সংস্কৃতির লড়াই | মুসলিমের পরিচয়

 


আমরা যে লড়াইটা লড়ছি - এটা সহজ না। কোনো লড়াইই আসলে সহজ না। সহজ হলে সেটা লড়াই থাকে না, বনভোজন হয়ে যায়।


পাকিস্তান তৈরির পর পূর্ব বাংলায় সরকার লেভেলে কিছু হলেও একটা 'ইসলামি' চেতনা ছিল।

রঠার (রবীন্দ্র ঠাকুর) গানে শির্ক, ভারত এবং ব্রিটিশ পূজার এলিমেন্ট থাকায় সেটা অপছন্দনীয় ছিল রেডিও-টিভিতে।


দেশবিভাগের পর ভারত থেকে বাংলাদেশে চলে আসা 'নামে মুসলিম, মনে হিন্দু' এবং পূর্ববাংলায় থেকে যাওয়া ধর্ম সচেতন হিন্দুরা সেসময় একটা সাংষ্কৃতিক লড়াই শুরু করে।


অশ্বথমূলে ছায়ানটের রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে শোনানো দিয়ে যে লড়াইয়ের শুরু সেটা ৭১ পরবর্তী বাংলাদেশে আস্তে আস্তে মেইনস্ট্রিম হয়ে যায়। বিশেষ করে এরশাদ পরবর্তী সময়ে প্রথম আলোর মিডিয়া সাপোর্ট, বামপন্থী ইসলামোফোবদের পলিটিকাল সাপোর্ট নিয়ে সাংষ্কৃতিক যুদ্ধটা আদি শাহবাগীরাই জিতে যায়।


এখন কাউন্টার টেররিজমের কর্তা ব্যক্তিরা জঙ্গী আলামত হিসেবে 'পয়লা বৈশাখ' না করাকে আইডেন্টিফাই করছে কেন?


কারণ এটা একটা কালচারাল ওয়ার যেখানে কিছু মুসলিম তাদের আইডেনটিটি খুঁজে পেয়েছেন এবং বাঙালি সংষ্কৃতির নামে পৌত্তলিকতা বর্জন করেছেন এবং অন্যদের বর্জনের ডাক দিচ্ছেন।


এই বর্জনের ডাক মূলত বুদ্ধিবৃত্তিক যেখানে আমরা কুরআন এবং সুন্নাহর মূলনীতি থেকে বাঙালি সংষ্কৃতির নামে মূর্তিপূজা এবং শির্কগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছি।

এটা সবার ভালো লাগবে না।

১/ মূর্তিপূজক মুশরিকদের না।

২/ লিবারেল সেকুলারদের না।

৩/ এক শ্রেণীর মুসলিমদের-ও না, যারা সাংষ্কৃতিক যুদ্ধের গভীরতা এবং ভয়াবহতা অনুধাবন করতে পারেন না।


আপনি যদি তৃতীয় শ্রেণীভুক্ত হয়ে থাকেন তবে আপনি এখনও আমার ভাই, বোন।


দেখুন, শোষণের অভিযোগ তুলে 'ইসলামিক স্টেট অফ পাকিস্তান' ভেঙে 'ইসলামিক স্টেট অফ বাংলাদেশ' বানানো হয়নি, গড়া হয়েছিল সমাজবাদ এবং ধর্ম-নিরপেক্ষতার মন্ত্র পড়া একটি সেকুলার রাষ্ট্র যাতে 'ইসলাম' রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অপাংক্তেয় ছিল।

অর্থাৎ সাংষ্কৃতিক যুদ্ধে যারা জেতে তারা শাসন প্রতিষ্ঠার যুদ্ধও যেতে।


সবাই সবার মতো থাকুক, আমরাও আমাদের মতো থাকি - এই ভাবনায় মস্ত গলদ আছে। 'লাকুম দ্বিনুকুম ওয়ালি ইয়া দ্বীন' - এর মাধ্যমে সেকুলার প্লুরালিজম প্রতিষ্ঠা হয় না, ইসলামী প্লুরালিজম প্রতিষ্ঠা হয়।


এবং সেই প্লুরালিজমে পৃথিবীতে কাফিরদের বসবাস এবং অধিকার স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে, কিন্তু তারা যে কাফির সেটা সূরার শুরুতেই সম্বোধনের মাধ্যমে স্পষ্ট করা হয়েছে।


কাফির-মুশরিকরা জাহান্নামী এবং তাদের সাথে সাদৃশ্য রাখবে যারা তারাও তাদের দলভুক্ত - এটা ইসলামের একটা মূলনীতি।


কাফিরদের কাফির এবং কুফরিকে কুফর হিসেবে চিহ্নিত না করলে - তারা সে পথ থেকে ফিরে আসার কোনো দিশা পাবে না। বরং আপনি-আমি বা আমাদের সন্তানদেরও ওই পথে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।


আমরা যতই ডাইভারসিটি এবং প্লুরালিজম প্রমোট করি না কেন, কিয়ামতের দিনের বিচার শেষে মানুষের পরিচয় খুবই বাইনারি - জান্নাতী বা জাহান্নামী।


আপনি পরিবার নিয়ে কোথায় যেতে চান - নিজেকে জিজ্ঞেস করুন - জান্নাতে না জাহান্নামে?

জান্নাতে যেতে আল্লাহকে খুশি করা লাগবে। আপনার কাজ কিংবা নীরব অনুমোদন আল্লাহকে খুশি করছে কিনা নিজেকে জিজ্ঞেস করুন।


আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা সাংষ্কৃতিক যুদ্ধ ব্যাপারটা বোঝার, এ লড়াইয়ে ইসলামের পক্ষে থাকার, দুটো লাইন হলেও লেখার, দুটো মানুষকে হলেও বলার তাওফিক দান করুন।


ইনশা আল্লাহ, এই কথাগুলো এবং লেখাগুলো আমরা কিয়ামতের দিন আমাদের সৎ কাজের পাল্লায় অনেক ভারী হিসেবে দেখতে পাবো।


লিখেছেন: ভাই শরিফ আবু হায়াত অপু


Post a Comment

Previous Post Next Post