নামাজে মনোযোগ রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একবার যে নামাজে মজা পায় সে আর কখনও নামাজ ছাড়েনা। নামাজ এ মজা না পাবার একটা কারণ হলো নামাজ বুঝে না পড়া। তাই শেখার চেষ্টা করতে হবে, কারণ আরবী ভাষা খুবই সহজ। যদি এখন কিছুই না জানেন তাহলে দাঁড়ানো বসা সবখানে সুবহানাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ পড়লে নামাজ হয়ে যাবে তবে শেখার চেষ্টায় থাকতে হবে। একেকদিন একটা শিখবেন ও তা পড়বেন। এটাই মত দিয়েছেন আলেম সমাজ। নাম বললে অনেকেই তাদের চিনবেন। যেমন শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানি, ইবনে কাসির, ইবনে হাজার, ইমাম আবুহানিফা, ইমাম শাফেয়ী সহঅন্যান্য- আল্লাহ সবাইকে রহম করুন।
আবদুল্লাহ বিন আবু আউফাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ কোন এক ব্যক্তি নাবী (সাঃ) এর নিকট এসে বলল- আমি কুরআন এর কোন অংশ গ্রহণে (মুখস্থ করতে) সক্ষম নই, তাই আমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দেন যা আমার জন্য যথেষ্ট হয়। নাবী (সাঃ) বলেন, তুমি বলবে, 'সুবাহান'আল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ অলা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, অলা হাওলা অলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম'। (ইবনু হিব্বান, দারকুৎনী, হাকিম এটিকে সহীহ বলেছেন)। -[আবু দাউদঃ ৮৩২; আহমাদঃ ১৮৬৩১; ইবনু হিব্বানঃ ১৮০৮; দারকুৎনীঃ ৩/৩০; হাকিমঃ ১/২৪১]
আসুন জেনে নিই নামাজে মনোযোগ নষ্টের কিছু কারণ, ফলাফল ও সমাধানঃ কারন জানলেই তা এড়িয়ে চললে সমাধান পাওয়া যাবে।
দেখবেন নামাজে দাড়ালেই ভুলে যাওয়া কথা ও কাজ গুলো মনে পড়ে, হারানো জিনিসও মনে পড়ে কোথায় আছে, বা কাজের শিডিউল ও কাজের সিরিয়াল মনে পড়ে। আরোও কত কি।
নামাজে মনোযোগ নষ্টের ১ম কারণ - নামাজ বুঝে না পড়া। না বুঝার মুল কারণ আরবী আমাদের মাতৃভাষা নয়। তবে আরবী সহজ। ১ মাস একটানা দিনে ২-৩ ঘন্টা কারো কাছে শিখলেই আপনি আরবী দেখে পড়তে ও বুঝতে পারবেন। আরবী শেখার অনেক এপ্সও আছে এন্ড্রয়েড এর জন্য। চেষ্টা করে দেখতে পারেন। তবে কোন হাফেজ বা আলেম এর কাছে শেখা খুব বেশি কার্যকর।
নামাজে মনোযোগ নষ্টের ২য় কারণ - কাজ রেখে আসা। একটা কাজ অর্ধেক বা কিছু টা করে রেখে নামাজে যাওয়া। মনে মনে থাকে নামাজ শেষ করেই অই কাজ টা করতে হবে, এমন করবেন না। কাজ হাফ হোক বা কিছু, নামাজে গেলে মনে করবেন নামাজ এর পর মৃত্যু আসবে বা আসতে পারে। কাজ কিভাবে করবে, দেখবেন মন আসবে। এমনকি বাজারের বযাগ, দামি জুতা ও মসজিদের নিরাপদ স্থানে রেখে নামাজে দাড়ানোর জন্য মত দিয়েছেন আলেম গন। যাতে মনোযোগ সেখানে আটকে না থাকে।
নামাজে মনোযোগ নষ্টের ৩য় কারণ - সামনে কাজ থাকা। কাজ তো থাকবেই কিন্তু এমন হলে আপনার নামাজে তাড়াহুড়া আসবে। আর এই ক্ষেত্রে আপনি ২য় কারণে লেখা সমাধান ফলো করতে পারেন। মনে মনে রাখতে চেষ্টা করবেন যে আল্লাহ আমাকে দেখছেন আমি তার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। তাহলে আপনি বুঝবেন দুনিয়ার একজন মন্ত্রির সামনে হইলে কত শান্ত হয়ে থাকতেন। সেখানে আপনি আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে।
নামাজে মনোযোগ নষ্টের ৪র্থ কারণ - চলমান সমস্যা দূর না করা। নামাজ পড়তে পড়তে মোবাইল বাজছে, বা বাসায় পড়ছেন তখন কেউ দরজা ধাক্কাচ্ছে, বা জায়নামাজের নিচে ঢিল, ঝিল , কাঠি পড়েছে তা সমাধান না করে, মোবাইল বন্ধ না করে, দরজা না খুলে দিয়ে নামাজ পড়েই পড়েই যাচ্ছেন, এতে মসজিদে থাকলে আপনি সহ সবারই ক্ষতি হবে। মনে রাখতে হবে নামাজে অপ্রয়োজনে নড়া যাবেনা, কিন্তু প্রয়োজনে নড়া যাবে, মাঝে মাঝে নড়া সুন্নাত, মাঝে মাঝে নড়া ওয়াজিবও। যেমন কাতারের মাঝে ফাকা হয়ে গেছে যা নামাজ শুরুর পড় টের পেলেন। হেটে কাতার এটে নিতে হবে। অথবা আপনি কাতারের আগে / পিছে চলে গেছেন, নড়ে কাতার ঠিক করে নিবেন।
আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সা.) বলেছেন, 'নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা কাতার মিলিয়ে সালাত আদায়কারীদের উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং যে মাঝের ফাঁকা বন্ধ করে, আল্লাহ এ কারণে তাঁর একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেন।' -[ইবনু মাজাহ হা: ৯৯৫; মুসনাদে আহমাদ: ৬/৮৯]
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান এলাকায় একটা ভুল ধারণা আছে যে নামাজ এ নড়লেই নামাজ ভেঙ্গে যাবে। না - এ ধারণা ভুল। সাহাবীগণ (রা) কেউ যখন নামাজে ঊট ধরে রেখে নামাজ পড়েছেন , উট নড়েছে সাহাবী ও নড়েছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম কাবার দরজা খুলেছেন নামাজ অবস্থায় এটা সহীহ হাদিসে বর্ণীত আছে। তাই জড়তার কিছু নাই। আল্লাহ কারো উপর সাধ্যের বাইরে কাজ চাপিয়ে দেন না।
জাঝাকুমুল্লাআহ খাইর
ReplyDeletePost a Comment