বিপদ বা মুসীবত মুলত একটা পরীক্ষা। বান্দার এই পরীক্ষা সাধারণত চারভাবে হয়ে থাকে। মহান আল্লাহ তায়ালা বিপদ বা মুসীবত দিয়ে বান্দাকে পরীক্ষা করে থাকেন। আবার কখনো বান্দার কৃতকর্মের কারনে তার উপর বিপদ আপতিত হয়। আবার কখনো বিপদ প্রদানের মাধ্যমে বান্দার গুনাহ ক্ষমা করা হয়। আবার কোন কোনো বান্দার মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধির জন্য মহান আল্লাহ তাদের উপর বিপদ বা মুসীবত প্রেরন করে থাকেন।
আমরা এখানে মোট ৩৩টি আয়াত ও ৩২টি হাদীসের ভাবানুবাদ উপস্থাপন করার মাধ্যমে লেখাটি শেষ করার চেষ্টা করেছি আলহামদুলিল্লাহ্। পাঠকদের অনুধাবনের সুবিধার্থে লেখাটিকে মোট নয়টি শিরোনামে ভাগ করা হয়েছে-
১) আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে বিপদ ও বালা-মুসীবতের মাধ্যমে পরীক্ষা করে থাকেন
২) বান্দার কৃতকর্মের শাস্তি হিসাবে কখনও তার উপর বিপদ নিপতিত হয় যেন তারা আল্লাহ্র দিকে ফিরে আসে
৩) আবার কখনো বিপদ প্রদানের মাধ্যমে মু’মিনের গুনাহ ক্ষমা করা হয়, এমনকি হোঁচট খাওয়ার মতো তুচ্ছ বিপদ হলেও
৪) বিপদ প্রদানের মাধ্যমে মু’মিনের মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়
৫) আল্লাহ কোনো বান্দার কল্যাণ চাইলে তাকে দুনিয়াতে বিপদগ্রস্ত করেন
৬) বড় বিপদের বড় পুরস্কার
৭) নবী-রাসুল ও নেককার বান্দাগনই সবচেয়ে বেশি বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন
৮) যারা দুনিয়াতে বিপদগ্রস্ত ছিল এমন মুমিন ব্যক্তিদেরকে আখেরাতে মহান আল্লাহ তায়ালা বিশাল নেয়ামত দান করবেন, যা দেখে দুনিয়ার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ভোগকারী মানুষেরা আফসোস করতে থাকবে
৯) বিপদগ্রস্ত অবস্থায় করনীয়
আমরা চেষ্টা করেছি দুর্বল ও জাল বর্ণনাগুলো পরিহার করে এই সংক্রান্ত কুরআন ও সহীহ হাদীসের বক্তব্য জড়ো করতে। অনিচ্ছা সত্বেও লেখাটি বড় হয়ে গেল। সম্মানিত পাঠকেরা ধৈর্য সহকারে পাঠ করলে উপকৃত হবেন ইন শা আল্লাহ।
আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে বিপদ ও বালা-মুসীবতের মাধ্যমে পরীক্ষা করে থাকেন
দলীল- ১
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ ‘’আমি তোমাদেরকে অবশ্যই পরীক্ষা করব ভয়, ক্ষুধা, জান ও মালের ক্ষতি এবং ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ তাদের জন্য যারা ধৈর্যশীল এবং যারা বিপদের সময় বলে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) ‘নিশ্চয়ই আমারা আল্লাহ্র জন্য এবং আমাদের সবাইকে তাঁর দিকেই ফিরে যেতে হবে’ এদের প্রতি রয়েছে তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অফুরন্ত নেয়ামত ও রহমত। আর এরাই হিদায়াতপ্রাপ্ত’’ বাকারাহ ২/১৫৫-১৫৭
দলীল- ২
‘’তোমরা কি মনে করো যে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ আল্লাহ এখনও পর্যন্ত পরীক্ষা করেননি তোমাদের মধ্যে কে জিহাদ করেছে আর কারা ধৈর্যশীল’’ আলে ইমরান ৩/১৪২
দলীল- ৩
‘’অবশ্যই তোমরা তোমাদের ধন ও জানের ব্যাপারে পরীক্ষিত হবে এবং তোমরা নিশ্চয়ই তোমাদের আগের কিতাবধারীদের ও মুশরিকদের নিকট হতে দুঃখজনক অনেক কথা শুনবে। তোমরা যদি ধৈর্যধারণ করো আর তাকওয়া অবলম্বন করো অবশ্যই তা হবে দৃঢ় সংকল্পের কাজ’’ আলে ইমরান ৩/১৮৬
দলীল- ৪
‘’আর আমি সত্য বিধান সহ তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি, পূর্ববর্তী কিতাব সমুহেরও সত্যায়নকারী এবং ঐসব কিতাবের বিষয়বস্তুর সংরক্ষকও। কাজেই আল্লাহ যা নাযিল করেছেন মানুষের মধ্যে বিচার ফয়সালা করো তদনুসারে, আর তোমার কাছে যে সত্যবিধান এসেছে তা ছেড়ে দিয়ে তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরন করো না।
আমি তোমাদের মধ্য হতে প্রত্যেকের জন্য একটি শরীয়ত ও একটি কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছি। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে এক উম্মত করতেন। কিন্তু তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন সেই ব্যাপারে তিনি তোমাদের পরীক্ষা করতে চান। কাজেই তোমরা সৎকর্মে অগ্রগামী হও, তোমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন আল্লাহর দিকেই’’ মায়িদাহ ৫/৪৮
দলীল- ৫
‘’তিনিই তোমাদেরকে যমীনের প্রতিনিধি বানিয়েছেন, মর্যাদায় তোমাদের কতককে কতকের উপর স্থান দিয়েছেন। আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি ওগুলোর মাধ্যমে তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য, তোমার রব তো শাস্তি প্রদানে দ্রুত আর তিনি অবশ্যই বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’’ আন’আম ৬/১৬৫
দলীল- ৬
‘’তোমরা কি মনে করো, তোমাদেরকে এমনিই ছেড়ে দেয়া হবে, যে পর্যন্ত আল্লাহ্ জেনে না নিবেন তোমাদের মধ্যে কারা তাঁর পথে জিহাদ করেছে, আর আল্লাহ্, তাঁর রাসুল ও মু’মিনদের ছাড়া অন্য কাউকে বন্ধু ও অভিভাবক হিসাবে গ্রহন করেনি? তোমরা যা করো সে সম্পর্কে আল্লাহ বিশেষভাবে অবহিত’’ তাওবা ৯/১৬
দলীল- ৭
‘’জেনে রেখ! তোমাদেরকে ধন-সম্পদ আর সন্তান-সন্ততির মাধ্যমে পরীক্ষা করা হবে। এই পরীক্ষায় যারা সফল হবে তাদের জন্য আল্লাহর নিকট রয়েছে মহা পুরস্কার’’ আনফাল ৮/২৮
দলীল- ৮
‘’যমীনের উপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোকে তার শোভা বর্ধন করেছি যাতে আমি মানুষকে পরীক্ষা করতে পারি যে, আমলের ক্ষেত্রে কারা উত্তম’’ কাহফ ১৮/৭
দলীল- ৯
‘’প্রত্যেক আত্মাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে। আমি তোমাদেরকে ভালো ও মন্দ দ্বারা পরীক্ষা করি। আমার কাছে তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে’’ আম্বিয়া ২১/৩৫
দলীল- ১০
‘’এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে, আমি (মানুষকে) পরীক্ষা করি’’ মু’মিনুন ২৩/৩০
দলীল- ১১
‘’আমি তোমাদের একজনকে করেছি অপরের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ (কাউকে ধনী, কাউকে গরীব, কাউকে সবল, কাউকে দুর্বল, কাউকে সুস্থ, কাউকে রুগ্ন) দেখি, তোমরা (নিজ নিজ অবস্থার উপর) ধৈর্যধারন করো কিনা। তোমাদের প্রতিপালক সব কিছু দেখেন’’ ফুরকান ২৫/২০
দলীল- ১২
‘’যার কাছে কিতাবের (তাওরাতের) জ্ঞান ছিল সে বলল- আপনার দৃষ্টি আপনার দিকে ফিরে আসার পূর্বেই আমি তা (রানী বিলকিসের সিংহাসন) আপনার কাছে এনে দিব। সুলাইমান যখন তা তাঁর সামনে রক্ষিত দেখতে পেল তখন সে বলল, এটা আমার প্রতি আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ, আমাকে পরীক্ষা করার জন্য- আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, না অকৃতজ্ঞ হই। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে নিজের কল্যাণেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। আর যে অকৃতজ্ঞ হয় (সে জেনে রাখুক) নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত, মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ’’ নামল ২৭/৪০
দলীল- ১৩
‘’আলিফ-লাম-মীম। লোকেরা কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ বললেই তাঁদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে, আর তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? তাদের পূর্বে যারা ছিল আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম। অতঃপর আল্লাহ অবশ্য অবশ্যই জেনে নিবেন কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী’’ আনকাবুত ২৯/১-৩
দলীল- ১৪
‘’মানুষকে বিপদাপদ স্পর্শ করলে আমাকে ডাকে। অতঃপর আমি যখন তাকে আমার পক্ষ থেকে নেয়ামত দিয়ে ধন্য করি তখন সে বলে, আমার জ্ঞান গরিমার বদৌলতেই আমাকে তা দেয়া হয়েছে। না, তা নয়। এটা একটা পরীক্ষা (অনুগ্রহ লাভ করে কে আল্লাহ্র কৃতজ্ঞ হয় আর কে নিজের বড়াই প্রকাশ করে তা দেখার জন্য) কিন্তু (এর গুঢ়তত্ত্ব) তাদের অধিকাংশই বুঝে না।
তাদের আগেও যারা ছিল তারাও এ কথাই বলত, কিন্তু তারা যা করতো তা তাদের কোনই কাজে আসেনি। তাদের কর্মের খারাপ পরিনাম তাদের উপর পতিত হয়েছিল। আর এদের মধ্যেও যারা যুলুম করেছে তাদের কর্মের মন্দ পরিনাম এদেরই উপর পতিত হবে, এরা তা ব্যর্থ করতে পারবে না। এরা কি জানে না যে, আল্লাহ্ যার জন্য ইচ্ছা রিযক প্রশস্ত করেন (পরীক্ষা স্বরূপ) আর যার জন্য ইচ্ছা সংকুচিত করেন? মু’মিন লোকদের জন্য অবশ্যই এতে বহু নিদর্শন রয়েছে’’ যুমার ৩৯/৪৯-৫২
দলীল- ১৫
‘’অতঃপর যখন তোমরা কাফিরদের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হও, তখন তাদের ঘাড়ে আঘাত হানো, অবশেষে যখন তাদেরকে পূর্ণভাবে পরাস্ত করো, তখন তাদেরকে শক্তভাবে বেঁধে ফেল। অতঃপর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ করো, না হয় তাদের থেকে মুক্তিপন গ্রহন করো। তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে, যে পর্যন্ত না শত্রুপক্ষ অস্ত্র সমর্পণ করে। এ নির্দেশই তোমাদেরকে দেয়া হল।
আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে (নিজেই) তাদের উপর প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা একজনকে অন্যের দ্বারা পরীক্ষা করতে চান’’ মুহাম্মাদ ৪৭/৪
দলীল- ১৬
‘’আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো, যতক্ষন না আমি তোমাদের মধ্যে মুজাহিদ ও ধৈর্যশীলদেরকে জেনে নেই এবং আমি তোমাদের অবস্থা পরীক্ষা করি’’ মুহাম্মাদ ৪৭/৩১
দলীল- ১৭
‘’অতি মহান ও শ্রেষ্ঠ তিনি, সর্বময় কর্তৃত্ব যার হাতে, তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। যিনি সৃষ্টি করেছেন মরন ও জীবন যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন- আমলের দিক থেকে তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি সর্বোত্তম’’ মুলক ৬৭/১-২
দলীল- ১৮
‘’আমি এদেরকে (অর্থাৎ মক্কাবাসীদেরকে) পরীক্ষা করেছিলাম, যেমন আমি বাগানের মালিকদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম’’ কালাম ৬৮/১৭
দলীল- ১৯
‘’মহাকালের মধ্য হতে মানুষের উপর কি এমন একটা সময় অতিবাহিত হয়নি যখন সে উল্লেখ করার যোগ্য কোন বস্তুই ছিল না? আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সংমিশ্রিত শুক্রবিন্দু থেকে তাকে পরীক্ষা করার জন্য, এজন্যই তাকে দিয়েছি শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তির অধিকারী। আমি তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে।
আমি (অকৃতজ্ঞ) কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি শেকল, বেড়ি আর জলন্ত আগুন। (অপরদিকে) নেককার লোকেরা এমন পানপাত্র থেকে পান করবে যাতে কর্পূরের সংমিশ্রন থাকবে। আল্লাহ্র বান্দারা একটি ঝর্না থেকে পান করবে। তারা এই ঝর্নাকে (তাদের) ইচ্ছামত প্রবাহিত করবে’’ দাহর ৭৬/১-৬
দলীল- ২০
‘’মানুষ এমন যে, তার প্রতিপালক যখন তাকে পরীক্ষা করেন সম্মান ও অনুগ্রহ দান করে, তখন সে বলে, আমার রব আমাকে সম্মানিত করেছেন। আর যখন তাকে পরীক্ষা করেন তার রিযক সংকুচিত করে, তখন সে বলে, আমার রব আমাকে লাঞ্ছিত করেছেন। না, (রিযক) কক্ষনো (মান-সম্মানের মানদণ্ড) নয়’’ ফাজর ৮৯/১৫-১৭
দলীল- ২১
আবদুল্লাহ ইবন শিখখীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’আদম সন্তানকে তার চারদিকে নিরানব্বইটি বিপদ পরিবেষ্টিত অবস্থায় সৃষ্টি করা হয়েছে। যদি এ বিপদগুলোর সবগুলোই তার ক্ষতি করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সে অন্তত বার্ধক্যজনিত বিপদে পতিত হয়। পরিশেষে মৃত্যুবরণ করে’’ তিরমিযি ২৪৫৬; মিশকাতুল মাসাবীহ ১৫৬৯ (আলবানি হাসান বলেছেন)
বান্দার কৃতকর্মের শাস্তি হিসাবে কখনও তার উপর বিপদ নিপতিত হয় যেন তারা আল্লাহ্র দিকে ফিরে আসেঃ
দলীল- ২২
‘’তোমার পূর্বে আমি অনেক জাতির কাছে রাসুল পাঠিয়েছি, অভাব-অনটন আর দুঃখ কষ্ট দিয়ে তাদেরকে পাকড়াও করেছিলাম যাতে তারা বিনিত হয়’’ আন’আম ৬/৪২
দলীল- ২৩
‘’আমি কোনো জনপদে এমন কোনো নবীই পাঠাইনি, যেখানকার অধিবাসীদেরকে অভাব-অনটন আর দুঃখ-কষ্ট কশাঘাত করেনি, যাতে তারা নম্রতা ও কাতরতা প্রকাশ করে। অতঃপর আমি তাদের দুরবস্থাকে সচ্ছলতা দিয়ে বদলে দিলাম আর শেষ পর্যন্ত তারা প্রাচুর্যে বেড়ে গেল আর বলল, আমাদের পিতৃ-পুরুষদের উপরও এরকম সুখ-দুঃখের দিন আসতো।
অতঃপর আমি তাদেরকে হঠাৎ পাকড়াও করলাম অথচ তারা টেরও করতে পারল না। জনপদগুলোর লোকেরা যদি ঈমান আনত আর তাকওয়া অবলম্বন করতো তাহলে আমি তাদর জন্য আসমান ও যমীনের কল্যাণ উন্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা (সত্যকে) প্রত্যাখ্যান করল। কাজেই তাদের কৃতকর্মের কারনে তাদেরকে পাকড়াও করলাম’’ আ’রাফ ৭/৯৪-৯৬
দলীল- ২৪
‘’পৃথিবীতে আমি তাদেরকে নানা দলে বিভক্ত করে দিয়েছিলাম, তাদের মধ্যে কিছু দল ছিল সৎ, কতক দল অন্য রকম এবং সুখ আর দুঃখ দিয়ে তাদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম যাতে তারা (আল্লাহ্র নির্দেশের) দিকে ফিরে আসে’’ আ’রাফ ৭/১৬৮
দলীল- ২৫
‘’তারা কি দেখে না যে, প্রতি বছরই তাদেরকে একবার বা দু’বার পরীক্ষায় ফেলা হয়, তারপরও তারা তাওবা করে না, আর শিক্ষাও গ্রহন করে না’’ তাওবা ৯/১২৬
দলীল- ২৬
‘’আল্লাহ্ এক জনবসতির দৃষ্টান্ত পেশ করছেন, যা ছিল নিরাপদ, চিন্তা- ভাবনাহীন। সবখান থেকে সেখানে আসতো জীবন ধারনের উপকরন। অতঃপর সে জনপদ আল্লাহ্র নিয়ামতরাজীর প্রতি কুফরী করল, অতঃপর আল্লাহ্ তাদের কৃতকর্মের কারনে ক্ষুধা ও ভয়ভীতির মুসীবত তাদেরকে আস্বাদন করালেন’’ নাহল ১৬/১১২
দলীল- ২৭
‘’মানুষের কৃতকর্মের কারনে জলে-স্থলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, যাতে তিনি তাদেরকে তাদের কোনো কোনো কাজের জন্য শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা (অসৎ পথ হতে ফিরে) আসে’’ রুম ৩০/৪১
দলীল- ২৮
‘’গুরুতর শাস্তির আগে আমি তাদেরকে অবশ্য অবশ্যই লঘু শাস্তি আস্বাদন করাবো যাতে তারা (অনুশোচনা নিয়ে) ফিরে আসে’’ সাজদাহ ৩২/২১
দলীল- ২৯
‘’তোমাদের উপর যে বিপদই উপনীত হয় তা তোমাদের হাতের কামাই, তিনি অনেক অপরাধ ক্ষমা করে দেন’’ শুরা ৪২/৩০
দলীল- ৩০
‘’আমি এদেরকে (অর্থাৎ মক্কাবাসীদেরকে) পরীক্ষা করেছিলাম, যেমন আমি বাগান মালিকদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম। যখন তারা কসম করে বলেছিল যে, তারা সকাল বেলায় অবশ্যই বাগানের ফল সংগ্রহ করে নিবে। তারা ‘ইন শা আল্লাহ্’ বলেনি।
অতঃপর তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে বাগানে এক বিপদ এসে পড়ল যখন তারা নিদ্রিত ছিল। যার ফলে তা হয়ে গেল বিবর্ণ- কাটা ফসলের মতো। সকালে একে অপরকে ডেকে বলল, তোমরা যদি ফল সংগ্রহ করতে চাও, তবে সকাল সকাল ক্ষেতে চল। তারা চুপি চুপি কথা বলতে বলতে চলল- আজ যেন সেখানে তোমাদের কাছে মিসকীনরা অবশ্যই ঢুকতে না পারে। তারা এক (অন্যায়) সিদ্ধান্তে সংকল্পবদ্ধ হয়ে সকাল করল।
অতঃপর তারা যখন বাগানটি দেখল তখন তারা বলল, আমরা অবশ্যই পথ হারিয়ে ফেলেছি, বরং আমরা কপাল পোড়া। তাদের মধ্যকার সবচেয়ে ভালো লোকটি বলল, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, তোমরা আল্লাহ্র পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছ না কেন? তারা বলল, আমরা আমাদের প্রতিপালকের মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করছি, আমরা সীমালঙ্ঘনকারীই ছিলাম। অতঃপর তারা একে অপরের দিকে এগিয়ে গিয়ে পরস্পরকে দোষারোপ করতে লাগলো। তারা বলল, দুর্ভোগ আমাদের, আমরা ছিলাম সীমালঙ্ঘনকারী। সম্ভবত আমাদের প্রতিপালক এর পরিবর্তে আমাদেরকে উত্তম (বাগান) দিবেন, আমরা আমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হলাম। আযাব এরকমই হয়ে থাকে। আর আখেরাতের আযাব তো সবচেয়ে কঠিন, যদি তারা জানতো!’’ কালাম ৬৮/১৭-৩৩
ব্যাপকভাবে পাপে লিপ্ত হওয়ার কারনে আযাব হিসাবে মহান আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন শাস্তি প্রেরন করে থাকেন
দলীল- ৩১
আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেনঃ ‘’হে মুহাজিরগন! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যেন তোমরা তার সম্মুখীন না হও।
যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগ্ররোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি।
যখন কোনো জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের উপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন মুসিবত।
যখন যাকাত আদায় আদায় করেনা, তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি ভূ-পৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো, তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো হতো না।
যখন কোনো জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের উপর তাদের বিজাতীয় শত্রুকে ক্ষমতাশীল করে দেন এবং তারা তাদের সহায়-সম্পদ সবকিছু কেড়ে নেয়।
যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী মীমাংসা করেনা, এবং আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানকে গ্রহন করেনা, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পর যুদ্ধ বাধিয়ে দেন’’ ইবন মাযাহ ৪০১৯; সাহীহাহ ১০৬ (আলবানি হাসান বলেছেন)
আবার কখনো বিপদ প্রদানের মাধ্যমে মু’মিনের গুনাহ ক্ষমা করা হয়। এমনকি হোঁচট খাওয়ার মতো তুচ্ছ বিপদ হলেও
দলীল- ৩২
আবু মুসা আল আশ’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’বড় হোক কিংবা ছোট হোক, বান্দা যেসব দুঃখ কষ্ট পায়, নিশ্চয়ই তা তার অপরাধের কারনে। তবে আল্লাহ যা ক্ষমা করে দেন তা এর চেয়েও অনেক বেশী। অতঃপর তিলাওয়াত করলেন, ‘তোমাদের উপর যেসব বিপদ-আপদ নিপতিত হয়, তা তোমাদের কর্মফলের কারনে, আর আল্লাহ ক্ষমা করে দেন অনেক অনেক বেশী’ (শুরা ৪২/৩০)’’ তিরমিযি; মিশকাতুল মাসাবীহ ১৫৫৮ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
দলীল- ৩৩
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’মুসলিম ব্যক্তির উপর যে সকল বিপদাপদ আসে এর দ্বারা আল্লাহ তার পাপ দূর করে দেন। এমনকি যে কাঁটা তার শরীরে ফুটে এর দ্বারাও’’ বুখারী ৫৬৪০; মুসলিম ৬৪৫৫-(৪৬/২৫৭২)
দলীল- ৩৪
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’কোনো ঈমানদার ব্যক্তির দেহে একটি কাঁটা বিদ্ধ হলে কিংবা তার চেয়ে অধিক ক্ষুদ্র কোনো মুসীবত আপতিত হলে তার পরিবর্তে আল্লাহ তায়ালা তার একটি গুনাহ মাফ করে দেন’’ মুসলিম ৬৪৫৭-(৪৮/...)
দলীল- ৩৫
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’কোনো মুসলিমের উপর কোনো বিপদ নিপতিত হলে তার বিনিময়ে তার গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়, এমনকি ক্ষুদ্রতর কোনো কাঁটা বিদ্ধ হলেও’’ মুসলিম ৬৪৫৯-(৪৯/...)
দলীল- ৩৬
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’ঈমানদার ব্যক্তির উপর কোনো বিপদাপদ আসলে, এমনকি একটি কাঁটা বিদ্ধ হলেও তার বিনিময়ে তার অপরাধ মোচন করা হয় কিংবা তার গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়’’ মুসলিম ৬৪৬০-(৫০/...)
দলীল- ৩৭
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ ‘’ঈমানদার ব্যক্তির উপর কোনো বিপদ আপতিত হলে, এমনকি কোনো কাঁটা বিঁধলেও তার বিনিময়ে তাকে একটি প্রতিদান দেয়া হয় কিংবা তার একটি গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়’’ মুসলিম ৬৪৬১-(৫১/...)
দলীল- ৩৮
আবু সাঈদ খুদরী ও আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তারা উভয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যেঃ ‘’মুসলিম ব্যক্তির উপর যে কষ্ট ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানি আসে, এমনকি যা কাঁটা তার দেহে ফুটে, এ সবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহসমুহ ক্ষমা করে দেন’’ বুখারী ৫৬৪১, ৫৬৪২; মুসলিম ৬৪৬২-(৫২/২৫৭৩); তিরমিযি ৯৬৬; রিয়াদুস সালিহীন ৩৮; মিশকাতুল মাসাবীহ ১৫৩৭
দলীল- ৩৯
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এই আয়াত ‘যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করে, তার প্রতিফল সে ভোগ করবে’ (নিসা ৪/১২৩) অবতীর্ণ হল তখন কতিপয় মুসলিম ভয়ানক দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ ‘’তোমরা মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো এবং সঠিক পন্থা গ্রহন করো। একজন মুসলিম তার প্রত্যেকটি বিপদের পরিবর্তে এমনকি সে আছাড় খেলে কিংবা তার শরীরে কোনো কাঁটা বিদ্ধ হলেও তাতে তার গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়’’ মুসলিম ৬৪৬৩-(.../২৫৭৪)
দলীল- ৪০
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’মুমিন নারী-পুরুষের বিপদ-মুসীবত লেগেই থাকে। এ বিপদ-মুসীবত তার শারীরিক, তার ধন-সম্পদের, তার সন্তান সন্ততির ব্যাপারে হতে পারে। আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তা চলতেই থাকে। আর আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়ার পর তার উপর গুনাহের কোনো বোঝাই থাকে না’’ মিশকাতুল মাসাবীহ ১৫৬৭ (আলবানি সহীহ লিগায়রিহি বলেছেন)
বিপদ প্রদানের মাধ্যমে মু’মিনের মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়
দলীল- ৪১
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’যে কোনো মুসলিমের গায়ে একটি কাঁটা বিদ্ধ হয় কিংবা তার চেয়ে অধিক ছোট্ট কোনো আঘাত লাগে, তার বিনিময়ে তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং তার একটি গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়’’ মুসলিম ৬৪৫৫-(৪৬/২৫৭২)
দলীল- ৪২
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’কোনো ঈমানদার ব্যক্তির শরীরে একটি মাত্র কাঁটার আঘাত কিংবা তার চাইতে নগণ্য আঘাত লাগলে আল্লাহ তায়ালা তার একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেন কিংবা তার একটি গুনাহ ক্ষমা করে দেন’’ মুসলিম ৬৪৫৬-(৪৭/...)
দলীল- ৪৩
মুহাম্মাদ ইবন খালিদ (রহঃ) হতে তাঁর পিতা ও দাদার সুত্রে বর্ণিত। তিনি (দাদা) রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাহচর্য লাভ করেছেন। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ ‘’কোনো ব্যক্তির জন্য বিনাশ্রমে আল্লাহর পক্ষ হতে মর্যাদার আসন নির্ধারিত হলে আল্লাহ তাঁর দেহ, সম্পদ অথবা সন্তানকে বিপদ্গ্রস্ত করেন। অতঃপর সে তাতে ধৈর্য ধারন ধারন করলে শেষ পর্যন্ত বরকতময় মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত উক্ত মর্যাদার স্তরে উপনীত হয়’’ আবু দাউদ ৩০৯০ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
আল্লাহ কোনো বান্দার কল্যাণ চাইলে তাকে দুনিয়াতে বিপদগ্রস্ত করেনঃ
দলীল- ৪৪
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে বিপদগ্রস্ত করেন’’ বুখারী ৫৬৪৫; মিশকাতুল মাসাবীহ ১৫৩৬; রিয়াদুস সালিহীন ৪০
দলীল- ৪৫
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’আল্লাহ তায়ালা যখন কোনো বান্দার কল্যাণ করতে ইচ্ছা করেন, তখন তাড়াতাড়ি দুনিয়াতে তাকে বিপদে নিক্ষেপ করেন। আর যখন তিনি কোনো বান্দার অকল্যাণ করতে ইচ্ছা করেন, তখন তাকে (দুনিয়াতে) তার পাপের শাস্তি প্রদান করা হতে বিরত থাকেন। তারপর কিয়ামতের দিন তিনি তাকে পুরোপুরি শাস্তি দিবেন’’ তিরমিযি ২৩৯৬; মিশকাতুল মাসাবীহ ১৫৬৫ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
বড় বিপদের বড় পুরস্কার
দলীল- ৪৬
আনাস বিন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’বিপদ যত তীব্র হবে, প্রতিদানও তদনরুপ বিরাট হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ কোনো জাতিকে ভালোবাসলে তাদের পরীক্ষা করেন। যে কেউ তাতে সন্তুষ্ট থাকে তার জন্য রয়েছে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি। আর যে কেউ তাতে অসন্তুষ্ট হয়, তার জন্য রয়েছে আল্লাহ্র অসন্তুষ্টি’’ ইবন মাযাহ ৪০৩১; তিরমিযি ২৩৯৬; মিশকাতুল মাসাবীহ ১৫৬৬ (আলবানি হাসান বলেছেন)
নবী-রাসুল ও নেককার বান্দাগনই সবচেয়ে বেশি বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন
দলীল- ৪৭
‘’তোমরা কি মনে করো যে, তোমরাই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ এখনো পর্যন্ত তোমাদের আগের লোকদের মতো অবস্থা তোমাদের সামনে আসেনি। তাঁদেরকে বিপদ ও মুসীবত স্পর্শ করেছিল এবং তাঁরা এতদূর প্রকম্পিত হয়েছিল যে, নবী ও তাঁর সঙ্গের মুমিনগন চিৎকার করে বলেছিল- কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য? জেনে রাখো! আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী’’ বাকারাহ ২/২১৪
আহযাবের যুদ্ধে সাহাবীগণ ভয়াবহ পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন
দলীল- ৪৮
‘’তারা যখন তোমাদের কাছে এসেছিল তোমাদের উপর থেকে আর তোমাদের নীচের দিক থেকে, তখন তোমাদের চক্ষু বিস্ফোরিত হয়েছিল আর প্রান হয়েছিল কণ্ঠাগত। আর তোমরা আল্লাহ্ সম্পর্কে নানা রকম (খারাপ) ধারনা পোষণ করতে শুরু করেছিলে। সে সময় মুমিনদেরকে পরীক্ষা করা হয়েছিল আর তাদেরকে ভীষণ কম্পনে প্রকম্পিত করা হয়েছিল’’ আহযাব ৩৩/১০-১১
দলীল- ৪৯
হুযাইফা (রাঃ) হতে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’তোমরা আমার জন্য প্রত্যেক মুসলমানের সংখ্যা গননা করে রাখো। তিনি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি কি আমাদের নিয়ে ভয় করছেন? অথচ আমরা ৬০০ থেকে ৭০০ জন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বল্লেনঃ ‘’তোমরা জানো না, সম্ভবত তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হবে’’। বর্ণনাকারী বললেন, অতঃপর আমাদেরকে পরীক্ষা করা হল এমনকি আমাদের লোকেরা গোপনে গোপনে সলাত আদায় করতো। সাহীহাহ ২৪৬; মুসলিম ১/৯১, ইবন মাযাহ ২/৩৯২ (আতিফা পাবলিকেশন্স ৯২৬)
নবী-রাসুল ও নেককারদের বিপদাপদ সম্পর্কে সামান্য কয়েকটি হাদীস
দলীল- ৫০
আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে গেলাম। তখন তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি তো ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত। তিনি বললেন, হ্যাঁ। তোমাদের দু ব্যক্তি যতটুকু জ্বরে আক্রান্ত হয়, আমি একাই ততটুকু জ্বরে আক্রান্ত হই। আমি বললাম, এটি এজন্য যে, আপনার জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব। তিনি বললেন, হ্যাঁ তাই। কেননা যে কোনো মুসলিম দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়, তা একটা কাঁটা কিংবা আরও ক্ষুদ্র কিছু হোক না কেন, এর মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ মুছে দেন, যেমন গাছ থেকে পাতাগুলো ঝরে পড়ে’’ বুখারী ৫৬৪৭, ৫৬৪৮, ৫৬৬০, ৫৬৬১, ৫৬৬৭; মুসলিম ৬৪৫৩-(৪৫/২৫৭১); রিয়াদুস সালিহীন ৩৯
দলীল- ৫১
সা’দ ইবন আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ)-কে একবার জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর নবী! কোন ধরনের লোককে বিপদাপদ দিয়ে সবচেয়ে বেশী পরীক্ষা করা হয়? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’নবীদেরকে। তারপর তাদের পরে যারা উত্তম তাদেরকে। মানুষকে আপন আপন দ্বীনদারীর অনুপাতে পরীক্ষা করা হয়। দ্বীনদারীতে যে যত বেশী মজবুত হয় তার বিপর মুসিবত তত বেশী কঠিন হয়। দ্বীনের ব্যপারে যদি মানুষের দুর্বলতা থাকে, তার বিপদও ছোট ও সহজ হয়। এভাবে তার বিপদ হতে থাকে। এ নিয়েই সে মাটিতে চলাফেরা করতে থাকে। পরিশেষে তার কোনো গুনাহখাতা থাকে না’’ তিরমিযি ২৩৯৮; ইবন মাযাহ ৪০২৩; মিশকাতুল মাসাবীহ ১৫৬২ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
দলীল- ৫২
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সাঃ)-এর নিকট গেলাম, তখন তিনি ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। আমি তার উপর আমার হাত রাখলে তাঁর গায়ের চাদরের উপর থেকেই তাঁর দেহের প্রচণ্ড তাপ অনুভব করলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! কত তীব্র জ্বর আপনার।
তিনি বলেন, আমাদের (অর্থাৎ নবী-রাসুলদের) অবস্থা এমনই থাকে। আমাদের উপর দ্বিগুণ বিপদ আসে এবং দ্বিগুণ পুরস্কারও দেয়া হয়। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! কার উপর সর্বাধিক কঠিন বিপদ আসে? তিনি বললেন, নবীগনের উপর।
আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! তারপর কার উপর? তিনি বলেন, তারপর নেককার বান্দাদের উপর। তাদের কেউ এতটা দারিদ্র পীড়িত হয় যে, শেষ পর্যন্ত তার কাছে তার পরিধানের কম্বলটি ছাড়া আর কিছুই থাকে না। তাদের কেউ বিপদে এতো শান্ত ও উৎফুল্ল থাকে, যেমন তোমাদের ধন-সম্পদ প্রাপ্তিতে আনন্দিত হয়ে থাকো’’ ইবন মাযাহ ৪০২৪ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
দলীল- ৫৩
হুসাইন ইবন আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উবাইদাহ ইবন হুজাইফা (রাঃ) থেকে শুনেছি, তিনি তাঁর ফুফু ফাতিমা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি (ফাতিমা) বলেন, আমরা রাসুল (সাঃ)-এর সেবা-শুশ্রসা করার জন্য তাঁর নিকট গেলাম। সেখানে দেখতে পেলাম, একটি মশক রাসুল (সাঃ)-এর দিকে (উপরে) লটকানো রয়েছে। মশক হতে টপকিয়ে পানির ফোঁটা রাসুল (সাঃ)-এর উপর পড়ছিল, জ্বরের তীব্র উষ্ণতা যা তিনি অনুভব করছিলেন তার যন্ত্রনা দূর করার জন্য।
আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! যদি আপনি আল্লাহর নিকট দু'আ করেন তবে তিনি আপনাকে আরোগ্য দান করবেন। রাসুল (সাঃ) বললেনঃ ''মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কষ্টভোগ করে নবীগন। এরপর যারা তার পরে আসেন (অর্থাৎ মহানুভবতায় মহান যারা) এরপর তাদের পরবর্তীগণ এরপর তাদের পরবর্তীগণ (অর্থাৎ সৎ ও নেককার ব্যক্তিগন অধিক যন্ত্রনা ভোগ করেন)'' সাহীহাহ ৩২৬৭ (আলবানি হাসান বলেছেন)
দলীল- ৫৪
ইবন মাস’উদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃ)-কে নবীদের মধ্যে কোনো এক নবীর ঘটনা বর্ণনা করতে শুনেছি, যাকে তাঁর স্বজাতি প্রহার করে রক্তাক্ত করে দিয়েছে, আর তিনি নিজ চেহারা থেকে রক্ত পরিস্কার করছেন আর বলছেন, হে আল্লাহ! তুমি আমার জাতিকে ক্ষমা করে দাও, কেননা তারা জ্ঞানহীন’’ বুখারী ৩৪৭৭, ৬৯২৯; মুসলিম ৪৫৩৮-(১০৫/১৭৯২); ইবন মাযাহ ৪০২৫; রিয়াদুস সালিহীন ৩৭
দলীল- ৫৫
খাব্বাব ইবন আরাত (রাঃ) বলেন, আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কাবা ঘরের ছায়ায় একটি চাদরে ঠেস দিয়ে বিশ্রাম করছিলেন এমতাবস্থায় তাঁর কাছে অভিযোগ করলাম। আমরা বললাম যে, আপনি কি আমাদের জন্য (আল্লাহর কাছে) সাহায্য চাইবেন না? আপনি কি আমাদের জন্য দু’আ করবেন না?
তিনি বললেনঃ ‘’তোমাদের পূর্বের (মুমিন) লোকদের অবস্থা এমন ছিল যে, একটি মানুষকে ধরে আনা হত, তাঁর জন্য গর্ত খুঁড়ে তাঁকে তার মধ্যে পুঁতে রাখা হত। অতঃপর তাঁর মাথার উপরর করাত চালিয়ে তাঁকে দ্বিখণ্ডিত করে দেয়া হত এবং দেহের মাংসের নিচে হাড় পর্যন্ত লোহার চিরুনি চালিয়ে শাস্তি দেয়া হত। কিন্তু (এই কঠোর পরীক্ষার মাধ্যমেও) তারা তাঁকে তাঁর দ্বীন থেকে ফেরাতে পারত না।
আল্লাহর কসম! আল্লাহ নিশ্চয়ই এই ব্যপারটিকে (দ্বীন ইসলামকে) এমন সুসম্পন্ন করবেন যে, একজন আরোহী সান’আ থেকে হাযরামাউত একাই সফর করবে, কিন্তু সে (রাস্তায়) আল্লাহ এবং নিজ ছাগলের উপর নেকড়ের আক্রমন ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করবে না। কিন্তু তোমরা তাড়াহুড়া করছ’’ বুখারী ৩৬১২, ৩৮৫২, ৬৯৪৩; আবু দাউদ ২৬৪৯; রিয়াদুস সালিহীন ৪২
দলীল- ৫৬
আবদুল্লাহ ইবন মাস’উদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, হুনাইন যুদ্ধের গনিমতের মাল বণ্টনের সময় রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কিছু লোককে (তাদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য) প্রাধান্য দিলেন (অর্থাৎ অন্যদের তুলনায় তাদেরকে বেশী মাল দিলেন)। তিনি আকরা ইবন হাবেসকে একশত উট দিলেন এবং উয়ায়না ইবন হিসনকেও তাঁরই মতো দিলেন। এ দেখে একটি লোক বলল, আল্লাহর কসম! এই বণ্টনে ইনসাফ করা হয়নি এবং এতে আল্লাহর সন্তোষ লাভের ইচ্ছা রাখা হয়নি।
আমি (ইবন মাস’উদ) বললাম, আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই আমি এ সংবাদ আল্লাহর রাসুল (সাঃ)-কে দিবো। অতএব আমি তাঁর কাছে এসে এই সংবাদ দিলাম যা সে বলল। ফলে রাসুল (সাঃ)-এর চেহারা পরিবর্তিত হয়ে এমনকি লালবর্ণ হয়ে গেল। অতঃপর তিনি বললেনঃ ‘’যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ইনসাফ না করেন তাহলে আর কে ইনসাফ করবে! আল্লাহ মুসাকে রহম করুন, তাঁকে এর চেয়েও বেশী কষ্ট দেয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি ধৈর্য ধারন করেছিলেন’’ বুখারী ৩১৫০, ৩৪০৫, ৪৩৩৫, ৪৩৩৬, ৬০৫৯, ৬১০০, ৬২৯১, ৬৩৩৬; মুসলিম ১৭৫৯-(১৪০/১০৬২); রিয়াদুস সালিহীন ৪৩
যারা দুনিয়াতে বিপদগ্রস্ত ছিল এমন মুমিন ব্যক্তিদেরকে আখেরাতে মহান আল্লাহ তায়ালা বিশাল নেয়ামত দান করবেন, যা দেখে দুনিয়ার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ভোগকারী মানুষেরা আফসোস করতে থাকবে
দলীল- ৫৭
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’কিয়ামতের দিন ভোগবিলাসে জীবন-যাপনকারীরা যখন দেখবে বিপদ-মুসীবতগ্রস্ত লোকদেরকে সাওয়াব দেয়া হচ্ছে, তখন তারা আক্ষেপ করে বলবে, আহা! যদি দুনিয়াতেই তাদের চামড়া কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলা হত’’ তিরমিযি ২৪০২; মিশকাতুল মাসাবীহ ১৫৭০ (আলবানি হাসান বলেছেন)
বিপদগ্রস্ত অবস্থায় করনীয়- বিপদের প্রথম অবস্থাতেই সবর করা
দলীল- ৫৮
আনাস ইবন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’প্রকৃত সবর হচ্ছে বিপদের প্রথম অবস্থাতেই সবর করা’’ বুখারী ১২৮৩, ১৩০২, ৭১৫৪; মুসলিম ১৫৩৪-(১৪/৯২৬), ১৫৩৫(ক)-(১৫/...); তিরমিযি ৯৮৮; নাসায়ী ১৮৬৯; আবু দাউদ ৩১২৪; ইবন মাযাহ ১৫৯৬; রিয়াদুস সালিহীন ৩২
বিপদে ধৈর্যধারণ
দলীল- ৫৯
আবু মালিক আশ’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’ধৈর্য হচ্ছে আলো’’ মুসলিম ১-(২২৩); ইবন মাযাহ ২৮০; তিরমিযি ৩৫১৭; রিয়াদুস সালিহীন ২৬
দলীল- ৬০
আবু সাইদ সা’দ ইবন মালিক ইবন সিনান খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’যে ব্যক্তি চাওয়া থেকে পবিত্র থাকার চেষ্টা করবে, আল্লাহ্ তাকে পবিত্র রাখবেন। আর যে ব্যক্তি (চাওয়া থেকে) অমুখাপেক্ষিতা অবলম্বন করবে, আল্লাহ্ তাকে অমুখাপেক্ষী করবেন। যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারন করার চেষ্টা করবে আল্লাহ্ তাকে ধৈর্যধারণের ক্ষমতা প্রদান করবেন’’ বুখারী ১৪৬৯, ৬৪৭০; মুসলিম ১০৫৩; তিরমিযি ২০২৪; নাসায়ী ২৫৮৮; রিয়াদুস সালিহীন ২৭
দলীল- ৬১
আবু ইয়াহইয়া সুহাইব ইবন সিনান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’মু’মিনের ব্যাপারটাই আশ্চর্যজনক! তার প্রতিটি কাজে তার জন্য মঙ্গল রয়েছে। এটা মু’মিন ব্যতিত অন্য কারো জন্য নয়। সুতরাং তার সুখ এলে সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ফলে এটা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর দুঃখ পৌছলে সে ধৈর্যধারণ করে। ফলে এটাও তার জন্য কল্যাণকর হয়’’ মুসলিম ২৯৯৯; রিয়াদুস সালিহীন ২৮
দলীল- ৬২
কা’ব ইবন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’মুমিন ব্যক্তির দৃষ্টান্ত হল, শস্যক্ষেতের নরম চারাগাছের মতো, যাকে বাতাস একবার কাত করে ফেলে, আরেকবার সোজা করে দেয়। আর মুনাফিকের দৃষ্টান্ত হল, ভূমির উপর শক্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকা গাছের মতো, যাকে কিছুতেই নোয়ানো যায় না। শেষে এক ঝটকায় মূলসহ তা উপড়ে যায়’’ বুখারী ৫৬৪৩; মুসলিম ৬৯৮৭-(৫৯/২৮১০); তিরমিযি ২৮৬৬; মিশকাতুল মাসাবীহ ১৫৪১
দলীল- ৬৩
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ‘’মুমিনের দৃষ্টান্ত হল এক শস্যক্ষেতের নরম চারাগাছের মতো। শস্যক্ষেতকে যেভাবে বাতাস সবসময় ঝুকিয়ে রাখে, ঠিক এভাবে মুমিনকে বিপদ-আপদ দোলায়, বালা-মুসীবত ঘিরে থাকে। আর ফাসিকের দৃষ্টান্ত হল, শক্ত ভুমির উপর শক্তভাবে সোজা হয়ে দাঁড়ানো গাছের মতো। যাকে আল্লাহ যখন ইচ্ছা ভেঙ্গে দেন’’ বুখারী ৫৬৪৪, ৭৪৬৬; মুসলিম ৬৯৮৫-(৫৮/২৮০৯); তিরমিযি ২৮৬৬; মিশকাতুল মাসাবীহ ১৫৪২
বিপদগ্রস্থ অবস্থায় আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ভরসা করে ধৈর্য ও সলাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করাঃ
দলীল- ৬৪
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ ‘’আমি জিন ও ইনসানকে এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমারই ইবাদত করবে’’ যারিয়াত ৫১/৫৬
আর আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা করা, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্যেশ্যে ধৈর্যধারণ করা, বিভিন্ন নেক আমলের মাধ্যমে বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য আল্লাহর দ্বারস্থ হওয়া সবগুলোই ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।
দলীল- ৬৫
আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ ‘’যদি আল্লাহ্ তোমাদেরকে সাহায্য করেন, তবে কেহই তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না। আর যদি তিনি তোমাদেরকে সাহায্য না করেন, তবে তিনি ছাড়া আর কে আছে যে তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারে। মুমিনদের উচিত শুধুমাত্র আল্লাহর উপর নির্ভর করা’’ আলে ইমরান ৩/১৬০
দলীল- ৬৬
ইবন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোনো এক সময়ে আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর পিছনে বসা ছিলাম। তিনি বললেনঃ ‘’হে তরুন! তুমি আল্লাহর বিধি-নিষেধের রক্ষা করবে, আল্লাহ তায়ালা তোমাকে রক্ষা করবেন। তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখবে, আল্লাহ তায়ালাকে তুমি কাছে পাবে। তোমার কোন কিছুর চাওয়ার প্রয়োজন হলে আল্লাহ তায়ালার নিকট চাও, আর সাহায্য প্রার্থনা করতে হলে আল্লাহর নিকটেই করো।
আর জেনে রাখো, সকল মানুষ মিলে যদি তোমার সামান্যতম উপকার করতে চায় তোমার ভাগ্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে যা নির্ধারণ করা হয়েছে তা ব্যতিত আর কোনই উপকার করতে পারবে না। আর তারা যদি সকলে মিলে তোমার কোন ক্ষতি করতে চায় তাহলেও তোমার ভাগ্যে আল্লাহ যা লিখে রেখেছেন তা ব্যতিত তোমার কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। কলম তুলে নেয়া হয়েছে এবং লিখিত কাগজসমূহও শুকিয়ে গেছে’’ তিরমিযি ২৫১৬; মিশকাত ৫৩০২ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
দলীল- ৬৭
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, মহাপবিত্র আল্লাহ বলেছেনঃ ‘’হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতে মগ্ন হও, আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করবো এবং তোমার দারিদ্র দূর করবো। তুমি যদি তা না করো, তাহলে আমি তোমার অন্তর পেরেশানী দিয়ে পূর্ণ করবো এবং তোমার দারিদ্রতা দূর করবো না’’ ইবন মাযাহ ৪১০৭; তিরমিযি ২৪৬৬ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
দলীল- ৬৮
আবু তামীমাহ আল- হুজাইমী বালাহাজীমের জনৈক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, আমি একদা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাঃ)! আপনি কিসের প্রতি আহবান করেন? তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে এ কথার প্রতি আহবান করি যে, আল্লাহ এক, যাকে কোন মুসিবতে পরে তুমি তাকে ডাকলে তিনি তোমার মুসিবত দূর করেন। তৃণ-পানিহীন বিজন প্রান্তরে হারিয়ে গিয়ে তাঁকে ডাকলে তিনি তোমাকে তোমার (ঠিকানায়) ফিরিয়ে দেন। তিনি ঐ সত্ত্বা যাকে দুর্ভিক্ষে পরে তুমি ডাকলে তোমাকে সচ্ছলতা দান করেন’’ সাহীহাহ ৪২০ আতিফা পাবলিকেশন্স ৯৩১ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
যখন রাসুল (সাঃ) কোনো অস্পষ্ট বিষয়ে বা দুর্বোধ্য কাজে অবতরন করতেন অথবা চিন্তাগ্রস্ত হতেন তখন তিনি সলাত আদায় করতেনঃ
দলীল- ৬৯
সুহাইব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেনঃ ''আম্বিয়াগন শঙ্কিত হলে সলাতের আশ্রয় নিতেন'' সাহীহাহ ১০৬১, ২৪৫৯, ৩৪৬৬ [আতিফা পাবলিকেশন্স ৬৬৬, ৬৭১, ৭১২] (আলবানি সহীহ বলেছেন)
দলীল- ৭০
হুজাইফা (রাঃ) সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ''নবী (সাঃ) কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে সলাত আদায় করতেন’’ আবু দাউদ ১৩১৯; মিশকাতুল মাসাবীহ ১৩২৫ (আলবানি হাদিসটিকে হাসান বলেছেন)
দলীল- ৭১
সুতরাং বিপদ ও চিন্তাগ্রস্ত ব্যাক্তির উচিৎ সলাতে মশগুল হওয়া। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ ''তোমরা ধৈর্য ও সলাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করো, আর তা আল্লাহভীরু ব্যাক্তিবর্গ ছাড়া অন্য সকলের কাছে নিশ্চিতভাবেই কঠিন’’ বাকারাহ ২/৪৫
দলীল- ৭২
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ ‘’হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও সলাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন’’ বাকারাহ ২/১৫৩
Post a Comment