পৃথিবীতে আত্মীয়তার দিক থেকে দুজন মানুষকে সবচেয়ে কাছের, সবচেয়ে আপন মনে করা হয়। মা বাবা। বিনা বাক্যে যে কেউ এটা স্বীকার করবে। সন্তানের জন্য যারা নিজেদেরকে উৎসর্গ করে দেন। নিজেরা দুঃখ কষ্ট সয়ে বেড়ান জীবনভর। কিন্তু সন্তান কষ্ট পাক, তা তারা মেনে নিতে পারেন না।
তথাপি কিছু কিছু বিষয়ে তাদের ভুল চিন্তা, অবহেলা কিংবা অজ্ঞতার শিকার হয় সন্তানেরা। একজন বাবা হিসেবে, একজন মা হিসেবে সন্তান তাদের কাছ থেকে যেমনটা প্রত্যাশা করে, তেমনটা হয় না অনেক সময়। এমনই কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা যাক :
১. নিজের পছন্দ-অপছন্দ সন্তানের ওপর চাপিয়ে দেয়া
খুবই কমন ব্যাপার। কথাবার্তা, চালচলন, পোশাক আশাক এমনকি চিন্তা ধারায়ও তাদের মতের বিরুদ্ধে যাওয়া মুশকিল। বাহ্যত বিষয়টা সিম্পল মনে হলেও বাস্তবে অতটা সোজা না। বাবা মায়ের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে মাদ্রাসায় পড়তে কিংবা দ্বীন শিখতে গেলে কঠোরভাবে বাধা দেন তারা। আর্থিক সাপোর্ট দেন না। ভাবি, চাচি, মামীদের সঙ্গে পর্দা করতে গেলে সবার আগে বেদ্বীন মা বাবাই বাধা দেন, কথা শোনান। একটা মেয়ে তার কাজিনদের সাথে মিশতে না চাইলে তার বেদ্বীন মা কটু কথা শোনান। বকাঝকা করেন।
২. বিয়ের ক্ষেত্রে বিলম্ব করা
নিজেদের ব্যক্তিগত প্রয়োজন অনুভব না করা পর্যন্ত সন্তানের চাহিদার কথা বিবেচনা করেন না অনেক বাবা মা। মায়ের যখন মনে হয় ঘরোয়া কাজে হেল্প করতে একজন প্রয়োজন, তখনই বিয়ের কথা তোলেন। তার আগে নয়। বাবার যখন মনে হয় নাতি নাতনির মুখ দেখবেন, তখনই ছেলে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার চিন্তা করেন। তার আগে নয়। অধিকাংশ শিক্ষিত ফ্যামিলিতে মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার কথা বলে তাদেরকে 'আইবুড়ি' বানিয়ে ফেলা হয়। মেয়েগুলো একটা পর্যায়ে নীরবে ডুকরে কাঁদে। কিছুই করার থাকে না তখন।
৩. পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে জোর জবরদস্তি করা
বাবার বন্ধুর মেয়ে, মায়ের বান্ধবির ছেলে— এই জাতীয় সম্পর্কের ভিত্তিতে বাবা মা নিজেরাই পাত্র পাত্রী নির্বাচন করে ফেলেন। সন্তানের মতামতকে গোণায় ধরেন না। সন্তান অমত করলে তাকে 'বেয়াদব' আখ্যা দেন। অথচ বিয়ের ক্ষেত্রে সন্তানের মতামতই একমাত্র সিদ্ধান্ত। এখানে বাবা মায়ের জবরদস্তি করার কোনো অধিকার নেই। হাদিসে এ ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
৪. সব সন্তানকে সমান চোখে না দেখা
ছোটবেলা থেকেই অনেক সন্তান পারিবারিক বৈষম্যের শিকার হয়। তাদের কচি মনে ধীরে ধীরে মা বাবার প্রতি বিতৃষ্ণা তৈরি হতে থাকে। মানসিক যাতনায় অনেক সন্তান আত্মহত্যা পর্যন্ত করে বসে। সব সন্তানকে সমান চোখে দেখা উচিৎ। মাছের মাথাটা, মুরগির রানটা সবসময় একজনের পাতে তুলে দেয়াটা অন্যায়। জামা কাপড়, গিফট, এমনকি আদর যত্নের ক্ষেত্রেও যথাসম্ভব সমতা বজায় রাখা উচিৎ। আপনি যখন দুটি শিশুর একটির গালে চুমু খান, আরেকটিকে বঞ্চিত করেন, তখন সে কিন্তু ঠিকই কষ্ট পায়। হয়ত মুখে বলতে পারে না।
৫. আর্থিক সাপোর্ট কিংবা সম্পত্তি দেয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য করা
উপরিউক্ত বিষয়টির মতো এখানেও এমনটা করা হয় অনেক সময়। আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার কথা মাথায় রেখে এগুলো পরিহার করা উচিৎ। কোনো সন্তানের পূর্ণ সম্মতি ছাড়া অপর সন্তানের নামে সম্পত্তি উইল করে যাওয়া অনেক বড় জুলুম।
৬. দ্বীন পালনে বাধা দেয়া
কোনো ছেলে দাড়ি রাখতে আরম্ভ করলে বাবা বলে, জঙ্গি হয়ে যাচ্ছিস! মেয়ে পর্দা করতে শুরু করলে মা বলে, হুজুর হয়ে গেছিস! ধর্মীয় পুস্তক পড়তে গেলে বাধা। সন্তান উগ্রপন্থার শিকার বা জঙ্গি হয়ে যাচ্ছে, এমন ভয় তাদের মাঝে কাজ করে। সন্তানকে দ্বীনি ঘরানার কারো সঙ্গে মিশতে দেন না। ভালো কারো লেকচার শুনতে দেন না। অনলাইনে দ্বীনি ইলম অর্জন করতে গেলে সেখানেও বাধা। আর্থিক সাপোর্ট দূরে থাক, কথা শোনাতে পারলে এমনকি আঘাত করতে পারলেই যেন তারা শান্তি পান।
আমার অনেক অনলাইন স্টুডেন্টের খুবই কমন অভিযোগ এটা। ওরা যখন কোর্সে ভর্তি হয়, তখন লুকিয়ে লুকিয়ে ক্লাস করে। আল্লাহ এসব মা বাবাকে সহিহ বুঝ দান করেন।
লেখাঃ আবুল হাসানাত কাসিম (আল্লাহ্ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)
বাবা মা কে কষ্ট দেয়ার কোন চিন্তা ভাবনা থেকে না কোন সন্তানের , কিন্তু তার পর ও কেন তাড়া না বুঝে ২ জন কে ২ রকম করে দেখে
ReplyDeletePost a Comment