গত সেমিস্টারে আমাদেরকে কমিউনিকেশান ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে হয়েছিলো। এ সাবজেক্টের একটা বড় অংশ ছিল মোবাইল কমিউনিকেশনের উপরে। মোবাইল ফোনকে ‘Cell-phone’ ও বলা হয়।
কেন?
কারণ, আমরা যখন কথা বলি তখন সে কথাকে অপর পাশে পৌছানোর জন্য যে ট্রান্সমিটার ব্যবহার করা হয়, সে ট্রান্সমিটার যতোটুকু এরিয়াকে কভার করতে পারে তাকে ‘Cell’ বলা হয়। সেখান থেকেই এসেছে ‘Cellular Phone’ বা ‘Cell Phone’। একটা সেলের শেইপ কেমন হলে ভালো হয় তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা বেশ ভালোই গবেষণা করেছেন। বৃত্তকার শেইপ খুব ভালো অপশন। কারণ, কেন্দ্র থেকে পরিধির যে কোন বিন্দুর দূরত্ব যেহেতু সমান, তাই খুব সহজেই একটা ট্রান্সমিটার তার চারপাশের সকল এরিয়াকে একইভাবে কভার করতে পারে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এক সেল দিয়ে তো আর সব জায়গায় কথা বলা যায় না। একটা সেলের ব্যস কতোটুকুই আর হতে পারে?
এক মাইল থেকে শুরু করে বিশ মাইল পর্যন্ত। আমি যদি এখন খুলনা থেকে ঢাকায় কথা বলতে চাই তখন কী করব? দূরত্ব তো তিনশো কিলোর মতো।
সেজন্য পুরো মোবাইল কমিউনিকেশান এরিয়াকে বেশ কিছু ছোট ছোট সেলে ভাগ করা হয়। দরকার হলে এক সেল থেকে আরেক সেলে কল ট্রান্সফার করা যায়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই সেলগুলোর শেইপ যদি বৃত্তাকার হয়, তাহলে কিছু এরিয়া থেকে যায় যা কখনোই কভার করা যাবে না। সেজন্য বৃত্তাকার শেইপের চিন্তা বাদ। তাহলে কী করা যায়?
সমবাহু ত্রিভুজের আকৃতিতে বানাবো সেলগুলোকে? বর্গাকৃতি? নাকি হেক্সাগোনাল বা ষড়ভুজাকৃতি?
তিনটাই ভালো অপশন। তবে হালকা জিওমেট্রি আর ট্রাইগনোমেট্রি এপ্লাই করে দেখা গেলো, হেক্সাগোনাল শেইপ হচ্ছে সবচেয়ে উপযোগী। এই শেইপ ব্যবহার করলেই কম খরচে বেশি দূরত্ব কভার করা যায়।
অনেকক্ষণ বোরিং কথা বললাম, এবার ইন্টারেস্টিং কিছু বলি।
কখনো মৌমাছির চাক দেখেছেন? অনেকগুলো ছোট ছোট ঘরে ভাগ করা থাকে না পুরো চাকটা? খেয়াল করলে দেখবেন, এই ঘরগুলো কিন্তু হেক্সাগোনাল। মৌমাছিরা কিন্তু ট্রাইগনোমেট্রি কিংবা জিওমেট্রি কিছুই জানে না। তারা কোন ইঞ্জিনিয়ারও না। তাহলে কিভাবে তারা জানলো হেক্সাগোনাল শেইপের কথা? কিভাবে তারা বুঝলো এই শেইপে মধুগুলোকে রাখলে কম মোম খরচ করেই অধিক পরিমাণে মধু সংরক্ষণ করা যায়?
বিবর্তনবাদীরা বলে, এটা ন্যাচারালি তাদের ‘Instinct’। অর্থাৎ, সত্তাগতভাবেই তারা এটা জানে। হুমায়ুন আহমেদের মতো সাহিত্যিকরা হয়তো লিখবেন- “প্রকৃতি গভীর মমতায় তাদের এটা শিখিয়েছে।”
আমরা বলি, এটা তাদের শিখিয়েছেন যিনি সকল ইঞ্জিনিয়ারদের সেরা ইঞ্জিনিয়ার। যার অসম্ভব সুন্দর ইঞ্জিনিয়ারিং পরিব্যপ্ত করে রেখেছে এ মহাবিশ্বকে। আমাকে, আপনাকে, আমাদের সবাইকে।
“তোমার রব মৌমাছির অন্তরে ইঙ্গিত দ্বারা নির্দেশ দিয়েছেনঃ তুমি গৃহ নির্মাণ কর পাহাড়, বৃক্ষ এবং মানুষ যে গৃহ নির্মাণ করে তাতে। এর পর প্রত্যেক ফল হতে কিছু কিছু আহার কর, অতঃপর তোমার রবের সহজ পথ অনুসরণ কর। ওর উদর হতে নির্গত হয় বিবিধ বর্ণের পানীয়, যাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিষেধক। অবশ্যই এতে রয়েছে নিদর্শন চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য।” [সূরা আন-নাহল(মৌমাছি) ১৬:৬৮-৬৯]
“(অন্তরে ইঙ্গিত করা বলতে বোঝানো হচ্ছে) এমন জ্ঞান-বুদ্ধি যা প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ করার জন্য প্রত্যেক জীবকে দেয়া হয়েছে।” [তাফসীর আহসানুল বয়ান]
লেখকঃ শিহাব আহমেদ তুহিন
অফিসিয়াল ওয়েব সাইট ঃ Click Here এবং Click Here
ফেসবুক পেজঃ Click Here
সুবহানাল্লাহ
ReplyDeletePost a Comment