'ইসলাম' আমাকে বাস্তবতা শিখিয়েছে

তখন কলেজে পড়তাম । বন্ধুদের সাথে চলতে গিয়ে তাদের মতোই একটি মানসিকতা লালন করতাম । ভাবতাম কবে কলেজ ছাড়বো, কবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখবো, আর একটি হালাল (?) প্রেম করবো । 'হালাল প্রেম' বলতে এখানে ইসলামিক জ্ঞানের অভাবে ছেলে-মেয়ে দু'জনের সম্মতিতে একটি অবৈধ সম্পর্ককেই বুঝানো হয়েছে । কিন্তু চারপাশের বিপর্যস্ত মানসিকতা আর সমাজের অবহেলায় এই অবৈধ কাজটিই ছিলো আমার ভবিষ্যত চাওয়ার একটি!

কিন্তু মহান আল্লাহ্ সুবহানওয়ার দয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেই চাওয়া-পাওয়া অনেকটা পরিবর্তন হয়ে গেল । ক্লাসের প্রথম দিন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলে-মেয়েদের একসাথে অবাধ চলাফেরার বিষয়টা কেন জানি খারাপ লাগতে শুরু করলো । কিন্তু তখনও 'হালাল প্রেমের' ভূত কিছুটা রয়েই গেল । কিন্তু দিন বাড়ার সাথে সাথে 'হালাল প্রেমের' পেছনের কাহিনী পরিস্কার হতে থাকলো । একবছর না যেতেই আমার হালাল প্রেমের গন্তব্য পরিস্কার হয়ে গেল । কারণ সবাই এই কর্মটি হালাল আর পবিত্রতার নাম নিয়ে শুরু করে কিন্তু তা পরিচালিত করে শতশত হারাম কাজ দিয়ে । আর এ বিষয়টির ব্যাপারে কোন এক ভাই বলেছিলেন, 'বিবাহ পূর্বে আমরা যে কাজটিকে যিনা (ব্যভিচার) বলে জানি, তারা আদর করে ঐটার নাম দিয়েছে প্রেম ' । আসলে শুনতে খারাপ লাগলেও বাস্তবতা তাই । আর না হয়তো প্রতিদিনের পত্রিকায় "মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ........" শিরোণাম আসতোনা । এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা শিক্ষার্থীই এসকল 'হালাল (?) প্রেম ফেরিওয়ালাদের' ঝোপ-ঝারে দৌড় সম্পর্কে অবহিত।

তাই এই দল থেকে মুক্ত থাকতে পেরে আল্লাহ্ সুবহানওয়ার নিকট কৃতজ্ঞ । তিনি তার এক বান্দাকে একটা বড় জাহেলিয়াত থেকে বাঁচিয়ে দিলেন । আর এ বেঁচে যাওয়াই হয়তো পরবর্তীতে আমাকে দ্বীন আল-ইসলামের ব্যাপারে সময় দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে । আলহামদুলিল্লাহ্ ।

এতো ছিলো আমার জীবনের একটি ভয়ানক আশার সহজ নিষ্পত্তি । কিন্তু যখন থেকেই দ্বীন চর্চায় মনযোগ দেই, তখন থেকেই যেন নিজের মূর্খ ভাবনাগুলো ধরা পড়তে থাকলো । এমনি একটি ভাবনা ছিলো 'জন্মদিনের উৎসব পালন' । যদিও কোন সময় পালন করি নাই, তবুও মনে হতো এটা বোধহয় একটা স্মার্টনেস । আসলে এটা একটা মূর্খতা বৈ কিছুই না । যে আমি ২৩ বছর আগে কোন এক শুক্রবারে জন্মেছি, সে আমি আবার ২৩  বছর পর কোন এক রবিবারে জন্মদিন উদযাপন করছি । তার চেয়ে বড় কথা আমি যাকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদর্শ মেনে নেয়ার সাক্ষ্য দিয়েছি, তিনি তা করেননি । বরং এরকম জাহেলিয়াতের বিরুদ্ধে আমাদের সচেতন করে গেছেন । এছাড়া গ্রুপ স্টাডির নামে চোখের আর অন্তরের খিয়ানতের কাজটা প্রায় সময়ই চোখে পড়ে । তারা নিকি জাস্ট ফ্রেন্ড! এ কেমন ফ্রেন্ড তা বুঝতে পারলাম না । সারাদিন ছেলেমেয়ে একসাথে ঘুরবে, মাঝে মাঝে লেখাপড়া নিয়ে দুই-একটা কথা বলবে আর অট্টহাসি দিয়ে অন্য কারোর দৃষ্টি আকর্ষণ করবে! এটাই নাকি গ্রুপ স্টাডি! এটাই নাকি জাস্ট ফ্রেন্ড! এই গ্রুপের এতই শক্ত বন্ধন যে তাদের সৃষ্টিকর্তার নিকট মাথা নত করার আহ্বানও তা ছিন্ন করতে পারে না । তাদের শ্লোগানটা এমন হয়, "আমরা বন্ধুরা বান্ধবীর তরে, মহান সৃষ্টিকর্তার ডাক ছেড়ে" । কতইনা ভয়ানক গ্রুপ স্টাডি!

আলহামদুলিল্লাহ্, অল্প কিছু জ্ঞানের মাধ্যমে আল্লাহ্ সুবহানওয়া এই মূর্খতা থেকে আমাকে রক্ষা করেছেন । আর অন্তর থেকে স্মার্টনেসের জাহেলী ধারণা পরিবর্তন করে একটি নতুন ধারণা দিলেন, 'মুসলিমদের স্মার্টনেস তার সুন্নাহর সমানুপাতিক' । যদিও তা এখনই সবার বুঝে আসবেনা, তবে সেদিন বুঝে আসবেই যেদিন এই সুন্নাহ্ অনুসারীরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পাশে অবস্থান করবেন ।

এরকম অনেক মূর্খ ধারণা আর মন্দ আচরণ থেকে পরিবর্তন করে কিছু আলোকিত চিন্তাভাবনা নিজ মনে সৃষ্টি করার জন্য আল্লাহ্ সুবহানওয়ার নিকট আবারো কৃতজ্ঞ । তাঁর মনোনীত দ্বীন আল ইসলামই পারে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যেতে ।  যে মানুষটি ছোটবেলায় কারো দ্বারা হালকা আঘাত পেলেও বড় হয়ে প্রতিশোধ নেয়ার প্রতিজ্ঞা করতো, সে মানুষই যখন ইসলামকে বুঝতে শিখে তখন বড় বড় আঘাতকেও ক্ষমা করে দেয় পরকালে কিছু পাবার আশায় । সুবহানআল্লাহ! কতো পরিবর্তন । আসলে তা ইসলামের পক্ষেই সম্ভব ।

পরিশেষে এতটুকুই বলি, যে ইসলাম আমাকে চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় আচরণ থেকে রক্ষা করেছে, যে ইসলাম আমার চাওয়া-পাওয়াকে বিপদসীমা অতিক্রম করতে বাধা দিয়েছে, যে ইসলাম আমার কামনা-বাসনাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, সেই ইসলামকে ভালোবাসবো না? অবশ্যই ভালোবাসতে হবে । কারণ ইসলাম একটা ভালোবাসারই বিষয় । আল্লাহ্ আমার এই ভালোবাসা আরো বৃদ্ধি করে দিন । আমীন ।
______
লিখেছেন: এক ভাই

1 Comments

Post a Comment

Previous Post Next Post