কোন কোন জিনিসে যাকাত দিতে হয় এবং কি পরিমাণ দিতে হয়?



মূলত পাঁচ প্রকার সম্পদের যাকাত প্রদান করা ফরয। (১) বিচরণশীল উট, গরু, ছাগল ইত্যাদি গৃহপালিত পশু, (২) সোনা-রূপা, (৩) নগদ টাকা, (৪) ব্যবসা বা বিক্রয়ের জন্য রক্ষিত দ্রব্য ও (৫) কৃষি উৎপাদন বা ফল ও ফসল। যেহেতু আমাদের দেশে খোলা চারণভুমিতে পশু পালনের ব্যবস্থা নেই এবং নিসাবযোগ্য পশুও কারো থাকে না, সেহেতু আমাদের দেশে গৃহপালিত পশুর যাকাত সাধারণভাবে কাউকে দিতে হয় না। এছাড়া বাকি সম্পদগুলির যাকাত প্রদানের নিয়ম নিম্নরূপ:

(১) স্বর্ণ: যদি কারো নিকট সাড়ে ৭ তোলা (ভরি) বা তার বেশি স্বর্ণ থাকে তবে প্রতি চান্দ্র বৎসর (৩৫৪ দিন) পূর্তিতে মোট স্বর্ণের ২.৫% যাকাত প্রদান করতে হবে। যেমন কারো যদি ১০ ভরি স্বর্ণ থাকে তবে প্রতি বৎসরে তাকে ০.২৫ ভরি স্বর্ণ বা তার দাম যাকাত হিসাবে প্রদান করতে হবে। সাড়ে ৭ ভরির কম স্বর্ণ থাকলে যাকাত ফরয হবে না।

(২) রৌপ্য: যদি কারো কাছে সাড়ে ৫২ তোলা বা তার বেশি রূপা থাকে তবে প্রতি চান্দ্র বৎসরে মোট রূপার ২.৫% যাকাত প্রদান করতে হবে।

(৩) নগদ টাকা। নগদ টাকার নিসাব হবে স্বর্ণ বা রৌপ্যের নিসাবে। হাদীসে মূলত রৌপ্যের নিসাবই বলা হয়েছে। এছাড়া রূপার নিসাবে আগে যাকাত ফরয হয়। এজন্য বর্তমানে কারো কাছে যদি সাড়ে ৫২ তোলা রূপার দাম (২০০৮ সালের বাজার মূল্য অনুসারে: ২৪/২৫ হাজার টাকা) এক বৎসর সঞ্চিত থাকে তবে তাকে মোট টাকার ২.৫% যাকাত দিতে হবে। যেমন কারো যদি ৩০ হাজার টাকা সঞ্চিত থাকে তবে তাকে বছর শেষে ৬৫০ টাকা যাকাত দিতে হবে।

(৪) ব্যবসায়ের সম্পদ। বিক্রয়ের জন্য রক্ষিত সকল সম্পদের যাকাত দিতে হবে। যদি দোকানে, গোডাউনে, বাড়িতে মাঠে বা যে কোনো স্থানে বিক্রয়ের জন্য রক্ষিত মাটি, বালি, ইট, গাড়ী, জমি, বাড়ি, ফ্লাট বা অন্য যে কোনো পণ্য থাকে এবং তার মূল্য সাড়ে ৫২ তোলা রূপার মূল্যের সমান বা তার চেয়ে বেশি হয় তবে বৎসর শেষে মোট সম্পদের মূল্যের ২.৫% যাকাত দিতে হবে।

(৫) ভূমিজাত ফল ও ফসল। ফল-ফসলের যাকাতকে “উশর” বলা হয়। ভুমি ব্যবহার করে উৎপাদিত সকল প্রকারের ফল, ফসল, মধু, লবন ইত্যাদির যাকাত দিতে হবে। ফল-ফসলের যাকাত দিতে হয় প্রতি মৌসূমে ফল-ফসল ঘরে উঠালে।


হাদীস শরীফে ফল ফসলের নিসাব বলা হয়েছে ৫ ওয়াসাক। অর্থাৎ প্রায় ২৫ মণ। তবে ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) বলেছেন যে, কম বেশি সব ফল-ফসলেরই যাকাত দেওয়া দরকার। ফল-ফসলের যাকাতের পরিমাণ হলে ৫% বা ১০%। বৃষ্টির পানিতে বা স্বাভাবিক মাটির রসে যে সকল ফসল বা ফল হয় তা থেকে ১০% যাকাত দিতে হবে। আর সেচের মাধ্যমে উৎপাদিত ফল-ফসলের ৫% যাকাত দিতে হবে। ফল বা ফসলের মূল্যও প্রদান করা যায়।


খুতবাতুল ইসলাম

ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ

Post a Comment

Previous Post Next Post