একেই বলে গাইরত...



২৮৬ হিজরি। রয়-এর প্রধান বিচারপতি মুসা বিন ইসহাকের আদালতে একজন মহিলা মামলা টুকলেন তারই স্বামীর বিরুদ্ধে! বিচারপতি আদালত কায়েম করলেন। মহিলার পক্ষের উকিলকে ডাকলেন। আদালতে উকিল নিজ মক্কেল ওই মহিলার জন্য তার স্বামীর ওপর মোহরানা বাবদ পাঁচশ স্বর্ণমুদ্রা দাবি করল। আদালতে মহিলার স্বামীও উপস্থিত ছিল। সে তার ওপর আনীত এই দাবি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বসল!


বিচারপতি মহিলার উকিলকে সম্বোধন করে বললেন,

- তোমার সাক্ষীরা কোথায়?

- তাদেরকে আদালতে উপস্থিত করে রেখেছি।


অতঃপর উকিল একজন সাক্ষীকে মহিলার চেহারার দিকে তাকানোর আদেশ করল, যাতে সাক্ষ্যদানকালে মহিলার দিকে ইঙ্গিত করতে পারে। সাক্ষী দাঁড়াল এবং মহিলাকে বলল, আপনি দাঁড়িয়ে পড়ুন!


এই অবস্থা প্রত্যক্ষ করে মহিলার স্বামী শশব্যস্ত কন্ঠে বলে উঠল,

- আপনারা এইসব কী শুরু করলেন!

- সাক্ষীরা আপনার স্ত্রীর চেহারার দিকে তাকাবে, যাতে করে তাদের কাছে আপনার স্ত্রীর পরিচয় সনাক্ত হয়, তারা তাকে ঠিক ঠিক চিনতে পারে। আর এটা অতীব প্রয়োজনের তাগিদেই। কথাটা বলল উকিল।


স্বামী বলল, আমি বিচারক মহোদয়কে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমার স্ত্রী আমার উপর মোহরানা বাবদ যা দাবি করছে, আমি তা মাথা পেতে স্বীকার করে নিলাম, তবে সে যেন কখনও তার মুখমণ্ডল অনাবৃত না করে! স্বামীর কথা শোনে মহিলা বলল, সুতরাং আমিও বিচারক সাহেবকে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আমার মহর তাকে দান করে দিলাম, এবং ইহকাল ও পরকালে তাকে এ ব্যাপারে তার দায়ভার থেকে মুক্তি দিলাম!


স্বামী-স্ত্রীর এই অবস্থা দেখে বিচারক মুসা বিন ইসহাক বড় আশ্চর্য হলেন! তিনি বলে উঠলেন, আমি স্বামী-স্ত্রী উভয়ের গাইরত (আত্নমর্যাদাবোধ) দেখে যারপরনাই আশ্চর্যবোধ করছি! এই ঘটনাকে মুসলমানদের উত্তম চরিত্রের অন্তর্ভুক্ত করা হোক।


উল্লেখ্য, রয় নগরী। এটি প্রাচীন খোরাসানের একটি শহর। বর্তমানে এটি ইরানের রাজধানী তেহরানের উত্তর-পূর্বদিকে অবস্থিত। উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর শাসনামলে নুয়াইম বিন মুকাররিন এই শহরটি জয় করেন। এ শহর অনেক বড় বড় মুসলিম পণ্ডিত জন্মদান করেছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন প্রসিদ্ধ তাফসিরবিদ ইমাম ফখরুদ্দিন রাজি রহ.।

_____

গতকাল (৩ এপ্রিল, ২০২১) সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে মাওলানা মামুনুল হক সাহেবের যে ব্যাপারটি সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত, সেটি হলো, অত্যন্ত নাজুক ওই পরিস্থিতিতেও তিনি তার সম্মানিতা স্ত্রীর পর্দা রক্ষার ব্যাপারে সীমাহীনপ্রায় গাইরত দেখিয়েছেন। কুলাঙ্গারগুলো যখন তার স্ত্রীকে সামনে এনে হেনস্তা করতে চেয়েছিল, তখন তিনি উঠে গিয়ে সজোরে প্রতিবাদ করেছেন।


এমনকী তাকে উচ্চকণ্ঠে বলতে শোনা গেছে, আরে সে আমার বিবাহিতা স্ত্রী; আপনাদের সামনে আসবে কেন? এরপর জোর করে স্ত্রীকে ভেতরে ঠেলে দিয়ে ধাক্কা মেরে দরজা লাগিয়ে দিলেন। শুধু তাই নয়; দরজার হাতল ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করলেন!


একেই বলে গাইরত। স্বামীকে তো এমনই হতে হয়!

____

সূত্র : তারিখু বাগদাদ : ১৫/৩৫, খতিব আবু বকর আল বাগদাদি (৩৯২-৪৬৩ হি.)।


লেখাঃ আইনুল হক কাসেমী

1 Comments

Post a Comment

Previous Post Next Post