ওরশের নামে মাজারপন্থীরা যে উৎসব আয়োজন করে, তা আমাদের সবারই জানা আছে। সেখানে গাইরুল্লাহর নামে জবাই, মানত সহ বহু ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড সংঘটিত হয়। আপনি কি জানেন, কত শত-সহস্র মানুষ এসব ওরশে সমবেত হয়! বলা বাহুল্য, কিছু বিখ্যাত মাজারে সমবেত মানুষের ঢল দেখলে আপনার অন্তুরাত্মা কেঁপে উঠবে এই ভেবে যে, এ লোকগুলো হইহুল্লো করে গাড়ির বহর নিয়ে মাজারে যাচ্ছে না, যাচ্ছে জাহান্নামের দিকে। কেন বলছি, জাহান্নামে যাচ্ছে—এটা বুঝার জন্য ওরশ সম্পর্কে যতসামান্য জ্ঞান থাকাই যথেষ্ট। এখানে উল্লেখ্য যে, নেককার মৃত ব্যক্তির কবরকেই ভক্তগণ শ্রদ্ধাভরে মাজার বলে অভিহিত করে। আপনি কি জানেন, ওরস কি?
ওরস শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ‘শাদী’ বা নতুন বর-বধূর মধুচন্দ্রিমা বা বাসর রাত্রি উদযাপন। আর মাজারপন্থীরা মাজারে শায়িত নেক বান্দার মৃত্যুদিবসকে পালন করে ওরশ নামে। নিশ্চয়ই আপনার মনে প্রশ্ন জাগছে, মৃত্যুদিবসের সাথে শাদীর কি সম্পর্ক। উত্তর হচ্ছে, মাজারপন্থীরা মনে করে আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন সারা জাহানের দুলহা/বর। আর মাজারে শায়িত নেক ব্যক্তি হচ্ছে দুলহান! মৃত্যুর মাধ্যমে দুলহান তার দুলহার সাথে গিয়ে মিলিত হয়...তাই এই মৃত্যু দিবসকে বিদাত পন্থীরা নাম দিয়েছে ওরস!
সত্যি বলতে, মাজারপন্থীরা ওরস শব্দটি ব্যবহার করে বড়ই ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। এ সম্পর্কে ড. সালিহ আল-ফাওযান তার আকিদাহ আত-তাওহীদ(১) বইটিতে লিখেছেন:
১. নবী (সা.) নেককার লোক তথা ওলী আওলিয়াদের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। কেননা এ ধরনের বাড়াবাড়ি করতে করতেই মানুষ এক পর্যায়ে তাদের উপাসনায় লিপ্ত হয়। তাই তিনি বলেন,
“বাড়াবাড়ি থেকে সাবধান! কেননা বাড়াবাড়িই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে।” (মুসনাদ আহমাদ ও ইবনে মাজাহ)
তিনি আরও বলেন, “তোমরা আমাকে নিয়ে সেভাবে বাড়াবাড়ি করো না, যেভাবে নাসারারা মরিয়ম পুত্র ঈসাকে নিয়ে করেছিল।কেননা আমি শুধু একজন বান্দা। অতএব আমাকে আল্লাহ্র বান্দা ও তাঁর রাসূল হিসাবে অভিহিত করো।” (সহীহ বুখারী)
২. রাসূল (সা.) কবরের উপর সৌধ স্থাপন করতে নিষেধ করেছেন।.আলী বিন আবু তালিব (রা.) তার অধিনস্থ এক ব্যক্তিকে বলেন যে, আমি কি তোমাকে সেই দায়িত্ব দিয়ে পাঠাব না, যে দায়িত্ব দিয়ে রাসূল (সা.) আমাকে পাঠিয়েছিলেন? তা হলো, যেখানেই প্রতিমা ও ভাস্কর্য দেখবে ভেঙ্গে ফেলবে এবং যেখানেই উঁচু কবর দেখবে সমান করে দেবে।” (সহীহ মুসলিম)
অনুরূপভাবে রাসূল (সা.) কবরে চুনকাম ও সৌধ তৈরী করতে নিষেধ করেছেন।
৩. কবরের পাশে নামায পড়া থেকেও তিনি সতর্ক করেছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, মৃত্যুকালীন অসুস্থতার সময় রাসূলুল্লাহ্ (সা.) চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে রাখতেন। কেবল কষ্ট লাগলে মুখ থেকে চাদর সরাতেন। তখন তিনি বলেন “ইয়াহুদী ও নাসারাদের উপর আল্লাহ্র লা’নত পড়ুক। তারা তাদের নবীদের কবরগুলোকে ইবাদাতের স্থান বানিয়ে নিয়েছে।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
তিনি আরো বলেন, “শোনো, তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির লোকেরা তাদের নবীদের কবরসমূহকে মাসজিদ বানিয়ে নিতো। সাবধান! তোমরা কবরকে মাসজিদ বানাবে না। আমি তোমাদেরকে তা থেকে নিষেধ করছি।” (সহীহ মুসলিম)
যেখানে কবরপূজার ব্যাপারে আমাদের রাসুল এত বেশি সতর্ক করেছেন, সেখানে ওরসের নাম নিয়ে গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে মানত করা ও জবেহ করা তো সরাসরি শিরক যা ব্যক্তিকে জাহান্নামের চিরস্থায়ী অধিবাসীতে পরিণত করবে। নিঃসন্দেহে এগুলো আরও অনেক বেশি ঘৃণিত ও নিন্দনীয়।
বই ড: সালিহ আল ফাওযান
লেখক: আকিদাহ আত-তাওহীদ
Post a Comment