বালা মুসীবতের সময় ধৈর্যশীল থাকার দশটি উপায়


‘বালা’ অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ থেকে ঈমানী পরীক্ষা কিংবা দুনিয়াবী কোন বিপদ-আপদের সম্মুখীন হলে নিন্মোক্ত দশটি বিষয় সম্পর্কে ইলম অর্জন করলে তখন সেই ব্যাপারে ধৈর্যশীল থাকা সম্ভব হবে ইন শা আল্লাহ।

(১) দুঃখ-কষ্টের সময় মুমিন বান্দা যদি ‘তাক্বদীর’ বা আল্লাহর সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সবর করে, তাহলে এর বিনিময়ে সে বেহিসাব ‘সওয়াব’ বা পুরষ্কার পাবে। এই জ্ঞান যার থাকবে দুঃখ-কষ্টের সময় তার জন্য সবর করা সহজ হবে ঐ ব্যক্তির তুলনায় যে জানে না যে, সবরের বিনিময়ে কি অকল্পনীয় প্রতিদান নির্ধারিত রয়েছে।

(২) এটা জানা যে, বালা মুসীবতের মাধ্যমে বান্দার কৃত অনেক সগীরা এবং কবীরাহ গুনাহ মাফ করা হয়।

(৩) এই বিশ্বাস রাখা যে, বান্দার উপর আপতিত সমস্ত ভালো ও মন্দ আল্লাহ লিখিত তাক্বদীর অনুপাতে হয়ে থাকে। কোন কিছুই আল্লাহর ইচ্ছার বাহিরে সংঘটিত হয় না। সুতরাং বান্দা যখন জানবে যে, সুখ ও দুঃখ সমস্ত কিছু আল্লাহর নিয়ন্ত্রনে, তখন সে আল্লাহর ইচ্ছার ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করবে।

(৪) কোন মানুষ যদি বিপদে পড়ে আর তার ওপর আল্লাহর কি অধিকার রয়েছে সে ব্যাপারে সম্যক অবগত থাকে, তাহলে খারাপ সময়েও সে আল্লাহকে ভুলে যাবে না। বরং কষ্টের সময়েও আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করবে।

(৫) বান্দার গুনাহর কারণে তার ওপরে বিপদ বা পরীক্ষা নেমে আসে। এই বিশ্বাস যার থাকবে, সে বিপদের সময় নিজের কৃত গুনাহর কথা স্মরণ করবে এবং তার জন্য আল্লাহর কাছে তাওবাহ ও ইস্তিগফার করতে থাকবে। যেহেতু তাওবাহ বান্দার গুনাহকে মুছে ফেলে, এ কারণে বান্দা বিপদে পড়লে হতাশ হবে না। কারণ সে জানে, তার যে গুনাহর কারণে সে আজ কষ্টে পড়েছে, আল্লাহর কাছে তাওবাহ করলে আল্লাহ তার সেই গুনাহ মাফ করে দিবেন। এমনকি আল্লাহ চাইলে তার বিপদও দূর করে দেবেন (ইন শা আল্লাহ)।

(৬) বান্দার উপরে যেই বালা মুসীবত আসে, সেই ব্যাপারে আল্লাহ ইচ্ছা করেছেন এবং বান্দার এই অবস্থার ওপর আল্লাহ সন্তুষ্ট রয়েছেন। কেননা বালা মুসীবতের দ্বারা আল্লাহর ইচ্ছা বান্দাকে সংশোধন করা। সুতরাং বান্দা যদি সেই ব্যাপারে সবর করে তাহলে বালা-মুসীবতকে বান্দা ঘৃণা করলেও তার রব্বের কাছে সেটা ঘৃণিত নয়, বরং আল্লাহ সেই পরীক্ষার ব্যাপারে সন্তুষ্ট। যেহেতু এর দ্বারা বান্দার গুনাহ মাফ হয়, আল্লাহর কাছে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।

(৭) বালা মুসীবত বান্দার ঈমানী দুর্বলতা, ইবাদতে ত্রুটি বা কম করা, দুনিয়ামুখী জীবন যাপন করা, আখেরাতকে ভুলে থাকা ইত্যাদি এমন অনেক অন্তুরের রোগের জন্য শিফা।

(৮) এই বিশ্বাস রাখা যে, বালা মুসীবতের সম্মুখীন হলে আর সবর করলে সেই বালা-মুসীবত বান্দার জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের অনেক কল্যাণ বয়ে আনে।

(৯) বালা মুসীবত বান্দাকে ধ্বংস করার জন্য আসে না, বরং কে সত্যবাদী আর কে ধৈর্যশীল তা পরীক্ষার জন্য আসে। সুতরাং বালা-মুসীবতে পতিত হলে সেই সময়কে আল্লাহর কাছে নিজের ঈমানকে প্রমাণ দেওয়ার জন্য একটা সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।

(১০) যে কোন অবস্থায় ইবাদতের নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। যেমন রমাদ্বানে দিনের বেলা সিয়াম পালন, রাতের বেলা তারাবীহর সালাত আদায় করা, যুল-হাজ্জ মাসের প্রথম দশকে হাজ্জের মানাসিক আদায় করা ইত্যাদি। সুতরাং বালা-মুসীবতের সময় যখন যেই ইবাদত, তা পালনে আরও যত্নশীল হলে মনের দুঃখ-কষ্ট বা হতাশার পরিবর্তে ইবাদতের মাধ্যমে প্রশান্তি অর্জন করা সম্ভব।”

মূল উৎসঃ ইবনুল ক্বাইয়্যিম (মৃত্যুঃ ৭৫১ হিজরী) রহি’মাহুল্লাহ রচিত ‘তারিক্ব আল-হিজরাতাইন’, ২/৬০০-৬০৪; অনুবাদক কর্তৃক সম্পাদিত এবং পরিমার্জিত।

Post a Comment

Previous Post Next Post