প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ও যুক্তি-রসের চিপায় নাস্তিকতা
মাওলানা আব্দুর রহীম (রাহিমাহুল্লাহ -১৯১৮-১৯৮৭) “বিবর্তনবাদ ও সৃষ্টিতত্ত্ব” নামে একটি বই লেখা শুরু করেন। অবাক লাগে যে একজন মাওলানা বিজ্ঞানের ওপর বই লিখবেন; তাও আবার বিজ্ঞানের ভুল খন্ডিয়ে!! অবাক হলেন সেই সময়ের লোকেরা; বিশেষত বিভিন্ন ভার্সিটির শিক্ষকেরা। অথচ অবাক হওয়ার তেমন কিছুও ছিলো না। কারণ যারা এই মাওলানাকে চিনতেন তারা জানতেন তিনি কিরুপ আন্তর্জাতিক লোক ছিলেন। সেই সময়কার দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিজ্ঞানবিভাগের অনেক প্রফেসরই তাঁর কাছে বইটি দেওয়ার জন্য আগে থেকেই বলেছিলেন, যাতে পরখ করে দেখতে পারেন একজন মাওলানা আবার ভুল পথে চলে যায় কিনা!!
তিনি বইটি লেখা শেষ করলেন। বইটি লেখা শেষে যারা বইটি চেয়েছিলেন সেই সব বিজ্ঞানের প্রফেসরদের কাছে তিনি বই এর কপি দিয়ে প্রত্যেককে বলেছিলেন আপনারা আমার বই এর ওপর মন্তব্য করুন। আর বই লেখা শেষ হওয়ার পর যারা আগে চেয়েছিলেন কিন্তু শেষ হওয়ার পরে তারা আর চাননি তিনি তাদের কাছে নিজে বইটি দিয়ে মন্তব্য লিখতে বলেছিলেন। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো সেই সময়কার কোনো ভার্সিটিরি কোনো বিজ্ঞানের পূজারী সেক্যুলার-নাস্তিক প্রফেসররা একটা মন্তব্যও করতে রাজি হননি বা পারেনি। হাহা। হাসি লাগে না? একজন মাওলানা একটা বই লিখেছেন, অনেক সেক্যুলার-নাস্তিক প্রফেসর চেয়েছেন। তিনি কেবল দিয়েই ক্ষান্ত হননি বরং উলটো বলেছেন আপনারা আমার বইয়ের ওপর মন্তব্য করুন, আমি সেগুলো নিয়েও আলোচনা করবো।
মাওলানা আব্দুর রহীম (রাহিমাহুল্লাহ) নিরাশ হলেন তাদের নাস্তিকতার ভিত্তিতে আঘাত হানার পরেও তারা একজনও সামনাসামনি আসতে সাহস করলেন না। এর কারণ মাওলানার বই এর পরতে পরতে দেখতে পাবেন। তিনি কিভাবে ভন্ডতের উত্তর দিয়েছেন বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞানের যুক্তি ও বিজ্ঞান দ্বারা। বই এর প্রতিটা পরতে পরতে তার ছাপ নিহিত আছে। এভাবেই নাস্তিকতার ভন্ডামির নষ্ট জামা খুলে গেছে একজন মাওলানার কাছে। এভাবে আমরা যুক্তি আর বিজ্ঞানের কাছে নাস্তিকতার অপযুক্তিগুলো হেরে গেলো।
বিজ্ঞানকে যেসব মানুষেরা পূজা শুরু করেছে, সেইসব লোকেরাও যেমন অপযুক্তিতে দূর্বল, তেমনি দূর্বল তাদের বিজ্ঞানের নামে অপবিজ্ঞানের কথাও। তারা বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানের নিজস্ব চিন্তাগুলোকে এক করে গুলিয়ে ফেলেছে। তাদের বিজ্ঞানীরাই একবার বলবে পৃথিবী স্থির, সূর্য ঘুরে। আবার বলবে, না, সূর্য স্থির, আসলে পৃথিবী ঘুরে। আবার বলবে, নাহ, দুইটাই ঘুরে। মামার বাড়ির মুয়ার মত একেকদিন একেকটা চায়। এদের মত ভন্ড নাস্তিকরা প্রতিদিন একটা করে হাইপোথিসিস বলবে আর সেইটারেই বিজ্ঞান বলে ধর্মরে গালি দিয়ে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলবে। অথচ ভন্ডামিতে যে আত্মতৃপ্তি। সেইসব ভন্ডামির জায়গাগুলোকে নতুন করে তুলে এনেছেন আরিফ আজাদ এর 'প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ' বইটিতে।
বইটি বিজ্ঞানের বই নয়। বরং বিজ্ঞানের বাপ (উৎস) ফিলোসফি বা দর্শনের যুক্তি ও রসবোধ দিয়ে বিজ্ঞান পুজারী নাস্তিক-সেক্যুলারদের রোগের অপযুক্তিগুলোকে দেখানো হয়েছে। এজন্য পড়তেও বিরক্তিবোধ করবেন না আবার উপভোগের সাথে দেখতে পারবেন বিজ্ঞানপুজারীরা কীভাবে অসৎ পথের আশ্রয় নিয়ে সাধারণ জনগণকে ধোঁকা দিচ্ছে।
বিজ্ঞান নাস্তিকতা প্রমোট করে না, নাস্তিকতা প্রমোট করে বিজ্ঞানের চর্চাকারী কিছু ব্যক্তির দূর্বল চাহিদা। যেমন বলেছেন নাস্তিকদের অন্যতম গুরু হাক্সলী যে, আমাদের ধর্মের সাথে তেমন বিরোধ নেই, যা বিরোধ সেটা হলো ধর্মের নৈতিকতার সাথে। মানে হলো তাকে যদি বলেন, নৈতিকতা মানতে হবে না তুমি ধর্মেই থাকো, তখন দেখবেন সে ঠিকই ধর্মকে গালি দেবে না। কারণ হলো তখন তার ধর্মও ঠিক থাকলো (বা জাহান্নামেই যাক!) আবার ফ্রি মিক্সিং করতে পারবে। মূলকথা হলো সে চায় তার মন যা চায় তাই করুক। সে তার মনকেও বিজ্ঞানের মত গড আকারে নিয়েছে। এভাবে তাদের গডের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পেতে বিজ্ঞান থেকে শুরু করে মন, ডারউইন, মার্ক্স, ফ্রয়েড এ পৌছেছে। শেষে তারা কুকুর-বিড়াল আর বাঘ-ভাল্লুক-হাতি-ঘোড়ার কাছে মঙ্গল চাওয়া শুরু করলো। তাদের বিজ্ঞান গডকে আবার এসব প্রাণীনামক গডগুলোর কাছে নত করলো। এভাবে নিজেদের প্রতিটা ইচ্ছাকে বিজ্ঞান গড, ফিলোসফি গড, কুকুর-বিড়ালে মঙ্গল চাওয়া গড ইত্যাদি গডে উপাসনা শুরু করে দিলো। সোজা কথায় তাদের দূর্বল মনের চাহিদার বিপরীতে যাই যাবে সেগুলোর বিরুদ্ধেই তারা অপযুক্তি আর বিজ্ঞানের অপব্যবহারে লেগে পড়বে। আর আমাদেরও দায়িত্ব হয়ে পড়ে এসব অসৎ পূজারীদের মুখোশগুলোকে খুলে দেবার। তাই বইটি অবশ্যই সংগ্রহ করে নিবেন।
এছাড়া এবছর আরিফ আযাদের দ্বিতীয় বই 'আরজ আলী সমীপে' সমকালীন পরকাশন থেকে বের হয়েছে। এটাও সংগ্রহে রাখতে পারেন, যা নাস্তিকদের দুর্বল প্রশ্নের সহজ উত্তর দিতে সহায়ক হবে, ইন শা আল্লাহ্।
কোন মন্তব্য নেই