উত্তর:
আলহামদুলিল্লাহ।
আলেমগণ হজ্ব ফরজ হওয়ার শর্তগুলো উল্লেখ করেছেন। কোন ব্যক্তির মধ্যে এ শর্তগুলো পাওয়া গেলে তার উপর হজ্ব ফরজ হবে; আর পাওয়া না গেলে হজ্ব ফরজ হবে না। এমন শর্ত- পাঁচটি। সেগুলো হচ্ছে- ইসলাম, আকল (বুদ্ধিমত্তা), বালেগ হওয়া, স্বাধীন হওয়া, সামর্থ্য থাকা।
১. ইসলাম: এটি যে কোন ইবাদতের ক্ষেত্রে শর্ত। যেহেতু কাফেরের কোন ইবাদত শুদ্ধ নয়। দলিল হচ্ছে আল্লাহ তাআলার বাণী: “তাদের অর্থ ব্যয় কবুল না হওয়ার এছাড়া আর কোন কারণ নেই যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি কাফের (অবিশ্বাসী)।”[সূরা তওবা, আয়াত: ৫৪]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক মুআয (রাঃ) কে ইয়েমেনে পাঠানো সংক্রান্ত হাদিসে এসেছে- “তুমি আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের কাছে যাচ্ছ। তাদেরকে তুমি ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এই কালেমাতে সাক্ষ্য দেয়া এবং আমি যে আল্লাহর রাসূল এই সাক্ষ্য দেয়ার প্রতি আহ্বান জানাবে। যদি তারা তা মেনে নেয় তখন তাদেরকে জানাবে আল্লাহ তাদের উপরে দিবানিশি পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ করেছেন। যদি তারা তা মেনে নেয় তবে তাদেরকে জানাবে আল্লাহ তাদের উপর যাকাত ফরজ করেছেন। তাদের মধ্যে যারা ধনী তাদের থেকে যাকাত আদায় করা হবে এবং গরীবদের মধ্যে তা বিতরণ করা হবে।”[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম] অতএব, কাফেরকে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করার দাওয়াত দেওয়া হবে। ইসলাম গ্রহণ করার পর আমরা তাকে নামায, যাকাত, রোজা, হজ্ব ও ইসলামের অন্যান্য বিধিবিধান আদায় করার নির্দেশ দিব।
২ ও ৩. আকলবান ও বালেগ হওয়া: দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “তিন শ্রেণীর লোকের উপর থেকে (শরয়ি দায়িত্বের) কলম তুলে নেয়া হয়েছে। ঘুমন্ত ব্যক্তি; সজাগ না হওয়া পর্যন্ত। শিশু; তার স্বপ্নদোষ না হওয়া পর্যন্ত। পাগল; তার হুঁশ ফিরে আসা পর্যন্ত।” [সুনানে আবু দাউদ (৪৪০৩), শাইখ আলবানী সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন] অতএব, শিশুর উপরে হজ্ব নেই। তবে শিশুর অভিভাবক যদি তাকে নিয়ে হজ্ব আদায় করে তাহলে তার হজ্ব শুদ্ধ হবে। সে শিশু যেমন সওয়াব পাবে তেমনি তার অভিভাবকও সওয়াব পাবে। হাদিসে এসেছে- এক মহিলা একটি শিশুকে উপরে তুলে ধরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন: এর জন্য কি হজ্ব আছে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: হ্যাঁ। আপনিও প্রতিদান পাবেন।”[সহিহ মুসলিম]
৪. স্বাধীন হওয়া: অতএব, ক্রীতদাসের উপর হজ্ব নেই। যেহেতু ক্রীতদাস তার মনিবের অধিকার আদায়ে ব্যস্ত।
৫. সামর্থ্য থাকা: আল্লাহ তাআলা বলেন: “এ ঘরের হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌছার।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৭] আয়াতে কারীমাতে উল্লেখিত সামর্থ্য শারীরিক সামর্থ্য ও আর্থিক সামর্থ্য উভয়টাকে অন্তর্ভুক্ত করে। শারীরিক সামর্থ্য বলতে বুঝায় শরীর সুস্থ হওয়া এবং বায়তুল্লাহ পর্যন্ত সফরের কষ্ট সইতে সক্ষম হওয়া। আর আর্থিক সামর্থ্য বলতে বুঝায় বায়তুল্লাহতে আসা-যাওয়া করার মত অর্থের মালিক হওয়া।
//এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে- যে ব্যক্তির ইসলামী ব্যাংকে কিছু অর্থ রয়েছে। তার মাসিক বেতন ও সে অর্থের লাভ মিলে তার খরচ কোন মতে চলে যায়। এ ব্যক্তির উপর মূলধন ভেঙ্গে হজ্ব আদায় করা কি ফরজ, উল্লেখ্য এতে করে তার মাসিক আয়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং আর্থিকভাবে সে সংকটে থাকবে?//
তাঁরা জবাবে বলেন: প্রশ্নে যে অবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সে প্রেক্ষিতে শরয়ি আইনানুগ সামর্থ্য না থাকায় আপনি হজ্ব আদায়ের জন্য মুকাল্লাফ (শরয়ি দায়িত্বপ্রাপ্ত) নন। আল্লাহ তাআলা বলেন: “এ ঘরের হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌছার।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৭] তিনি আরো বলেন: “আল্লাহ দ্বীন পালনে তোমাদের উপর কাঠিন্য আরোপ করেননি।” [সূরা হজ্ব, আয়াত: ৭৮]
মৌলিক প্রয়োজন কোনগুলো: মানুষের জীবন ধারণের জন্য যে জিনিশগুলো একান্ত প্রয়োজন। যেগুলো ছাড়া চলতে কষ্ট হয়। যেমন- কোন তালিবে ইলমের কিতাব-পুস্তক। আমরা বলব না যে, তুমি তোমার বই বিক্রি করে হজ্ব আদায় কর। যেহেতু এটি তার প্রধান প্রয়োজনের মধ্যে পড়ে। অনুরূপভাবে প্রয়োজনীয় গাড়ীর ব্যাপারে আমরা বলব না যে, তুমি গাড়ীটি বিক্রি করে হজ্ব কর। কিন্তু তার কাছে যদি দুটি গাড়ী থাকে অথচ তার প্রয়োজন একটির সে ক্ষেত্রে একটি গাড়ী বিক্রি করে এর মূল্য দিয়ে হজ্ব আদায় করা তার উপর ফরজ হবে। অনুরূপভাবে কোন শিল্পনির্ভর পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিকে বলা হবে না যে, তুমি তোমার যন্ত্রপাতি বিক্রি করে এর মূল্য দিয়ে হজ্বে চলে যাও। কারণ তার এগুলোর প্রয়োজন রয়েছে। অনুরূপভাবে যে গাড়ীটিকে কেউ ভাড়া গাড়ী হিসেবে ব্যবহার করে এবং এর ভাড়া থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে নিজের ও নিজ পরিবারের খরচ চলে সে গাড়ীটি বিক্রি করে হজ্ব আদায় করা ফরজ নয়।
মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যে বিয়েও পড়বে। যদি বিয়ের প্রয়োজন থাকে তাহলে হজ্বের উপর বিয়েকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। অন্যথায় হজ্বকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
নারীর উপর হজ্ব ফরজ হওয়ার জন্য সঙ্গি হিসেবে কোন মোহরেম পুরুষ থাকা শর্ত। কোন পুরুষ মোহরেম ছাড়া ফরজ হোক নফল হোক হজ্ব আদায় করার জন্য কোন নারীর সফর করা জায়েয নয়। দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “কোন নারী মোহরেম পুরুষের সঙ্গ ছাড়া সফর করবে না।” [সহিহ বুখারী (১৮৬২) ও সহিহ মুসলিম (১৩৪১)]
মোহরেম পুরুষ: স্বামী অথবা এমন কোন পুরুষ যার সাথে বিবাহ-বন্ধন চিরতরে হারাম ঔরসজাত কারণে অথবা দুগ্ধপানের কারণে অথবা বৈবাহিক আত্মীয়তার কারণে।
বোনের স্বামী (দুলাভাই), খালার স্বামী (খালু), ফুফুর স্বামী (ফুফা) মোহরেম নয়। কিছু কিছু নারী এ ব্যাপারে শিথিলতা করে বোন ও বোন জামাই এর সাথে সফর করেন অথবা খালা-খালুর সাথে সফর করেন – এটি হারাম। যেহেতু বোন জামাই বা খালু মোহরেম নয়। তাই এদের সাথে সফর করা জায়েয নয় এবং এভাবে হজ্ব করলে হজ্ব মাবরুর না হওয়ার আশংকা অধিক। কারণ মাবরুর হজ্ব হচ্ছে- যে হজ্বের মধ্যে কোন পাপ সংঘটিত হয় না। এই নারী তার গোটা সফরেই গুনাতে লিপ্ত।
মোহরেম এর ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে- তাকে আকলবান ও সাবালক হতে হবে। কারণ মোহরেম থাকার উদ্দেশ্য হচ্ছে- মোহরেম ব্যক্তি যেন নারীকে হেফাযত করতে পারে। শিশু ও পাগলের পক্ষে তো তা সম্ভব নয়। অতএব, কোন নারী যদি মোহরেম না পান অথবা মোহরেম পাওয়া গেলেও সে মোহরেম যদি তাকে নিয়ে সফরে যেতে অস্বীকৃতি জানায় তাহলে সে নারীর উপর হজ্ব ফরজ হবে না। হজ্ব ফরজ হওয়ার জন্য স্বামীর অনুমতি গ্রহণ শর্ত নয়। বরং স্বামী অনুমতি না দিলেও যদি হজ্ব ফরজ হওয়ার শর্তগুলো পাওয়া যায় তাহলে তার উপর হজ্ব ফরজ হবে।
সামর্থ্যের শর্তগুলো পূর্ণ হলে হজ্ব ফরজ। এ শর্তগুলোর মধ্যে স্বামীর অনুমতি গ্রহণ নেই। স্ত্রীকে হজ্বে যেতে বাধা দেয়া স্বামীর জন্য জায়েয নয়। বরং স্ত্রীকে এই ফরজ ইবাদত আদায়ে সহযোগিতা করা শরিয়তের বিধান। সমাপ্ত।
অবশ্য এটি ফরজ হজ্বের প্রসঙ্গে। নফল হজ্বের ব্যাপারে ইবনুল মুনযির ‘ইজমা’ বর্ণনা করেছেন যে, স্বামীর অধিকার রয়েছে নফল হজ্ব থেকে স্ত্রীকে বাধা দেয়ার। যেহেতু স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার পূর্ণ করা ফরজ। সুতরাং অন্য কোন ফরজ আমল ছাড়া এই অধিকার হতে তাকে বঞ্ছিত করা যাবে না। [মুগনী (৫/৩৫)]
দেখুন: আল-শারহুল মুমতি (৭/৫-২৮)
সূত্র: http://islamqa.info/bn/41957
আলহামদুলিল্লাহ।
আলেমগণ হজ্ব ফরজ হওয়ার শর্তগুলো উল্লেখ করেছেন। কোন ব্যক্তির মধ্যে এ শর্তগুলো পাওয়া গেলে তার উপর হজ্ব ফরজ হবে; আর পাওয়া না গেলে হজ্ব ফরজ হবে না। এমন শর্ত- পাঁচটি। সেগুলো হচ্ছে- ইসলাম, আকল (বুদ্ধিমত্তা), বালেগ হওয়া, স্বাধীন হওয়া, সামর্থ্য থাকা।
১. ইসলাম: এটি যে কোন ইবাদতের ক্ষেত্রে শর্ত। যেহেতু কাফেরের কোন ইবাদত শুদ্ধ নয়। দলিল হচ্ছে আল্লাহ তাআলার বাণী: “তাদের অর্থ ব্যয় কবুল না হওয়ার এছাড়া আর কোন কারণ নেই যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি কাফের (অবিশ্বাসী)।”[সূরা তওবা, আয়াত: ৫৪]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক মুআয (রাঃ) কে ইয়েমেনে পাঠানো সংক্রান্ত হাদিসে এসেছে- “তুমি আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের কাছে যাচ্ছ। তাদেরকে তুমি ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এই কালেমাতে সাক্ষ্য দেয়া এবং আমি যে আল্লাহর রাসূল এই সাক্ষ্য দেয়ার প্রতি আহ্বান জানাবে। যদি তারা তা মেনে নেয় তখন তাদেরকে জানাবে আল্লাহ তাদের উপরে দিবানিশি পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ করেছেন। যদি তারা তা মেনে নেয় তবে তাদেরকে জানাবে আল্লাহ তাদের উপর যাকাত ফরজ করেছেন। তাদের মধ্যে যারা ধনী তাদের থেকে যাকাত আদায় করা হবে এবং গরীবদের মধ্যে তা বিতরণ করা হবে।”[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম] অতএব, কাফেরকে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করার দাওয়াত দেওয়া হবে। ইসলাম গ্রহণ করার পর আমরা তাকে নামায, যাকাত, রোজা, হজ্ব ও ইসলামের অন্যান্য বিধিবিধান আদায় করার নির্দেশ দিব।
২ ও ৩. আকলবান ও বালেগ হওয়া: দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “তিন শ্রেণীর লোকের উপর থেকে (শরয়ি দায়িত্বের) কলম তুলে নেয়া হয়েছে। ঘুমন্ত ব্যক্তি; সজাগ না হওয়া পর্যন্ত। শিশু; তার স্বপ্নদোষ না হওয়া পর্যন্ত। পাগল; তার হুঁশ ফিরে আসা পর্যন্ত।” [সুনানে আবু দাউদ (৪৪০৩), শাইখ আলবানী সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন] অতএব, শিশুর উপরে হজ্ব নেই। তবে শিশুর অভিভাবক যদি তাকে নিয়ে হজ্ব আদায় করে তাহলে তার হজ্ব শুদ্ধ হবে। সে শিশু যেমন সওয়াব পাবে তেমনি তার অভিভাবকও সওয়াব পাবে। হাদিসে এসেছে- এক মহিলা একটি শিশুকে উপরে তুলে ধরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন: এর জন্য কি হজ্ব আছে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: হ্যাঁ। আপনিও প্রতিদান পাবেন।”[সহিহ মুসলিম]
৪. স্বাধীন হওয়া: অতএব, ক্রীতদাসের উপর হজ্ব নেই। যেহেতু ক্রীতদাস তার মনিবের অধিকার আদায়ে ব্যস্ত।
৫. সামর্থ্য থাকা: আল্লাহ তাআলা বলেন: “এ ঘরের হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌছার।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৭] আয়াতে কারীমাতে উল্লেখিত সামর্থ্য শারীরিক সামর্থ্য ও আর্থিক সামর্থ্য উভয়টাকে অন্তর্ভুক্ত করে। শারীরিক সামর্থ্য বলতে বুঝায় শরীর সুস্থ হওয়া এবং বায়তুল্লাহ পর্যন্ত সফরের কষ্ট সইতে সক্ষম হওয়া। আর আর্থিক সামর্থ্য বলতে বুঝায় বায়তুল্লাহতে আসা-যাওয়া করার মত অর্থের মালিক হওয়া।
//এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে- যে ব্যক্তির ইসলামী ব্যাংকে কিছু অর্থ রয়েছে। তার মাসিক বেতন ও সে অর্থের লাভ মিলে তার খরচ কোন মতে চলে যায়। এ ব্যক্তির উপর মূলধন ভেঙ্গে হজ্ব আদায় করা কি ফরজ, উল্লেখ্য এতে করে তার মাসিক আয়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং আর্থিকভাবে সে সংকটে থাকবে?//
তাঁরা জবাবে বলেন: প্রশ্নে যে অবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সে প্রেক্ষিতে শরয়ি আইনানুগ সামর্থ্য না থাকায় আপনি হজ্ব আদায়ের জন্য মুকাল্লাফ (শরয়ি দায়িত্বপ্রাপ্ত) নন। আল্লাহ তাআলা বলেন: “এ ঘরের হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌছার।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৭] তিনি আরো বলেন: “আল্লাহ দ্বীন পালনে তোমাদের উপর কাঠিন্য আরোপ করেননি।” [সূরা হজ্ব, আয়াত: ৭৮]
মৌলিক প্রয়োজন কোনগুলো: মানুষের জীবন ধারণের জন্য যে জিনিশগুলো একান্ত প্রয়োজন। যেগুলো ছাড়া চলতে কষ্ট হয়। যেমন- কোন তালিবে ইলমের কিতাব-পুস্তক। আমরা বলব না যে, তুমি তোমার বই বিক্রি করে হজ্ব আদায় কর। যেহেতু এটি তার প্রধান প্রয়োজনের মধ্যে পড়ে। অনুরূপভাবে প্রয়োজনীয় গাড়ীর ব্যাপারে আমরা বলব না যে, তুমি গাড়ীটি বিক্রি করে হজ্ব কর। কিন্তু তার কাছে যদি দুটি গাড়ী থাকে অথচ তার প্রয়োজন একটির সে ক্ষেত্রে একটি গাড়ী বিক্রি করে এর মূল্য দিয়ে হজ্ব আদায় করা তার উপর ফরজ হবে। অনুরূপভাবে কোন শিল্পনির্ভর পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিকে বলা হবে না যে, তুমি তোমার যন্ত্রপাতি বিক্রি করে এর মূল্য দিয়ে হজ্বে চলে যাও। কারণ তার এগুলোর প্রয়োজন রয়েছে। অনুরূপভাবে যে গাড়ীটিকে কেউ ভাড়া গাড়ী হিসেবে ব্যবহার করে এবং এর ভাড়া থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে নিজের ও নিজ পরিবারের খরচ চলে সে গাড়ীটি বিক্রি করে হজ্ব আদায় করা ফরজ নয়।
মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যে বিয়েও পড়বে। যদি বিয়ের প্রয়োজন থাকে তাহলে হজ্বের উপর বিয়েকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। অন্যথায় হজ্বকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
নারীর উপর হজ্ব ফরজ হওয়ার জন্য সঙ্গি হিসেবে কোন মোহরেম পুরুষ থাকা শর্ত। কোন পুরুষ মোহরেম ছাড়া ফরজ হোক নফল হোক হজ্ব আদায় করার জন্য কোন নারীর সফর করা জায়েয নয়। দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “কোন নারী মোহরেম পুরুষের সঙ্গ ছাড়া সফর করবে না।” [সহিহ বুখারী (১৮৬২) ও সহিহ মুসলিম (১৩৪১)]
মোহরেম পুরুষ: স্বামী অথবা এমন কোন পুরুষ যার সাথে বিবাহ-বন্ধন চিরতরে হারাম ঔরসজাত কারণে অথবা দুগ্ধপানের কারণে অথবা বৈবাহিক আত্মীয়তার কারণে।
বোনের স্বামী (দুলাভাই), খালার স্বামী (খালু), ফুফুর স্বামী (ফুফা) মোহরেম নয়। কিছু কিছু নারী এ ব্যাপারে শিথিলতা করে বোন ও বোন জামাই এর সাথে সফর করেন অথবা খালা-খালুর সাথে সফর করেন – এটি হারাম। যেহেতু বোন জামাই বা খালু মোহরেম নয়। তাই এদের সাথে সফর করা জায়েয নয় এবং এভাবে হজ্ব করলে হজ্ব মাবরুর না হওয়ার আশংকা অধিক। কারণ মাবরুর হজ্ব হচ্ছে- যে হজ্বের মধ্যে কোন পাপ সংঘটিত হয় না। এই নারী তার গোটা সফরেই গুনাতে লিপ্ত।
মোহরেম এর ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে- তাকে আকলবান ও সাবালক হতে হবে। কারণ মোহরেম থাকার উদ্দেশ্য হচ্ছে- মোহরেম ব্যক্তি যেন নারীকে হেফাযত করতে পারে। শিশু ও পাগলের পক্ষে তো তা সম্ভব নয়। অতএব, কোন নারী যদি মোহরেম না পান অথবা মোহরেম পাওয়া গেলেও সে মোহরেম যদি তাকে নিয়ে সফরে যেতে অস্বীকৃতি জানায় তাহলে সে নারীর উপর হজ্ব ফরজ হবে না। হজ্ব ফরজ হওয়ার জন্য স্বামীর অনুমতি গ্রহণ শর্ত নয়। বরং স্বামী অনুমতি না দিলেও যদি হজ্ব ফরজ হওয়ার শর্তগুলো পাওয়া যায় তাহলে তার উপর হজ্ব ফরজ হবে।
সামর্থ্যের শর্তগুলো পূর্ণ হলে হজ্ব ফরজ। এ শর্তগুলোর মধ্যে স্বামীর অনুমতি গ্রহণ নেই। স্ত্রীকে হজ্বে যেতে বাধা দেয়া স্বামীর জন্য জায়েয নয়। বরং স্ত্রীকে এই ফরজ ইবাদত আদায়ে সহযোগিতা করা শরিয়তের বিধান। সমাপ্ত।
অবশ্য এটি ফরজ হজ্বের প্রসঙ্গে। নফল হজ্বের ব্যাপারে ইবনুল মুনযির ‘ইজমা’ বর্ণনা করেছেন যে, স্বামীর অধিকার রয়েছে নফল হজ্ব থেকে স্ত্রীকে বাধা দেয়ার। যেহেতু স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার পূর্ণ করা ফরজ। সুতরাং অন্য কোন ফরজ আমল ছাড়া এই অধিকার হতে তাকে বঞ্ছিত করা যাবে না। [মুগনী (৫/৩৫)]
দেখুন: আল-শারহুল মুমতি (৭/৫-২৮)
সূত্র: http://islamqa.info/bn/41957
Post a Comment