সিজদা সাহু করার সঠিক নিয়ম কি ?


আমাদের দেশে প্রচলিত অনেক কিছুই যেমন ঈমান-আকীদা, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি অনেক কিছুর সাথে কুরান ও সুন্নাহর বিপরীত কাজ দেখতে পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “প্রচার করো, একটি মাত্র আয়াত হলেও”।

যেখানে একটি মাত্র আয়াত জানলেও তা প্রচার করতে বলা হয়েছে, আর সেখানে এতো ভুল আর বেদাত দেখে চুপ করে থাকা সমীচিন বলে মনে করছিনা।

সিজদা সাহু সালাম ফেরানোর আগে ও পরে দুইভাবেই করা যায়। তবে আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত মকসুদুল মুমিনীণ নামক বেদাতী বইয়ের সাজদা সাহুর নিয়ম ঠিক নয়।

আমাদের দেশে প্রচলিত ভুল নিয়মঃ
শেষ বৈঠকে শুধু আত্তাহিয়্যাতু পড়ে, শুধু ডান দিকে একবার সালাম ফিরিয়ে দুইটা সিজদা দিয়ে আবার আত্তাহিয়্যাতু দুরুদ পড়ে সালাম ফিরানোর নিয়ম - এটা ঠিকনা, কোন সহীহ হাদীসে সেজাদা সাহু এমন আসেনাই।

সিজদা সাহু করার সঠিক নিয়ম হচ্ছে - “সালাতে কম বেশি যাই হোক, আত্তাহিয়্যাতু, দরুদ, দুয়া মাসুরা পড়ে তাকবীর দিয়ে পর পর দুটি সিজদাহ দিয়ে সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করতে হবে।” -বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত, সালাত অধ্যায়, সাহো অনুচ্ছেদ, ১১৮ নাম্বার হাদীস।

অথবা, “সালাতে কম বেশি যাই হোক, সালামের ফেরানোর আগে বা পরে দুইটি (অতিরিক্ত) সাহু সিজদা দিতে হবে।” -সহীহ মুসলিম, নাওয়াতুল আওতার ৩/৪১১।

অর্থাৎ দুইটাই জায়েজ, সালামের আগে বা পরে দুইটা অতিরিক্ত সিজদা দেওয়া।

সালাম ফেরানোর আগে সিজদা সাহু যেভাবে করবেনঃ
সিজদা সাহু দেওয়া ওয়াজিব হয় এমন কোন ভুল করলে, শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু, দুরুদ, দুয়া মাসুরা পরে ডানে ও বামে দুইদিকে সালাম ফেরাবেন। এরপরে আল্লাহু আকবার বলে দুইটি সিজদা সাহু দেবেন। দুই সিজদার মাঝখানে বা সিজদাতে তাসসবীহর পরে দুয়া করতে পারবেন। ২টা অতিরিক্ত সিজদা দিয়ে আর কিছু পড়তে হবেনা, আবার ডানে ও বামে দুইদিকেই সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করবেন।

তবে আমার কাছে আত্তাহিয়্যাতু ও দরুদ, দুয়া মাসুরা পড়ে দুইটা সিজদাহ সাহু দিয়ে সবার শেষে একবারে সালাম ফিরানোকেই সহজ মনে হয়, কারো ইচ্ছা হলে এমন বা অন্য নিয়মেও করতে পারেন। কিন্তু আত্তাহিয়্যাতু পড়ে একপাশে সালাম ফিরিয়ে আবার তাশাহুদ পড়ার কোনো সহীহ হাদীস নেই।

“এক পাশে সালাম ফিরানো বিদাত” – বলেছেন হানাফী বড় আলেম ইবনুল হুমাম আল-হানাফী (ফতহুল কাদীর ১/২২২ পৃষ্ঠা)।

সিজদা সাহু যে কারণে দিতে হয়ঃ

খুব কমন যে ভুলগুলো আমরা নামাযের মধ্যে করি সেগুলো ও সিজদা সাহু করার সঠিক নিয়ম বর্ণনা করা হলো –

সিজদা সাহু করার সঠিক নিয়মঃ আপনি ২ রাকাত বা ৪ রাকাতের শেষ বৈঠকে বসবেন। আত্তাহিয়্যাতু পড়ে দুরুদ শরীফ, দুয়া মাসুরা পড়বেন। এর পর কোনো সালাম না ফিরিয়ে আপনি অতিরিক্ত দুইটা সিজদা দিবেন, প্রত্যেকবার তাকবীর দিবেন সিজদার সময়ে আর, সিজদার তাসবীহ সুবহা’না রাব্বিয়াল আ’লা পড়বেন। পরে দুইদিকে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করবেন।

১. ৪ রাকাত নামাযের ১ম বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু না পড়েই দাঁড়িয়ে গেলে কি করবেন?
উত্তরঃ দাড়াতে যাচ্ছেন কিন্তু দাড়ান নি, তাহলে আর দাড়াবেন না, বসেই যাবেন। আত্তাহিয়্যতু পড়ে বাকি নামায পুরা করবেন, কোন সিজদা সাহু দেওয়া লাগবেনা। কিন্তু, দাঁড়িয়ে গেলে আর বসবেন না, বাকি নামায শেষ করে উপরে যেই নিয়মে সিজদা সাহু দিতে বলা হয়েছে সেইভাবে সিজদা সাহু দিয়ে নামায শেষ করবেন।

২. ৪ রাকাত নামাযে ২ রাকাত শেষে সালাম ফিরিয়ে ফেললেন। এমন অবস্থায় আবার দাঁড়িয়ে যাবেন, বাকি দুই রাকাত পূর্ণ করে শেষে সিজদা সাহু দিবেন। এমনকি কেউ যদি উঠে অন্য কোথাও চলে যায় মাঝখানে কথাও বলে তবুও সে ২ রাকাত পড়ে শেষে ২টি সিজদা সাহু দিয়ে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করবেন, নতুন করে ৪ রাকাত আবার পড়তে হবেনা। অনুরূপ ১ রাকাত বা ৩ রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে ফেললেও বাকি ১ রাকাত পড়ে শেষ সেজদা সাহু দিবেন।

৩. ২ বা ৪ রাকাত নামাযে কেউ যদি ভুলে অতিরিক্ত ৩য় বা ৫ম রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যায় তাহলে কি করতে হবে?
উত্তরঃ অতিরিক্ত রাকাত পড়ার আগেই বুঝতে পারে বা রাকাত চলা অবস্থায় মনে পড়ে তাহলে রাকাত পূরণ না করেই বসে যেতে হবে, ইচ্ছা করে অতিরিক্ত ১ রাকাত পড়লে নামায ভেঙ্গে যাবে। বসে তাশাহুদ, দুরুদ, দুয়া মাসুরা পড়ে ২টা অতিরিক্ত সিজদা সাহু দিবেন, প্রত্যেক সিজদায় যাওয়ার আগে ও পরে স্বভাবিক নিয়মে "আল্লাহু আকবার" বলে তাকবীর দিবে। ২টা সিজদা সাহু দিয়ে আবার আত্তাহিয়্যাতু বা অন্য কিছু পড়তে হবেনা। কোনো দুয়া না পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করবেন।

আর অতিরিক্ত রাকাত পড়ার পরে কিন্তু সালাম ফেরানোর আগে মনে হলে একই নিয়মে ২টা সিজদা সাহু দেবেন। আর যদি সালাম ফেরানোর পরে, এমনকি মাঝখানে অন্য কাজ বা কথা বলার পরে মনে পড়ে তাহলে যখনই মনে হবে তখন ওযু অবস্থায় কিবলামুখী হয়ে সরাসরি আল্লাহু আকবার বলে ২টা সিজদা দিবেন, ২টা সিজদা সাহু দিয়ে ডানে বামে সালাম ফেরাবেন, আগে বা পরে কোনো কিছু পড়তে হবেনা।

৪. রুকু দুইবার বা সিজদা তিনবার করে ফেললেন। বাকি নামায পূর্ণ করে শেষে সিজদা সাহু দিবেন।

৫. কোনো এক রাকাতে রুকু, সিজদায় উলটা পাল্টা করলেন অর্থাত দিলেন না, বা সুরা ফাতেহা পড়েন নাই। এইগুলো নামাযের রুকন, এইগুলো ছাড়া এক রাকাত হয় না। এইরকম কোনো রুকন ছুটে গেলে ঐ রাকাত নামাযের মধ্যে গণ্য হয়না। এইজন্য আপনি পুরো নামায বাদ দিবেন না। ধরুন ৪ রাকাত পড়ছেন, তাহলে বাকিগুলো ঠিক থাকবে, আপনি চতুর্থ রাকাতের বৈঠকের পর সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে যাবেন, এক রাকাত অতিরিক্ত পড়ে শেষ বৈঠক করে সিজদা সাহু দিবেন।

৬. নামায ২ রাকাত না ৩ রাকাত পড়া হলো সেটা নিয়ে বা কোনো কিছু একটা করেছেন কিনা সন্দেহ দেখ দিলে প্রথম দ্রুত সিদ্ধান্ত নিবেন কোনটা আপনার কাছে বেশি মনে হচ্ছে, ২ রাকাত না ৩ রাকাত। যেটা মনে বেশি জোরালো হবে সেটাকেই ধরবেন আর অন্যটার চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিবেন। আপনি এইভাবে নামায পূর্ণ করবেন আর শেষে সিজদা সাহু দিবেন। আর যদি ২ রাকাত না ৩ রাকাত কোনোটার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে না পারেন, তাহলে কম রাকাত অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে ২ রাকাত ধরে নামায পূর্ণ করবেন আর শেষে সিজদা সাহু দিবেন।

৭. ১ম/৩য় রাকাতে যদি না দাঁড়িয়ে বসে যান তাহলে কি করবেন?
উত্তরঃ কিছুইনা - মনে হলে দাড়িয়ে যাবেন, বাকি নামায শেষ করবেন কোন সাহু সিজদা লাগবেনা। আর যদি বৈঠক করে ফেলেন অর্থাৎ আত্তাহিয়্যাতু পড়া শেষ তাহলে শেষ বৈঠকে সিজদা সাহু দেবেন। উল্লেখ্য, ১ম ও ৩ইয় রাকাতের ২ সিজদার পরে উঠার আগে সরাসরি না উঠে একটু বসে পরে উঠা সুন্নত - একে প্রশান্তির বৈঠক বলা হয়।

বি:দ্র: এখানে চেষ্টা করা হয়েছে সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, অন্য হাদীসে কিতাব ও ফিকহের কিতাব যেমন নায়লুল আওতার, ফাতওয়া আরকানুল ইসলাম, নামাযের উপর বই থেকে সহজ ভাষায় বুঝিয়ে বলার জন্য।

Post a Comment

Previous Post Next Post