প্রশংসা আল্লাহ সুবাহানওয়া তা'আলার। শান্তি বর্ষিত হোক রাসূল (সা) ও তার অনুসারীদের উপর।
আমি যখন প্রাথমিক বাধা উপেক্ষা করে আল্লাহর দ্বীন ইসলামের প্রতি অগ্রসর হতে থাকবো, তখন নিজের মধ্যে এমন একটি স্পৃহা সৃষ্টি হবে যে, আমার প্রভুর উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের (তাওহীদ ঘোষণা ও প্রতিষ্ঠার) লক্ষে কাজ করতে হবে। আর তখনই প্রয়োজন হবে ইসলামের প্রতিটা বিষয়ে বিস্তারিত জানা ও মানার। তবে তা এই যুগে পুরোপুরি সম্ভব না হলেও পূর্ববর্তী যুগ [রাসূল (সা) ও সাহাবায়ে কেরামগণের যুগ] কে সামনে রেখে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
আর বিস্তারিত জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রেও সর্বাগ্রে থাকবে তাওহীদের জ্ঞান। কারণ আল্লাহর প্রতি ইবাদাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইবাদাত হলো তাওহীদের সাক্ষ্য দেওয়া। আর যখন এই বড় ইবাদাতটি আমার দ্বারা সম্পন্ন হয়ে যাবে, তখন বড় একটি পাপ থেকে মুক্তি পাবো। আর সেই বড় পাপটি হলো শিরক। যার পরিণাম জাহান্নাম। এ সম্পর্কে আল্লাহ সুবাহানওয়া তা'আলা পবিত্র কুরআন মাজীদে বহু হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন।
আল্লাহ সুবাহানওয়া তা'আলা বলেন,
নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। এছাড়া অন্যান্য পাপ, যাকে চান তিনি ক্ষমা করে দেন। আর যে আআল্লাহর সাথে শরীক করে, সে অবশ্যই এক মহাপাপ রচনা করল। -[আন নিসা, আয়াত: ৪৮]
অর্থাৎ শিরক একমাত্র পাপ, যা আল্লাহ ক্ষমা করেন না এবং যার বিনিময়ে জাহান্নাম নিশ্চিত। তাই এই পাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করাই প্রতিটা মানুষের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। আর এই পাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করার একমাত্র উপায় তাওহীদ সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান রাখা।
তবে আমাদেরকে অবশ্যই এই বিষয়ে সতর্ক হতে হবে যে, আমি যার নিকট হতে তাওহীদ শিখতেছি সে তাওহীদ সম্পর্কে পূর্ণ ও সঠিক জ্ঞান রাখে কি না? সে একমাত্র আল্লাহর উপাসনা করে কি না? সে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে কি না?
যদি এই প্রশ্নগুলো থেকে 'হ্যাঁ' উত্তর আসে, তাহলেই তার কাছ থেকে তাওহীদের প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করা যাবে। আর যদি এর বিপরীতে কেউ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে আল্লাহর এককত্ব, আনুগত্য ও গুণের সাথে কোন ব্যক্তি কিংবা বস্তুকে সমতুল্য মনে করে তাহলে ঐ ব্যক্তি যতই ইলমধারী লোক হোক না কেন সে পরিতাজ্য।
আর এই তাওহীদের শিক্ষাকে বুকে নিয়েই আমাকে সামনে চলতে হবে এবং আমার লক্ষ্য হবে এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করার যেখানে সবাই এক আল্লাহর আনুগত্য করবে।
যখন আমার অন্তরে তাওহীদ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা সৃষ্টি হবে এবং সমাজে তাওহীদ প্রতিষ্ঠিত করার আগ্রহ সৃষ্টি হবে, তখন শয়তান তার সর্বোচ্চ বিরোধিতা শুরু করবে। শয়তান প্রথমে আমার অন্তরে এমন কিছু ভাবনা সৃষ্টি করবে, যা মাঝে মাঝে যৌক্তিক বলেও মনে হতে পারে। কিন্তু এর অভ্যন্তরে গোমরাহী ব্যতীত কিছুই নেই। যেমন- হঠাৎ করে মনে হবে, আমার মতো মানুষকে এই কাজ (তাওহীদের দিকে আহ্বান) করার কি প্রয়োজন? এর জন্য অনেক আলেম আছেন। কথাটা অধিকাংশ মানুষ স্বাভাবিক দৃষ্টিতে যৌক্তিক মনে করলেও, এতটুকু ভাবেনা যে এর মাধ্যমে শয়তান তাদেরকে মূল লক্ষ্যবস্তু থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। অথচ এ মর্মে সৃষ্টির সূচনাতেই আল্লাহ সুবাহানওয়া তা'আলা আমাদের থেকে সাক্ষ্য নিয়েছেন যে, বিচার দিবসে আমরা যেন বলতে না পারি- 'আমরা এ ব্যাপারে (আল্লাহর একত্ববাদে) অনবহিত ছিলাম।'
আল্লাহ সুবাহানহুয়া তা'আলা বলেন,
"আর যখন তোমার পালনকর্তা বনী আদমের পৃষ্টদেশ থেকে বের করলেন তাদের সন্তানদেরকে এবং নিজের উপর তাদেরকে প্রতিজ্ঞা করালেন, আমি কি তোমাদের পালনকর্তা নই? তারা বলল, অবশ্যই, আমরা অঙ্গীকার করছি। আবার না কেয়ামতের দিন বলতে শুরু কর যে, এ বিষয়ে আমরা অনবহিত ছিলাম।" -[আল আরাফ, আয়াত: ১৭২]
অর্থাৎ আমরা ইতোমধ্যেই তাওহীদের ঘোষণা দিয়ে ফেলেছি। আর এখন শয়তান চাচ্ছে, আমরা যেন আমাদের অঙ্গীকার থেকে যেকোন মূল্যে ফিরে আসি। যার পরিণতি হবে জাহান্নাম। আর এই জাহান্নাম থেকে রক্ষা পেতেই শয়তান সৃষ্ট নানা রকম কুমন্ত্রণা থেকে নিজেকে রক্ষা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা ও আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে হবে। আর তখনই শয়তান তার প্রাথমিক ব্যর্থতা স্বীকার করবে।
ইসলামে প্রবেশ সিরিজ
লেখক: আরিফুল ইসলাম দিপু
Post a Comment