মানবতা ও জাতীয়তাবাদ: কে কার??

● মানবতা: এমন একটি আদর্শ যেখানে জাতি, বর্ণ ও স্থান ভুলে মানুষ মানুষের পাশে দাড়ায় ।

● জাতীয়তাবাদ: এমন একটি আদর্শ যেখানে জাতিকে মানব সমাজের কেন্দ্রীয় অবস্থানে স্থাপন করা হয়, এবং অন্যান্য সামাজিক ও রাজনৈতিক আদর্শকে জাতিগত আদর্শের পরে স্থান দেয়া হয়।

● মানবতা বনাম জাতীয়তাবাদ: মানবতা কোন জাতি কিংবা দেশের সীমারেখায় সীমাবদ্ধ নয় । যেমন: নেপালের ভূমিকম্পকে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ । পক্ষান্তরে জাতীয়তাবাদ একটি জাতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ । যেমন: অসহায় রেহিঙ্গারা কখনো বাংলাদেশে ঢুকতে পারবে না, যদিও তারা আগুনে পুড়ে মরবে না হয় পানিতে ডুবে মরবে! কারণ তাদের জাতীয়তাবাদ বাংলাদেশী নয়!

● মন্তব্য: মানবতা ও জাতীয়তাবাদ পরস্পর বিপরীত বিশ্বাস । আদর্শ দু'টি কোনক্রমেই একসাথে যায় না ।


● জাতীয়তাবাদ কার ?
বর্তমান রেহিঙ্গাদের দিকে তাকালেই বুঝা যায় জাতীয়তাবাদ যেন শুধু এই বাংলার । এছাড়া বর্তমানে আমেরিকার নেতৃত্বে পরিচালিত বিশ্বের বিভিন্ন যুদ্ধ ময়দানগুলোর দিকে তাকালেও বুঝবেন আমারেকার জাতীয়তাবোধ কতোটা প্রখর । শুধু তাই নয় পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপগুলোর পেছনে সবসময়ই জাতীয়তাবাদ প্রেরণা দিয়ে আসছে । সেটা কখনো হয় স্বাধীনতার মিছে আশায়, কখনো হয় ক্ষমতার প্রভাব বিস্তারে, আবার কখনো হয় আত্মরক্ষার বেশ ধারণ করে । সাথে আমজনতাদের গরম করার জন্য মাঝে মাঝে 'মওকা মওকা' তো থাকছেই ।

আর সবকিছুতেই যেহেতু ইসলাম এসে যায়, সেহেতু জাতীয়তাবাদ নিয়ে তার মতামতটাও জানা জরুরী । ইসলামের বার্তাবাহক নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: "সে আমাদের দলভুক্ত নয় যে আসাবিয়াহ’র দিকে ডাক দেয়, আসাবিয়াহ'র (ন্যাশনালিজম বা জাতিয়তাবাদের) কারণে লড়াই করে কিংবা আসাবিয়াহর কারণে মৃত্যুবরণ করে” (বর্ণনায়: আবু দাউদ)

অর্থাৎ উপরের কিছু বিষয়ে এতটুকু স্পষ্ট যে, ইসলাম ব্যতীত অন্য সব আদর্শের মধ্যেই জাতীয়তাবাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে । তাই এতটুকু নিশ্চিত যে জাতীয়তাবাদ ইসলামের নয় ।


● মানবতা কার?
যেহেতু মানবতা সার্বজনীন, সেহেতু স্বাভাবিকভাবেই যারা জাতীয়তাবাদী তার পূর্ণ মানবতা দেখাতে অক্ষম । তাদের মানবতার দৌড় জাতি আর দেশের সীমারেখায় আবদ্ধ । তাইতো বাংলাদেশী হয়ে ফিলিস্তিনির পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন বোধ হয় না, আমেরিকান হয়ে রাশিয়ার মঙ্গল চাওয়া যায় না, ভারতীয় হয়ে পাকিস্তানের নাম মুখে নেয়া অন্যায় । তাই বলছি, অন্তরে জাতীয়তাবোধ রেখে মুখে মানবতার দাবি করা পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই না ।

আর এক্ষেত্রে এসে ইসলাম দেখিয়েছে উদারতা । অর্থাৎ যেখানে সবাই স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত সেখানে ইসলামের আচরণ দেখে মুগ্ধ হওয়াই স্বাভাবিক । আর তা স্পষ্টভাবে ঘোষণা রয়েছে আল্লাহ্ সুবহানওয়া ও তাঁর রাসূলের পক্ষ হতে-

□ '‘তোমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে বাছাই করা হয়েছে, মানবের কল্যাণের জন্য’' -(সূরা-আল-ইমরান : ১১০)

□ ''… যে ব্যক্তি নরহত্যা বা পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী কাজের শাস্তি প্রদানের উদ্দেশ্য ছাড়া কাউকে হত্যা করল, সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষকেই হত্যা করল। আর যে কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করল, সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষের প্রানরক্ষা করল।'' -(সূরা মায়িদাহ্‌ :৩২)

□ রাসূলুল্লাহ(সা) বলেন: 'সাবধান! যে ব্যক্তি কোনও মুয়াহিদের (মুয়াহিদ: মুসলিম রাষ্ট্রে ন্যায়সঙ্গতভাবে বসবাসরত অমুসলিম) উপর অত্যাচার করবে অথবা তার কোন অধিকার ছিনিয়ে নিবে অথবা তাকে অসহনীয় যন্ত্রণা দিবে অথবা তার অনুমতি ছাড়া তার কোনও কিছু নিবে, সে জেনে রাখুক যে বিচার দিবসে আমি তার (অত্যাচারী ব্যক্তির) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো।' -(সুনান আবু দাউদ)

এবার আপনিই বলুন, এই সার্বজনীন মানবতা কে দিতে পারবে ? যে রাষ্ট্রপ্রধান দলীয় লোক ব্যতীত অন্য সবাইকে শত্রু মনে করে সে? নাকি যে ধর্ম সংখ্যালুঘুদের পুড়িয়ে মারে, নাগরিকত্ব কেড়ে নেয় সে ধর্ম ?

আসলে ইসলাম ব্যতীত কেউ পারবে না । এর একটি বড় কারণ ইসলাম জাতীয়তাবাদ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত । তাই মানবতায় সে সম্পূর্ণ সফল ।


এখন আপনার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত- অন্তরে জাতীয়তাবোধ আর মুখে মেকি মানবতা নিয়ে সত্যিকার মানবতা ও ইসলামের নিয়ামাহ্ থেকে দূরে সরে যাবেন নাকি জাতীয়তাবাদী চেতনার সীমারেখা পেরিয়ে ইসলামের বিস্তৃত মানবতায় সারা দিবেন??


আল্লাহ্ আমাদেরকে জাতীয়তাবাদের বেড়াজাল থেকে মুক্তি দিন, ইসলামের বিস্তৃত মানব সেবায় স্থান দিন । আমীন ।


লিখেছেন: আরিফুল ইসলাম দিপু

Post a Comment

Previous Post Next Post