পর্দা নিয়ে নো কম্প্রোমাইজ


অনেকেই প্রশ্ন করে, " আপু মেডিকেলে কি পূর্ণ পর্দা করে পড়তে পারছেন? কিভাবে মেইন্টেইন করেন? আমাকে অনেক কটু কথা শুনতে হয়, অধৈর্য হয়ে যাই, পূর্ণ পর্দা করাটা এখনো পারছিনা "

আমি বলবো আল্লাহর কাছে পূর্ণ তাওয়াক্কুল নিয়ে দু'আ করলে আল্লাহ্‌ তা কবুল করেন ই। হ্যাঁ আমার জন্যও সহজ ছিল না। আল্লাহর আদেশ পালন করতে হলে কষ্ট করতে হবেই, পরীক্ষা আসবেই এটাই স্বাভাবিক। আমাকেও অনেক পরীক্ষা ফেইস করতে হয়েছে, করছি। টিচারদের রাফ বিহেব,ছেলে ক্লাসমেটদের উপহাস, আইটেমে নাম্বার কম পাওয়া আরো অনেক কিছুই ফেইস করতে হয়েছে।

মেডিকেল কলেজে আমার সবচেয়ে সুন্দর এবং নার্ভাসনেসের দিন ছিল পরিপূর্ণ পর্দা করে ক্লাসে যাওয়ার দিন। অবশ্যই হিদায়েতের নূর না পাওয়া আমার আল্লাহর অনুগ্রহে সঠিক পথে হাঁটতে যাওয়া, পুরো কলেজে একদম একা একা, মানুষের ডিসকারেজ পেয়েও পরিপূর্ণ পর্দার সাথে ক্লাস, টার্মের ভাইবাতেও নিকাব না খুলে পর্দার সাথে কম্রোপ্রাইজ না করা ছিল চ্যালেঞ্জের মতো কিন্ত অন্তরে ছিল আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল আল্লাহ্‌ আমাকে হেফাযত করবেন ই। আল্লাহ্‌ সত্যি অকল্পনীয় সাহায্য করেছেন। মেডিকেলে পড়া এক দুইজন দ্বীনি বোন যাদেরকে আমরা জানি পূর্ণ পর্দা করে পড়ছেন তাদের কাছ থেকে সাজেশন নিতে গিয়ে যখন শুনলাম টার্ম, প্রফের ভাইবাতে তারা নিকাব পড়তে পারেন নি বাধ্য হয়েছেন খুলতে একটা ভয় কাজ করছিল।

তবে বিশ্বাস হারাইনি, পূর্ণ আস্থা নিয়ে পথ হেঁটেছি মনে ছিল একটাই আশা, পর্দার সাথে কখনো কম্প্রোমাইজ করবো না। এরজন্য কখনো টিচারদের কটুক্তি শুনে, ছেলে ক্লাস ম্যাটদের সাথে কথা না বলায় উপহাস, কিছু না করেও কিছু টিচারের কাছ থেকে রাফ বিহেব পেতে হয়েছে, আরো কঠিন কিছু ডিসিশনও নিতে হয়েছে যেগুলা শুধুই রব্বের জন্য ছিল। তবে আমার রব্ব আমাকে সাহায্য করেছেন। পর্দা নষ্ট করতে হয়নি। প্রফের ভাইবাতেও আল্লাহ সব সহজ করে দিয়েছেন নিকাব নিয়ে একটা কথাও শুনতে হয়নি এক্সটারনালদের কাছ থেকে।আলহামদুলিল্লাহ্‌ আল্লাহ্‌ অকল্পনীয় সাহায্য করেছেন।

শুধু কলেজে না পর্দার জন্য অনেক আত্মীয়দের কাছ থেকেও অনেক রাফ বিহেব, কখনোবা অনেকে দূরের করে দিয়েছে মাহরাম, গায়রে মাহরাম মেইন্টেইন করা, পর্দা করাকে বাড়াবাড়ি পর্যায়ের মনে করে। এতে কষ্ট পেয়েছি নিশ্চয়ই কিন্ত এরচেয়েও সহস্রগুন বেশি ভালোলাগা ছিল কারন যা করছি তা তো কেবল আমার রব্বের জন্যই করছি। আমার রব্ব আমার সাথে আছেন আর কে লাগবে?

এতকিছু বলার একটাই উদ্দেশ্য, যেসব আপুরা ফ্যামিলিতে বা শ্বশুরবাড়িতে কিংবা মেডিকেল কলেজে পড়ছেন তাদের বলবো হার মেনে না নিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে পর্দার সাথে কম্প্রোমাইজ করবেন না প্লিজ। একবার করলে বারবার আপনাকে কম্প্রোমাইজ করতে হবে, ফরয এই বিধান ছেড়ে দিলে হয়তো আপনার জান্নাত ছুটে গেল! তাই এই ক্ষেত্রে পরিবেশ যতই কঠিন হোক না কেন, যতই আপনাকে হাত মোজা পা মোজা পড়া আনস্মার্ট, ট্যান্ট যা ই বলুক আপনি মন খারাপ করবেন না, আপনার অপরাগতাকে বড় করে দেখবেন না ফ্যামিলিতে হোক, আত্মীয়দের বাসায় কিংবা অন্য কোথাও কখনো পর্দা নিয়ে কম্প্রোমাইজ করবেন না।

অনেকে বলেন এখন পর্দা করতে পারছিনা পুরোপুরি, পারব একদিন। বোন এই মুহূর্তে যদি মারা যান এই কথাটার কি হিসেব দিবেন রব্বের কাছে? রব্বের দেয়া আদেশের চেয়ে বড় আর কি আছে? কখনো দেরী করবেন না, এটা শাইতানের ধোঁকা, নেক সুরতে শাইতানের ধোকা। যা করবেন, যখন অনুভব করবেন ঠিক তখন ই করবেন। ইসলামের নীতি আমি 'শুনলাম এবং মানলাম'।

পর্দা ফরয, যা ফরয তা এখন যদি বুঝে থাকেন এই মুহূর্ত থেকেই করতে হবে। আপনি এক সময় পর্দা করবেন এই কথার কোন গ্যারান্টি নাই, যেহেতু মৃত্যু যেকোন সময় আসতে পারে। তাই বোনেরা ফরয এই বিধানের প্রতি খুব বেশি সিরিয়াস হোন। যে ফ্যামিলি বা যে মানুষদের জন্য, প্রতিষ্ঠান, স্বপ্নের জন্য এই ফরয বিধানের সাথে কম্প্রোমাইজ করবেন সেগুলা মৃত্যুর পর আপনার কোন কাজে আসবে না। একমাত্র আল্লাহর জন্য নেয়া এই কঠিন স্টেপ টা ই পারে আপনার আখিরাতের পথটা মসৃন করতে।

আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দু'আ করুন। পূর্ণ তাওয়াক্কুল নিয়ে পরিপূর্ন পর্দার সাথে চলুন। আল্লাহ্‌ সহজ করবেন ই সব ইনশাআল্লাহ। আমি নিশ্চিত আমার মতো আপনারো এই অসম্ভব সুন্দর আয়াতটা জীবনের অনেক বড় এক সত্য হয়ে যাবে।

"হে আমার রব! আমি তো কখনো তোমাকে ডেকে ব্যর্থ হইনি।" [সূরাহ মারইয়াম, আয়াত : ৪]

লেখাঃ সায়মা সাজ্জাদ মৌসি (আল্লাহ্‌ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)

Post a Comment

Previous Post Next Post