অনন্তকালের পাথেয়


'আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) একবার এক মেষপালককে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে সিয়াম রেখে পাহাড়ে বকরী চড়াতে দেখে বিস্মিত হলেন। এই তীব্র গ্রীষ্মে যেখানে প্রাণ রাখাই দায়, সেখানে সে সিয়াম রেখে চলেছে। এর কারণ জিজ্ঞেস করলে মেষপালক জবাব দিল-"আমি সেইদিনের জন্য আমল করে নিচ্ছি যেদিন আমল করার কোন সুযোগ থাকবে না"।

নিশ্চয়ই আমরা এমন একটা দিনের মুখোমুখি হতে চলেছি যেদিন আমল করার কোন সুযোগ থাকবে না, অথচ প্রত্যেকেই তা করতে চাইবে। শেষ বিচারের দিন। সেদিন একমাত্র কারেন্সি হবে এই নেক আমল। মৃত্যুর আগেই এই কারেন্সি কামিয়ে নেওয়া না গেলে আখিরাতের বিপর্যয় নিশ্চিত।

আল্লাহ্‌ তাঁর সীমাহীন দয়ার মাধ্যমে দ্বীনকে অত্যন্ত সহজ করে দিয়েছেন। জান্নাতে যাবার অসংখ্য পথ খুলে দিয়েছেন। সারাদিনের চব্বিশঘণ্টার মধ্যে জান্নাত কামাইয়ের অগণিত পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। আমাদের দায়িত্ব কেবল সুযোগের সদ্ব্যবহার করা। আল্লাহ্‌র দেওয়া সুযোগগুলো দুহাত ভরে গ্রহণ করা।

আমলের কোন বিকল্প নেই। দৈনন্দিন জীবনের আমলগুলো এত সহজ অথচ এত বেশি ফযিলতপূর্ণ, বলে শেষ করা যাবে না। আমরা ফেসবুকাররা প্রায়ই দাওয়াহর কাজে এত ব্যস্ত হয়ে পড়ি, যে আমলের দিকে নজর দেওয়া হয় না। অথচ দুটোর ব্যালেন্স করা অতি জরুরি।

আমি কয়েকদিন আগে স্টেইটাস দিয়ে ভাইদের অনুরোধ করেছিলাম তাঁরা যেসব বিশেষ আমল করেন, সেরকম কয়েকটির কথা কমেন্ট বা ইনবক্সে বলতে। আলহামদুলিল্লাহ্‌ অনেকেই জানিয়েছেন। নেক আমল অন্যকে শিখিয়ে দেওয়ার একটা মস্তবড় লাভ আছে। তা হল, যাকে শেখাবেন তার আমলের সওয়াবগুলো আপনার আমলে যুক্ত হবে। এতবড় সুযোগ মূর্খ ছাড়া কে হাতছাড়া করে!

দুয়া এবং জিকিরের অনেক বই আছে। সেগুলো থেকে অগণিত আমল শিখে নেওয়া যায়। তবে সংখ্যায় অনেক বেশি হবে বিধায় আমি চেয়েছিলাম এমন কিছু আমলের ব্যাপারে লিখতে যেগুলো আমি এবং অন্যান্য দ্বীনী ভাইরা প্র্যাকটিস করেন। কারণ আমার নিজের অভিজ্ঞতা বলে, বই পড়ে আমল শেখার চেয়ে অন্য মুসলিমকে করতে দেখে শেখার প্রভাবটা বেশি। সেজন্য কমেন্ট এবং ইনবক্সে পাওয়া ভাইদের কয়েকটি আমল, সেইসাথে আমি নিজে প্র্যাক্টিস করি এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল নিয়ে এই নোটটি লেখা।
তাহলে আমরা শুরু করি, কেমন?

প্রত্যেক ফরয সালাতের পরঃ আয়াতুল কুরসি, তিন তাসবীহ (৩৩ বার করে সুবহানআল্লাহ্‌, আলহামদুলিল্লাহ্‌ ও আল্লাহু আকবার) এবং একবার “লা ইলাহা ইল্লাল্লহু ওয়াহদাহূ লা শারীকালাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই ইন ক্বাদীর" পড়া।
ফজর ও মাগরিবের সালাতের পরঃ তিনবার করে সূরা নাস, ফালাক্ব এবং ইখলাস। তিনবার পড়াঃ
رَضيـتُ بِاللهِ رَبَّـاً وَبِالإسْلامِ ديـناً وَبِمُحَـمَّدٍ صلى الله عليه وسلم نَبِيّـاً ورسولا
উল্লেখ্য, সকাল-সন্ধ্যায় সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত আয়াতের ফজিলত সংক্রান্ত হাদীসটি যইফ।

রাস্তা দিয়ে চলার সময়ঃ
(i) জিকির/তাসবিহ (যেমনঃ সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী সুবহানাল্লাহিল ‘আযীম)
(ii) তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ)
(iii) মুখস্থ সূরাগুলো মনে মনে তিলাওয়াত
(iv) কখনো কানে হেডফোন লাগিয়ে পছন্দের ক্বারীর তিলাওয়াত শোনা। এটা কুরআন মুখস্থে সহায়ক। (সূরা সফ, যারিয়াত, ফজরের মত কিছু সূরার বেশিরভাগ চলতি পথে তিলাওয়াত শুনে মুখস্থ করেছি আলহামদুলিল্লাহ্‌)
(v) রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো।
(vi) দৃষ্টি হিফাযত করা (গায়রে মাহরাম নারীর দিকে দৃষ্টি পড়লে সাথে সাথে ফিরিয়ে নেওয়া)

সিঁড়ি বা অনুরূপ স্থান দিয়ে (যেমন লিফট, ঢালু ভূমি) ওঠানামার সময়ঃ ওঠার সময় তাকবির (আল্লাহু আকবার) এবং নামার সময় তাসবিহ (সুবহানআল্লাহ্‌) পড়া।

খাওয়ার আদবঃ বসে খাওয়া। বিসমিল্লাহি ওয়া ‘আলা বারাকাতিল্লাহ বলে ডান হাত দিয়ে খাওয়া। প্লেট ও হাত চেটে পরিষ্কার করে খাওয়া। খাওয়া শেষে নিম্নোক্ত দুয়া পড়াঃ
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَجَعَلَنَا مِنَ الْمُسْلِمين

পানি পানের আদবঃ পানি পানের ৬ টি আদব। পানি দেখে, বসে, ডান হাতে ধরে (বাম হাতে ধরে ডান হাত স্পর্শ করালে চলবে না, ডান হাতে পুরোপুরি ধরতে হবে), বিসমিল্লাহ বলে, দুই বা তিন ঢোকে খেয়ে, আলহামদুলিল্লাহ্‌ বলা।

জুতা এবং পোশাক পরার আদবঃ পরার সময় ডান পা বা হাতা আগে এবং খোলার সময় বাম পা বা হাতা আগে।

ঈশার সালাতের পরঃ সূরা মুলক তিলাওয়াত

ঘুমানোর সময়ঃ বিছানা তিনবার ঝেড়ে, উযু করে, আয়াতুল কুরসি, সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত, চার ক্বুল, তিন তাসবিহ (৩৩ বার করে সুবহানআল্লাহ্‌ ও আলহামদুলিল্লাহ্‌ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার), “বিসমিকা আল্লাহুম্মা আমূতু ওয়া আহইয়া” বলে ডান কাত হয়ে ঘুমানো।

শুক্রবারের আমলঃ সূরা কাহফ তিলাওয়াত, বেশি বেশি দরুদ পড়া, জুমু’আর সালাতের আগের সুন্নাহগুলো পালন করা।

এছাড়া কিছু অভ্যাসজনিত গুরুত্বপূর্ণ আমলঃ
# ঘরে ঢোকা এবং বের হবার সময় সালাম দিয়ে বের হওয়া। এক রুম থেকে আরেক রুমে গেলেও সালাম দেওয়া, ঘর কেউ না থাকলেও (শূন্য ঘরেও ফিরিশতারা থাকেন। তাঁদের সালাম দেওয়া উচিত)
# উযু অবস্থায় ঘর থেকে বের হওয়া
# ছোট কোন আঘাত পেলেও "ইন্নালিল্লাহ", "আলহামদুলিল্লাহ" বলা; ( গুনাহ মাফ হল, এর থেকেও খারাপ কিছু হতে পারত)
# আযানের জবাব দেওয়া, আযানের পর হাদিসে বর্ণিত দুয়া পড়া (হাত উত্তোলন না করে)
# চলতে ফিরতে ছোট বড় সকলকে সালাম দেয়া। সালাম দিয়ে কথা শুরু ও শেষ করা। শুদ্ধভাবে সালাম দেয়া।
# ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ
# ইখলাস ও নিয়ত বারবার চেক করা
# কথাবার্তায় গীবত থেকে সতর্ক থাকা
# ঘন ঘন ইস্তিগফার এবং
# ঘুমানোর পূর্বে নিজের হক্ব নষ্টকারী সবাইকে মাফ করে দেওয়া।

আজ এই অবধি থাক। নইলে নোটের আকৃতি বিশাল হয়ে পড়বে। বর্ণিত আমলগুলো নিয়মিত করতে চেষ্টা করি, অন্যকে শেখাতে চেষ্টা করি।

(বিঃদ্রঃ যেসব দুয়া বা তাসবিহ বাংলা উচ্চারণে লেখা হয়েছে সেগুলো অবশ্যই তাজউইদ সহকারে পড়তে হবে। আরবী দেখে শিখবেন।)


Collected From: brother Umar Yousuf

1 Comments

Post a Comment

Previous Post Next Post