(এক)
মানুষের ভালো ও মন্দ কাজের উপর নির্ভর করে কেউ জান্নাতে অথবা কেউ জাহান্মামে যাবে। এ কারণে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
الْجَنَّةُ أَقْرَبُ إِلَى أَحَدِكُمْ مِنْ شِرَاكِ نَعْلِهِ، وَالنَّارُ مِثْلُ ذَلِكَ
"জান্নাত তোমাদের জুতার ফিতার চেয়েও অধিক নিকটবর্তী আর জাহান্নামও সেই রকম (নিকটবর্তী)।" সহীহ বুখারীঃ ৬৪৮৮।
(দুই)
একটি কুকুরের প্রতি দয়া করে একজন পতিতা মহিলা জান্নাতে যাবে। আর একটি মহিলা একটা বিড়ালকে কষ্ট দিয়ে মারার কারণে জাহান্নামে যাবে।
=> আবূ হুরায়রাহ্ রাদিয়াল্লাহু আ'নহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "(একবার) একটি পতিতা মহিলাকে মাফ করে দেয়া হলো। (কারণ) মহিলাটি একবার একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাবার সময় দেখল, সেই কুকউরটি পিপাসায় কাতর হয়ে একটি কূপের পাশে দাঁড়িয়ে জিহবা বের করে হাঁপাচ্ছে। পিপাসায় সে মরার উপক্রম। মহিলাটি (কুকুরের এমন করুণ অবস্থা দেখে) নিজের মোজা খুলে ওড়নার সাথে বেঁধে (কূপ হতে) পানি উঠিয়ে কুকুরটিকে পান করাল। এ কাজের জন্য তাকে মাফ করে দেয়া হলো।"
(এ কথা শুনে) সাহাবীগণ আরয করলেন, "পশু-পাখির সাথে ভাল ব্যবহার করার মধ্যেও কি আমাদের জন্য সাওয়াব আছে?"
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, "হ্যাঁ। প্রত্যেকটা প্রাণীর সাথে ভাল ব্যবহার করার মধ্যেও সাওয়াব আছে।" সহীহ বুখারীঃ ৩৩২১, মুসলিমঃ ২২৪৫, আহমাদঃ ১০৬২১, শারহুস্ সুন্নাহঃ ১৬৬৬, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীরঃ ৪১৬৩।
=> আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আ'নহুমা বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার "সালাতুল কুসূফ" (সূর্য গ্রহণের সালাত) আদায় করলেন। সালাত শেষে তিনি বললেন, "জান্নাত আমার খুবই নিকটে এসে গিয়েছিল, এমনকি আমি যদি চেষ্টা করতাম তাহলে জান্নাতের একগুচ্ছ আঙ্গুর তোমাদের এনে দিতে পারতাম। আর জাহান্নামও আমার একেবারে নিকটবর্তী হয়ে গিয়েছিল। এমনকি আমি বলে উঠলাম, ইয়া রব! আমিও কি তাদের (জাহান্নামীদের) সাথে? আর আমি একজন স্ত্রী লোককে দেখতে পেলাম।"
হাদীসটির অপর বর্ণনাকারী সাহাবা আবূ হুরাইরাহ্ রাদিয়াল্লাহু আ'নহু বলেন, আমার মনে হয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, "একটি বিড়াল সেই মহিলাকে খামচি দিচ্ছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এই মহিলার এমন অবস্থা কেন? ফেরেশতাগণ জবাব দিলেন, সে একটি বিড়ালকে আটকে রেখেছিল, ফলে বিড়ালটি অনাহারে মারা যায়। উক্ত মহিলা তাকে খেতেও দেয়নি এবং তাকে ছেড়েও দেয়নি, যাতে সে আহার করতে পারে।" (এরই শাস্তি স্বরূপ জাহান্নামে সেই বিড়ালটি মহিলাটিকে খামচি দিচ্ছিল।) সহীহ বুখারীঃ ৭৪৫।
________________________________________
এই দুইটি হাদীস থেকে শিক্ষাঃ
(১) জান্নাত পাওয়ার ব্যাপারে আশা ছাড়া যাবে না, আবার জাহান্নামের শাস্তি থেকে কখনও নিজেকে নিরাপদ ভাবা যাবে না।
(২) নেক আমল যত ছোট হোক তাকে অবহেলা করা যাবে না, আবার পাপকে ছোট মনে করে হালকা মনে করা যাবে না। আপাতদৃষ্টিতে ছোট মনে হয় এমন নেক আমলের উসীলায় কেউ জান্নাতে চলে যাবে। আবার ছোট মনে করে কোন পাপ কাজে লিপ্ত হওয়ার কারণে কেউ জাহান্নামে চলে যাবে।
(৩) যে কোন আমলের সময় ইখলাস বজায় রাখার বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। ইখলাসের কারণে অল্প আমলেও সওয়াব অনেকগুণ বৃদ্ধি করা হবে।
Post a Comment