![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj9U0PttBmYLyXNj2tczgFEpe3pS0steaZiGlJcQ1AJrMBW66c4pSKk4Qp3XpBLsgqRVoSiifREQ9KRJiMn_2J3EhWIHEc2Z_b5m0GgMt9Y3jWExEvN1lJTPIqG9HHzt-lRoF1_QO3rNuM/s200/russia_L.jpg)
যুল-কারনাইন নামে একজন ন্যায়-পরায়ন বাদশাহ ছিলেন। তার সময়ে ইয়াজুজ মাজুজ নামে দুই্টা সম্প্রদায় মানুষের উপর অনেক অত্যাচার শুরু করে।
ইয়াজুজ মাজুজ হলো আদম (আঃ) এর সন্তানদের মধ্যে দুইটা গোত্র, অর্থাৎ তারা মানুষ ছিলো। তাদের চেহারা বা মুখ ছিলো প্রসারিত আর চোখ ছিলো ছোট। পূর্বদিকের কোনো একটা দেশের দুইটা পাহাড়ের মাঝখানে তাদের ঘাটি ছিলো যেখান থেকে তারা লোকালয়ে এসে তুর্কীদের উপর অনেক নির্যাতন করতো। তারা তাদেরকে হত্যা করতো, তাদের খেত বাগান নষ্ট করতো, এমনকি তাদের শিশুদেরকেও হত্যা করতো – সবদিক থেকেই সর্বনাশ করতো বর্বর এই জাতিগুলো।
যুল-কারনাইন তাদেরকে দেখতে গেলে তারা ইয়াজুজ মাজুজের নামে অভিযোগ করে এবং তাদের ও ইয়াজুজ মাজুজের মাঝখানে একটা দেয়াল তুলে তাদেরকে বন্দী করার জন্য অনুরোধ করে। তখন যুল-কারনাইন পাহাড়ের মাঝখানে যেখানে দিয়ে ইয়াজুজ মাজুজ আসতো সেখানে লোহা ও তামা দিয়ে একটা দেয়াল তুলে দেন। সেই দেয়াল এতো উঁচু আর মজবুত ছিলো যে, ইয়াজুজ-মাজুজেরা সেই দেয়ালের উপর দিয়ে বা ভেঙ্গে আর লোকালয়ে আসতে পারতোনা। আজ পর্যন্ত তারা সেখানে আটকা পড়ে আছে। তারা প্রতিদিন এই দেয়াল গর্ত করে ভাঙ্গার চেষ্টা করে, আর যখন তারা দেয়াল ভেঙ্গে শেষ মাথার খুব কাছাকাছি চলে যায় তখন বলেঃ আজ এই পর্যন্ত থাকুক, আগামীকাল বাকিটুকু শেষ করবো। কিন্তু পরদিন এসে দেখে দেয়াল আবার আগের মতোই হয়ে গেছে। এইভাবে কেয়ামতের খুব আগ পর্যন্ত যাবে। কেয়ামত যখন খুব কাছে চলে আসবে আর ঈসা (আঃ) দাজ্জালকে হত্যা করে ফেলবেন, তখন আল্লাহর ইচ্ছায় তারা একদিন বলবে ইন শা’ আল্লাহ আগামী কাল এসে বাকি দেয়াল ভাংবো। এই ইন শা’ আল্লাহ বলার বরকতে পরিদন তারা এসে দেখবে আজকে দেয়াল আর আগের মতো হয়ে যায়নি। তখন তারা এই দেয়াল ভেঙ্গে ভেদ করে চলে আসবে। তারা এসে মানুষের উপর আবার অনেক হত্যা নির্যাতন শুরু করবে। তারা সংখ্যায় এতো বেশি হবে যে, ফিলিস্তিনের হ্রদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তারা হ্রদের সব পানি খেয়ে শেষ করে ফেলবে! রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এক হাদীসে বলেছেনঃ মানুষের মধ্যে ১০০০ জনে ৯৯৯ জনই জাহান্নামে যাবে, এই জাহান্নামীদের মধ্যে অনেকেই হবে এই ইয়াজুজ ও মাজুজেরা।
ইয়াজুজ মাজুজের ফিতনা কেউ বাঁধা দিতে পারবেনা বা তাদের হাত থেকে বাঁচতে পারবেনা। ঈসা (আঃ) তাঁর অনুসারীদেরকে নিয়ে তুর পাহড়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হবেন। ঈসা (আঃ) এদের বিরুদ্ধে বদ দুয়া করলে এদের মাথায় পোকা হয়ে এরা সবগুলো মারা যাবে। ঈসা (আঃ) মাটিতে অবতরণ করে দেখবেন সারা জমিনে তাদের লাশ ছড়ানো। আল্লাহ তখন মুষলধারে বৃষ্টি নামাবেন আর এর দ্বারা জমীন থেকে তাদের লাশগুলোকে ধুয়ে সরিয়ে ফেলবেন।
বিঃদ্রঃ অনেকে বলে আলেকজান্ডার দি গ্রেট হচ্ছে যুল-কারনাইন। এটা মিথ্যা কথা কারণ, আলেকজান্ডার ছিলো কাফের আর যুলকারনাইন ছিলো ঈমানদার ন্যায়পরায়ন বাদশাহ। আবার অনেকে বলে চীনের মহাপ্রাচীর হচ্ছে যুলকারনাইন যে দেয়াল বানিয়েছেন সেটা। এধারণাও ভুল। আসলে ইয়াজুজ মাজুজের দেওয়াল কোথায় আছে কেউ জানেনা।
এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আপনারা তাফসীর ইবনে কাসীরের ১৪-তম খন্ডের সুরা কাহাফের ৮৩ নাম্বার আয়াত থেকে দেখতে পারেন।
কুরানুল কারীমের এই আয়াতে কারীমাগুলোতে আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লা যুলকারনাইন ও ইয়াজুজ মাজুজ নিয়ে আলোচনা করেছেনঃ
আ'উযুবিল্লা-হিমিনাশ-শাইতানির রাযীম।
৮৩. তারা আপনাকে যুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুনঃ আমি তোমাদের কাছে তাঁর কিছু অবস্থা বর্ণনা করব।
৮৪. আমি তাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম এবং প্রত্যেক বিষয়ের কার্যোপকরণ দান করেছিলাম।
৮৫. অতঃপর তিনি এক কার্যোপকরণ অবলম্বন করলেন।
৮৬. অবশেষে তিনি যখন সুর্যের অস্তাচলে পৌছলেন; তখন তিনি সুর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলেন এবং তিনি সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন। আমি বললাম, হে যুলকারনাইন! আপনি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পারেন।
৮৭. তিনি বললেনঃ যে কেউ সীমালঙ্ঘনকারী হবে আমি তাকে শাস্তি দেব। অতঃপর তিনি তাঁর পালনকর্তার কাছে ফিরে যাবেন। তিনি তাকে কঠোর শাস্তি দেবেন।
৮৮. এবং যে বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে তার জন্য প্রতিদান রয়েছে কল্যাণ এবং আমার কাজে তাকে সহজ নির্দেশ দেব।
৮৯. অতঃপর তিনি এক উপায় অবলম্বন করলেন।
৯০. অবশেষে তিনি যখন সূর্যের উদয়াচলে পৌছলেন, তখন তিনি তাকে এমন এক সম্প্রদায়ের উপর উদয় হতে দেখলেন, যাদের জন্যে সূর্যতাপ থেকে আত্নরক্ষার কোন আড়াল আমি সৃষ্টি করিনি।
৯১. প্রকৃত ঘটনা এমনিই। তার বৃত্তান্ত আমি সম্যক অবগত আছি।
৯২. আবার তিনি এক পথ ধরলেন।
৯৩. অবশেষে যখন তিনি দুই পর্বত প্রচীরের মধ্যস্থলে পৌছলেন, তখন তিনি সেখানে এক জাতিকে পেলেন, যারা তাঁর কথা একেবারেই বুঝতে পারছিল না।
৯৪. তারা বললঃ হে যুলকারনাইন, ইয়াজুজ ও মাজুজ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। আপনি বললে আমরা আপনার জন্যে কিছু কর ধার্য করব এই শর্তে যে, আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন।
৯৫. তিনি বললেনঃ আমার পালনকর্তা আমাকে যে সামর্থ দিয়েছেন, তাই যথেষ্ট। অতএব, তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য কর। আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যে একটি সুদৃঢ় প্রাচীর নির্মাণ করে দেব।
৯৬. তোমরা আমাকে লোহার পাত এনে দাও। অবশেষে যখন পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান পূর্ণ হয়ে গেল, তখন তিনি বললেনঃ তোমরা হাঁপরে দম দিতে থাক। অবশেষে যখন তা আগুনে পরিণত হল, তখন তিনি বললেনঃ তোমরা গলিত তামা নিয়ে এস, আমি তা এর উপরে ঢেলে দেই।
৯৭. অতঃপর ইয়াজুজ ও মাজুজ তার উপরে আরোহণ করতে পারল না এবং তা ভেদ করতে ও সক্ষম হল না।
৯৮. যুলকারনাইন বললেনঃ এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ। যখন আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুত সময় আসবে, তখন তিনি একে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন এবং আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুতি সত্য।
৯৯. আমি সেদিন তাদেরকে দলে দলে তরঙ্গের আকারে ছেড়ে দেব
- সুরা আল-কাহাফঃ ৮৩-৯৯।
Post a Comment