স্বামী, স্ত্রী ও শাশুড়ী : সত্যিই কি পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল সম্পর্ক?


০১
স্বামী | স্ত্রী | শাশুড়ী
-হুজুর! “বউ হারালে শ টা বউ পাওয়া যাবে, কিন্তু মা হারালে আর পাওয়া যাবে না”-কথাটি কতটুকু সঠিক?
-বৎস! কথাটি বাহ্যিকভাবে খুবই সঠিক মনে হলেও এরকম বলা অত্যন্ত খারাপ এবং শয়তানী মস্তিষ্কপ্রসূত। তোমার স্ত্রী কিন্তু তোমার সন্তানের মা। সুতরাং, প্রত্যেক স্ত্রীর ভেতরেই একজন মা লুকিয়ে থাকেন। আরেকটা কথা, মায়ের প্রয়োজনীয়তা পূরণে অনেক সময় তোমার আরো ভাই-বোন আছেন, কিন্তু স্ত্রীর প্রয়োজনীয়তা পূরণে তুমি একজনই।

০২
-কে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, মা নাকি বউ?
-দুজনের মধ্যে compare করাটাও শয়তানের কাজ। মা হচ্ছেন তোমার কলিজা আর স্ত্রী হচ্ছেন তোমার হার্ট। এবার বলো- “কলিজা” আর “হৃদয়ের” মধ্যে কোনটা গুরুত্বপূর্ণ? শুনো, দুজনের কাউকেই অখুশি রেখে পরকালে মুক্তি পাবে না।
'
০৩
-হুজুর! তাহলে আমাদের পরষ্পরে কী রকম আচরণ হওয়া উচিত?
-তুমি স্ত্রীর সাথে এমন আচরণ করবে, যে আচরণ তোমার বোনের সাথে তার স্বামীর থেকে আশা করো। জননী এমন আচরণ করবেন, তোমার বোনের সাথে তার শাশুড়ি থেকে যে রকম আচরণ আশা করেন। আর তোমার স্ত্রীর উচিত শাশুড়ির সাথে এমন আচরণ করা, যে আচরণ তিনি আপন ছেলের বউ থেকে তিনি আশা করেন। স্বামীর পরিবারের লোকের সাথে এমন আচরণ করা উচিত, যা তার ভাইয়ের বউয়ের কাছ থেকে আশা করেন।
☆শুনো, বৎস! স্রষ্টার দেয়া নির্দিষ্ট কক্ষপথে চললে সৃষ্টিসমূহ কখনোই মুখোমুখি হবে না। ইনশাআল্লাহ।

০৪
স্বামীদের বলছি,
নিজ স্ত্রীকে রাগ দিয়ে নয় সুন্দর আচরণ আর ভালবাসা দিয়ে মন জয় করুন।
নিজের চরিত্র আর নবীজির সুন্নাত দিয়ে তাকে অাকৃস্ট করুন।
ভুল না ধরে মন, মগজ ও সুন্দর পরিস্থিতি বুঝে আপ্নি যেভাবে খুশি হোন সেভাবে বুঝানোর চেষ্টা করুন।
নিজের মা এবং স্ত্রীর মাঝে ভালবাসা বাড়াতে সাহায্য করুন, অগ্রনি ভূমিকা পালন করুন।
যখন বাজারে যাবেন তখন বাড়ি আসার আগে কিছু হাদিয়া স্ত্রীর জন্য আনুন। স্ত্রী যা পচ্ছন্দ করে সেটা আগে দেওয়ার চেষ্টা করুন।
আল্লাহর হুকুম পালনে স্ত্রীকে উৎসাহ প্রদান করুন, পরকালের ভয়, জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা স্পস্টরুপে উপস্থাপন করুন।
মনে রাখবেন!
লেবু যতো চাপ দিবেন ততোই এর স্বাদ নস্ট হবে, স্ত্রীর ভুল যতো ধরবেন, যতো রাগ করবেন ততোই সাংসারিক কলহ বাড়বে, বরং বেশি বেশি স্ত্রীকে ছাড় দিন। রাগ দিয়ে নয় স্ত্রীকে ভালবাসা দিয়ে জয় করুন।

০৫
আর একটি কথা
দ্বীনদার সঙ্গী মানেই শুধু একসাথে দ্বীন মানা, নফল পড়া, তাহাজ্জুদে ডেকে দেয়া...
যারা শুধুই এই ধারনা নিয়ে আছেন, তারা এখনো কল্পনার আকাশ থেকে নিচে নামতে পারেননি।
নিউলি ম্যারিড ফেবু সেলিব্রিটির 'খুন'শুটি মার্কা পোস্ট দেখে পুরো জীবনের বাস্তবকে অনুরূপ মনে করে বসা বোকামি।
নতুন দম্পতির পোস্ট আবেগের জোয়ারে ভাসবে এটাই নিয়ম। কিন্তু ইহাই সারাজীবনের বাস্তবতা নয়।
শুধুই স্বপ্নের পশরা নিয়ে বাস্তবে নামলে হোঁচট খাবেন।

একটা সংসার। দু'জনের। দু'টি 'মানুষ', আবার বলছি, "মানুষ"।
তাদেরও মানবীয় কিছু সীমাবদ্ধতা থাকবে; তারা পাশাপাশি থাকলে বছরের পর বছর বাংলা সিনেমার মত জীবন চলবে না।
ধরুন; হয়ত, প্রচন্ড ব্যাস্ততায় আপনার একবেলা জামাত ছুটে গেছে ;
আপনি নিজেই প্রচন্ড মনঃক্ষুণ্ণ ; সে হয়ত এটা নিয়ে অনুযোগ-অভিযোগ করেই বসল। তখন তার উপর একটু হলেও হয়ত আপনার বিরক্তি আসবে!
"বেশি জ্ঞান দাও ; হু? "

বোন, হয়ত আপনার কোন ঝামেলার কারনে এক ওয়াক্ত নামাজে দেরি হয়েছে; কিংবা ফরজ বিধানে ত্রুটি হয়েছে, এই মুহুর্তে আপনি আসলেই খুব অনুতপ্ত থাকবেন। এমন সময় ভাই হয়ত ভাল নিয়তেই একটু কড়া ভাবে উপদেশ দিল।
তখন আপনারও একটু আঘাত লাগবে।

দ্বীনদার মানুষগুলোর মধ্যে "তুমি ঐ ছেলে/মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ছিলে কেন" কিংবা " হেসে কথা বললে কেন? " এগুলো নিয়ে ঝামেলা হবার কথা নয়। কিন্তু, উপরোক্ত বিষয়গুলো নিয়েও অসন্তুষ্টি আসে, আসতে পারে। মাত্র ১টি নগন্য উদাহরন দিলাম।

এক্ষেত্রে আপনি যদি ভেবে বসে থাকেন "দ্বীনদার মানে ত্রুটিহীন /অলস্কোয়ার"
তবে আশাহত হবেন।

যে কোন মানুষকে দ্বীন সম্পর্কে সাহায্য করতে হলে শাসন নয়, কোমল হতে হবে।
খুব কোমলতার ইন্ডিরেক্টলি বোঝালে সেটা কড়া উপদেশের চেয়ে বেশি ফলদায়ক। কারন, মানুষ উপদেশ খুব একটা পচ্ছন্দ করেনা।

সহমর্মিতা & কোমলতা একান্ত জরুরি। অন্যথায় হিতে বিপরীত ঘটতে পারে।
তবে হ্যা, সকল মনোমালিন্য কিংবা মনঃকষ্টের বেলায়, আপনার দ্বীনদার সংগীটি তার ভুল বুঝতে অনুতপ্ত হবে।এটাই দ্বীনদারিতা। তবে হ্যা, তাকে যথেষ্ট ফ্যাসিলেট করুন নিজের ভুল বুঝতে। আপনি তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ নিলে শয়তান জয়ী হবে।

বিশেষত; জিহ্বার সাইজ হার্টের চেয়ে ছোট হলেও ; এটা মুহুর্তেই heart কে hurt করার বিরাট ক্ষমতা রাখে।

কিছু ক্ষেত্রে সবার কাছে উত্তম আখলাকের মানুষটার আচরণ ফ্যামিলি মেম্বারদের সাথে বিনম্র হয় না। ( কারনটা হয়ত একটু বেশি সখ্যতা কিংবা আবদার।তবে এটা কাম্য নয়।কারন পরিবারের মানুষগুলোর হক সব'চে বেশি)

আমাদের সকলকেই যথেষ্ট সহনশীল হতে হবে। একটা সুখী জীবনের জন্য উত্তম আখলাক এবং সহনশীলতা জরুরি।

[সংগৃহীত]

Post a Comment

Previous Post Next Post