমিনের উপর হাত রেখে বা দেয়াল থেকে বা যে বস্তুতে ধূলা আছে তা থেকে তায়াম্মুম করা সম্ভব না হয় তবে কোন পাত্র বা রুমালের মধ্যে কিছু মাটি রেখে দিতে পারে। তারপর তা দিয়ে তায়াম্মুম করবে।
৯) এক ওয়াক্তের ছালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে তায়াম্মুম করার পর যদি তায়াম্মুম অবশিষ্ট থাকে তবে তা দিয়ে আরেক ওয়াক্তের ছালাত আদায় করতে পারবে। এক্ষেত্রে পরবর্তী ছালাতের জন্য আবার তায়াম্মুম করার দরকার নেই। কেননা সে তো পবিত্রই আছে। আর পবিত্রতা ভঙ্গকারী কোন কারণও ঘটেনি। এমনিভাবে বড় নাপাকী থেকে যদি তায়াম্মুম করে তবে পরবর্তী বড় নাপাকীতে লিপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত আর তায়াম্মুম করতে হবে না। কিন্তু এর মাঝে ছোট নাপাকীতে লিপ্ত হলে তার জন্য তায়াম্মুম করতে হবে।
১০) অসুস্থ ব্যক্তির উপর ওয়াজিব হল সকল প্রকার নাপাকী থেকে স্বীয় শরীরকে পাক-পবিত্র করা। যদি পাক-পবিত্র হতে সক্ষম না হয়, তবে সংশ্লিষ্ট নাপাকী নিয়েই ছালাত আদায় করবে। তার উক্ত ছালাত বিশুদ্ধ হবে এবং পুনরায় উক্ত ছালাত দোহরাতে হবে না।
১১) পবিত্র কাপড় নিয়ে ছালাত আদায় করাও অসুস্থ ব্যক্তির উপর ওয়াজিব। কাপড় নাপাক হয়ে গেলে তা ধৌত করা অথবা তা বদলিয়ে অন্য কাপড় পরিধান করা ওয়াজিব। কিন্তু এরূপ করা ঐ যদি সাধ্যাতীত হয় তবে সংশ্লিষ্ট নাপাকী নিয়েই ছালাত আদায় করবে। উক্ত ছালাত বিশুদ্ধ হবে এবং তা আর ফিরিয়ে পড়তে হবে না।
১২) পবিত্র স্থান ও পবিত্র বস্তুর উপর ছালাত আদায় করাও রুগীর উপর ওয়াজিব। যদি ছালাতের স্থান নাপাক হয়ে যায় তবে তা ধৌত করা বা কোন পবিত্র বস্তু দ্বারা পরিবর্তন করা বা সেখানে কোন পবিত্র বস্তু বিছিয়ে দেয়া ওয়াজিব। যদি এর কোনটাই সম্ভব না হয় তবুও ঐ অবস্থায় ছালাত আদায় করবে এবং তার ছালাত শুদ্ধ হবে। অন্য সময় তা ফিরিয়ে পড়ারও দরকার হবে না।
১৩) পবিত্রতা হাসিল করতে অপারগতার কারণে কোন রুগীর জন্য ছালাত পরিত্যাগ করা বা কাযা করা কোন ক্রমেই বৈধ নয়। সাধ্যানুযায়ী সে পবিত্রতা অর্জন করবে। তারপর সময়ের মধ্যেই ছালাত আদায় করে নিবে- যদিও তখন তার শরীরে বা কাপড়ে বা ছালাতের স্থানে নাপাকী লেগেই থাকে যা দূরীভূত করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। কেননা আল্লাহ্ তাআলা বলেন: فاَتَّقُوا اللهَ ماَ اسْتَطَعْتُمْ অর্থ: তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহ্কে ভয় কর। (সূরা তাগাবূন: ১৬)
১৪) কোন মানুষ যদি বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত থাকে, তবে সে ছালাতের ওয়াক্ত আসার আগে যেন ওযু না করে। যখন ছালাতের ওয়াক্ত আসবে তখন তার লজ্জাস্থান ধৌত করবে, তারপর উক্ত স্থানে পবিত্র কোন বস্তু বেঁধে দিবে যাতে পেশাব কাপড় বা শরীরে ছড়িয়ে না যায়। তারপর ওযু করে ছালাত আদায় করবে। এরূপ সে প্রত্যেক ফরয ছালাতের সময় করবে। এরূপ করা যদি তার উপর অধিক কষ্টকর হয় তবে দু্লছালাতকে একত্রে পড়া তার জন্য জায়েয আছে। যোহর এবং আছর একত্রে এবং মাগরিব ও এশা একত্রে আদায় করে নিবে। আর ফরয ছালাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সুন্নাতের জন্য আলাদা ওযু দরকার নাই তবে অন্য কোন নফল ছালাত আদায় করতে চাইলে তাকে ফরযের নিয়মে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে।
____
[13] মুসলিম, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ ওযুর পর মুস্তাহাব দু’আ। তিরমিযী, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, হা/ ৫০।
মূল: শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমীন (রহ.) ।
অনুবাদক: মুহাঃ আব্দুল্লাহ আল-কাফী ও আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী
Post a Comment