লকডাউনে মুসলিমদের করণীয়



লকডাউনে কারো চাকরী চলে গিয়েছে, কারো বেতন অর্ধেকে নেমে এসেছে। কেউ ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন, কারো আবার চলছে নিভু-নিভু অবস্থায়।


সমস্যার আশু সমাধানে অনেকেই চড়া সুদে লোন গ্রহণ করছেন, অনেকে আবার হাত পাতছেন আপনজনদের কাছে।


কেউ সহায়তা পাচ্ছেন, কেউ পাচ্ছেন না। যখন পাচ্ছেন না, তখন শুরু হচ্ছে মানসিক কষ্ট আর অস্থিরতা।


দুনিয়াটা আসলে এমনই।

কোন মানুষ এখানে কখনোই একটানা ভালো থাকবে না। বরং সব মানুষের জীবনেই অনেক বার উত্থান-পতন আসবে, আর এটাই স্বাভাবিক।


রিযিকের এই উত্থান-পতনের সাথে আমরা যাতে এডজাস্ট করে চলতে পারি, তাই আল্লাহর রাসুল (সাঃ) আমাদের বারংবার শিক্ষা দিয়েছেন - অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকতে, পারতপক্ষে চাওয়া থেকে বিরত থাকতে, অনেক থাকলেও প্রয়োজন ছাড়া ব্যয় না করতে এবং সংযমী হতে।


এ প্রসঙ্গে রাসুল (সাঃ) বলেছেন,

★ ‘‘সে ব্যক্তি সফলকাম, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাকে পরিমিত রুযী দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন, তাতে তাকে তুষ্ট করেছেন।’’ [1]


★ হাকীম ইবনে হিযাম নামের এক সাহাবী বলেন, আমি নবী (সাঃ) এর নিকট কিছু চাইলে তিনি আমাকে দিলেন। আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন। আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন।


অতঃপর বললেন, ‘‘হে হাকীম! এ সম্পদ শ্যামল-সুমিষ্ট। যে ব্যক্তি (লোভহীন) প্রশস্ত হৃদয়ে তা গ্রহণ করবে, তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হবে।


আর যে ব্যক্তি অন্তরের লোভসহ গ্রহণ করবে, তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হবে না। আর সে হবে এমন ব্যক্তির মত, যে খায় কিন্তু তার ক্ষুধা মেটে না। উপর হাত নিচু হাত হতে উত্তম।’’ (দাতা গ্রহীতা হতে উত্তম।)


হাকীম বলেন, আমি বললাম, ‘যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম! ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার পর মৃত্যু পর্যন্ত আমি কারো কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করব না।’


তারপর আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হাকীমকে অনুদান গ্রহণের জন্য ডাকতেন, কিন্তু (হাকীম) তাঁর নিকট থেকে কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করতেন।


অতঃপর উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে কিছু দেওয়ার জন্য ডাকলেন, কিন্তু তিনি তাঁর নিকট থেকেও কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করলেন।


উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘‘হে মুসলিমগণ! হাকীমের ব্যাপারে আমি তোমাদেরকে সাক্ষী বানাচ্ছি যে, আমি তাঁর কাছে তাঁর প্রাপ্য পেশ করছি, কিন্তু সে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করছে।’’


(সত্য সত্যই) হাকীম (রাঃ) নবী (সাঃ) এর পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কোন মানুষের নিকট থেকে কিছু গ্রহণ করেননি। [2]


★ আমর ইবনে তাগলিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট মাল নিয়ে আসা হল। অঃপর তিনি তা বণ্টন করলেন।


তিনি কিছু লোককে দিলেন এবং কিছু লোককে দিলেন না। তারপর তিনি খবর পেলেন যে, যাদেরকে তিনি দেননি, তারা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।


সুতরাং তিনি (ভাষণের প্রারম্ভে) আল্লাহর প্রশংসা ও স্তুতি বর্ণনা করলেন, অতঃপর বললেন, ‘‘ আম্মা বা‘দ! আল্লাহর কসম! আমি কাউকে দেই এবং কাউকে দেইনা। যাকে দেইনা, সে আমার নিকট ঐ ব্যক্তি চেয়ে উত্তম, যাকে দেই।


কিন্তু আমি কিছু লোককে কেবলমাত্র এই জন্য দেই যে, আমি তাদের অন্তরে অস্থিরতা ও উদ্বেগ লক্ষ্য করি এবং অন্য কিছু লোককে আমি ঐ ধনবত্তা ও কল্যাণের দিকে সঁপে দেই, যা আল্লাহ তাদের অন্তরে নিহিত রেখেছেন। তাদের মধ্যে ‘আমর ইবনে তাগলিব একজন।’’


আমর ইবনে তাগলিব বলেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি রাসূল (সাঃ) এর এ কথার বিনিময়ে লাল উঁট নেওয়াও পছন্দ করি না।’ [3]


উল্লেখ্য যে, ২০২০ সালে সবথেকে দামী ব্র্যান্ডের সবথেকে দামী গড়ীটা আমাদের কাছে যেমন লোভনীয়, ততকালীন আরবে লাল উঁট ছিল তেমন লোভনীয়।


উপরের এই হাদিসগুলো পড়ে, আল্লাহর কাছে একটাই চাওয়া - আমরা যে যখন যেরকম রিযিকের মাঝেই থাকি না কেন, তাতেই যেন আমরা সবর করতে পারি, শুকরিয়া করতে পারি।


কারণ, মহান রব বলেছেন, শুকরিয়া করলে তিনি বাড়িয়ে দেবেন।


আলহামদুলিল্লাহ।


--------------------------------------


[1] মুসলিম ১০৫৪, তিরমিযী ২৩৪৮, ইবনু মাজাহ ৪১৩৮, আহমাদ ৬৫৭২


[2] সহীহুল বুখারী ১৪২৮, ১৪৭২, ২৮৫০, ৩১৩৪, ৬৪৪১, মুসলিম ১০৩৪, ১০৩৫, তিরমিযী ২৪৬৩, নাসায়ী ২৫৩১, ২৫৩৪, ২৫৪৩, ২৫৪৪, ২৬০১, ২৬০২, ২৬০৩, আবূ দাউদ ১৬৭৬, আহমাদ ৭১১৫, ৭৩০১, ৭৩৮১, ৭৬৮৩, ৮৪৮৭, ৮৫২৬, ৮৮৭৮, দারেমী ১৬৫০, ১৬৫১, ১৬৫২, ১৬৫৩, ২৭৫০


[3] সহীহুল বুখারী ৯২৩, ৩১৪৫, ৭৫৩৫, আহমাদ ২০১৪৯

1 Comments

Post a Comment

Previous Post Next Post