![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhmj0nBYE2Pa5XAnUORss18DbmIgKTS_APUM_ml9GlcHmHYSwC0kXU8fATCBcFvMJZTvFPiW0iU57dnRhBMvXZC4Pml3-1UgLGXzkP4UE-LHO_Pt9bgKNbXlTHvNNedKr18Cv4zU5VmbdA/s200/images%252815%2529.jpg)
সম্মান জিনিসটা খুবই সেন্সিটিভ বিষয়। যে যতটুকু সম্মান প্রাপ্য এর কম হলেও সমস্যা আবার বেশি হলেও সমস্যা। তাই সবসময় একটি মাপকাঠি সামনে রাখতে হয় যেন এই সমস্যাগুলো এড়ানো যায়। আর মুসলিম হিসেবে আমাদের এই মাপকাঠি ইসলাম থেকেই নিতে হবে। আর যদি তা না হয় তবে আমাদেরকে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। যা নিচের কিছু বিষয় থেকে অনেকটা স্পষ্ট হবে, ইনশাআল্লাহ্৷
কোন সন্তান তার পিতা-মাতার জীবদ্দশায় তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করেনি, তাদের ভালো উপদেশগুলো শুনতে চায়নি, বৃদ্ধাবস্থায় তাদের দেখাশোনাও করেনি। কিন্তু তাঁদের মৃত্যুর পর বার্ষিক মিলাদ-মাহফিল পড়ায়, কবর যিয়ারত করে, মাঝেমাঝে কান্নাকাটিও করে। তাহলে এতটুকুই কি তার পূর্বের ক্ষতিপূরণ হিসেবে যথেষ্ট? অবশ্যই না। আর বিষয়টা একজন সাধারণ মানুষও অনুধাবন করবে। কারণ সে তার পিতা-মাতার হক আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে। আর প্রতিটা কর্মেরই একটি উপযুক্ত সময় রয়েছে যা অতিক্রম হয়ে গেলে আর ভালো কিছু আশা করা যায় না। ঠিক তেমনিভাবে সম্মান আর শ্রদ্ধাবোধের নামে আমরা এমন কিছু আচরণ প্রতিনিয়ত করে চলছি যা ঐ সন্তানের মতোই। যে কিনা পিতা-মাতার জীবদ্দশায় যা প্রয়োজন ছিলো তা উপেক্ষা করে তাদের মৃত্যু পরবর্তী এমন কিছু অপ্রয়োজনীয় আচরণ করে চলছে যা কোন কাজে তো আসছেই না বরং কিছু বিষয়ে অতিরঞ্জিত করায় তার পাপের পরিমাণই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আবু উমামাহ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তিন শ্রেণীর মানুষের ফরয-নফল ইবাদাত আল্লাহ কবুল করেন না। এদের একজন হলেন, পিতা-মাতার অবাধ্য ব্যক্তি। [তারগীব ৩৫৭৩]
একবার এক শিক্ষক তার ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট প্রস্তাব করলেন- আমি ক্লাসে ঢুকার সময় তোমাদের দাঁড়ানোর প্রয়োজন নেই। যদি সম্ভব হয় বসে থেকেই সালাম দিবে। কিন্তু দুই-একজন ব্যতীত প্রস্তাবটি কেউ গ্রহণ করেনি। অর্থাৎ পরবর্তীতেও তারা পূর্বের ন্যায় দাঁড়িয়ে সম্মান করতে থাকে। এখন যদি অধিকাংশদের প্রাধান্য দিয়ে বিচার করা হয় তাহলে সবকিছু ঠিকঠাকই মনে হবে। আসলেই কি তাই? অবশ্যই না। যেহেতু আমরা ইসলামকে আল্লাহর মনোনীত দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করেছি সেহেতু যাবতীয় দিকনির্দেশনা ইসলাম থেকেই নিতে হবে। তাই কোথায় কিভাবে কতটুকু সম্মান প্রদর্শন করতে হবে তাও ইসলাম থেকে জেনে নিতে হবে। আর এভাবে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করাকে ইসলাম নিষেধ করেছে। তাই সম্মান প্রদর্শনের জন্য উত্তম আচরণ ছেড়ে হঠাৎ দাঁড়িয়ে যাওয়া কখনোই উচিত নয়। এতে মানুষের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়, বন্ধুত্ব নয় ।
আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “সাহাবায়ে কিরামের নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অপেক্ষা কোন ব্যক্তিই অধিক প্রিয় ছিলো না। অথচ তাঁরা যখন তাঁকে দেখতেন তখন দাঁড়াতেন না। কেননা, তাঁরা জানতেন যে, তিনি তা পছন্দ করেন না”। [তিরমিযি ২৭৫৪]
একটি লোক নিয়মিত সালাত আদায় করে না, ইসলামের বিভিন্ন আদেশ-নিষেধের তোয়াক্কা করে না। কিন্তু সে ব্যক্তিই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্মান প্রদর্শন করতে কেন কিয়াম করবে না তা নিয়ে তর্ক করে। অথচ সাহাবীগণও রাদিয়াল্লাহু আনহুম এভাবে সম্মান প্রদর্শন করতেন না। তাহলে কি এই ব্যক্তি সঠিক? অবশ্যই না; যদিও সে রাসূলকে সম্মান প্রদর্শন করতে চাচ্ছে। কারণ এ বিষয়টি ইসলাম স্বীকৃত নয়। এখানে সম্মান প্রদর্শনের সঠিক মাপকাঠি মানা হয়নি। তাই ইসলামও গ্রহণ করেনি।
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আমার উম্মতের সবাই জান্নাতে যাবে; কিন্তু সে নয় যে অস্বীকার করবে।” জিজ্ঞেস করা হলো, “হে আল্লাহর রাসূল! (জান্নাতে যেতে আবার) কে অস্বীকার করবে?” তিনি বলেন, “যে আমার অনুসরণ করবে, সে জান্নাতে যাবে এবং যে আমার অবাধ্যতা করবে, সেই জান্নাতে যেতে অস্বীকার করবে।” [বুখারি ৭২৮০; মুসলিম ১৮৩৫]
এখন প্রায়ই দেখা যায় যে, ক্লাসের শেষদিকের একটা ছাত্র কিংবা একজন নতুন অফিসার প্রথমদিকের সবাইকে পেছনে ফেলে ঐ ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক কিংবা প্রমোশনের জন্য সিনিয়রদের অতিরিক্ত প্রশংসা করছে, সম্মান দেখাচ্ছে, এমনকি এককালীন গিফ্টও দিচ্ছে যেন পেছনের সময়গুলোতে লেখাপড়ার যে ঘাটতি হয়েছে তা পূরণ করা যায় কিংবা একটু আগেই প্রমোশন হয়ে যায়। অথচ তা অগ্রহণযোগ্য।
হযরত আবু মুসা আশআরী (রা.) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে অপর এক ব্যক্তির প্রশংসা করতে এবং প্রশংসা করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করতে শুনলেন। তিনি বলেছেন, তোমরা লোকটিকে শেষ করে দিলে অথবা বললেন, তোমরা লোকটির পিঠ ভেঙ্গে দিলে। [বুখারি]
প্রায় সময়ই দেখি কেউ যদি জুতা পায়ে স্মৃতিসৌধ কিংবা শহীদ মিনারে বসতে যায়, অনেকে রাগ করে তাদেরকে জুতা খুলে বসতে বলেন। জুতা পায়ে নাকি সম্মান ক্ষুন্ন হয়। অথচ আপনি শুনে অবাক হবেন যে, মহান আল্লাহ্ সুবহানাহুর জন্য যে মানুষগুলো সবকিছু ত্যাগ করেছেন সেই মানুষগুলোই জুতা পায়ে আল্লাহর ঘরে সালাত আদায় করেছেন। তবে শর্ত ছিলো তা পবিত্র হওয়া। অর্থাৎ জুতা ময়লামুক্ত হওয়াই যথেষ্ট। অন্যদিকে স্মৃতিসৌধ আর শহীদ মিনারের সাথে ইবাদাতের কোন সম্পর্ক নেই। তাহলে বলেন জুতা পা দেয়ার সাথে অসম্মানের কি সম্পর্ক? আসলে এটা আমাদের ধার করা অতিরঞ্জিত বিষয়গুলোর একটি। যা সম্মান কিংবা অসম্মান কোনটার সাথেই যায় না। শুধু আমাদের সমাজের সাথেই যাচ্ছে।
ইমাম বুখারি (রহ.) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন যে, এই লোকগুলি হযরত নূহ (আ.)-এর যুগের নেককার ব্যক্তি ছিলেন। তাদের মৃত্যুর পর শয়তান তাদের অনুসারীদের এই মর্মে ধোঁকা দিল যে, এঁদের বসার স্থানগুলিতে এক একটি মূর্তি বানাও ও তাদের নামে নামকরণ কর। লোকেরা তাই করল। (বই: নবীদের কাহিনী)
হাইস্কুলে থাকাকালে একটা নিয়ম ছিলো ২১শে ফেব্রুয়ারির ভোরবেলায় প্রতি ক্লাস থেকে একজন শহীদ মিনারে ফুলে দিতে যাবে। একবার না দিতে পেরে কষ্ট পেয়েছিলাম। আসলে কষ্ট পেয়েছিলাম অন্য কারণে। কারণটা ছিলো আমি ফার্স্ট বয় আমি ফুল দিতে পারছিনা। তখন কিন্তু ভাষা আন্দোলনে নিহত মানুষগুলোর কথা একবারও মাথায় আসেনি। আর বাস্তবতাও যে আমার থেকে বেশি ভিন্ন তা কিন্তু নয়। আজকেও অনেকে ২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৬ই ডিসেম্বর আসলে ফুল দিয়ে কিংবা কিছু বলে মিডিয়ায় আসতে পারাটাকেই সার্থক মনে করে । আবার কেউ যায় বিভিন্ন কনসার্ট উপভোগ করতেই। তাইতো ভার্সিটি পড়ুয়া কোন ছাত্র নিজের ভাষাটার সঠিক চর্চা করতে না পারলেও শহীদ মিনারে ফুল দিতে পারে। তাইতো কেউ নিজের দেশটাকে দুর্নীতি ও নিপীড়ণ মুক্ত রাখতে না পারলেও স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হতে পারে। তাহলে বলুন ঐ মানুষগুলোর প্রতি এই বুঝি আমাদের কৃতজ্ঞতা আর সম্মান? আর এতগুলো বিষয় লুকিয়ে রেখে সম্মান প্রদর্শনের এই মিথ্যা চেষ্টা করে কি লাভ? হ্যাঁ, লাভ আছে। তবে সেটা শয়তানের লাভ। কারণ শয়তান বিশ্বাসীদের ন্যূনতম ক্ষতির মধ্যেও শান্তি খুঁজে পায়। তাই সে যখনই সুযোগ পায় তখনই কাজে লাগায়।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, “শয়তান তোমাদের শত্রু। অতএব তাকে শত্রুরূপেই গ্রহণ কর। সে তার অনুসারীদের আহ্বান করে যেন তারা জাহান্নামি হয়।” [সূরা ফাতির ৬]
আমার এক পরিচিত লোক একবার বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। তিনি একদিন এক পীরসাহেবকে মন্দ বলেছিলেন। তখন ঐ পীরের এক মুরিদ শুনে তাকে বিদেশে যেতে পারবেনা বলে অভিশাপ দিয়েছিলেন। ঘটনাক্রমে ঐ ব্যক্তির বিদেশে যাওয়া বিলম্বিত হচ্ছিলো। তাই পরিবারের চাপে সে ঐ মুরিদকে নিয়ে পীরের নিকট গেলেন, ক্ষমা চাইলেন, দশ হাজার টাকা জরিমানা দিলেন এবং বিদেশে যাওয়ার নিশ্চয়তা নিয়ে আসলেন ৷ আসলেই কি পীরেরা নিশ্চয়তা দিতে পারে? অবশ্যই না৷ এটা কেবল শয়তানের ধোঁকা। যা একদম শিরক পর্যন্ত নিয়ে যায়৷ যারা আজ বাবা সেজে, কবর সাজিয়ে সম্মান কামাই করছে তারা মূলত আমাদের ঈমান নষ্ট করারই চেষ্টা চালাচ্ছে। আর ঐ পরিচিত লোকটি এখন বিদেশে যাওয়ার কথাই ভুলে গেছে ।
একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী উম্মু সালামাহ (রা.) তাঁকে ইথিওপিয়ার একটি গির্জার কথা বললেন, যেটির দেওয়ালে তিনি অনেকগুলো ছবি দেখেছিলেন। তার কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তাদের মধ্যে কোন পুণ্যবান ব্যক্তি মারা গেলে তারা তাদের কবরের উপর উপাসানালয় নির্মাণ করে এবং এ ধরণের চিত্রাঙ্কন করে। আল্লাহর দৃষ্টিতে তারা হলো নিকৃষ্টতম সৃষ্টি।” [বুখারি ও মুসলিম]
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, “নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন আর তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত করে দেন। আর জালিম (মুশরিকদের) জন্য কোন সাহায্যকারি নেই।” [সূরা আল-মায়িদাহ ৭২]
সবশেষে অন্তত এতটুকু মাথায় রাখি- ইসলাম যাকে যতটুকু সম্মান দিয়েছেন সে ততটুকুই প্রাপ্য। কেউ এর বেশি সম্মান আশা করলে কিংবা সম্মান দেখাতে গেলে সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত। মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “কেউ সম্মান চাইলে জেনে রাখুক, সমস্ত সম্মান আল্লাহরই জন্যে।” [সূরা ফাতির ১০]
আল্লাহ আমাদের জন্য সহজ করুন। আমীন।
Post a Comment