মুখোশ উন্মোচন -২ [ পর্দার বিধান এবং তথাকথিত পশ্চিমা নারী স্বাধীনতা]


নাস্তিক-মুক্তমনা-মুশরিক এবং পশ্চিমা ইসলামবিদ্বেষীদের একটা প্রিয় টপিক হল ইসলামের পর্দার বিধান। ইসলামে শালীনতা বজায় রাখার জন্য যেসব বিধিবিধান দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে বিদেশে থেকে ব্লগ লিখে কিংবা নানা ভিডিও আপলোড করে ইসলাম নিয়ে কটূক্তি করা লোকদের মাথাব্যাথার সীমা নেই। ইসলাম নারীদের প্রতি অবিচার করেছে, তাদের বন্দী করেছে এমন নানা কথা বলতে বলতে তারা আক্ষরিক অর্থেই মুখে ফেনা তুলে ফেলে। এছাড়া টিভিতে টকশো করে পর্দার বিধানকে মধ্যযুগীয় বিধান, আরবের কালচার, ধর্মান্ধতা বলার মতো প্রগতিশীল-সুশীলদেরও কোন অভাব হয় না।

.
এরা সবাই নারী স্বাধীনতা এবং নারী অধিকার নিশ্চিত ও সংরক্ষন করার মডেল হিসেবে আধুনিক পশ্চিমা সভ্যতাকে উপস্থাপন করে। পশ্চিমা সভ্যতার অধঃপতনের ধারা যখন আদনান কবির থেকে ঐশীদের কাছ পর্যন্ত পৌছে যায় তখনো এই বুদ্ধিব্যবসায়ীগুলো দশক দশক আগে পাঠচক্রে মুখস্থ করা কথাগুলোই উগড়ে দিতে থাকে।
.
একটা কথা এদের মুখে খুব শোনা যায় -
.
““উপমহাদেশে মেয়েরা শালীন পোশাক পরে চলাফেরা করলেও রাস্তাঘাটে ইভটিজিং, হয়রানির শিকার হতে হয়; অথচ পশ্চিমা দেশে মেয়েরা কত খোলামেলা পোশাকে দিব্যি একা একা চলাফেরা করে কোন সমস্যা ছাড়াই। নিশ্চয়ই সমস্যা শুধু আমাদের সমাজের লোকজনেরই, পশ্চিমা দেশগুলো নারীদের জন্য কতই না নিরাপদ, নারীরা
.
এমন অনেকেরই ধারণা, ইউরোপ, আমেরিকা নারীদের স্বাধীন চলাফেরার স্বর্গরাজ্য। মেইনস্ট্রিম মিডিয়া তাদের সমাজকে সকলের সামনে যেভাবে তুলে ধরে তাতে অবশ্য খালি চোখে দেখলে এরকম ধারণা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু বিশ্বাস করা কষ্টকর হলেও সত্যি, বাস্তব চিত্র এর বিপরীত। পশ্চিমা দেশে নারীরা ঘরে-বাইরে, পথে-ঘাটে পুরুষদের দ্বারা প্রতিনিয়ত যেভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হয় তা আমাদের সমাজের অবস্থার চেয়ে ভালো কিছু তো নয়ই, বরং ক্ষেত্রবিশেষে আরো তীব্র পর্যায়ের।
.
আর পর্ন ইন্ডাস্ট্রির সূতিকাগার যে সমাজে তারা নারীকে সম্মানের চোখে দেখে নিরাপদ থাকতে দেবে এ আশা করাও তো অবাস্তব। যারা পর্নোগ্রাফিতে নারীকে ভোগ্যবস্তু বানিয়ে পশুর মত ব্যবহার করে, সেসব পুরুষরা রাস্তাঘাটে পরিচিত বা অপরিচিত যেকোন নারীকে দেখে চাইলেও পারে না তাদেরকে স্বাভাবিক মানুষ হিসাবে সম্মানের চোখে দেখতে। ফলস্বরূপ সেসব দেশে নারীরা রাস্তায়, জনসমাগমপূর্ণ স্থানে, পার্কে, গণপরিবহনে, সবখানে হয়ে চলেছেন চরমভাবে নির্যাতনের শিকার যা খবরের আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।
.
আমাদের এই সিরিজের এ পর্বে আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করব পাশ্চাত্য সমাজে ঘরের বাইরে নারীদের চলাফেরার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার প্রকৃত চিত্র, যা তথাকথিত মূলধারার মিডিয়া কখনোই আপনাদের কাছে প্রকাশ করবে না।
প্যারিসের গনপরিবহণ গুলোতে ভ্রমণ করার সময় শতকরা একশজন নারীই যৌন নিপীড়নের শিকার হন.
সূত্র- টেলিগ্রাফ [http://bit.ly/1b6GAme ]
একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে, লন্ডনের প্রায় অর্ধেক তরুণী জনসমক্ষে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। অনেককে এমনকি বাসে এবং ট্রেনেও নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। End Violence Against Women (EVAW) নামে একটি সংস্থার একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ৩৪ বছরের নিচে ৪১ শতাংশ মহিলাকেই রাস্তায় যৌন হয়রানির শিকার হয়ে হয়েছে। এর মধ্যে ২১ শতাংশ বলেছেন যে, তাদের উদ্দেশ্যে অশ্লীল মন্তব্য ও অংগভংগি করা হয়েছে এবং ৪ শতাংশ বলেছেন তাদের শরীরে হাত দেওয়া হয়েছে।
.
যারা গণপরিবহনে যাতায়াত করেন তাদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আরো ভয়াবহ। ১০৪৭ জনের মধ্যে চালানো একটি জরিপের মধ্যে এক তৃতীয়াংশই বলেছে যে তাদের উদ্দেশ্যে অশ্লীল মন্তব্য করা হয়েছে। ৫ শতাংশ বলেছেন বাসে এবং ট্রেনে তাদের শরীরে হাত দেওয়া হয়েছে। এই বিস্ময়কর তথ্য প্রকাশের ফলে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ এবং জাতীয় সরকার যৌন হয়রানির প্রতি আরো কঠোর মনোভাব দেখানোর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে শুরু করেছে। বিগত বছরগুলো ধরে অনেক ওয়েবসাইট এবং সামাজিক সংগঠনগুলো মেয়েদেরকে উৎসাহিত করে যাচ্ছে তাদের সাথে ঘটা ঘটনাগুলো পুলিশে রিপোর্ট করতে এবং তারা পুলিশকে অপরাধীকে ধরার জন্য আরো প্রচেষ্টা চালানোর জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
.
এ তো জানা গেল কিছু পরিসংখ্যাগত তথ্য। এখন কয়েকজন ভুক্তভোগীর ভাষ্য শোনা যাক যারা এধরণের নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
.
একজন ভুক্তভোগী রোজি ওয়েইড(২০) পেশায় একজন সংগীতশিল্পী। বসবাস করেন পুর্ব লন্ডনে। “লন্ডনে আসার পরে আমাকে অনেকবার হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। আমাকে তিনবার আক্রমণ করা হয়েছে। আমাকে ঘরে বা ট্রেনে অনুসরণ করা হয়েছে। আমাকে পাতালরেলে আক্রমণও করা হয়েছে একবার।” রোজি তার এক দিনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা দেন এভাবে –
.
“কিছুদিন আগে আমি আক্রান্ত হই লিভারপুল স্ট্রিট স্টেশনে। আমার বাসায় আসতে আসতে রাত হয়ে গিয়েছিল। মোটামুটি ১১ টা ৩০ বাজে। আমি একটি ক্যাশ পয়েন্ট ব্যবহার করছিলাম। হঠাৎ এক লোক এগিয়ে আসে। তারা আমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘তোমার নাম কি?’ আমি ক্যাশ পয়েন্টটি থেকে টাকা তুলতে যাই কিন্তু সেটা ছিল আউট অফ অর্ডার। আমি সেখান থেকে সরে আসি। কিন্তু সে আমাকে অনুসরণ করতেই থাকে। আশেপাশে অনেক মানুষও ছিল। এই অবস্থায় আমি পরিষ্কার করে জানিয়ে দেই যে, আমি তার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক না। সে এরপরেও আমাকে অনুসরণ করতে থাকে। সে তার হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে। সে ‘তোমার কি বয়ফ্রেন্ড আছে’ ‘আমার বাসায় আসতে চাও’ এইরকম নানা কথা জিজ্ঞেস করতে থাকে। আমি ধীরে ধীরে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠি। এক পর্যায়ে সে আমার চুল ধরে টান দেয়। আমি চিৎকার করে উঠি।”
.
আরেক ভুক্তভোগী এক্সটারনিবাসী নাটালি জানান, “আমি কয়েকজন বন্ধুর সাথে শুক্রবার কাজ শেষে একটি ক্যাশপয়েন্টের লাইনে দাড়িয়েছিলাম। আমি ছিলাম শহরের ব্যস্ত একটি এলাকায়। রাতটি অনেক ঠান্ডা ছিল তাই আমি একটি গরম কোট গায়ে দিয়েছিলাম। হঠাৎ পাঁচজন লোক জগিং করতে করতে আসছিল। তাদের একজন আমার পিছনে হাত দিয়ে জোরে চাপ দিল। এত তাড়াতাড়ি ঘটনাটা ঘটে গেল যে আমি দেখতেই পারিনি তাদের মধ্যে কোনজন এই কাজটি করেছে। আমার তখন নিজেকে অনেক ক্ষুব্ধ আর দুর্বল মনে হচ্ছিল।”
.
উত্যক্তকারীরা আক্রমন করলে আপনি যদি তাদেরকে থামতে বলেন তো পরিস্থিতি খুব শীঘ্রই উত্তপ্ত হয়ে উঠে-এক ভুক্তভোগীর মন্তব্য ছিল এমন। “আমরা রাস্তার মুল সড়কে ছিলাম। আমি যখন ছোট একটা রাস্তায় উঠলাম তারা আমাকে তিনটা রাস্তা পর্যন্ত অনুসরণ করতে থাকে। আমি তাদের পিছে ফেলার জন্য দৌড়াতে থাকি। তারা চিৎকার করে নানারকম অশ্লীল কথা বলতে থাকে আমাকে লক্ষ্য করে। আমি খুবই আতংকে ছিলাম।”
.
‘সাউথ লন্ডন রেপ ক্রাইসিস’ থেকে ফিওনা এলভিনস জানান, রাস্তায় কোনপ্রকার যৌন হয়রানির শিকার হননি এমন মহিলার সাক্ষাত পাওয়া এখন রীতিমত সৌভাগ্যের ব্যাপার। মহিলারা প্রত্যেকদিনই হয়রানি থেকে বাঁচতে তাদের নিজের রুটিন, সিদ্ধান্ত ইত্যাদি পরিবর্তন করেন। কিন্তু এটা তাদের আত্মবিশ্বাসে অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেই চলেছে। জানা যায় শুধুমাত্র গত বছরেই লন্ডন পুলিশের কাছে ৪৫০০০টি ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স আর ৩০০০ টি ধর্ষনের ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে!
.
“বাস/ট্রেনের সীটে কিংবা স্টপেজে আপনি কাউকে না কাউকে দেখতে পাবেন যে আপনার উদ্দেশ্যে বাজে মন্তব্য করার জন্য অপেক্ষা করছে।” মিস গ্রীন একটি ঘটনার কথা বর্ণনা করেন। এই ঘটনাটা বার্মন্ডসিতে ঘটেছিল। তাকে দুইজন একটি সাদা ভ্যানে অনুসরণ করছিল যখন তিনি সাইকেল চালাচ্ছিলেন। “তারা আমার উদ্দেশ্যে এমন কথা বলেছিল যে, আমি অতিষ্ঠ হয়ে যাই।” ইউগভ সার্ভে-তে অনেক মহিলা জানিয়েছেন তারা গণপরিবহন ব্যবহারে অনিরাপত্তায় ভোগেন। কেউ কেউ জানিয়েছেন তাদেরকে গন্তব্যের অনেক আগেই ট্রেন থেকে নামতে হয়েছে অথবা বগি পরিবর্তন করতে হয়েছে উত্যক্তকারীর হাত থেকে বাঁচার জন্য। “আমি রাতে যদি একা বাসায় যাই তো অনেক আতংকে থাকি। আমি প্রায়ই ট্রেনের বগি পরিবর্তন করি অথবা বাস পরিবর্তন করি।”এমনটাই ছিল ইউগভ সার্ভে-তে মন্তব্যকারীর মতামত।
.
“দোতলা বাসে চলার সময়ে উপরের তলায় কিছু আপত্তিকর ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে রাতের বেলা আমি উপরে থাকতে নিরাপদ বোধ করি না। ড্রাইভারের কাছে বসাটাই আমার জন্য নিরাপদ মনে হয়।”
.
যৌন নিপীড়নের শিকার ভিকি সিমিস্টার(২৭) একটি সামাজিক সংগঠন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। ২০১০ সালে তিনি কিছু লোকের দ্বারা উত্তর লন্ডনের ম্যানর হাউস আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশনে আক্রান্ত হন। এরপরে তিনি ইউকে এ্যান্টি স্ট্রিট হ্যারাসমেন্ট ক্যাম্পেইন নামে সংগঠনটি গড়ে তুলেন। তিনি বলেন, “আমি রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম। তখন একটা গাড়িতে করে কিছু মানুষ আমার পাশে ব্রেক করে। তখন অন্ধকার হয়ে আসছিল। তারা আমাকে লক্ষ্য করে আমার পোশাক নিয়ে মন্তব্য করতে পারে।” “তারা গাড়ির গতি কমিয়ে আমি টিউব স্টেশনে যাওয়া পর্যন্ত আমাকে অনুসরণ করতে থাকে। প্রায় পনের মিনিট সময় ধরে এই ঘটনা ঘটে।” “আমি অনেক আঘাত পেয়েছিলাম। আমি তাদের বলেছিলাম আমাকে বিরক্ত না করতে।” “তারা আমাকে স্টেশন পর্যন্ত অনুসরণ করে। তারা আমাকে দেয়ালের সাথে ঠেসে ধরে। আমাকে আশেপাশের মানুষের সাহায্য খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়ে।”
.
এরকম ঘটনার উদাহরন অসংখ্য। যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে অভিযোগ ও সচেতনতামূলক ওয়েবসাইট গুলোতে প্রতি মাসে হাজার হাজার হিট আসে। তারা তাদের সাথে নিত্যদিন ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনাগুলো সেখানে শেয়ার করেন। বয়স ১৩ হোক বা ৭০; তারা সকলেই জানতে চান কেন তাদের এসব পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে।
.
এখন মনে কৌতুহল জাগতে পারে, পাশ্চাত্যে নারীরা যদি এতই অনিরাপদ হন তাহলে তা আমাদের কান পর্যন্ত আসে না কেন? কেন আমাদের সমাজে মেয়েদের নিরাপত্তার অবস্থা আর তাদের সমাজে মেয়েদের নিরাপত্তার অবস্থাকে কাছাকাছি বলে ধরে নেওয়া হয় না? এর কারণ, পশ্চিমা সমাজের একটা বড় অংশ অশ্লীল মন্তব্য বা অংগভংগি করাকে সাধারণভাবে মেয়েদের ‘আকৃষ্ট করার প্রচেষ্টা’র থেকে বেশি কিছু মনেই করে না। একারণে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে তাদের গড়ে তোলা সামাজিক আন্দোলনগুলোও তেমন পাত্তা পাচ্ছে না। বরং কেউ মুখ খুললে বলা হয় সে বাড়াবাড়ি করছে। আবার সব নারীরা একে খুব একটা ‘হয়রানি’ ভাবেনও না, এমন কেউ কেউ আছেন যারা রাস্তায় কেউ তাদেরকে উদ্দেশ্য করে কোন আপত্তিকর মন্তব্য করলে এটা উপভোগ করেন! ভাবেন তার রূপের প্রশংসা করা হচ্ছে বা খানিকটা ‘harmless flirting’(!) হচ্ছে। তবে এদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হলেও এরা অধিকাংশ নন।
.
আমেরিকা, ইউরোপের মিডিয়া নিজেদের দেশের নারীদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার এই রূপ কখনো উল্লেখ করে না, বরঞ্চ নারী স্বাধীনতার মডেল হিসেবে নিজেদের তুলে ধরে। নিজেদের দেশের নারীদের নিরাপত্তার এমন দশা অথচ অন্য দেশের নারীদের স্বাধীনতার জন্য তাদের হইচইয়ের শেষ নেই।
#ডাবলস্ট্যান্ডার্ড
===================================
তথ্যসূত্রঃ
=====================================
উৎস: লস্ট মডেস্টি ব্লগ
লস্ট মডেস্টি ব্লগের আর্টিকেলের লিঙ্কঃ http://lostmodesty.blogspot.com/2015/10/blog-post_25.html
প্রবন্ধের কপিরাইট © লস্ট মডেস্টি ব্লগ
পুনঃপ্রকাশ, লস্ট মডেস্টি ব্লগ অনুমোদিত

অফিসিয়াল ওয়েব সাইট ঃ shottokothon.com  এবং response-to-anti-islam.com

ফেসবুক পেজঃ fb.com/shottokothon1

Post a Comment

Previous Post Next Post