ফেইসবুকে একটা পেইজ আছে United for Peace [https://www.facebook.com/unitedforpeace/] . পেইজটা অনেকের চোখেই পরার কথা। প্রায় ৭৫,০০০+ লাইক এবং গড়ে প্রতি পোষ্টে ৫০,০০০ হাজারের বেশি লাইক পাওয়া এই পেইজটার উদ্দেশ্য মুসলিমদের মধ্যে বিকৃত ভাবে ইসলামকে প্রচার করা। পেইজটিতে এমনভাবে কুর’আনের বিভিন্ন আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হয় যাতে করে সাধারন মানুষ বিভ্রান্ত হয় এবং এক সময় এমন কিছু বিশ্বাস করা শুরু করে, যা নির্জলা কুফর ও শিরক।
আপনি যদি পেইজটাতে ঢোকেন তাহলে আপনার চোখে পড়বে কুর’আনের আয়াত, মুসহাফের ছবি সম্বলিত পোস্ট। আপনার চোখে পড়বে, “মন ভালো করে দেওয়া” বিভিন্ন কথা। তবুও কেন আমরা বলছি এটা কাফিরদের পেইজ? কেন বলছি এই পেইজের উদ্দেশ্য বিকৃতভাবে ইসলামকে উপস্থাপন করা এবং কুফর ও শিরক প্রমোট করা?
![](https://scontent.fdac2-1.fna.fbcdn.net/v/t31.0-8/23154892_386083231828063_9059738438275733913_o.jpg?_nc_cat=0&_nc_eui2=AeEJFw_1zEcioHbkrzk2wKVr0qKuvkP2a8YZNo4jYRacjwCTx_2b5r2gxMioYvhR3DEEqk35XKHj-2IuQB58EWYqtwU1-0RdkjLJCiC0vJgktQ&oh=a8f5c5a0741691f1a613e2a0aebd3750&oe=5BE7B10B)
আসুন প্রমাণাদি সহ শারীয়াহর আলোকে এক এক করে দেখা যাক।
পোস্ট বিশ্লেষণ ১
![](https://scontent.fdac2-1.fna.fbcdn.net/v/t31.0-8/23154902_386083318494721_5785512885208227985_o.jpg?_nc_cat=0&_nc_eui2=AeEJp5w0NEoz9O2RC-8sEkKW18pzi66n7pQmb_R1x3XQhx3FYM9m3f6P2h7ECSH3B0XxfPQo47nQRt9bkzPmfK52v-EWZuuBGvseubnqtIoZ2Q&oh=41cc85125ff1df398422edb944daa367&oe=5BD77A86)
সূরা আল ইমরানের ৩য় আয়াতঃ কুরআন তাওরাত এবং ইঞ্জিলের সত্যায়ন করে। কিন্তু এককভাবে এই আয়াতটি প্রচার করলে পূর্ণ জ্ঞানের প্রকাশ হয় না। প্রশ্ন জাগতেই পারে, তাহলে তাওরাত আর ইঞ্জিলও কি অবিকৃত সত্য? সেগুলো থেকে কি কিছু এখনও গ্রহণ করা যাবে? পোস্টটি দেখে তেমন মনে হওয়াই স্বাভাবিক।
অথচ আল্লাহ সুবহানাহু একথাও বলেছেন যে আহলে কিতাবরা অর্থাৎ, ইহুদি খ্রিস্টানরা তাদের
“কিতাবের বিকৃতি ঘটিয়েছে” (২:৭৫)
“তারা নিজ হাতে গ্রন্থ লিখত আর দাবি করত যে সেগুলো আল্লাহর কাছ থেকে অবতীর্ণ” (২:৭৯)
এছাড়াও আহলে কিতাবরা “সত্যের সাথে মিথ্যার সংমিশ্রণ ঘটাতো এবং সত্যকে গোপন করত” (৩:৭১)।
এছাড়াও আল্লাহ স্বয়ং বলেছেন “আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন হল ‘আল-ইসলাম’ ”(৩:১৯)
শুধু তাই না, “ইসলাম ছাড়া আর কোনো দ্বীন আল্লাহর কাছে কস্মিনকালেও গ্রহণযোগ্য হবে না” (৩:৮৫)
সূরা আল-ইমরানের ৩য় আয়াতে আল্লাহ ‘সত্যায়ন’ বলে বুঝিয়েছেন, আগে যে তাওরাত ও ইঞ্জিল প্রেরণ করা হয়েছিল তা আল্লাহর পক্ষ থেকেই ছিল সে কথার স্বীকৃতি আর তাই সেগুলো যে ‘আল্লাহর পক্ষ থেকেই প্রেরিত ছিল’ এই ব্যাপারে মুসলিমদের বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। কিন্তু পরবর্তীতে উল্লেখিত আয়াতগুলোতে আল্লাহ আহলে কিতাবদের কিতাব বিকৃতি উন্মোচিত করে দিয়েছেন যার অর্থ সেগুলো আর অনুসরণযোগ্য নেই। তাহলে ‘United for Peace’ থেকে কেন পরবর্তী আয়াতগুলো প্রচার করা হচ্ছে না? অথচ পরবর্তী আয়াতগুলো প্রচার না করলে এই বিষয়ে অজ্ঞ মুসলিমদের ভুল ধারণা হওয়া স্বাভাবিক। আর আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত দ্বীনের আয়াত (৩ঃ ১৯) আর অন্যথায় হলে কী হবে (৩ঃ ৮৫) এই আয়াতগুলোও কেন প্রচার করা হচ্ছে না?
বস্তুত তারা এমন ভাবে বিষয়টি উত্থাপন করেছে যা থেকে মনে হওয়া স্বাভবিক ক্বুরআন বর্তমানের বিকৃত বাইবেল ও তাওরাতের স্বীকৃতি দেয়, এবং বিকৃত বাইবেল ও তাওরাতের যারা অনুসারী তাদেরও বিশ্বাসী হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া। অথচ ক্বুরআন এর উল্টোটা বলে।
পোস্ট বিশ্লেষণ ২ঃ
![](https://scontent.fdac2-1.fna.fbcdn.net/v/t31.0-8/19243260_386083548494698_5733323064009720491_o.jpg?_nc_cat=0&_nc_eui2=AeHtDqELi3ToQDlYvXRSj5yix8i56j4Bzm8sCZMMUuViD0ZyRskqtbX0tr2dDrQHP74JZ0IYIT1mksA1aB-rReBouALIp5hE3d7AYFhy8s5BzA&oh=102b80f0b7d0d90afa14f56ec36b37eb&oe=5BD9FF42)
অধিকাংশ খৃষ্টান পবিত্র তিন সত্ত্বায় বিশ্বাস করে এবং তারাও মনে করে মুহাম্মদ (স:) একজন সাধারণ মানুষ ছিলেন।/ Similarly most of the Christians believe in Holy Trinity... – এই লাইনে Holy Trinity দেখে প্রথমে মনে হচ্ছিল এটা খ্রিষ্টানদের পেইজ। কারন কোন মুসলিম কখনো খ্রিস্টানদের শিরকপূর্ণ ত্রিত্ববাদ সম্পর্কে বলতে গিয়ে Holy Trinity বা পবিত্র তিন সত্ত্বা – শব্দগুলো ব্যবহার করবে না। অন্যদিকে কোন ইহুদিও কখনো এমনটা বলবে না। একারনে খ্রিষ্টানরা এ পেইজটি চালায় এমন মনে হওয়া স্বাভাবিক। তবে খ্রিষ্টানরা ছাড়াও আর একটি জাত আছে যারা এমন কথ বলে থাকে। এরা হল ইন্টাফেইথ ডায়ালগে বিশ্বাসী ঐসব সেক্যুলারাইযড মুসলিম যারা “সকল ধর্ম সমান, সব ধর্ম ভালো, সব পথের গন্তব্য এক”-জাতীয় বাতিল কথা প্রচার করে। পেইজের অন্যান্য পোষ্টের বক্তব্যের দিকে তাকালে এই ধারণাটা শক্ত হয়। তবে খ্রিষ্টান, সেকুলারাইযড “মুসলিম” কিংবা অন্য যে-ই পেইজটার পেছনে থাক না কেন, তাদের উদ্দেশ্য যে ইসলামের পোশাকে কুফর ও শিরক প্রচার করা, তা নিয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।
লক্ষ্য করুন, রাসূলুল্লাহ ﷺ অন্যান্য নবীদের সমকক্ষ, ইহুদী ও খ্রিষ্টানরাও বিশ্বাসী শুধু পার্থক্য হল তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে মানে না – এই জাতীয় কথা বলার মাধ্যমে লেখার মূল উদ্দেশ্য হল ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের কাফির হওয়া নিয়ে একটি প্রশ্ন তোলা। এই প্রশ্ন তোলার প্রচেষ্টা নতুন কিছু না। হাল আমলের অনেক মর্ডানিস্ট ও কথিত মডারেট স্কলার ও সেলিব্রিটি দা’ঈও নানা ভাবে বলতে চান ইহুদি-খ্রিষ্টানরা কাফির না, তাদের কাফির বলা যাবে না, তাদের কাফির না বলে “not yet Muslim” বলা উচিৎ - ইত্যাদি। ইহুদী-খ্রিষ্টানরা কাফির না, বা তাদের মধ্য শুধু কিছু অংশ কাফির এই ধরনের কথার জবাব আল্লাহ রাসূল ﷺ নিজেই দিয়েছেন।
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন –
সেই সত্ত্বার কসম! যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! এই উম্মতের কোন ব্যক্তি – চাই সে ইহুদি হোক, অথবা নাসারা – আমরা প্রেরিত হবার খবর পেয়ে আমার নবুয়ত ও আমি যে দ্বীন এনেছি তার উপর ইমান না এনে যদি মারা যায়, তাহলে সে জাহান্নামী। [আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, সহীহ মুসলিম]
মুস্তাদরাক হাকিমে ইবন আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু-র বর্ননায়ও এই হাদিস এসেছে। এই হাদিসের ব্যাপারে ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন – আমি রাসূলুল্লাহর এই বক্তব্য শুনে মনে মনে বলতে লাগলাম, কুরানুল কারীমের কোন আয়াত এই বক্তব্য সমর্থন করে? অবশেষে নিচের এই আয়াতটি মাথায় এল –
যারাই এটাকে (কুরআন) অস্বীকার করবে, জাহান্নামই হল তাদের প্রতিশ্রুত স্থান। কাজেই এ সম্পর্কে তুমি কোন প্রকার সন্দেহে নিপতিত হয়ো না। এটা তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আগত প্রকৃত সত্য, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করে না। [সূরা হুদ ১৭]
বর্তমান যুগের ইহুদী ও খ্রিষ্টানরা মুহাম্মাদ ﷺ কে আল্লাহর রাসূল হিসেবে মানে এবং তাঁর উপর নাযিলকৃত শারীয়াহ অনুসরণ করে? তিনি যে দ্বীন এনেছেন তার উপর ঈমান আনে? অবশ্যই না। কারণ যে ব্যক্তি এই কাজগুলো করেছে সে মুসলিমে পরিণত হয়েছ। ইসলাম ছাড়া আর কোন দ্বীন – হোক সেটা ইহুদিদের ধর্ম বা নাসারাদের ধর্ম – আল্লাহ ‘আযযা ওয়া জাল – এর কাছে গ্রহনযোগ্য না। আল্লাহ ‘আযযা ওয়া জাল বলেছেন –
আর যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চাইবে কক্ষনো তার সেই দ্বীন কবূল করা হবে না এবং আখিরাতে সে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। [আলে ইমরান, ৮৫]
অনেকে এ ক্ষেত্রে শর্ত দেন যে কারো কাছে ইসলাম ও মুহাম্মাদ ﷺ নবী হবার খবর পৌছানোর পর সে ইসলাম গ্রহন না করলেও তাকে কাফির বলা যাবে না। কেবলমাত্র তখনই তাকে কাফির বলা যাবে যখন তার কাছে ইসলামের খবর পৌছেছে, সে ইসলামকে সত্য হিসেবে অনুধাবন করেছে আর তারপর সে ইসলাম গ্রহন করা থেকে বিরত থেকেছে। এই কথা সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং অগ্রহনযোগ্য। স্বয়ং আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেন “আমরা প্রেরিত হবার খবর পেয়ে” – এর বেশি তিনি ﷺ বলেননি। যদি কেউ এখন রাসূলুল্লাহর ﷺ চাইতে বেশি ইসলাম বোঝার দাবি করে তাহলে কিছু করার নাই।
একই সাথে এই পোষ্টে খ্রিষ্টান আর ইহুদিরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সাধারণ মানুষ মনে করে উল্লেখ করবার আড়ালে মুসলিমদের বিশ্বাস হিসেবে তাঁকে অন্যান্য নবী রাসূলগণের সমকক্ষ বলা হয়েছে। অথচ এই ব্যাপারটি সাধারণ মুসলিম মাত্রই জানে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মর্যাদা অন্যান্য নবী রাসূলগণের চাইতে বেশি।
রাসূলগণের মধ্যেও যে সকলের মর্যাদা সমান নয়, সেকথা আল্লাহ নিজেই বলেছেনঃ
“এই রসূলগণ-আমি তাদের কাউকে কারো উপর মর্যাদা দিয়েছি। তাদের মধ্যে কেউ তো হলো তারা যার সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন, আর কারও মর্যাদা উচ্চতর করেছেন এবং আমি মরিয়ম তনয় ঈসাকে প্রকৃষ্ট মু’জিযা দান করেছি এবং তাকে শক্তি দান করেছি রুহূল কুদ্দুস (জিবরাঈলের) মাধ্যমে...” (সূরা বাকারাহ, ২৫৩)
“...আমি তো কতক পয়গম্বরকে কতক পয়গম্বরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি...” (সূরা বনী ইসরাঈল, ৫৫)
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআ’হের উলামাগণ নির্দ্বিধায় একথার স্বীকৃতি দেন যে নবী রাসূলগণের মধ্যে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) মর্যাদা সবচেয়ে বেশি। আমরা মুসলিম কোনও নবীকে ছোট করে দেখি না বা গালমন্দ করি না, আর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) এ মর্যাদার স্বীকৃতি অন্য নবীদের মর্যাদাহানি ঘটায় না। এবিষয়ে আরও জানতে পড়ুনঃ
পোস্ট বিশ্লেষণ ৩
মে ২৬ এর পোস্ট থেকে তাদের এসব কথার উদ্দেশ্য আরো পরিষ্কার হয়।
![](https://scontent.fdac2-1.fna.fbcdn.net/v/t31.0-8/23270099_386083685161351_1666074166584579133_o.jpg?_nc_cat=0&_nc_eui2=AeFf9GzDrg1tWavwrniI7g02gQ5_9b2lp-8wyNklL-TcZfTx_1Pa1KPxDT2nvIVzKul9WDfUH6IDboxvhe42UvAoQ-bp2OyegY5lRg8-g1vYEg&oh=c0acd68cc7f3b90569f4ec83b6fec4e0&oe=5BE36242)
এ পোষ্টে ক্বুরআনের একটি আয়াত খন্ডিত ভাবে উপস্থাপন করে তারা বলছে – “কোন মুসলিমের উচিত হবেনা কোন এক অমুসলিম ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিশ্বাস সম্পর্কে চট করে স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যদি না সেই অমুসলিম ব্যক্তি তার মনের বিশ্বাস প্রকাশ করেন।” অর্থাৎ কোন মুসলিমের কোন কাফিরকে কাফির বলা উচিৎ হবে না, যদি না সেই কাফির নিজেকে কাফির বলে স্বীকার করে। অর্থাৎ আল্লাহ যাদেরকে কাফির বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) যাদেরকে কাফির বলেছেন, এই পেইজের মতে তাদেরকে কাফির বলা যাবে না। এক লোক আল্লাহয় বিশ্বাস করে না, অথবা রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) বিশ্বাস করে না, অথবা ক্বুরআনকে আল্লাহর বানী মনে করে না, অথবা শিরক করে, অথবা কুফর করে – কিন্তু আমরা তাদেরকে কাফির বলতে পারবো না ! এই হল এই পেইজের প্রস্তাবনা। মূলত এধরনের কথার মাধ্যমে তারা দুটো উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে, “ইহুদি ও খ্রিষ্টান ধর্মও ক্বুরআন অনুযায়ী সঠিক” - এই কুফরকে প্রচার করতে চাইছে।
মে-৩র পোষ্টেও তারা একই রকমের কথা বলেছে, প্রথমে মুসলিমদের সম্পর্কে একটি হাদিস উপস্থাপন করেছে তারপর সেই হাদিস কে অমুসলিমদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে দাবি করছে – কোন কাফিরকেও কাফির বলা যাবে না, কারণ আমরা জানি না তার অন্তরে কী আছে!
অথচ শারীয়াহ এবং সাধারন যুক্তির কথা হল, যেহেতু আমরা জানি না কার অন্তরে কী আছে, তাই যে মুসলিম বলে নিজেকে পরিচয় দেয় তাকে মুসলিম গণ্য করবো। আর অন্যদেরকে কাফির গণ্য করবো। আমরা অন্তরের খবর জানি না, তাই দুনিয়ার সবাইকে মুসলিম মনে করবো, যুক্তি কিংবা শরীয়াহর আলোকে এ কথা কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য না। আর স্বয়ং আল্লাহ যাদের কাফির আখ্যায়িত করেছনে তাদের কাফির গণ্য না করা নিঃসন্দেহে কুফর।
আর এ আয়াতে কেবল ঐ সব আহলে কিতাবদের বোঝানো হচ্ছে যারা রাসূলুল্লাহ এর নবুওয়্যাতের খবর জানার পর তার উপর ঈমান এনেছে, এবং ইসলাম গ্রহণ করেছে। বর্তমানের ইহুদি-খ্রিষ্টানদের ক্ষেত্রে কোন ভাবেই এ আয়াত প্রযোজ্য না।
পোস্ট বিশ্লেষণ ৪ঃ
জুলাই ২০ এর পোস্টের মাধ্যমেও তারা একই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে।
![](https://scontent.fdac2-1.fna.fbcdn.net/v/t31.0-8/23213252_386086778494375_8983844490597907408_o.jpg?_nc_cat=0&_nc_eui2=AeHDUrDS9yJHqmCwto3C78apiKvgoxq8JGPyLblC6HPoyBuRT-Savdc8VYWhyc5L333H4QgJQ7Gv0HCb6uZ0s_UCI-PenJIQMhWFBqo25bHbwg&oh=10028b5dd3970eb4a493b36346989ea6&oe=5BA8EC10)
এই পোষ্টের মাধ্যমে মূলত তারা আবার দুটো বিষয় প্রচারে চেষ্টা করেছে। ১) তাওরাত ও ইঞ্জিলের বর্তমান রূপ সঠিক এবং এগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ কিতাব, ২) যারা এ দুটোর কিতাবের অনুসরণ করছে তারা আল্লাহ নাযিলকৃত দ্বীনেরই অনুসরণ করছে।
কারণ বইয়ের ভিন্ন ভিন্ন এডিশানের মধ্যে পার্থক্যের মূল কারণ হয় সংযোজন আর বিয়োজন। বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে এক সংস্করণ থেকে অন্য সংস্করনে মৌলিক কোন পার্থক্য হয় না। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, এবং এটাই সত্য যে বর্তমানে যে ইঞ্জিল ও তাওরাত আছে, তা বিকৃত হয়ে গেছে। এগুলো আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাব না। এবং ক্বুরআন ও এসব কিতাবের মধ্যে সম্পর্ক নিছক একই বইয়ের এক সংস্করণের সাথে অন্য সংস্করণের পার্থক্যের মতো না। আবারও তারা মেসেজ দিতে চাচ্ছে যে ইহুদী ও খ্রিষ্টানরাও সঠিক পথেই আছে, কেবল পুরনো সংস্করণের অনুসরণ করছে। অথচ ক্বুরআন ও সুন্নাহ আমাদের জানাচ্ছে সত্য আসার পর, এবং সত্যকে জানার পর ইহুদী ও খ্রিষ্টানরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, এবং সত্যকে ত্যাগ করেছে।
পোস্ট বিশ্লেষণ ৫
![](https://scontent.fdac2-1.fna.fbcdn.net/v/t31.0-8/23213067_386087358494317_2105265563238662192_o.jpg?_nc_cat=0&_nc_eui2=AeEyEslFXESPcqvcI2d05X-Wi9D31eXA96xXeDazjMlgaeFvO5B1G9_YBQyf9izsw9tg5CgsLMHiQtY28SmJfaydSPLBYeR2pg2cmIvlx7JoNw&oh=eedea76b7596e9fc3ab6dca980479812&oe=5BA19EAD)
অমুসলিমদের প্রতি ঘৃণা ইসলাম ধর্মে অনুপস্থিত। কোন রেফারেন্স ছাড়াই কথাটি দেওয়া হয়েছে। আর এই কথার রেফারেন্স থাকারও কথা না, কারণ এটি সরাসরি কুরআনের আয়াত এবং রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) হাদিস এর সাথে সাঙ্ঘর্ষিক।
ইবরাহীম ও তার সঙ্গী-সাথীদের মধ্যে তোমাদের জন্য আছে উত্তম আদর্শ। যখন তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল- ‘তোমাদের সঙ্গে আর আল্লাহকে বাদ দিয়ে তোমরা যাদের ‘ইবাদাত কর তাদের সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের আর তোমাদের মাঝে চিরকালের জন্য শত্রুতা ও বিদ্বেষ শুরু হয়ে গেছে যতক্ষণ তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান না আনবে। [সূরা মুমতাহিনা, ৪]
জাবির বিন আব্দুলাহ(রা) হতে বর্ণিত, "মুহাম্মাদ(ﷺ) তাঁদেরকে প্রত্যেক মুসলিমকে পরামর্শ দেয়ার এবং প্রত্যেক কাফিরকে পরিহার করার শপথ করাতেন।" [মুসনাদ ইমাম আহমাদ ৪/৩৫৭-৮]
বাররা বিন আজিব(রা) হতে বর্ণিত যে, নবী(ﷺ) বলেনঃ ‘আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য ঘৃণা করা হচ্ছে ঈমানের সবচেয়ে দৃঢ় বন্ধন৷’ [ মুসনাদ আহমাদ]
ইবন শায়বা বলেন যে, মুহাম্মাদ(ﷺ) বলেছেনঃ “ঈমানের দৃঢ়তম বন্ধন হলো শুধুমাত্র তাঁরই জন্য ভালোবাসা এবং তাঁরই জন্য শত্রুতা৷”
[তাবারানী, আল কবির, ইবনে শায়বা এটা ইবন মাসউদ(রা) থেকে মারফু রূপে বর্ণনা করেছেন এবং এটা হাসান রূপে আখ্যায়িত করেছেন]
ইবন আব্বাস(রা) হতে বর্ণিত, রাসূল(ﷺ) বলেছেনঃ “ঈমানের দৃঢ়তম বন্ধন হচ্ছে আল্লাহর জন্য আনুগত্য এবং তাঁর জন্য বিরোধিতা, আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং তাঁর জন্য শত্রুতা৷”
[আত তাবারানী, আল কাবির। ইমাম সুয়ুতী (র.) এর জামি আস সগীর ১/৬৯; আলবানী(র.) এটিকে হাসান আখ্যা দিয়েছেন]
ইবন আব্বাস(রা) আরো বলেছেন, ”যে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে এবং আল্লাহর জন্য ঘৃণা করে, এবং যে আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব নষ্ট করে অথবা তার জন্য শত্রুতা ঘোষণা করে, সে আল্লাহর কাছ থেকে নিরাপত্তা পাবে৷ এটা ছাড়া কেউ প্রকৃত ঈমানের স্বাদ পাবে না, যদিও তার সাওম ও সলাত অনেক হয়৷ মানুষ দুনিয়াবী বিষয়ে সম্পর্ক গড়ে তোলে, যা তাদেরকে কোন উপকারই করতে পারবে না৷”[ইবন রজব আল হাম্বলী, জামি আল উলুম ওয়াল হাকিম, পৃষ্ঠা ৩০]
এবং আল্লাহ কাদের ঘৃণা করেন সেটা তিনি আমাদের বিভিন্ন জায়গায় জানিয়েছেন –
“...অতএব যে কুফুরী করবে তার কুফুরীর জন্য সে নিজেই দায়ী হবে। কাফিরদের কুফর তাদের প্রতিপালকের ঘৃণাই বৃদ্ধি করে। কাফিরদের কুফর তাদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে।” [সূরা ফাতির, ৩৯]
উপরের আয়াত হাদিসগুলোতে আল্লাহর জন্য যে ভালোবাসা তাঁর জন্য শত্রুতার ব্যাপারে বলা হয়েছে তাঁর মূলনীতি দেওয়া আছে সূরা মুমতাহিনার আয়াতে। দেখুন এখানে ব্যক্তিগত কোন স্বার্থে বর্ণ, সামাজিক বা আর্থিক অবস্থা, জাত, গোত্র অথবা এধরনের কোন কিছুর ভিত্তিতে বন্ধুত্ব ও শত্রুতার কথা বলা হচ্ছে না। বরং তাওহীদের ভিত্তিতে বন্ধুত্ব ও শত্রুতার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং একজন মুসলিম যে আল্লাহকে বিশ্বাস করে, যে বিশ্বাস করে শিরক সবচেয়ে বড় অপরাধ সে কখনো শিরকের উপর এবং প্রতি সন্তুষ্ট বা অনুরক্ত হতে পারে না। ঠিক যেমন সবচেয়ে খারাপ সন্তানও তার মা-বাবা-কে গালি দেওয়া ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব রাখতে পারে না, তেমনিভাবে একজন মুওয়াহ্হিদ (তাওহিদবাদী) কখনোই আল্লাহ্র বিরুদ্ধে শিরকে লিপ্ত ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব রাখতে পারে না। শিরকের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারে না। শিরককে মেনে নিতে পারে না। তবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কাফিরদের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে সৌজন্য, ইনসাফ ও মুসলিমের জন্য উপযুক্ত উত্তম আদাব বজায় রাখতে ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়। আর এক্ষেত্রে সাহাবীদের রাঃ উদাহরন আমাদের জন্য অনুসরনীয়।
পোস্ট বিশ্লেষণ ৬
আরেকটি পোস্টে সূরা আলে ইমরানের ২০ নং আয়াত কোনও ব্যাখ্যা ছাড়া এমনভাবে প্রচার করা হয়েছে।
![](https://scontent.fdac2-1.fna.fbcdn.net/v/t31.0-8/23154999_386087771827609_1373110261684646584_o.jpg?_nc_cat=0&_nc_eui2=AeH5KCH36yfymT7Pn9MusBXWS-VE-0vneCik5qfXzhH8Amx_0a51S8ZZhWL23jFe7bKwTkgYQXafoo_OHtR6POrXUllnEVaVnvEtmKBfSuo2rA&oh=9620a333e5675c7f0f7ba07309448e45&oe=5BA30475)
অথচ এই আয়াতটিও যে এভাবে এককভাবে প্রচারের জন্য মোটেও নয়, তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সীরাতের শিক্ষা থেকে সহজেই বোঝা যায়ঃ
“যদি তারা তোমার সাথে বিতর্কে অবতীর্ণ হয় তবে বলে দাও, ‘আমি এবং আমার অনুসরণকারীগণ আল্লাহর প্রতি আত্নসমর্পণ করেছি।’ আর আহলে কিতাবদের এবং নিরক্ষরদের বলে দাও যে, তোমরাও কি আত্নসমর্পণ করেছ? তখন যদি তারা আত্নসমর্পণ করে, তবে সরল পথ প্রাপ্ত হলো, আর যদি মুখ ঘুরিয়ে নেয়, তাহলে তোমার দায়িত্ব হলো শুধু পৌছে দেয়া। আর আল্লাহর দৃষ্টিতে রয়েছে সকল বান্দা।” (৩ঃ ২০)
উক্ত পোস্টটিতে জোর দিয়ে বলা হয়, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) দায়িত্ব ছিল কেবলই পৌঁছে দেওয়া। মানুষকে জোর করে ধর্ম পালন করানো নয়। এমন আরেকটি আয়াত সরাসরি কুরআনে রয়েছে যেখানে আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন বলেছেন, “ধর্মের ব্যাপারে কোনও জবরসদস্তি নেই” (২: ২৫৬)
মজার ব্যাপার হল, এই আয়াতটি নিয়েও পেইজটির একটি স্বতন্ত্র পোস্ট রয়েছে। একইসাথে দু’টো পোস্টেরই সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়ে যাবে ইন-শা-আল্লাহ।
![](https://scontent.fdac2-1.fna.fbcdn.net/v/t31.0-8/23155185_386088118494241_7612320769221581104_o.jpg?_nc_cat=0&_nc_eui2=AeGdBhjoCFeuob3kCQm70HrIHXz-k2bflsNFcHwHqVGeLNm8rswnT2ncmrAf4HYgG-k-L2EOicl-aGkTPmHX9yjvu5Vzwc29QQQbM5fHuy3gyw&oh=99d29c3bb07698ea606156b879fa1e81&oe=5BE3ABEA)
ব্যাপারটি হলঃ
হিদায়াত কেবলই আল্লাহ রব্বুল আ’লামীনের হাতে। আর তাই আল্লাহ বারবার তাঁর রাসূল মুহাম্মাদকে (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি চাইলেও আল্লাহর ইচ্ছা না থাকলে কোনো ব্যক্তির হিদায়াত হবে না।
“আপনি যাকে পছন্দ করেন, তাকে সৎপথে আনতে পারবেন না, তবে আল্লাহ তা’আলাই যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেন। কে সৎপথে আসবে, সে সম্পর্কে তিনিই ভাল জানেন।” (২৮ঃ ৫৬)
কিন্তু,
তার মানে এই নয় যে মানুষ যা খুশি করে বেড়াবে। আল্লাহর জমীনে আল্লাহরই আইন প্রতিষ্ঠা করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরজ করা হয়েছে। এটাই ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর দাবি।
রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) “কেবলই পৌছে দেওয়ার” জন্য প্রেরণ করা হয়েছে এ কথাকে খোদ রাসূলুল্লাহর ﷺ হাদিস দ্বারাই খণ্ডন করা যায়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন -
“আমি ক্বিয়ামত দিবসের পূর্বে তরবারী হাতে এ উদ্দেশ্যে প্রেরিত হয়েছি যে, ইবাদাত কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য বরাদ্দ হয়ে যাবে, আর আমার রিযিক আসে আমার বর্শার ছায়া হতে, আর যারা আমার আদেশের বিরুদ্ধে যাবে তাদের জন্য অপমান (আর লাঞ্ছনা) তাকদীরে নির্ধারিত হয়েছে, আর যে কেউ তাদের অনুকরণ করে সে তাদেরই একজন।” (মুসনাদে আহমাদ ৪৮৬৯; সহীহ আল জামি’ ২৮৩১)
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) কাজ তাওহিদের শিক্ষা পৌছে দেওয়া তার যার ইচ্ছা মানবে যার ইচ্ছা মানবে না, রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) “কেবল পৌছে দেওয়ার জন্য” প্রেরণ করা হয়েছে এই ভ্রান্ত দাবির খন্ডন এই লাইনেই আছে – “আমি ক্বিয়ামত দিবসের পূর্বে তরবারী হাতে এ উদ্দেশ্যে প্রেরিত হয়েছি যে, ইবাদাত কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য বরাদ্দ হয়ে যাবে...”
তারপরও যদি কারো মনে সন্দেহ থেকে থাকে তবে তিনি নিচের হাদিসটি দেখতে পারেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন –
আমি মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি যতক্ষণ না তারা সাক্ষ্য দেয় “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” সুতরাং যে ব্যক্তি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এ সাক্ষ্য দিবে তাঁর জান-মাল আমার থেকে নিরাপদ। তবে ইসলামের কোনো হক ব্যতীত। আর তার অন্তরের হিসাব আল্লাহ তাআলার উপর ন্যস্ত। [সহিহ বুখারী, হাদিস: ২৭৮৬; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৩৪]
এছাড়া ক্বুরআনের অনেক আয়াত এবং হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে রাসূলুল্লাহ কেবল “পৌঁছে দিতে” না বরং আল্লাহ্র পক্ষ থেকে আইন প্রণেতা, বিচারক, সংস্কারক, পথ প্রদর্শক এবং যোদ্ধা হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন, এবং ইসলাম শুধু “পৌঁছে দেওয়ার” জন্য না বরং আল্লাহর যমীনে বাস্তবায়িত হবার জন্য পাঠানো হয়েছে। এবং আল্লাহ ক্বিয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষের উপর ফরয করেছেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) আনীত শারীয়াহর অনুসরণের।
আল্লাহ বলেন –
অতএব, (হে নাবি!) তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা সন্তুষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে। [আন-নিসা, ৬৫]
তিনিই প্রেরণ করেছেন আপন রাসূলকে হিদায়াহ ও সত্য দ্বীন সহকারে, যেন এ দ্বীনকে অপরাপর দ্বীনের উপর জয়যুক্ত করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপ্রীতিকর মনে করে। [সূরা তাওবাহ ৩৩]
“আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর, যে পর্যন্ত না ফিতনার অবসান হয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর যদি তারা নিবৃত হয়ে যায় তাহলে কারো প্রতি কোন জবরদস্তি নেই, কিন্তু যারা যালেম (তাদের ব্যাপারে আলাদা)।” (২ঃ ১৯৩)
“আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায়; এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তারপর যদি তারা বিরত হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করেন।” (৮ঃ ৩৯)
এছাড়া এ বিষয়ে আরো অনেক, অনেক প্রমাণাদি বিদ্যমান।
কিন্তু যখন “ধর্মের ব্যাপারে কোনও বাধ্যবাধকতা নেই” বা “আপনার কাজ শুধু পৌঁছে দেওয়া” এই আয়াতগুলো মূল বিষয় এড়িয়ে বিচ্ছিন্নভাবে উল্লেখ করা হয়, তখন যাদের এই বিষয়ে জ্ঞান কম তারা ভুল ধারণা করতে শুরু করে আর ভাবে ইসলামে বোধ হয় শরীয়াতের ছায়াতলে আসতে বাধ্য করাতে বা আক্রমণাত্মক যুদ্ধ করবার কোনো নিয়ম নেই, অথবা যে যার যার মতো ধর্ম পালন করবে, আইন প্রনয়ন ও অনুসরণ করবে আর এ ব্যাপারে ইসলামের কিছু বলার নেই। । অথচ ব্যাপারটি মোটেও তা নয়।
সাধারণত কাফিরদের, মুসলিম নামধারী মুনাফিকদের আর দ্বীনকে ইহুদি খ্রিস্টানদের মত কেটে নিজের মনগড়া করা মডারেটদের তাই এই আয়াতগুলো বেশি বেশি বিচ্ছিন্নভাবে প্রচার করতে দেখা যায়।
পোস্ট ৭
একটি পোস্টে বলা হয়েছে আল্লাহ তাঁর সমস্ত সৃষ্টিকে ভালবাসেন। অথচ পবিত্র কুরআনে স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহুতা’লা প্রায় ২০ টি আয়াত বলেছেন আল্লাহ কাফিরদের, সীমা অতিক্রমকারীদের, দুষ্কৃতিকারীদের, অহংকারীদের ভালবাসেন না।
![](https://scontent.fdac2-1.fna.fbcdn.net/v/t31.0-8/23213237_386088415160878_3943651429978733085_o.jpg?_nc_cat=0&_nc_eui2=AeHSHF2Ee1MGqG7x_yngs91LYvWx5HWAy2Mea56CZ4w--P77Rek6V-hlrdkB8IqJGRxbCdp8wJFps3GovvL8es1vlTemErUZhQYz3_KWGBgjmg&oh=250fb4cc5d7ca47ec7bfa6c48ba1d2ea&oe=5B9FBF58)
কয়েকটি আয়াতের অর্থসমূহ একে একে পেশ করা হল। একবার চোখ বুলাতে পারেনঃ
“... নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে ভালবাসেন না।” (২ঃ ১৯০)
“... নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা অতিক্রমকারীদেরকে পছন্দ করেন না।” (৫ঃ ৮৭)
“তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাক, কাকুতি-মিনতি করে এবং সংগোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদেরকে ভালবাসেন না।” (৭ঃ ৫৫)
“আল্লাহ তা’আলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ কোনোই কাফির পাপীকে ভালবাসেন না ।” (২ঃ ২৭৬)
“বলুন, আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য প্রকাশ কর। বস্তুতঃ যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে, তাহলে আল্লাহ কাফেরদিগকে ভালবাসেন না।” (৩ঃ ৩২)
“পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের প্রাপ্য পরিপুর্ণভাবে দেয়া হবে। আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে ভালবাসেন না।” (৩ঃ ৫৭)
“আর উপাসনা কর আল্লাহর, শরীক করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে। পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্নীয়, এতীম-মিসকীন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক-গর্বিতজনকে।” (৪ঃ ৩৬)
এছাড়াও কুরআনের এই আয়াতগুলোতে আল্লাহ যাদের ভালবাসেন না তাদের লিস্ট দিয়ে দিয়েছেনঃ
৩০ঃ ৪৫, ৩ঃ ১৪০, ৪২ঃ ৪০, ৩১ঃ ১৮, ৫৭ঃ ২৩, ৪ঃ ১০৭, ৪ঃ ১৪৮, ৫ঃ ৬৪, ২৮ঃ ৭৭, ৫ঃ ৮৭, ৬ঃ ১৪১, ৭ঃ ৩১, ১৩ঃ ২৩, ২২ঃ ৩৮, ২৮ঃ ৭৬
উপসংহার
বর্তমান সময়ে ইসলাম ও মুসলিমরা নানামুখী আক্রমনের শিকার। এবং বিভিন্ন কারণে মুসলিমরা দুর্বল অবস্থায় আছে। এ কারণে অনেক সময় আমাদের মধ্যে হীনমন্যতা কাজ করে। ইসলামবিদ্বেষী, অথবা কাফিররা যখন ইসলামের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ তোলে তখন অনেক ক্ষেত্রেই আমরা যে কোন মূল্যে ইসলামকে তাদের ঠিক করে দেওয়া মানদণ্ড অনুযায়ী “সঠিক” প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে যাই। কিন্তু বর্তমান সভ্যতার মানবসৃষ্ট মানদন্ড আর আসমান ও যমিনের সৃষ্টিকর্তার নির্ধারিত মানদণ্ড এক না, একথাটি আমরা ভুলে যাই। আমাদের হীনমন্যতার আরেকটি ফলাফল হল যখনই কেউ ইসলামের পক্ষে কিছু বলছে বলে মনে হয়ে আমরা খুশি হয়ে তাকে সমর্থন দেওয়া শুরু করি। কিন্তু আদৌ সে যা বলছে সেটা ইসলামসম্মত কি না – আমরা যাচাই করে দেখি না।
এসব কারণে যখন আমরা দেখতে পাই কেউ ইসলামের সমর্থন এমেওন কোণ কথা বলছে যেটা পশ্চিমের নির্ধারিত মানদন্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অথবা পশ্চিমের উত্থাপিত অভিযোগগুলোর বিরুদ্ধে উত্তর হিসেবে উপস্থাপনযোগ্য, আমরা সেটাকে সমর্থন দেই। আর United For Peace এর মতো পেইজগুলো এই সুযোগটাকেই কাজে লাগায়। আমাদের হীনমন্যতা ও অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে এমন বিষয় প্রচার করে যা বাহ্যিকভাবে সুন্দর মনে হলেও আসলে কুফর ও শিরক। এ কারণে আমাদের প্রথমত উচিৎ এ ধরণের সুযোগসন্ধানীদের ব্যাপারে নিজে সতর্ক হওয়া ও অন্যকে সতর্ক করা। আর তারপর আমাদের উচিৎ ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে, তাওহিদ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা। কারণ কেবল তাওহিদের জ্ঞান এবং তাওহিদের উপর দৃঢ় থাকার মাধ্যমেই আপনি পৃথিবীর ফিতনা থেকে এবং বিচার দিবসের ফিতনা থেকে রেহাই পেতে পারবেন।
দ্বীনের মধ্যে জবরদস্তির অবকাশ নেই, নিশ্চয় হিদায়াত গোমরাহী হতে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। কাজেই যে ব্যক্তি মিথ্যে তাগুতকে (সকল মিথ্যা ইলাহ) অমান্য করল এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনল, নিশ্চয়ই সে দৃঢ়তর রজ্জু ধারণ করল যা ছিন্ন হওয়ার নয়। আল্লাহ সর্বশ্রোতা এবং সর্বজ্ঞাতা। [সূরা বাক্বারা, ২৫৬]
আল্লাহ আমাদের অনুধাবন করার এবং আমল করার তাওফিক্ব দান করুন, আমীন।
------
সত্যকথন ডেস্ক
অফিসিয়াল ওয়েব সাইট ঃ shottokothon.com এবং response-to-anti-islam.com
ফেসবুক পেজঃ fb.com/shottokothon1
Post a Comment