ছালাতের আবশ্যিক পূর্বশর্ত হ’ল ত্বাহারৎ বা পবিত্রতা অর্জন করা। যা দু’প্রকারের : আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক, অর্থাৎ দৈহিক। ‘আভ্যন্তরীণ পবিত্রতা’ বলতে বুঝায় হৃদয়কে যাবতীয় শিরকী আক্বীদা ও ‘রিয়া’ মুক্ত রাখা এবং আল্লাহর ভালবাসার ঊর্ধ্বে অন্যের ভালবাসাকে হৃদয়ে স্থান না দেওয়া। ‘দৈহিক পবিত্রতা’ বলতে বুঝায় শারঈ তরীকায় ওযূ, গোসল বা তায়াম্মুম সম্পন্ন করা। আল্লাহ বলেন, إِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ (البقرة ২২২)- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ (অন্তর থেকে) তওবাকারী ও (দৈহিকভাবে) পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন’ (বাক্বারাহ ২/২২২)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, لاَ تُقْبَلُ صَلاَةٌ بِغَيْرِ طُهُوْرٍ وَلاَ صَدَقَةٌ مِنْ غُلُوْلٍ ‘পবিত্রতা অর্জন ব্যতীত কারু ছালাত কবুল হয় না এবং হারাম মালের ছাদাক্বা কবুল হয় না’। [1]
মুছল্লীর জন্য দৈহিক পবিত্রতা অর্জন করা অত্যন্ত যরূরী। কেননা এর ফলে বাহ্যিক পবিত্রতা হাছিলের সাথে সাথে মানসিক প্রশান্তি সৃষ্টি হয়, শয়তানী খেয়াল দূরীভূত হয় এবং মুমিনকে আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। ইসলামে দৈহিক পবিত্রতা হাছিলের তিনটি পদ্ধতি রয়েছে- ওযূ, গোসল ও তায়াম্মুম।
(ক) ওযূ ( الوُضوء ) :
আভিধানিক অর্থ স্বচ্ছতা (الوَضاءة)। পারিভাষিক অর্থে পবিত্র পানি দ্বারা শারঈ পদ্ধতিতে হাত, মুখ, পা ধৌত করা ও (ভিজা হাতে) মাথা মাসাহ করাকে ‘ওযূ’ বলে।
ওযূর ফরয : ওযূর মধ্যে ফরয হ’ল চারটি। ১. কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া ও ঝাড়া সহ পুরা মুখমন্ডল ভালভাবে ধৌত করা। ২. দুই হাত কনুই সমেত ধৌত করা, ৩. (ভিজা হাতে) কানসহ মাথা মাসাহ করা ও ৪. দুই পা টাখনু সমেত ধৌত করা।
যেমন আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلاَةِ فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ وَأَيْدِيْكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوْا بِرُءُوْسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ ... (المائدة 6)-
অর্থ : ‘হে বিশ্বাসীগণ! যখন তোমরা ছালাতের জন্য প্রস্ত্তত হও, তখন তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় কনুই সমেত ধৌত কর এবং তোমাদের মাথা মাসাহ কর ও পদযুগল টাখনু সমেত ধৌত কর.....’ (মায়েদাহ ৬)।[2]
অত্র আয়াতে বর্ণিত চারটি ফরয বাদে ওযূর বাকী সবই সুন্নাত।
ওযূর ফযীলত ( فضائل الوضوء) :
(১) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,...... কালো ঘোড়া সমূহের মধ্যে কপাল চিতা ঘোড়া যেভাবে চেনা যায়.. ক্বিয়ামতের দিন আমার উম্মতের ওযূর অঙ্গগুলির ঔজ্জ্বল্য দেখে আমি তাদেরকে অনুরূপভাবে চিনব এবং তাদেরকে হাউয কাওছারের পানি পান করানোর জন্য আগেই পৌঁছে যাব’।[3] ‘অতএব যে চায় সে যেন তার ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে চেষ্টা করে’।[4]
(২) তিনি বলেন, ‘আমি কি তোমাদের বলব কোন্ বস্ত্ত দ্বারা আল্লাহ তোমাদের গোনাহ সমূহ অধিকহারে দূর করেন ও সম্মানের স্তর বৃদ্ধি করেন?..... সেটি হ’ল কষ্টের সময় ভালভাবে ওযূ করা, বেশী বেশী মসজিদে যাওয়া ও এক ছালাতের পরে আরেক ছালাতের জন্য অপেক্ষা করা’।[5]
(৩) তিনি আরও বলেন, ‘ছালাতের চাবি হ’ল ওযূ’।[6]
(৪) তিনি বলেন, ‘মুসলমান যখন ফরয ছালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে সুন্দরভাবে ওযূ করে এবং পূর্ণ মনোনিবেশ ও ভীতি সহকারে সুষ্ঠুভাবে রুকূ-সিজদা আদায় করে, তখন ঐ ওযূ ও ছালাত তার বিগত সকল গুনাহের কাফফারা হিসাবে গৃহীত হয়। তবে গোনাহে কাবীরাহ ব্যতীত’।[7] অন্য বর্ণনায় এসেছে, ঐ ব্যক্তি গোনাহ থেকে এমনভাবে মুক্ত হয়, যেমনভাবে তার মা তাকে পরিচ্ছন্নভাবে প্রসব করেছিল।[8]
(৫) ওযূ করার পর সর্বদা দু’রাক‘আত ‘তাহিইয়াতুল ওযূ’ এবং মসজিদে প্রবেশ করার পর দু’রাক‘আত ‘তাহিইয়াতুল মাসজিদ’ নফল ছালাত আদায় করবে। এই আকাংখিত সদভ্যাসের কারণেই জান্নাতে বেলাল (রাঃ)-এর অগ্রগামী পদশব্দ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বপ্নের মধ্যে শুনেছিলেন।[9] তবে মসজিদে গিয়ে জামা‘আত চলা অবস্থায় পেলে কিংবা এক্বামত হয়ে গেলে সরাসরি জামা‘আতে যোগ দিবে।[10]
ওযূর বিবরণ ( صفة الوضوء) :
ওযূর পূর্বে ভালভাবে মিসওয়াক করা সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,
لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِيْ لَأَمَرْتُهُم ْ بِتَأْخِيْرِ الْعِشَاءِ وَ بِِالسِّوَاكِ عِنْدَ كُلِّ صَلاَةٍ-
‘আমার উম্মতের উপর কষ্টকর মনে না করলে আমি তাদেরকে এশার ছালাত দেরীতে এবং প্রতি ছালাতে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম’।[11] এখানে ‘প্রতি ছালাতে’ অর্থ ‘প্রতি ছালাতের জন্য ওযূ করার সময়’। [12] অতএব ঘুম থেকে উঠে এবং প্রতি ওয়াক্ত ছালাতের জন্য ওযূর পূর্বে মিসওয়াক করা উত্তম। এই সময় জিহবার উপরে ভালভাবে হাত ঘষে গরগরা ও কুলি করবে।
ওযূর তরীকা : (১) প্রথমে মনে মনে ওযূর নিয়ত করবে।[13] অতঃপর (২) ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে। [14] অতঃপর (৩) ডান হাতে পানি নিয়ে[15] দুই হাত কব্জি সমেত ধুবে[16] এবং আঙ্গুল সমূহ খিলাল করবে।[17] এরপর (৪) ডান হাতে পানি নিয়ে ভালভাবে কুলি করবে ও প্রয়োজনে নতুন পানি নিয়ে নাকে দিয়ে বাম হাতে ভালভাবে নাক ঝাড়বে।[18] তারপর (৫) কপালের গোড়া থেকে দুই কানের লতী হয়ে থুৎনীর নীচ পর্যন্ত পুরা মুখমন্ডল ধৌত করবে [19] ও দাড়ি খিলাল করবে।[20] এজন্য এক অঞ্জলি পানি নিয়ে থুৎনীর নীচে দিবে।[21] অতঃপর (৬) প্রথমে ডান ও পরে বাম হাত কনুই সমেত ধুবে। [22] এরপর (৭) পানি নিয়ে[23] দু’হাতের ভিজা আংগুলগুলি মাথার সম্মুখ হ’তে পিছনে ও পিছন হ’তে সম্মুখে বুলিয়ে একবার পুরা মাথা মাসাহ করবে।[24] একই সাথে ভিজা শাহাদাত আংগুল দ্বারা কানের ভিতর অংশে ও বুড়ো আংগুল দ্বারা পিছন অংশে মাসাহ করবে।[25] পাগড়ীবিহীন অবস্থায় মাথার কিছু অংশ বা এক চতুর্থাংশ মাথা মাসাহ করার কোন দলীল নেই। বরং কেবল পূর্ণ মাথা অথবা মাথার সামনের কিছু অংশ সহ পাগড়ীর উপর মাসাহ অথবা কেবল পাগড়ীর উপর মাসাহ প্রমাণিত।[26] অতঃপর (৮) ডান ও বাম পায়ের টাখনু সমেত ভালভাবে ধুবে [27] ও বাম হাতের আংগুল দ্বারা[28] পায়ের আংগুল সমূহ খিলাল করবে। (৯) এভাবে ওযূ শেষে বাম হাতে কিছু পানি নিয়ে লজ্জাস্থান বরাবর ছিটিয়ে দিবে[29] ও নিম্নোক্ত দো‘আ পাঠ করবে-
أَشْهَدُ أَنْ لآ إلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، اَللَّهُمَّ اجْعَلْنِيْ مِنَ التَّوابِيْنَ وَاجْعَلْنِيْ مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ-
উচ্চারণ : আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা-শারীকা লাহূ, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আব্দুহূ ওয়া রাসূলুহু। আল্লা-হুম্মাজ্‘আল্নী মিনাত্ তাউয়াবীনা ওয়াজ্‘আল্নী মিনাল মুতাত্বাহ্হিরীন।
অর্থ : ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি একক ও শরীক বিহীন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল’ (মুসলিম)। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে তওবাকারীদের ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন!! (তিরমিযী)।
ওমর ফারূক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত উক্ত হাদীছে রাসূল (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি পূর্ণভাবে ওযূ করবে ও কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হবে। যেটা দিয়ে ইচ্ছা সে প্রবেশ করবে’।[30]
( খ) গোসলের বিবরণ ( صفة الغسل) :
সংজ্ঞা : ‘গোসল’ (الغُسْلُ) অর্থ ধৌত করা। শারঈ পরিভাষায় গোসল অর্থ : পবিত্রতা অর্জনের নিয়তে ওযূ করে সর্বাঙ্গ ধৌত করা। গোসল দু’প্রকার : ফরয ও মুস্তাহাব।
(১) ফরয : ঐ গোসলকে বলা হয়, যা করা অপরিহার্য। বালেগ বয়সে নাপাক হ’লে গোসল ফরয হয়। যেমন- আল্লাহ বলেন, وَ إِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوْا ‘যদি তোমরা নাপাক হয়ে থাক, তবে গোসল কর’ (মায়েদাহ ৬)।
(২) মুস্তাহাব : ঐ গোসলকে বলা হয়, যা অপরিহার্য নয়। কিন্তু করলে নেকী আছে। যেমন- জুম‘আর দিনে বা দুই ঈদের দিনে গোসল করা। সাধারণ গোসলের পূর্বে ওযূ করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সাইয়িদ সাবিক্ব একে ‘মানদূব’ (পসন্দনীয়) বলেছেন।[62]
গোসলের পদ্ধতি : ফরয গোসলের জন্য প্রথমে দু’হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুবে ও পরে নাপাকী ছাফ করবে। অতঃপর ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ছালাতের ওযূর ন্যায় ওযূ করবে। অতঃপর প্রথমে মাথায় তিনবার পানি ঢেলে চুলের গোড়ায় খিলাল করে ভালভাবে পানি পৌঁছাবে। তারপর সারা দেহে পানি ঢালবে ও গোসল সম্পন্ন করবে। [63]
জ্ঞাতব্য : (১) গোসলের সময় মেয়েদের মাথার খোপা খোলার দরকার নেই। কেবল চুলের গোড়ায় তিনবার তিন চুল্লু পানি পৌঁছাতে হবে। অতঃপর সারা দেহে পানি ঢালবে। [64]
(২) রাসূল (ছাঃ) এক মুদ্দ (৬২৫ গ্রাম) পানি দিয়ে ওযূ এবং অনধিক পাঁচ মুদ্দ (৩১২৫ গ্রাম) বা প্রায় সোয়া তিন কেজি পানি দিয়ে গোসল করতেন। [65] প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি অপচয় করা ঠিক নয়।
(৩) নারী হৌক পুরুষ হৌক সকলকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পর্দার মধ্যে গোসল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।[66]
(৪) বাথরুমে বা পর্দার মধ্যে বা দূরে লোকচক্ষুর অন্তরালে নগ্নাবস্থায় গোসল করায় কোন দোষ নেই।[67]
(৫) ওযূ সহ গোসল করার পর ওযূ ভঙ্গ না হ’লে পুনরায় ওযূর প্রয়োজন নেই।[68]
(৬) ফরয গোসলের পূর্বে নাপাক অবস্থায় পবিত্র কুরআন স্পর্শ করা যাবে না। তবে মুখে কুরআন পাঠ করা এবং মসজিদে প্রবেশ করা জায়েয আছে।[69] সাধারণ অপবিত্রতায় কুরআন স্পর্শ করা বা বহন করা জায়েয আছে। [70]
মুস্তাহাব গোসল সমূহ :
(১) জুম‘আর ছালাতের পূর্বে গোসল করা।[71]
(২) মোর্দা গোসল দানকারীর জন্য গোসল করা।[72]
(৩) ইসলাম গ্রহণের সময় গোসল করা।[73]
(৪) হজ্জ বা ওমরাহর জন্য ইহরাম বাঁধার পূর্বে গোসল করা।[74]
(৫) আরাফার দিন গোসল করা।[75]
(৬) দুই ঈদের দিন সকালে গোসল করা।[76]
(গ) তায়াম্মুমের বিবরণ (صفة التيمم ) :
সংজ্ঞা : তায়াম্মুম (التيمم) অর্থ ‘সংকল্প করা’। পারিভাষিক অর্থে : ‘পানি না পাওয়া গেলে ওযূ বা গোসলের পরিবর্তে পাক মাটি দ্বারা পবিত্রতা অর্জনের ইসলামী পদ্ধতিকে ‘তায়াম্মুম’ বলে’। এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহর অন্যতম বিশেষ অনুগ্রহ। যা ইতিপূর্বে কোন উম্মতকে দেওয়া হয়নি। [77] আল্লাহ বলেন,
وَإِنْ كُنْتُمْ مَرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ أَوْ لآمَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَآءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَأَيْدِيْكُمْ مِنْهُ، (المائدة 6)-
‘আর যদি তোমরা পীড়িত হও কিংবা সফরে থাক অথবা পায়খানা থেকে আস কিংবা স্ত্রী স্পর্শ করে থাক, অতঃপর পানি না পাও, তাহ’লে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা ‘তায়াম্মুম’ কর ও তা দ্বারা তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় মাসাহ কর’...।[78]
পদ্ধতি : পবিত্রতা অর্জনের নিয়তে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে মাটির উপর দু’হাত মেরে তাতে ফুঁক দিয়ে মুখমন্ডল ও দু’হাতের কব্জি পর্যন্ত একবার বুলাবে।[79] দুইবার হাত মারা ও কনুই পর্যন্ত মাসাহ করার হাদীছ যঈফ। [80]
তায়াম্মুমের কারণ সমূহ :
(১) যদি পাক পানি না পাওয়া যায় (২) পানি পেতে গেলে যদি ছালাত ক্বাযা হওয়ার ভয় থাকে (৩) পানি ব্যবহারে যদি রোগ বৃদ্ধির আশংকা থাকে (৪) যদি কোন বিপদ বা জীবনের ঝুঁকি থাকে ইত্যাদি। উপরোক্ত কারণ সমূহের প্রেক্ষিতে ওযূ বা ফরয গোসলের পরিবর্তে প্রয়োজনে দীর্ঘদিন যাবৎ একটানা ‘তায়াম্মুম’ করা যাবে। [81]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,
إِنَّ الصَّعِيْدَ الطَّيِّبَ وَضُوْءُ الْمُسْلِمِ وَإِنْ لَمْ يَجِدِ الْمَاءَ عَشْرَ سِنِيْنَ...
‘নিশ্চয়ই পবিত্র মাটি মুসলমানদের জন্য ওযূর মাধ্যম স্বরূপ। যদিও সে ১০ বছর পর্যন্ত পানি না পায়’। [82]
পবিত্র মাটি :
আরবী পরিভাষায় ‘মাটি’ বলতে ভূ-পৃষ্ঠকে বুঝায়।[83] আরব দেশের মাটি অধিকাংশ পাথুরে ও বালুকাময়। বিভিন্ন সফরে আল্লাহর নবী (ছাঃ) ও ছাহাবীগণ বালুকাময় মরুভূমির মধ্য দিয়ে বহু দূরের রাস্তা অতিক্রম করতেন। বিশেষ করে মদীনা হ’তে প্রায় ৭৫০ কি: মি: দূরে ৯ম হিজরীর রজব মোতাবেক ৬৩০ খৃষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে তাবূক যুদ্ধের সফরে তাঁরা মরুভূমির মধ্যে দারুণ পানির কষ্টে পড়েছিলেন। কিন্তু ‘তায়াম্মুমের’ জন্য দূর থেকে মাটি বহন করে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানা যায় না। অতএব ভূ-পৃষ্ঠের মাটি, বালি বা পাথুরে মাটি ইত্যাদি দিয়ে ‘তায়াম্মুম’ করা যাবে। তবে ধুলা-মাটিহীন স্বচ্ছ পাথর, কাঠ, কয়লা, লোহা, মোজাইক, প্লাষ্টার, টাইল্স, চুন ইত্যাদি দ্বারা ‘তায়াম্মুম’ জায়েয নয়।[84]
_____
[1] . মুসলিম, মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩০১, ৩০০ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, ‘যা ওযূ ওয়াজিব করে’ অনুচ্ছেদ-১।
[2] . সূরায়ে মায়েদাহ মদীনায় অবতীর্ণ হয়। সেকারণে অনেকের ধারণা ওযূ প্রথম মদীনাতেই ফরয হয়। এটা ঠিক নয়। ইবনু আবদিল বার্র বলেন, মাক্কী জীবনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিনা ওযূতে কখনোই ছালাত আদায় করেননি। তবে মাদানী জীবনে অত্র আয়াত নাযিলের মাধ্যমে ওটার ফরযিয়াত ঘোষণা করা হয় মাত্র (দ্র : ফাৎহুল বারী ‘ওযূ’ অধ্যায় ১/১৩৪ পৃঃ)। যায়েদ বিন হারেছাহ (রাঃ) রাসূল (ছাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন যে, জিব্রীল প্রথম দিকে যখন তাঁর নিকটে ‘অহি’ নিয়ে আসেন, তখন তাঁকে ওযূ ও ছালাত শিক্ষা দেন’...(আহমাদ, ইবনু মাজাহ হা/৪৬২; দারাকুৎনী, মিশকাত হা/৩৬৬, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, ‘পেশাব-পায়খানার আদব’ অনুচ্ছেদ-২; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮৪১)।
[3] . মুসলিম, মিশকাত হা/২৯৮, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, পরিচ্ছেদ-৩।
[4] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৯০।
[5] . মুসলিম, মিশকাত হা/২৮২।
[6] . আবুদাঊদ, তিরমিযী, দারেমী, মিশকাত হা/৩১২, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, অনুচ্ছেদ-১।
[7] . মুসলিম, মিশকাত হা/২৮৬ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, পরিচ্ছেদ-১।
[8] . মুসলিম, মিশকাত হা/১০৪২ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘নিষিদ্ধ ওয়াক্ত সমূহ’ অনুচ্ছেদ-২২।
[9] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৩২২; তিরমিযী, আহমাদ, মিশকাত হা/১৩২৬ ‘ঐচ্ছিক ছালাত’ অনুচ্ছেদ-৩৯।
[10] . মুসলিম, মিশকাত হা/১০৫৮ ‘জামা‘আত ও উহার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-২৩।
[11] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৭৬ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, ‘মিসওয়াক’ অনুচ্ছেদ-৩।
[12] . কেননা উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যা অন্য হাদীছে এসেছে مَعَ كُلِّ وُضُوْءٍও عِنْدَ كُلِّ وُضُوْءٍ অর্থাৎ ‘প্রত্যেক ওযূর সাথে বা সময়ে’ (আহমাদ ও বুখারী- তা‘লীক্ব ‘ছওম’ অধ্যায়, ২৭ অনুচ্ছেদ); আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/৭০, ১/১০৯।
[13] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১।
[14] . আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪০২, ‘ওযূর সুন্নাত সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৪; আবুদাঊদ হা/১০১-০২; সুবুলুস সালাম হা/৪৬৩; নওয়াব ছিদ্দীক হাসান খান ভূপালী একে ‘ফরয’ গণ্য করেছেন- আর-রওযাতুন নাদিইয়াহ ১/১১৭।
[15] . আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪০১; নায়লুল আওত্বার ১/২০৬ ‘কুলি করার পূর্বে দু’হাত ধোয়া’ অনুচ্ছেদ।
[16] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, আহমাদ, নাসাঈ, নায়লুল আওত্বার ১/২০৬ ও ২১০।
[17] . নাসাঈ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪০৫ ‘ওযূর সুন্নাত সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৪।
[18] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৯৪; দারেমী, মিশকাত হা/৪১১; মিরক্বাত ২/১৪ পৃঃ; মাজমূ‘ ফাতাওয়া উছায়মীন (রিয়াদ: ১ম সংস্করণ ১৪১৯/১৯৯৯) ১২/২৫৭ পৃঃ ।
[19] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, নায়লুল আওত্বার ১/২১০।
[20] . তিরমিযী হা/২৯-৩১, অনুচ্ছেদ-২৩; ইবনু মাজাহ হা/৪৩০, নায়লুল আওত্বার ১/২২৪।
[21] . আবুদাঊদ হা/১৪৫, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-১, ‘দাড়ি খিলাল করা’ অনুচ্ছেদ-৫৬।
[22] . বুখারী হা/১৪০, নায়লুল আওত্বার ১/২২৩।
[23] . তিরমিযী, মিশকাত হা/৪১৫ ‘ওযূর সুন্নাত সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৪।
[24] . মুওয়াত্তা, মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৯৩-৯৪।
[25] . নাসাঈ হা/১০২, ইবনু মাজাহ, নায়ল ১/২৪২-৪৩ ; আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৪১৪।
[26] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মির‘আত হা/৩৯৬, ৪০১ -এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য ২/৯২, ১০৪।
[27] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৯৪; মুসলিম, মিশকাত হা/৩৯৮।
[28] . আবুদাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪০৬-০৭।
[29] . আবুদাঊদ হা/৩২-৩৩, ১৬৮; আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৩৬১, ৩৬৬ ‘পেশাব-পায়খানার আদব’ অনুচ্ছেদ-২; ছহীহাহ হা/৮৪১।
[30] . মুসলিম, তিরমিযী, মিশকাত হা/২৮৯ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩।
[62] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৪১।
[63] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৩৫।
[64] . মুসলিম, মিশকাত হা/৪৩৮।
[65] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, ইরওয়াউল গালীল হা/১৩৯; চার মুদ্দে এক ছা‘ হয়। ইরওয়া, উক্ত হাদীছের টীকা ১/১৭০ পৃঃ; আবুদাঊদ হা/৯৬।
[66] . আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৪৭।
[67] . মুসলিম হা/৩৩৯; বুখারী হা/২৭৮; ঐ, মিশকাত হা/৫৭০৬-০৭; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৫৮।
[68] . আবুদাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৪৫।
[69] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৫১-৫২।
[70] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৪৩।
[71] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫৩৭-৩৯, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, ‘মাসনূন গোসল’ অনুচ্ছেদ-১১।
[72] . ইবনু মাজাহ, তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৫৪১।
[73] . তিরমিযী, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৫৪৩।
[74] . দারাকুৎনী, হাকেম, ইরওয়াউল গালীল হা/১৪৯, ১/১৭৯ পৃঃ।
[75] . বায়হাক্বী, ইরওয়া হা/১৪৬, ‘ফায়েদা’ দ্রষ্টব্য; নায়ল ১/৩৫৭।
[76] . বায়হাক্বী, ইরওয়া হা/১৪৬, ‘ফায়েদা’ দ্রষ্টব্য; নায়ল ১/৩৫৭।
[77] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৫৯। এটি ছিল মুসলিম উম্মাহর জন্য আবুবকর-পরিবারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবদান। কেননা সম্ভবত: ৫ম হিজরী সনে বনুল মুছত্বালিক্ব যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে মদীনার উপকণ্ঠে ‘বায়দা’ (البَيْدَاء) নামক স্থানে পৌঁছে আয়েশা (রাঃ)-এর গলার হার হারিয়ে যায়। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেটি খোঁজার জন্য কাফেলা থামিয়ে দেন। কিন্তু সেখানে কোন পানি ছিল না। ফলে এভাবেই পানি ছাড়া সকাল হয়ে যায়। তখন আল্লাহ তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করেন (মায়েদাহ ৬)। ছাহাবী উসায়েদ বিন হুযায়ের (রাঃ) হযরত আবুবকর (রাঃ)-কে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, হে আবুবকর-পরিবার! এটি উম্মতের জন্য আপনাদের প্রথম অবদান নয় (مَا هِىَ بِأَوَّلِ بَرَكَتِكُمْ يَا آلَ أَبِى بَكْرٍ)’। আয়েশা (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমরা উট উঠিয়ে দিলাম, যার উপরে আমরা ছিলাম এবং তার নীচে হারটি পেয়ে গেলাম’ (বুখারী, ফৎহুল বারী হা/৩৩৪ ‘তায়াম্মুম’ অধ্যায়-৭, হা/৪৬০৮ ‘তাফসীর’ অধ্যায়-৬৫, অনুচ্ছেদ-৩; মুসলিম হা/৮৪২ ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ-২৮)।
[78] . মায়েদাহ ৫/৬, নিসা ৪/৪৩।
[79] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১; তিরমিযী, ইবনু মাজাহ প্রভৃতি মিশকাত হা/৪০২ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, অনুচ্ছেদ-৪; আবুদাঊদ হা/১০১-০২; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫২৮ ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ-১০।
[80] . আবুদাঊদ হা/৩৩০, অনুচ্ছেদ-১২৪; ঐ, মিশকাত হা/৪৬৬ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, অনুচ্ছেদ-৬।
[81] . মায়েদাহ ৫/৬; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫২৭ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ-১০ ; বুখারী হা/৩৪৪, ১/৪৯ পৃঃ; আহমাদ, তিরমিযী ইত্যাদি মিশকাত হা/৫৩০।
[82] . আহমাদ, তিরমিযী, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৫৩০, ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ-১০।
[83] . যেমন বলা হয়েছে, الصعيد وجه الأرض ترابا كان أو غيره। ‘মাটি হ’ল ভূ-পৃষ্ঠ। চাই তা নিরেট মাটি হৌক বা অন্য কিছু হৌক’ (আল-মিছবাহুল মুনীর)।
[84] . আলোচনা দ্রষ্টব্য : ছাদেক শিয়ালকোটি, ছালাতুর রসূল; টীকা, পৃঃ ১৪৮-৪৯।
মুছল্লীর জন্য দৈহিক পবিত্রতা অর্জন করা অত্যন্ত যরূরী। কেননা এর ফলে বাহ্যিক পবিত্রতা হাছিলের সাথে সাথে মানসিক প্রশান্তি সৃষ্টি হয়, শয়তানী খেয়াল দূরীভূত হয় এবং মুমিনকে আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। ইসলামে দৈহিক পবিত্রতা হাছিলের তিনটি পদ্ধতি রয়েছে- ওযূ, গোসল ও তায়াম্মুম।
(ক) ওযূ ( الوُضوء ) :
আভিধানিক অর্থ স্বচ্ছতা (الوَضاءة)। পারিভাষিক অর্থে পবিত্র পানি দ্বারা শারঈ পদ্ধতিতে হাত, মুখ, পা ধৌত করা ও (ভিজা হাতে) মাথা মাসাহ করাকে ‘ওযূ’ বলে।
ওযূর ফরয : ওযূর মধ্যে ফরয হ’ল চারটি। ১. কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া ও ঝাড়া সহ পুরা মুখমন্ডল ভালভাবে ধৌত করা। ২. দুই হাত কনুই সমেত ধৌত করা, ৩. (ভিজা হাতে) কানসহ মাথা মাসাহ করা ও ৪. দুই পা টাখনু সমেত ধৌত করা।
যেমন আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلاَةِ فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ وَأَيْدِيْكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوْا بِرُءُوْسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ ... (المائدة 6)-
অর্থ : ‘হে বিশ্বাসীগণ! যখন তোমরা ছালাতের জন্য প্রস্ত্তত হও, তখন তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় কনুই সমেত ধৌত কর এবং তোমাদের মাথা মাসাহ কর ও পদযুগল টাখনু সমেত ধৌত কর.....’ (মায়েদাহ ৬)।[2]
অত্র আয়াতে বর্ণিত চারটি ফরয বাদে ওযূর বাকী সবই সুন্নাত।
ওযূর ফযীলত ( فضائل الوضوء) :
(১) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,...... কালো ঘোড়া সমূহের মধ্যে কপাল চিতা ঘোড়া যেভাবে চেনা যায়.. ক্বিয়ামতের দিন আমার উম্মতের ওযূর অঙ্গগুলির ঔজ্জ্বল্য দেখে আমি তাদেরকে অনুরূপভাবে চিনব এবং তাদেরকে হাউয কাওছারের পানি পান করানোর জন্য আগেই পৌঁছে যাব’।[3] ‘অতএব যে চায় সে যেন তার ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে চেষ্টা করে’।[4]
(২) তিনি বলেন, ‘আমি কি তোমাদের বলব কোন্ বস্ত্ত দ্বারা আল্লাহ তোমাদের গোনাহ সমূহ অধিকহারে দূর করেন ও সম্মানের স্তর বৃদ্ধি করেন?..... সেটি হ’ল কষ্টের সময় ভালভাবে ওযূ করা, বেশী বেশী মসজিদে যাওয়া ও এক ছালাতের পরে আরেক ছালাতের জন্য অপেক্ষা করা’।[5]
(৩) তিনি আরও বলেন, ‘ছালাতের চাবি হ’ল ওযূ’।[6]
(৪) তিনি বলেন, ‘মুসলমান যখন ফরয ছালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে সুন্দরভাবে ওযূ করে এবং পূর্ণ মনোনিবেশ ও ভীতি সহকারে সুষ্ঠুভাবে রুকূ-সিজদা আদায় করে, তখন ঐ ওযূ ও ছালাত তার বিগত সকল গুনাহের কাফফারা হিসাবে গৃহীত হয়। তবে গোনাহে কাবীরাহ ব্যতীত’।[7] অন্য বর্ণনায় এসেছে, ঐ ব্যক্তি গোনাহ থেকে এমনভাবে মুক্ত হয়, যেমনভাবে তার মা তাকে পরিচ্ছন্নভাবে প্রসব করেছিল।[8]
(৫) ওযূ করার পর সর্বদা দু’রাক‘আত ‘তাহিইয়াতুল ওযূ’ এবং মসজিদে প্রবেশ করার পর দু’রাক‘আত ‘তাহিইয়াতুল মাসজিদ’ নফল ছালাত আদায় করবে। এই আকাংখিত সদভ্যাসের কারণেই জান্নাতে বেলাল (রাঃ)-এর অগ্রগামী পদশব্দ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বপ্নের মধ্যে শুনেছিলেন।[9] তবে মসজিদে গিয়ে জামা‘আত চলা অবস্থায় পেলে কিংবা এক্বামত হয়ে গেলে সরাসরি জামা‘আতে যোগ দিবে।[10]
ওযূর বিবরণ ( صفة الوضوء) :
ওযূর পূর্বে ভালভাবে মিসওয়াক করা সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,
لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِيْ لَأَمَرْتُهُم ْ بِتَأْخِيْرِ الْعِشَاءِ وَ بِِالسِّوَاكِ عِنْدَ كُلِّ صَلاَةٍ-
‘আমার উম্মতের উপর কষ্টকর মনে না করলে আমি তাদেরকে এশার ছালাত দেরীতে এবং প্রতি ছালাতে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম’।[11] এখানে ‘প্রতি ছালাতে’ অর্থ ‘প্রতি ছালাতের জন্য ওযূ করার সময়’। [12] অতএব ঘুম থেকে উঠে এবং প্রতি ওয়াক্ত ছালাতের জন্য ওযূর পূর্বে মিসওয়াক করা উত্তম। এই সময় জিহবার উপরে ভালভাবে হাত ঘষে গরগরা ও কুলি করবে।
ওযূর তরীকা : (১) প্রথমে মনে মনে ওযূর নিয়ত করবে।[13] অতঃপর (২) ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে। [14] অতঃপর (৩) ডান হাতে পানি নিয়ে[15] দুই হাত কব্জি সমেত ধুবে[16] এবং আঙ্গুল সমূহ খিলাল করবে।[17] এরপর (৪) ডান হাতে পানি নিয়ে ভালভাবে কুলি করবে ও প্রয়োজনে নতুন পানি নিয়ে নাকে দিয়ে বাম হাতে ভালভাবে নাক ঝাড়বে।[18] তারপর (৫) কপালের গোড়া থেকে দুই কানের লতী হয়ে থুৎনীর নীচ পর্যন্ত পুরা মুখমন্ডল ধৌত করবে [19] ও দাড়ি খিলাল করবে।[20] এজন্য এক অঞ্জলি পানি নিয়ে থুৎনীর নীচে দিবে।[21] অতঃপর (৬) প্রথমে ডান ও পরে বাম হাত কনুই সমেত ধুবে। [22] এরপর (৭) পানি নিয়ে[23] দু’হাতের ভিজা আংগুলগুলি মাথার সম্মুখ হ’তে পিছনে ও পিছন হ’তে সম্মুখে বুলিয়ে একবার পুরা মাথা মাসাহ করবে।[24] একই সাথে ভিজা শাহাদাত আংগুল দ্বারা কানের ভিতর অংশে ও বুড়ো আংগুল দ্বারা পিছন অংশে মাসাহ করবে।[25] পাগড়ীবিহীন অবস্থায় মাথার কিছু অংশ বা এক চতুর্থাংশ মাথা মাসাহ করার কোন দলীল নেই। বরং কেবল পূর্ণ মাথা অথবা মাথার সামনের কিছু অংশ সহ পাগড়ীর উপর মাসাহ অথবা কেবল পাগড়ীর উপর মাসাহ প্রমাণিত।[26] অতঃপর (৮) ডান ও বাম পায়ের টাখনু সমেত ভালভাবে ধুবে [27] ও বাম হাতের আংগুল দ্বারা[28] পায়ের আংগুল সমূহ খিলাল করবে। (৯) এভাবে ওযূ শেষে বাম হাতে কিছু পানি নিয়ে লজ্জাস্থান বরাবর ছিটিয়ে দিবে[29] ও নিম্নোক্ত দো‘আ পাঠ করবে-
أَشْهَدُ أَنْ لآ إلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، اَللَّهُمَّ اجْعَلْنِيْ مِنَ التَّوابِيْنَ وَاجْعَلْنِيْ مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ-
উচ্চারণ : আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা-শারীকা লাহূ, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আব্দুহূ ওয়া রাসূলুহু। আল্লা-হুম্মাজ্‘আল্নী মিনাত্ তাউয়াবীনা ওয়াজ্‘আল্নী মিনাল মুতাত্বাহ্হিরীন।
অর্থ : ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি একক ও শরীক বিহীন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল’ (মুসলিম)। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে তওবাকারীদের ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন!! (তিরমিযী)।
ওমর ফারূক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত উক্ত হাদীছে রাসূল (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি পূর্ণভাবে ওযূ করবে ও কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হবে। যেটা দিয়ে ইচ্ছা সে প্রবেশ করবে’।[30]
( খ) গোসলের বিবরণ ( صفة الغسل) :
সংজ্ঞা : ‘গোসল’ (الغُسْلُ) অর্থ ধৌত করা। শারঈ পরিভাষায় গোসল অর্থ : পবিত্রতা অর্জনের নিয়তে ওযূ করে সর্বাঙ্গ ধৌত করা। গোসল দু’প্রকার : ফরয ও মুস্তাহাব।
(১) ফরয : ঐ গোসলকে বলা হয়, যা করা অপরিহার্য। বালেগ বয়সে নাপাক হ’লে গোসল ফরয হয়। যেমন- আল্লাহ বলেন, وَ إِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوْا ‘যদি তোমরা নাপাক হয়ে থাক, তবে গোসল কর’ (মায়েদাহ ৬)।
(২) মুস্তাহাব : ঐ গোসলকে বলা হয়, যা অপরিহার্য নয়। কিন্তু করলে নেকী আছে। যেমন- জুম‘আর দিনে বা দুই ঈদের দিনে গোসল করা। সাধারণ গোসলের পূর্বে ওযূ করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সাইয়িদ সাবিক্ব একে ‘মানদূব’ (পসন্দনীয়) বলেছেন।[62]
গোসলের পদ্ধতি : ফরয গোসলের জন্য প্রথমে দু’হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুবে ও পরে নাপাকী ছাফ করবে। অতঃপর ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ছালাতের ওযূর ন্যায় ওযূ করবে। অতঃপর প্রথমে মাথায় তিনবার পানি ঢেলে চুলের গোড়ায় খিলাল করে ভালভাবে পানি পৌঁছাবে। তারপর সারা দেহে পানি ঢালবে ও গোসল সম্পন্ন করবে। [63]
জ্ঞাতব্য : (১) গোসলের সময় মেয়েদের মাথার খোপা খোলার দরকার নেই। কেবল চুলের গোড়ায় তিনবার তিন চুল্লু পানি পৌঁছাতে হবে। অতঃপর সারা দেহে পানি ঢালবে। [64]
(২) রাসূল (ছাঃ) এক মুদ্দ (৬২৫ গ্রাম) পানি দিয়ে ওযূ এবং অনধিক পাঁচ মুদ্দ (৩১২৫ গ্রাম) বা প্রায় সোয়া তিন কেজি পানি দিয়ে গোসল করতেন। [65] প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি অপচয় করা ঠিক নয়।
(৩) নারী হৌক পুরুষ হৌক সকলকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পর্দার মধ্যে গোসল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।[66]
(৪) বাথরুমে বা পর্দার মধ্যে বা দূরে লোকচক্ষুর অন্তরালে নগ্নাবস্থায় গোসল করায় কোন দোষ নেই।[67]
(৫) ওযূ সহ গোসল করার পর ওযূ ভঙ্গ না হ’লে পুনরায় ওযূর প্রয়োজন নেই।[68]
(৬) ফরয গোসলের পূর্বে নাপাক অবস্থায় পবিত্র কুরআন স্পর্শ করা যাবে না। তবে মুখে কুরআন পাঠ করা এবং মসজিদে প্রবেশ করা জায়েয আছে।[69] সাধারণ অপবিত্রতায় কুরআন স্পর্শ করা বা বহন করা জায়েয আছে। [70]
মুস্তাহাব গোসল সমূহ :
(১) জুম‘আর ছালাতের পূর্বে গোসল করা।[71]
(২) মোর্দা গোসল দানকারীর জন্য গোসল করা।[72]
(৩) ইসলাম গ্রহণের সময় গোসল করা।[73]
(৪) হজ্জ বা ওমরাহর জন্য ইহরাম বাঁধার পূর্বে গোসল করা।[74]
(৫) আরাফার দিন গোসল করা।[75]
(৬) দুই ঈদের দিন সকালে গোসল করা।[76]
(গ) তায়াম্মুমের বিবরণ (صفة التيمم ) :
সংজ্ঞা : তায়াম্মুম (التيمم) অর্থ ‘সংকল্প করা’। পারিভাষিক অর্থে : ‘পানি না পাওয়া গেলে ওযূ বা গোসলের পরিবর্তে পাক মাটি দ্বারা পবিত্রতা অর্জনের ইসলামী পদ্ধতিকে ‘তায়াম্মুম’ বলে’। এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহর অন্যতম বিশেষ অনুগ্রহ। যা ইতিপূর্বে কোন উম্মতকে দেওয়া হয়নি। [77] আল্লাহ বলেন,
وَإِنْ كُنْتُمْ مَرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ أَوْ لآمَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَآءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَأَيْدِيْكُمْ مِنْهُ، (المائدة 6)-
‘আর যদি তোমরা পীড়িত হও কিংবা সফরে থাক অথবা পায়খানা থেকে আস কিংবা স্ত্রী স্পর্শ করে থাক, অতঃপর পানি না পাও, তাহ’লে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা ‘তায়াম্মুম’ কর ও তা দ্বারা তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় মাসাহ কর’...।[78]
পদ্ধতি : পবিত্রতা অর্জনের নিয়তে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে মাটির উপর দু’হাত মেরে তাতে ফুঁক দিয়ে মুখমন্ডল ও দু’হাতের কব্জি পর্যন্ত একবার বুলাবে।[79] দুইবার হাত মারা ও কনুই পর্যন্ত মাসাহ করার হাদীছ যঈফ। [80]
তায়াম্মুমের কারণ সমূহ :
(১) যদি পাক পানি না পাওয়া যায় (২) পানি পেতে গেলে যদি ছালাত ক্বাযা হওয়ার ভয় থাকে (৩) পানি ব্যবহারে যদি রোগ বৃদ্ধির আশংকা থাকে (৪) যদি কোন বিপদ বা জীবনের ঝুঁকি থাকে ইত্যাদি। উপরোক্ত কারণ সমূহের প্রেক্ষিতে ওযূ বা ফরয গোসলের পরিবর্তে প্রয়োজনে দীর্ঘদিন যাবৎ একটানা ‘তায়াম্মুম’ করা যাবে। [81]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,
إِنَّ الصَّعِيْدَ الطَّيِّبَ وَضُوْءُ الْمُسْلِمِ وَإِنْ لَمْ يَجِدِ الْمَاءَ عَشْرَ سِنِيْنَ...
‘নিশ্চয়ই পবিত্র মাটি মুসলমানদের জন্য ওযূর মাধ্যম স্বরূপ। যদিও সে ১০ বছর পর্যন্ত পানি না পায়’। [82]
পবিত্র মাটি :
আরবী পরিভাষায় ‘মাটি’ বলতে ভূ-পৃষ্ঠকে বুঝায়।[83] আরব দেশের মাটি অধিকাংশ পাথুরে ও বালুকাময়। বিভিন্ন সফরে আল্লাহর নবী (ছাঃ) ও ছাহাবীগণ বালুকাময় মরুভূমির মধ্য দিয়ে বহু দূরের রাস্তা অতিক্রম করতেন। বিশেষ করে মদীনা হ’তে প্রায় ৭৫০ কি: মি: দূরে ৯ম হিজরীর রজব মোতাবেক ৬৩০ খৃষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে তাবূক যুদ্ধের সফরে তাঁরা মরুভূমির মধ্যে দারুণ পানির কষ্টে পড়েছিলেন। কিন্তু ‘তায়াম্মুমের’ জন্য দূর থেকে মাটি বহন করে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানা যায় না। অতএব ভূ-পৃষ্ঠের মাটি, বালি বা পাথুরে মাটি ইত্যাদি দিয়ে ‘তায়াম্মুম’ করা যাবে। তবে ধুলা-মাটিহীন স্বচ্ছ পাথর, কাঠ, কয়লা, লোহা, মোজাইক, প্লাষ্টার, টাইল্স, চুন ইত্যাদি দ্বারা ‘তায়াম্মুম’ জায়েয নয়।[84]
_____
[1] . মুসলিম, মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩০১, ৩০০ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, ‘যা ওযূ ওয়াজিব করে’ অনুচ্ছেদ-১।
[2] . সূরায়ে মায়েদাহ মদীনায় অবতীর্ণ হয়। সেকারণে অনেকের ধারণা ওযূ প্রথম মদীনাতেই ফরয হয়। এটা ঠিক নয়। ইবনু আবদিল বার্র বলেন, মাক্কী জীবনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিনা ওযূতে কখনোই ছালাত আদায় করেননি। তবে মাদানী জীবনে অত্র আয়াত নাযিলের মাধ্যমে ওটার ফরযিয়াত ঘোষণা করা হয় মাত্র (দ্র : ফাৎহুল বারী ‘ওযূ’ অধ্যায় ১/১৩৪ পৃঃ)। যায়েদ বিন হারেছাহ (রাঃ) রাসূল (ছাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন যে, জিব্রীল প্রথম দিকে যখন তাঁর নিকটে ‘অহি’ নিয়ে আসেন, তখন তাঁকে ওযূ ও ছালাত শিক্ষা দেন’...(আহমাদ, ইবনু মাজাহ হা/৪৬২; দারাকুৎনী, মিশকাত হা/৩৬৬, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, ‘পেশাব-পায়খানার আদব’ অনুচ্ছেদ-২; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮৪১)।
[3] . মুসলিম, মিশকাত হা/২৯৮, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, পরিচ্ছেদ-৩।
[4] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৯০।
[5] . মুসলিম, মিশকাত হা/২৮২।
[6] . আবুদাঊদ, তিরমিযী, দারেমী, মিশকাত হা/৩১২, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, অনুচ্ছেদ-১।
[7] . মুসলিম, মিশকাত হা/২৮৬ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, পরিচ্ছেদ-১।
[8] . মুসলিম, মিশকাত হা/১০৪২ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘নিষিদ্ধ ওয়াক্ত সমূহ’ অনুচ্ছেদ-২২।
[9] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৩২২; তিরমিযী, আহমাদ, মিশকাত হা/১৩২৬ ‘ঐচ্ছিক ছালাত’ অনুচ্ছেদ-৩৯।
[10] . মুসলিম, মিশকাত হা/১০৫৮ ‘জামা‘আত ও উহার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-২৩।
[11] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৭৬ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, ‘মিসওয়াক’ অনুচ্ছেদ-৩।
[12] . কেননা উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যা অন্য হাদীছে এসেছে مَعَ كُلِّ وُضُوْءٍও عِنْدَ كُلِّ وُضُوْءٍ অর্থাৎ ‘প্রত্যেক ওযূর সাথে বা সময়ে’ (আহমাদ ও বুখারী- তা‘লীক্ব ‘ছওম’ অধ্যায়, ২৭ অনুচ্ছেদ); আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/৭০, ১/১০৯।
[13] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১।
[14] . আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪০২, ‘ওযূর সুন্নাত সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৪; আবুদাঊদ হা/১০১-০২; সুবুলুস সালাম হা/৪৬৩; নওয়াব ছিদ্দীক হাসান খান ভূপালী একে ‘ফরয’ গণ্য করেছেন- আর-রওযাতুন নাদিইয়াহ ১/১১৭।
[15] . আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪০১; নায়লুল আওত্বার ১/২০৬ ‘কুলি করার পূর্বে দু’হাত ধোয়া’ অনুচ্ছেদ।
[16] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, আহমাদ, নাসাঈ, নায়লুল আওত্বার ১/২০৬ ও ২১০।
[17] . নাসাঈ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪০৫ ‘ওযূর সুন্নাত সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৪।
[18] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৯৪; দারেমী, মিশকাত হা/৪১১; মিরক্বাত ২/১৪ পৃঃ; মাজমূ‘ ফাতাওয়া উছায়মীন (রিয়াদ: ১ম সংস্করণ ১৪১৯/১৯৯৯) ১২/২৫৭ পৃঃ ।
[19] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, নায়লুল আওত্বার ১/২১০।
[20] . তিরমিযী হা/২৯-৩১, অনুচ্ছেদ-২৩; ইবনু মাজাহ হা/৪৩০, নায়লুল আওত্বার ১/২২৪।
[21] . আবুদাঊদ হা/১৪৫, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-১, ‘দাড়ি খিলাল করা’ অনুচ্ছেদ-৫৬।
[22] . বুখারী হা/১৪০, নায়লুল আওত্বার ১/২২৩।
[23] . তিরমিযী, মিশকাত হা/৪১৫ ‘ওযূর সুন্নাত সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৪।
[24] . মুওয়াত্তা, মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৯৩-৯৪।
[25] . নাসাঈ হা/১০২, ইবনু মাজাহ, নায়ল ১/২৪২-৪৩ ; আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৪১৪।
[26] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মির‘আত হা/৩৯৬, ৪০১ -এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য ২/৯২, ১০৪।
[27] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৯৪; মুসলিম, মিশকাত হা/৩৯৮।
[28] . আবুদাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪০৬-০৭।
[29] . আবুদাঊদ হা/৩২-৩৩, ১৬৮; আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৩৬১, ৩৬৬ ‘পেশাব-পায়খানার আদব’ অনুচ্ছেদ-২; ছহীহাহ হা/৮৪১।
[30] . মুসলিম, তিরমিযী, মিশকাত হা/২৮৯ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩।
[62] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৪১।
[63] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৩৫।
[64] . মুসলিম, মিশকাত হা/৪৩৮।
[65] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, ইরওয়াউল গালীল হা/১৩৯; চার মুদ্দে এক ছা‘ হয়। ইরওয়া, উক্ত হাদীছের টীকা ১/১৭০ পৃঃ; আবুদাঊদ হা/৯৬।
[66] . আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৪৭।
[67] . মুসলিম হা/৩৩৯; বুখারী হা/২৭৮; ঐ, মিশকাত হা/৫৭০৬-০৭; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৫৮।
[68] . আবুদাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৪৫।
[69] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৫১-৫২।
[70] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৪৩।
[71] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫৩৭-৩৯, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, ‘মাসনূন গোসল’ অনুচ্ছেদ-১১।
[72] . ইবনু মাজাহ, তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৫৪১।
[73] . তিরমিযী, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৫৪৩।
[74] . দারাকুৎনী, হাকেম, ইরওয়াউল গালীল হা/১৪৯, ১/১৭৯ পৃঃ।
[75] . বায়হাক্বী, ইরওয়া হা/১৪৬, ‘ফায়েদা’ দ্রষ্টব্য; নায়ল ১/৩৫৭।
[76] . বায়হাক্বী, ইরওয়া হা/১৪৬, ‘ফায়েদা’ দ্রষ্টব্য; নায়ল ১/৩৫৭।
[77] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৫৯। এটি ছিল মুসলিম উম্মাহর জন্য আবুবকর-পরিবারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবদান। কেননা সম্ভবত: ৫ম হিজরী সনে বনুল মুছত্বালিক্ব যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে মদীনার উপকণ্ঠে ‘বায়দা’ (البَيْدَاء) নামক স্থানে পৌঁছে আয়েশা (রাঃ)-এর গলার হার হারিয়ে যায়। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেটি খোঁজার জন্য কাফেলা থামিয়ে দেন। কিন্তু সেখানে কোন পানি ছিল না। ফলে এভাবেই পানি ছাড়া সকাল হয়ে যায়। তখন আল্লাহ তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করেন (মায়েদাহ ৬)। ছাহাবী উসায়েদ বিন হুযায়ের (রাঃ) হযরত আবুবকর (রাঃ)-কে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, হে আবুবকর-পরিবার! এটি উম্মতের জন্য আপনাদের প্রথম অবদান নয় (مَا هِىَ بِأَوَّلِ بَرَكَتِكُمْ يَا آلَ أَبِى بَكْرٍ)’। আয়েশা (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমরা উট উঠিয়ে দিলাম, যার উপরে আমরা ছিলাম এবং তার নীচে হারটি পেয়ে গেলাম’ (বুখারী, ফৎহুল বারী হা/৩৩৪ ‘তায়াম্মুম’ অধ্যায়-৭, হা/৪৬০৮ ‘তাফসীর’ অধ্যায়-৬৫, অনুচ্ছেদ-৩; মুসলিম হা/৮৪২ ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ-২৮)।
[78] . মায়েদাহ ৫/৬, নিসা ৪/৪৩।
[79] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১; তিরমিযী, ইবনু মাজাহ প্রভৃতি মিশকাত হা/৪০২ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, অনুচ্ছেদ-৪; আবুদাঊদ হা/১০১-০২; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫২৮ ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ-১০।
[80] . আবুদাঊদ হা/৩৩০, অনুচ্ছেদ-১২৪; ঐ, মিশকাত হা/৪৬৬ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, অনুচ্ছেদ-৬।
[81] . মায়েদাহ ৫/৬; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫২৭ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ-১০ ; বুখারী হা/৩৪৪, ১/৪৯ পৃঃ; আহমাদ, তিরমিযী ইত্যাদি মিশকাত হা/৫৩০।
[82] . আহমাদ, তিরমিযী, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৫৩০, ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ-১০।
[83] . যেমন বলা হয়েছে, الصعيد وجه الأرض ترابا كان أو غيره। ‘মাটি হ’ল ভূ-পৃষ্ঠ। চাই তা নিরেট মাটি হৌক বা অন্য কিছু হৌক’ (আল-মিছবাহুল মুনীর)।
[84] . আলোচনা দ্রষ্টব্য : ছাদেক শিয়ালকোটি, ছালাতুর রসূল; টীকা, পৃঃ ১৪৮-৪৯।
আমার খুবই ভাল লেগেছে।।
ReplyDeletePost a Comment