ইসলামি ব্যাংকিং : সমস্যা ও প্রস্তাবনা


ইসলামি ব্যাংকিং : সমস্যা ও প্রস্তাবনা
লিখেছেন: মুফতী মুআজ আহমাদ

সুদভিত্তিক আধুনিক ব্যাংক ব্যবস্থার সুচনা হয় ষোড়শ শতকে। এরপর চলে যায় কয়েক শতাব্দি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ১৯৬৩ সালে ড. আহমদ নাজ্জারের উদ্যোগে মিসরের মিটগামারে সর্ব প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী ব্যাংক। বাংলাদেশে এর সুচনা হয় ১৯৮৩ সালে।এরপর শুরু হয় ক্রমবিকাশ। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে অদ্যাবধি এ সল্প সময়ে ইসলামী ব্যাংকগুলোর সাফল্য ঈষর্ণীয়।
ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিংয়ের ভাবধারা অতি প্রাচীন হলেও মধ্যযুগে বিশেষত ইউরোপের শিল্প বিপ্লবকালে পাশ্চাত্যের শোষনমূলক নীতি, মুসলমানদের পারস্পরিক দ্বন্ধ-সংঘাত, অর্থনীতি বিষয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা ও ইসলামী অর্থনীতি প্রয়োগে কার্যকরী উদ্যোগের অভাব ইত্যাদি নানা কারণে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের আত্মপ্রকাশে বিলম্ব ঘটে। এ সুযোগে পাশ্চাত্যের শোষক শ্রেণীর উদ্ভাবিত ও চাপিয়ে দেয়া সুদভিত্তিক ব্যাংকিং গোটা পৃথিবীর অর্থনীতিকে গ্রাস করে নেয়। সেই বিবেচনায় সম্পূর্ণ প্রতিকুল পরিবেশে তদুপরি নবীন হিসেবে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের পথচলা সহজ ছিলো না। বহুমুখী সংকট ও সমস্যা মোকাবেলা করেই তাকে প্রতিনিয়ত এগুতে হয়েছে ও হচ্ছে। এতদসত্তেও বর্তমান বিশে^র প্রায় পঞ্চাশোর্ধ্ব দেশে ইসলামী ব্যাংকগুলো সাফল্যের সাথে তাদের কার্যক্রম আঞ্জাম দিচ্ছে। তাদের এ অগ্রযাত্রা নিসন্দেহে অভিবাদনযোগ্য। এ অগ্রযাত্রায় ব্যাংকগুলোর উদ্যোক্তা, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিকতা ও শ্রম অনস্বীকার্য।

সাফল্য ঈর্ষণীয় হলেও ইসলামী ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এ অভিযোগগুলো দু‘শ্রেণীর। কিছু অভিযোগ একান্তই ইলমী ও ফিকহী জ্ঞান নির্ভর; ইসলামী অর্থায়ন নীতিমালা ও তার আধুনিক রূপায়ন বিষয়ক। অবশ্য ফিকহী তথা ইসলামী আইনের বিভিন্ন ধারা-উপধারা কেন্দ্রিক মতানৈক্য একটি স্বাভাবিক ও চলমান ব্যাপার। এতে ফকীহগণেরে দ্বিমত থাকতেই পারে। প্রবন্ধ-পুস্তক রচনা, ফিকহী সেমিনার ইত্যাদির মাধ্যমে তারা কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে স্বীয় মতামত ও মতানৈক্যের জানান দিয়ে থাকেন। তবে ফকীহ, ইসলামী অর্থনীতিবিদ আলেম-ওলামা ও বিদগ্ধ মহলেই এর বিচরণ সীমাবদ্ধ। সাধারণ্যে এর প্রভাব সামান্যই।

বাকী ব্যাপক ও মূল অভিযোগ হচ্ছে প্রয়োগিক। সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেম-ওলামা ও সাধারণ্যে এ ধারণা বিরাজমান ও বদ্ধমূল যে, ইসলামী ব্যাংকগুলোর বিধিবদ্ধ নিয়মনীতি মোটামুটি ভাবে শরীয়ত সম্মত হলেও বাস্তবে ও কার্যত এর যথার্থ প্রয়োগ নেই। কেউ কেউ বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে এমন মন্তব্য করলেও অনেকে না জেনেই নিছক শ্রুত ও গুজব নির্ভর এমন মন্তব্য করে থাকেন। এদেরই অনেকে আবার ইসলামী ব্যাংককে সুদ ভিত্তিক ব্যাংকের চেয়েও মারাত্মক, জঘণ্য ও ক্ষতিকর বলে সমালোচনা করে থাকেন। তাদের বক্তব্য হচ্ছে ইসলামী ব্যাংকও সুদই খায়। বাকী সুদী ব্যাংকগুলো সরাসরি খায় আর এরা খায় ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে।

অপর দিকে আরেকটি শ্রেণী কিছু সমস্যা রয়েছে স্বীকার করে একে সামগ্রিক ভাবে ইসলামী ব্যাংক হিসেবেই মূল্যায়ন করেন। পক্ষের কেউ কেউ আবার এতে শতভাগ ইসলামী নীতিমালার বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে দাবী করেন।

তবে বিদগ্ধ জনের দৃষ্টিতে উভয় পক্ষেরই এখানে কিছু বাড়াবাড়ি রয়েছে। তাদের মতে এতে শতভাগ শরীয়ার পরিপালন এখনো হয়ে উঠেনি; এটা সত্য। ইচ্ছা-অনিচ্ছায় অনেক ক্ষেত্রেই শরয়ী নীতিমালা লংঘিত হয়। কিন্তু তাই বলে ইসলামী ব্যাংকগুলোকে সুদ ভিত্তিক ব্যাংকের সমতুল্য বা তার চেয়েও নিকৃষ্ট আখ্যা দেয়া সমীচিন নয়। ইসলামীকরণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। এ ধারা অব্যাহত রয়েছে ও ভবিষ্যতেও থাকবে।

যাই হোক, বিরোধিদের সকল অভিযোগ সঠিক না হলেও ইসলামী ব্যাংকগুলো নিজেদের দায় এড়াতে পারে না। তাদের সাফল্যের পেছনে ইসলামী বিনিয়োগ পদ্বতির সুবিধাদি ছাড়াও ইসলামপ্রিয় আমানতকারীদের ভাবাবেগ ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। সুদমুক্ত, নির্ভেজাল ওবৈধ মুনাফা অর্জনের প্রেরণা থেকেই মানুষ তাদের একাউন্টে অর্থ জমা করে। কর্মচারীরাও হালাল জীবিকা কামাইয়ের উদ্দেশ্যেই তাদের এখানে চাকুরী করে। সে হিসেবে ব্যাংকের নীতি নির্ধারকগণ এদের নিকট দায়বদ্ধ। কাজেই তাদের কর্তব্য হচ্ছে সমস্যাগুলোকে উড়িয়ে না দিয়ে পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে অভিযোগগুলোকে আমলে নেয়া এবং সমস্যাগুলোকে চিিহ্নত করে তার সমাধানে ব্রতী হওয়া।

নিম্নে সমস্যার কিছু উৎস ও সমাধানে কিছু প্রস্তাবনা পেশ করা হচ্ছে। আন্তরিকতার সাথে এগুলোকে আমলে নেয়া হলে আমরা আশাবাদী পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝি ও সমস্যাদি অনেকাংশে কেটে যাবে। (ইন শা আল্লাহ্)

সমস্যার উৎস ও কারণ:

১. সুদ ভিত্তিক অর্থব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে আখিরাতের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে ভয় ও জ্ঞান না থাকা।
২. সুদ ভিত্তিক অর্থব্যবস্থার জাগতিক, নৈতিক ও অর্থনৈতিক কুফল সম্পর্কে ধারণা, ভাবনা ও ভয় না থাকা।
৩. রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনৈসলামিক ও সুদ ভিত্তিক অর্থব্যবস্থা।
৪. সুদ ভিত্তিক অর্থব্যবস্থার প্রভাবে সর্বত্র অনৈসলামিক ও শরীয়ত পরিপন্থি চুক্তি ও লেনদেনের অবাধ বিস্তার।
৫. ইসলামী অর্থায়ন পদ্বতি ও লেনদেনের শরয়ী রূপরেখা বিষয়ে জ্ঞান সম্পন্ন, অভিজ্ঞ ও দক্ষ ব্যাংকার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভাব।
৬. শরীয়া ও জেনারেলের সমন্বিত জ্ঞান সম্পন্ন লোকের অভাব।
৭. গ্রাহক পর্যায়ে ইসলামী নীতিমালা সম্পর্কে অজ্ঞতা।
৮. সুদ ও মুনাফার পার্থক্য না বুঝা।
৯. সুদ ভিত্তিক লেনদেনে তুলনামূলক পদ্বতিগত সহজতা।
১০. ইসলামী অর্থনীতিকে যুগোপযোগী ও সহজভাবে উপস্থাপনে প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত কৌশলেরঅপ্রতুলতা।
১১. ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ভোক্তাদের শরীয়া পরিপালনে অবহেলা।
১২. সার্বিক ভাবে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও দায়বোধের অভাব।
১৩. অধিক ও দ্রুত মুনাফা অর্জনের প্রবণতা।
১৪. শরীয়া লংঘনেপ্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা না থাকা বা এর কমতি থাকা।
১৫. কেবল বিকল্প পদ্বতির সীমাবদ্বতা।
১৬. সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সল্পতা।
১৭. আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পারস্পরিক আস্থা, বিশ^াস ও সমন্বয়ের অভাব।
১৮. পর্যাপ্ত গবেষণা ও গবেষকের অভাব।
১৯. মূলধারার আলেম-ওলামাদের সাথে ইসলামী ব্যাংকারদের দূরত্ব ও সমন্বয়হীনতা।
২০.মাযহাব কেন্দ্রিক স্বাতন্ত্র ও সংকীর্ণতা ।
২১. তড়িৎ মন্তব্য ও সিদ্ধান্ত প্রদানের প্রবণতা।
২২. ভিন্ন বিষয়ে যেমন রাজনৈতিক বা আদর্শগত বিষয়ে পারস্পরিক মত পার্থক্য এবং ক্ষেত্র বিশেষ বৈরী মনোবৃত্তি।


প্রস্তাবনা ও সমাধান
মূলত ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা ও তাকে ইসলামী শরীয়ত মতে পরিচালনা করা নিছক কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিশেষের দায়িত্ব নয়। বরং প্রত্যেক মুসলিমরেই দায়িত্ব এ লক্ষ্যে নিজের সাধ্যানুসারে চেষ্টা করা। এ জন্য সকলেরই বিত্তশালী হওয়া জরুরী নয়। সমর্থন, জনমত গঠন, জ্ঞানার্জন ইত্যাদির মাধ্যমেও কেউ এ ক্ষেত্রে ভুমিকা রাখতে পারে। দায়িত্ব যেহেতু সবার; কাজেই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সবারই ইসলামী ব্যাংকের সমস্যা সমাধানকল্পে কিছু করণীয় রয়েছে।

# উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে করণীয়
১. সুদী অর্থনীতির ভয়াবহতা সম্পর্কে সকলকে বিশেষত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সদা সতর্ক রাখবার জন্যে তাদের মাঝে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও চেতনা জাগ্রত করা এবং এতদুদ্দেশ্যে আম ওয়াজ মাহফিল, এতদ সংক্রান্ত প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রচার এবং এ লক্ষ্যে ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সংলাপ, আলোচনা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা।
২. আখিরাতের ভয় আনয়ন ও তা জাগ্রত রাখার উদ্দেশ্যেপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত তালিম-তরবিয়তের ব্যবস্থা রাখা।
৩. রাষ্ট্রীয় ভাবে সুদ বজর্নের উপায় সর্ম্পকে চিন্তা-ভাবনা করা এবং এ লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সচেতনতা তৈরী এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে এ বিষয়ে নিয়মিত মতবিনিময় করা।
৪. সুদ বিরোধী আন্দোলনকে বেগবান ও গতিশীল করা।
৫. ইসলামী অর্থনীতি সর্ম্পকে ওয়াকিফহাল যোগ্য কর্মীদল নিয়োগ করা।
৬. বিশেষত কওমী মাদরাসায় এ বিষয়ে পড়ুয়াদের বিবেচনা করা। তাদের জন্য তাদের জ্ঞানের পরিধি অনুসারে উপযোগী কার্যক্ষেত্র নির্বাচন করা।
৭. কর্মীদের ইসলামী অর্থনীতি সম্পর্কে অবগত করবার উদ্দেশ্যে নিয়মিত ফিকহী সেমিনার, কর্মশালা, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
৮. ইসলামী অর্থনীতির খুটিনাটি সর্ম্পকে জানবার জন্যে পর্যাপ্ত সংখ্যক গ্রন্থাবলী সম্বলিত গ্রন্থাগার ও উম্মুক্ত পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা।
৯. ইসলামী অর্থনীতি বিষয়ে গবেষনার জন্যে প্রয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নে গবেষনাগার নির্মাণ, বাস্তব অর্থে গবেষক নিয়োগ ও গবেষনার যাবতীয় উপকরণ সরবরাহ করা।
১০. ইসলামী ব্যাংকিং সর্ম্পকে লিখিত সহজপাঠ্য পুস্তক গ্রাহক, অনুসন্ধানিৎসু ও শুভাণুধ্যায়ীদের মাঝে বিতরণ করা।
১১. আমানতকারী ও বিনিয়োগ গ্রহিতাদের অভিযোগ-অসন্তোষ জানা ও তাদেও জ্ঞান পিপাসা নিবারণের জন্যে শীর্ষ কর্তাদের উপস্থিতিতে উম্মুক্ত গ্রাহক সভার ব্যবস্থা করা।
১২. শরীয়া পরিপালনে গ্রাহকরা কী জাতীয় সমস্যার সম্মুখীন হয়, তা সরাসরি তাদের থেকে জেনে নিয়ে সমস্যার সমাধান করা।
১৩.ইসলামী মনোভাবাপন্ন গ্রাহক বৃদ্ধির চেষ্টা করা।
১৪. সহযোগী প্রতিষ্ঠান যেমন ইসলামী বীমা কোম্পানি, ইসলামিক এজেন্সী ইত্যাদি গঠনে অর্থায়ন করা।
১৫. কার্যকরী ও দায়বদ্বতা সম্পন্ন শরীয়া বোর্ড গঠন।
১৬. শরীয়া বোর্ডে কেবল নিজ অঙ্গনের লোক বা হাইলাইটস লোক নিবার্চন না করে গ্রহণযোগ্য, মুখলিস, দায়বোধ সম্পন্ন ও ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের নির্বাচন করা।
১৭. শরীয়ার পরিপালন যথাযথ ভাবে হচ্ছে কী না তা যাচাইয়ের জন্য অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা।
১৮. শরীয়া পালনে অবহেলা ও শরীয়া লংঘন প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া।
১৯. অর্থায়নের ক্ষেত্রে যথাসম্ভব শিরকত ও মুদারাবা পদ্বতি অবলম্বন করা।
২০. মুদারাবা, শিরকাত, মুরাবাহা, ইজারা, সালাম বা ইসতিসনা চুক্তির ক্ষেত্রে এতদ সংক্রান্ত শরয়ী নীতিমালা যথাযথ অনুসরণ করা।
২১. মুদারাবা ও শিরকাতের ক্ষেত্রে গ্রাহক সঠিক ভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছে কি না তা যাচাই করা এবং ব্যবসার যাবতীয় হিসাব যথাযথ ভাবে রাখতে তাকে বাধ্য করা।
২২. মুরাবাহা চুক্তির জন্যে আলাদা বিক্রয় প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া।
২৩. ওয়াকালা চুক্তির ক্ষেত্রে ওকিল স্বীয় দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করছে কি না পর্যবেক্ষন করা।
২৪. কোনো বিশেষ পর্যায়ে সুদী লেনদেনে জড়িত হতে বাধ্য হলে তার জন্য আলাদা হিসাবের ব্যবস্থা করা।
২৫. বাধ্যতামূলক সুদ ও অন্য কোনো অবৈধ খাত থেকে অর্জিত অর্থ ও জরিমানার বিকল্প বাধ্যতামূলক দানের অর্থ বৈধ, প্রশ্নমুক্ত ও শরয়ী কল্যানমুখী খাতে ব্যয় নিশ্চিত করা।
২৬. এ জাতীয় খাতের অর্থ শেয়ার হোল্ডার ও আমানতকারীদের মাঝে বন্টিত না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা।
২৭. সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে গুজামিল ও এড়িয়ে যাওয়ার অভ্যাস পরিহার করা। গুরুত্ব সহকারে অভিযোগ আমলে নিয়ে, তা খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
২৮. সকল পর্যায়ে শতভাগ সততা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
২৯. ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করা।

# গ্রাহক, বিনিয়োগ গ্রহিতা ও অন্যদের করণীয়
১. ইসলাম সর্ম্পকে সঠিক ভাবে জানা।
২. আখিরাতে জবাবদিহিতার ভয় হৃদয়ে লালন করা।
৩. ইসলামী অর্থনীতির সাধারণ নীতিমালা সর্ম্পকে জানা।
৪. ইসলামী অর্থনীতির ইহলৌকিক ও পরলৌকিক সুফল সর্ম্পকে ও সুদ ভিত্তিক অর্থনীতির কুফল সর্ম্পকে নিজে জানা এবং অন্যকে জানানো।
৫. আমানত সঞ্চয় বা বিনিয়োগ গ্রহণের ক্ষেত্রে বিজ্ঞ আলেমগণের পরামর্শ নেয়া।
৬. যে পদ্বতিতে সে বিনিয়োগ গ্রহণ করবে সে বিষয় সর্ম্পকে বিস্তারিত জানা।
৭. ব্যাংক থেকে প্রদত্ব নীতিমালার পাশাপাশি বিজ্ঞ আলেমগণ থেকেও তা জেনে নেয়া।
৮. সম্ভব হলে এ সর্ম্পকে কোনো সংক্ষিপ্ত কোর্সে অংশগ্রহণ করা।
৯. বিনিয়োগ গ্রহণের ক্ষেত্রে ইসলামী অর্থায়ন নীতি যথাযথ ভাবে বাস্তবায়নে আন্তরিক হওয়া। যেনতেন ভাবে অর্থ প্রাপ্তির প্রবণতা পরিহার করা।
১০. ব্যাংককে তাদের শরীয়া নীতি বাস্তবায়নে বাধ্য করা।
১১. কোনো কর্মকর্তার শরীয়া অনুকরণে অবহেলা বা গাফলতি পাওয়া গেলে তাৎখনিক তা উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা।
১২. শরীয়া পরিপালনে ন্যায় সংগত উপায়ে ব্যাংকের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা।
১৩. পারস্পরিক সমঝোতা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিংকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এরূপ মনোবৃত্তি হৃদয়ে লালন করা।
১৪. শরীয়া পরিপালনে ব্যাংকের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা থাকলে সেটাকে সাময়িক ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা।
১৫. কোনো পর্যায়ে মুনাফা সন্দেহপূর্ণ ও অবৈধ সাব্যস্ত হলে তা যথাযোগ্য খাতে সদকা করে দেয়া।
১৬. ইসলামী ব্যাংকিং সর্ম্পকে নিজে বা বিজ্ঞ আলেমগণ থেকে সঠিক তথ্য যাচাই করা। যার তার কথায় প্রভাবিত না হওয়া।
১৭. কেবল ব্যাংকিং লেনদেনের ক্ষেত্রেই নয় বরং স্বীয় গোটা অর্থনৈতিক জীবনেই ইসলামী অর্থনীতি অনুসরণ করা।
১৮. ইসলামী অর্থনীতির প্রসারে ভুমিকা রাখা।
১৯. সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল স্তরে ইসলামী অর্থনীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দাওয়াতী কার্যক্রম গ্রহণ করা এবং মেধা ও মেহনতের সর্বাত্মক নিয়োগ করা।
২০. ইসলামী অর্থনীতির বিকাশ ও গবেষনায় অর্থায়ন করা এবং বিত্তবানদের এমর্মে উৎসাহিত করা।
২১. কওমী মাদরাসার শিক্ষার্থীদের ইসলামী অর্থনীতির পাশাপাশি এর আধুনিক রূপায়ন ও আধুনিক অর্থনীতি ও ব্যাংকিংয়ের পরিভাষার সাথে পরিচিতি করানো।
২২. কলেজ, ইউনিভার্সিটিগুলোতে ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং বিভাগ চালু করা।
২৩. তাখাসসুস প্রতিষ্ঠান ও ভার্সিটিগুলোতে এ বিষয়ে উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা রাখা।
২৪. ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং সর্ম্পকে না জেনে বা নিছকই সমালোচনার অভ্যাস বর্জন করা। জেনেশুনে, বাস্তবতা উপলদ্ধি করে গঠনমূলক সমালোচনা ও পর্যালোচনা অব্যাহত রাখা।
২৫. কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা দলের ওপর মিথ্যারোপের বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করা।
২৬. দীর্ঘ মেয়াদি বৃহত্তর লক্ষ্য ও স্বার্থ বিবেচনায় রাখা। ‘বৃহত্তর স্বার্থে তুলনামূলক ক্ষুদ্র বিষয়ে সাময়িক ছাড়’ এ মূলনীতির বিষয়ে সচেতন থাকা।
উল্লিখিত সমস্যা ও প্রস্তাবনাগুলো নিসন্দেহে আলোচনা ও ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। এছাড়া সমস্যার ধরণ ও প্রকৃতি সর্ম্পকে এ যাত্রায় আলোকপাত করা হলো না। ভিন্ন কোনো অবসরে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনাহবে। ইনশাআল্লাহ।


Related searches: মুরাবাহা কাকে বলে, ইসলামী ব্যাংক মাসিক মুনাফা, মুদারাবা সঞ্চয়ী হিসাব কি, ইসলামী ব্যাংক মুদারাবা, ইসলামী ব্যাংকিং পদ্ধতি, বাই ইসতিসনা, ইসলামী বিনিয়োগ পদ্ধতি, সুদ ও ইসলামী ব্যাংকিং, ইসলামী ব্যাংকিং ও অর্থায়ন পদ্ধতি, মুশারাকা কাকে বলে।

Post a Comment

Previous Post Next Post