একটু থামুন....


হে দুনিয়া পাগল মানুষ, একটু থামো...

দেখুন, দুনিয়ার জীবনকে আল্লাহর রাসূল ﷺ কিসের সাথে তুলনা দিয়েছেন?

একটি মৃত কান কাটা ছাগলের বাচ্চার সাথে!

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা রাসুলুল্লাহﷺ কোনো একটি বাজারের উপর দিয়ে যাচ্ছিলেন, আর তাঁর দুপাশে ছিলেন সাহাবায়ে কিরাম রা । তিনি যখন একটি কানকাটা মৃত ছাগল ছানার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি এর কান ধরে তাঁদের জিজ্ঞেস করলেন,

— তোমাদের কেউ কি এক দিরহামের বিনিময়ে এটা কিনতে রাজি আছো?

— সাহাবায়ে কেরাম: আমরা কোনো কিছুর বিনিময়ে এটা কিনতে রাজি রাজি নয়; আর আমরা এটা দিয়ে করবই বা কি?

— রাসূল ﷺ: “তোমরা বিনামূল্যে এটা নিতে রাজি আছো?”

— সাহাবিগণ: আল্লাহর কসম ! এটা যদি জীবিতও থাকতো, তবু তো এটা ত্রুটিপূর্ণ; কেননা এটার কানকাটা। তবে মৃতটাকে দিয়ে কি হবে?

— রাসূল ﷺ: “আল্লাহর কসম করে বলছি ! তোমাদের কাছে এ মৃত কানকাটা ছোট্ট ছাগল টা যেরূপ নিকৃষ্ট দুনিয়াটা আল্লাহর কাছে এর চাইতেও বেশি নিকৃষ্ট।” (মুসলিম)

তারপরও কিনা আমরা দুনিয়ার ভোগ বিলাস, বিত্ত-ভৈবব, জীবনের সরঞ্জাম, অর্থ-কড়ি, নারী, গাড়ি, অট্টালিকা আর রঙ তামাশার পেছনে ছুটে বেড়াতে বেড়াতে আমাদের প্রকৃত জীবন তথা আখিরাতকে ভুল বসে আছি!

দুনিয়ার পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে আমরা আল্লাহর ইবাদতকে ভুলে যাই!
এই দুনিয়ার জীবনে একটু সুখের আশায় হালাল-হারামের তওয়াক্কা করি না!
ক্ষণিকের আনন্দের জন্য অবৈধ লালসায় হারিয়ে যাই!

রঙ্গ ভরা যৌবন আর তারুণ্যের উচ্ছলতায় অহংকারে ডুবে ধরাকে সরা জ্ঞান করে বসি!

অথচ এ দুনিয়ার সুখ প্রকৃত সুখ নয়। বরং পরকালের সুখই হল প্রকৃত সুখ।
মৃত্যুর পরের জীবনকে সুখময় করার জন্য দুনিয়ার অবৈধ লালসা চরিতার্থ করা হতে বিরত থাকাই হল প্রকৃত বুদ্ধিমানের পরিচয়। মৃত্যু যখন আমাকে গ্রাস করবে তখন সব অহংকার, বিলাসিতা, স্বপ্ন এবং রঙ্গ ভরা জীবনের সব রঙ মূহুর্তে বিনাশ হয়ে যাবে।

সুতরাং ঈমানদার দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিতে পারে না। বরং তার কর্তব্য হবে মৃত্যু পরবর্তী জীবনকে পরিপাটিভাবে সাজানোর জন্য কাজ করা। আমলে সালেহ করা। পাপাচার ও অন্যায় থেকে নিজেকে দূরে রাখা।
আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমীন।

এ দুনিয়া আখিরাতের অন্তহীন জীবনের পথে সামান্য সময়ের যাত্রা বিরতির স্থান মাত্র:

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ একদা চাটাই-এর উপর শুলেন। অতঃপর তিনি এই অবস্থায় উঠলেন যে, তাঁর পার্শ্বদেশে তার দাগ পড়ে গিয়েছিল। আমরা বললাম: হে আল্লাহর রসূল, যদি (আপনার অনুমতি হয়, তাহলে) আমরা আপনার জন্য নরম গদি বানিয়ে দিই? তিনি বললেন: “দুনিয়ার সাথে আমার এত কিসের সম্পর্ক! আমি তো দুনিয়ায় ঐ মুসাফিরের মত যে (একটু বিশ্রামের জন্য) গাছের ছায়ার নিচে আশ্রয় নিলো। অত:পর তা ছেড়ে আবার রওয়ানা করলো।” (মুসনাদে আহমাদ ২৭৪৪, তিরমিযী ২৩৭৭, ইবনে মাজাহ ৪১০৯, মিশকাত ৫১৮৮, হাদীস সম্ভার হাদিস নম্বরঃ [283] পরিচ্ছদঃ দুনিয়াদারি ত্যাগ করার মাহাত্ম্য, দুনিয়া কামানো কম করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং দারিদ্রের ফযীলত। সনদ সহিহ)

এই অর্থবোধক আরেকটি হাদিস হল: ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রিয় নবী ﷺ আমার ঘাড়ে হাত রেখে বললেন, “এই দুনিয়াতে এমনভাবে বেঁচে থাকো যেন তুমি একজন মুসাফির।” (সহীহ বুখারী)

উপরোক্ত হাদিসে একটি উদাহরণের মাধ্যমে দুনিয়ার জীবনের বাস্তবতাকে এভাবে তুলে ধরেছেন যে, “ধরো, একটা মানুষ মরুভূমির পথ ধরে যাচ্ছে। পথিমধ্যে সে একটা গাছ দেখতে পেয়ে ক্লান্ত শরীরে তার ছায়ার নিচে একটু বিশ্রাম নিল এবং একটু পর সেখান থেকে আবার নিজ গন্তব্যের দিকে চলতে শুরু করল। এটাই হল দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবন। আর এ সফরের গন্তব্য আখিরাত।

সুতরাং আমাদের এ দুনিয়ার এ জীবনে এমনভাবে থাকা উচিৎ যে, এটা আমার স্থায়ী বসবাসের স্থান নয় বরং দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় এখানে আমরা সাময়িক যাত্রা বিরতি করেছি মাত্র। আমাদের গন্তব্য আখিরাত। সেটাই আমাদের আসল ঠিকানা। প্রকৃত আবাসস্থল। যে জীবনের কোন লয় নেই-ক্ষয় নেই। যা এক অন্তহীন জীবনের নাম।

আমাদের অধিকাংশ মানুষের অবস্থা এর সম্পূর্ণ বিপরীত! আমরা যেন আমাদের সেই অন্তহীন জীবনের কথা ভুলে দুনিয়ার এই ক্ষণস্থায়ী জীবন কে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি। এটাকেই আমাদের জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য বলে নির্ধারণ করে নিয়েছি। তাই এই দুনিয়ার পেছনে পড়ে আমাদের বেশিরভাগ মানুষের আখিরাতের চিন্তা মন থেকে সরে গেছে। সে কারণে আল্লাহর এবাদত-বন্দেগী ও হালাল-হারাম কে ভুলে শুধু দুনিয়ার এই ক্ষণস্থায়ী জীব ধান্দায় আমরা সারাক্ষণ উদভ্রান্তের মতো ছুটে চলেছি।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং দুনিয়ায় অবস্থানের ক্ষেত্রে এই সকল হাদিসের মর্ম উপলব্ধি করার করার তওফিক দান করুন। আমীন।
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
লেখাঃ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল (আল্লাহ্‌ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)

1 Comments

Post a Comment

Previous Post Next Post