সুদের ভয়াণক পরিণতি


যারা সুদ খায়, তারা তার ন্যায় (কবর থেকে) উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়। এটা এ জন্য যে, তারা বলে, বেচা-কেনা সুদের মতই। অথচ আল্লাহ বেচা-কেনা হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতএব, যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ আসার পর সে বিরত হল, যা গত হয়েছে তা তার জন্যই ইচ্ছাধীন। আর তার ব্যাপারটি আল্লাহর হাওলায়। আর যারা ফিরে গেল, তারা আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে। [সূরা আল-বাকারা/২, আয়াতঃ ২৭৫]

আল্লাহ সুদকে মিটিয়ে দেন এবং সদাকাকে বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ কোন অতি কুফরকারী পাপীকে ভালবাসেন না। [সূরা আল-বাকারা/২, আয়াতঃ ২৭৬]

হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যা অবশিষ্ট আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা মুমিন হও। [সূরা আল-বাকারা/২, আয়াতঃ ২৭৮]

কিন্তু যদি তোমরা তা না কর তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা নাও, আর যদি তোমরা তাওবা কর, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই থাকবে। তোমরা যুলম করবে না এবং তোমাদের যুলম করা হবে না। [সূরা আল-বাকারা/২, আয়াতঃ ২৭৯]

হে মুমিনগণ, তোমরা সুদ খাবে না বহুগুণ বৃদ্ধি করে। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফল হও। [সূরা আল-ইমরান/৩ আয়াতঃ ১৩০]

আর তাদের সুদ গ্রহণের কারণে, অথচ তা থেকে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল এবং অবৈধভাবে মানুষের সম্পদ খাওয়ার কারণে। আর আমি তাদের মধ্য থেকে কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করেছি যন্ত্রণাদায়ক আযাব। [সূরা আন-নিসা/৪, আয়াতঃ ১৬১]

আর তোমরা যে সূদ দিয়ে থাক, মানুষের সম্পদে বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য তা মূলতঃ আল্লাহর কাছে বৃদ্ধি পায় না। আর তোমরা যে যাকাত দিয়ে থাক আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে (তাই বৃদ্ধি পায়) এবং তারাই বহুগুণ সম্পদ প্রাপ্ত। [সূরা আর-রুম/৩০, আয়াতঃ ৩৯]

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সুদের গুনাহর সত্তরটি স্তর রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র স্তর হলো আপন মাকে বিবাহ (যেনা) করা। [সুনানে ইবনে মাজাহ (তাওহীদ), অধ্যায়ঃ ১২/ব্যবসা-বাণিজ্য, হাদিস নম্বরঃ ২২৭৪, হাদিসের মানঃ সহিহ]

আবদুল্লাহ্‌ ইবন মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূদখোর, সূদদাতা, এর সাক্ষী এবং সূদের দলীল লেখক- সকলের উপর লা'নত করেছেন। [সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ১৭/ ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যাবসা-বাণিজ্য, হাদিস নম্বরঃ ৩৩০০, হাদিসের মানঃ সহিহ]

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অদূর ভবিষ্যতে লোকদের উপর এমন এক সময় আসবে, যখন কেউ-ই সূদ খাওয়া ছাড়া থাকবে না। আর যদিও কেউ সূদ না খায়, তবে সে এর প্রভাব থেকে বাঁচতে পারবে না। ইবন ঈসা বলেনঃ (যদি কেউ সূদ নাও খায়) তবু সে সূদের ধুলা-ময়লা থেকে নিষ্কৃতি পাবে না। [সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ১৭/ ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যাবসা-বাণিজ্য, হাদিস নম্বরঃ ৩২৯৮, হাদিসের মানঃ সহিহ]

উবাদা ইবন সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সোনা সোনার বিনিময়ে সমান সমান বিক্রি করবে, চাই তা সোনার পাত হোক বা স্বর্ণ মুদ্রাই হোক এবং রূপা রূপার বিনিময়ে সমান সমান বিক্রি করবে, চাই তা রূপার পাত হোক বা রৌপ্য মুদ্রাই হোক। আর গম গমের বিনিময়ে এক মুদ এক মুদের বিনিময়ে বিক্রি করতে হবে এবং যবের বিনিময়ে যবও এক মুদের বিনিময়ে এক মুদ বিক্রি করতে হবে। আর খেজুর খেজুরের বদলে এক মুদের বিনিময়ে এক মুদ বিক্রি করতে হবে। একই ভাবে লবণ লবণের বিনিময়ে এক মুদের বদলে এক মুদ বিক্রি করতে হবে। এই প্রকারের একই ধরনের জিনিসের মধ্যে যে ব্যক্তি বেশী নিবে বা দিবে, তা-ই সূদ হবে।

তবে সোনাকে রূপার বিনিময়ে এ অবস্থায় বিক্রি করা, যখন রূপা উভয় অংশের মধ্যে অধিক হবে, তবে তা দূষণীয় নয়। তবে এতে শর্ত হলো- লেন-দেন হাতে হাতে হতে হবে, বাকীতে বিক্রি জায়িয হবে না। একই রূপে গম যবের বিনিময়ে বিক্রি করা দূষণীয় নয়, যখন যবের অংশ উভয়ের মধ্যে অধিক হবে। তবে তা এ শর্তে যে, লেন-দেন হাতে হাতে হতে হবে এবং এতেও বাকী বিক্রি বৈধ নয়। [সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ১৭/ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যাবসা-বাণিজ্য, হাদিস নম্বরঃ ৩৩১৬, হাদিসের মানঃ সহিহ]

মালিক ইবনু আউস ইবনু হাদাসান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এ কথা বলতে বলতে অগ্রসর হলাম যে, দিরহাম বিনিময় (কেনা-বেচা) করতে পারে এমন কে আছে? তখন তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহ (রাঃ) উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) নিকটেই ছিলেন- তিনি বললেন, তোমার স্বর্ণ আমাদেরকে দেখাও এবং তুমি পরে এসো। আমাদের খাদিম যখন আসবে তখন তোমার রৌপ্য দিয়ে দিব। তখন উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বললেনঃ কখনও নয়; আল্লাহর শপথ, হয় তুমি তার দিরহাম এখনই প্রদান কর অন্যথায় তার স্বর্ণ তাকে ফেরৎ দাও। কারণ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ নগদ নগদ (হাতে হাতে বিক্রি) না হলে সুদ হবে, গমের বিনিময়ে গম নগদ নগদ এবং হাতে হাতে (বিক্রি) না হলে সুদ হবে, যবের বিনিময়ে যব নগদ নগদ না হলে সুদ হবে এবং খেজুরের বিনিময়ে খেজুর নগদ নগদই (বিক্রি) না হলে সুদে পরিণত হবে। [সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ২৩/মুসাকাত ও মুযারাত (বর্গাচাষ), হাদিস নম্বরঃ ৩৯১৪]

সামুরা ইবনু জুনদাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ফজর) সালাত (নামায/নামাজ) শেষে আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসতেন এবং জিজ্ঞাসা করতেন, তোমাদের কেউ গত রাতে কোন স্বপ্ন দেখেছ কি? (বর্ণনাকারী) বলেন, কেউ স্বপ্ন দেখে থাকলে তিনি তা বিবৃত করতেন। তিনি তখন আল্লাহর মর্জি মুতাবিক তা’বীর বলতেন। একদিন আমাদেরকে প্রশ্ন করলেন, তোমাদের কেউ কি কোন স্বপ্ন দেখেছ? আমরা বললাম, জী না।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ গত রাতে আমি দেখলাম, দু’জন লোক এসে আমার দু’হাত ধরে আমাকে পবিত্র ভূমির দিকে নিয়ে চললো। হঠাৎ দেখতে পেলাম, এক ব্যাক্তি বসে আছে আর ব্যাক্তি লোহার আকড়া হাতে দাঁড়িয়ে আছে। (ইমাম বুখারী রহ বলেন) আমাদের এক সাথি মূসা (রহঃ) বর্ণনা করেছেন যে, দণ্ডায়মান ব্যাক্তি উপবিষ্ট ব্যাক্তির (এক পাশের) চোয়ালটা এমনভাবে আকড়া দ্বারা বিদ্ধ করছিল যে, তা (চোয়াল বিদীর্ণ করে) মস্তকের পশ্চাদভাগ পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছিল। তারপর অপর চোয়ালটিও পূর্ববৎ বিদীর্ণ করছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ কি হচ্ছে? সাথীদ্বয় বললেন, (পরে কথা হবে এখন) চলুন।

আমরা চলতে চলতে চিৎ হয়ে শায়িত এক ব্যাক্তির পাশে এসে উপস্থিত হলাম, তার শিয়রে পাথর হাতে এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে পাথর দিয়ে তার মাথা চূর্ণ করে দিচ্ছিল। নিক্ষিপ্ত পাথর দূরে গড়িয়ে যাওয়ার ফলে তা তুলে নিয়ে শায়িত ব্যাক্তির নিকট ফিরে আসার পূর্বেই বিচূর্ণ মাথা পূর্ববৎ জোড়া লেগে যাচ্ছিল। সে পুনরায় মাথার উপরে পাথর নিক্ষেপ করছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, লোকটি কে? তাঁরা বললেন, চলুন।

আমরা অগ্রসর হয়ে চুলার ন্যায় এক গর্তের নিকট উপস্থিত হলাম। গর্তের উপরিভাগ ছিল সংকীর্ণ ও নীচের অংশ প্রশস্থ এবং এর নীচদেশ থেকে আগুন জ্বলছিল। আগুন গর্ত মুখের নিকটবর্তী হলে সেখানের লোকগুলোও উপরে চলে আসত যেন তারা গর্ত থেকে বের হয়ে যাবে। আগুণ ক্ষীণ হয়ে গেলে তারাও (তলদেশে) ফিরে যায়। গর্তের মধ্যে বহুসংখ্যক উলঙ্গ নারী-পুরুষ ছিল। জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? তাঁরা বললেন, চলুন।

আমরা চলতে চলতে একটি রক্ত প্রবাহিত নদীর নিকট উপস্থিত হলাম। নদীর মাঝখানে এক ব্যাক্তি দাঁড়ানো ছিল, (ইমাম বুখারী রহ বলেন) ইয়াযীদ ইবনু হারূন ও ওহাব ইবনু জারীল ইবনু হাযিম (রহঃ) বর্ণনায় وعلى شط النهر رجل بين يديه حجارة রয়েছে। নদীর তীরে অপর এক ব্যাক্তি যার সামনে ছিল পাথর। নদীর মাঝখানের লোকটি নদী থেকে বের হয়ে আসার জন্য অগ্রসর হলেই তীরে দাঁড়ানো লোকটি সে ব্যাক্তির মুখ বরাবর পাথর নিক্ষেপ করত, এতে সে তাকে পূর্বস্থানে ফিরিয়ে দিত। এমনভাবে যতবার সে তীরে উঠে আসতে চেষ্টা করে ততবার সে ব্যাক্তি তার মুখ বরাবর পাথর নিক্ষেপ করে পূর্বস্থানে ফিরে যেতে বাধ্য করে। আমি জানতে চাইলাম, এ ঘটনার কারণ কি? তাঁরা বললেন, চলতে থাকুন।
আমরা চলতে চলতে একটি সবুজ বাগানে উপস্থিত হলাম। এতে একটি বড় গাছ ছিল। গাছটির গোড়ায় একজন বয়ঃবৃদ্ধ লোক ও বেশ কিছু বালক-বালিকা ছিল। হঠাৎ দেখি যে, গাছটির সন্নিকটে এক ব্যাক্তি সামনে আগুন রেখে তা প্রজ্জলিত করছে। সাথীদ্বয় আমাকে নিয়ে গাছে আরোহণ করে এমন একটি বাড়ীতে প্রবেশ করালেন যে, এর চেয়ে সুদৃশ্য বাড়ী পূর্বে আমি কখনো দেখিনি। বাড়ীতে বহু সংখ্যক বৃদ্ধ, যুবক, নারী এবং বালক-বালিকা ছিল। এরপর তাঁরা আমাকে সেখান হতে বের করে নিয়ে গাছের আরো উপরে আরোহণ করে অপর একটি বাড়ীতে প্রবেশ করালেন। এটা পূর্বাপেক্ষা অধিক সুদৃশ্য ও সুন্দর। বাড়ীটিতে কতিপয় বৃদ্ধ ও যুবক অবস্থান করছিলেন। আমি বললাম, আজ রাতে আপনারা আমাকে (বহুদূর পর্যন্ত) ভ্রমণ করালেন। এখন বলুন, যা দেখলাম তার তারপর্য কী?
তাঁরা বললেন, হ্যাঁ, আপনি যে ব্যাক্তির চোয়াল বিদীর্ণ করার দৃশ্য দেখলেন সে মিথ্যাবাদী; মিথ্যা কথা বলে বেড়াতো, তার বিবৃত মিথ্যা বর্ণনা ক্রমাগত বর্ণিত হয়ে দূর দূরান্তে পৌঁছে যেতো। কিয়ামত পর্যন্ত তারা সাথে এ ব্যবহার করা হবে।

আপনি যার মাথা চূর্ণ করতে দেখলেন, সে এমন ব্যাক্তি যাকে আল্লাহ কুরআনের শিক্ষা দান করেছিলেন, কিন্তু রাতের বেলায় সে কুরআন থেকে বিরত হয়ে নিদ্রা যেতো এবং দিনের বেলায় কুরআন অনুযায়ী আমল করতো না। তার সাথে কিয়ামত পর্যন্ত এরূপই করা হবে।
গর্তের মধ্যে যাদেরকে আপনি দেখলেন, তারা ব্যভিচারী।
(রক্ত প্রবাহিত) নদীতে আপনি যাকে দেখলেন, সে সুদখোর।

গাছের গোড়ায় যে বৃদ্ধ ছিলেন তিনি ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এবং তাঁর চারপাশের বালক-বালিকারা মানুষের সন্তান।

যিনি আগুন জ্বালাচ্ছিলেন তিনি হলেন, জাহান্নামের খাযিন মালিক নামক ফিরিশতা।
প্রথম যে বাড়ীতে আপনি প্রবেশ করলেন তা সাধারণ মু’মিনদের বাসস্থান। আর এ বাড়ীটি হল শহীদগণের আবাস।

আমি (হলাম) জিবরীল আর ইনি হলেন মীকাঈল। (এরপর জিবরীল আমাকে বললেন) আপনার মাথা উপরে উঠান। আমি উঠিয়ে মেঘমালার ন্যায় কিছু দেখতে পেলাম। তাঁরা বললেন, এটাই হল আপনার আবাসস্থল। আমি বললাম, আমাকে ছেড়ে দিন আমি আমার আবাসস্থলে প্রবেশ করি। তাঁরা বললেন, এখনো আপনার হায়াতের কিছু সময় অবশিষ্ট রয়ে গেছে যা পূর্ণ হয়নি। অবশিষ্ট সময় পূর্ণ হলে অবশ্যই আপনি নিজ আবাসে চলে আসবেন। [সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ২০/জানাযা, হাদিস নম্বরঃ ১৩০৩]

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের মিশ্রিত খেজুর দেওয়া হতো, আমরা তার দু’সা এক সা’-এর বিনিময়ে বিক্রি করতাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এক সা’ এর পরিবর্তে দু’সা এবং এক দিরহামের পরিবর্তে দু’দিরহাম বিক্রি করবে না। [সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ২৬/ক্রয় - বিক্রয়, হাদিস নম্বরঃ ১৯৫০]

মালিক ইবনু আওস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, তিনি ঘোষনা দিলেন যে, কে সারফ এর বেচা-কেনা (দিরহাম এর বিনিময়ে দ্বীনার) করবে? তালহা (রাঃ) বললেন, আমি করব। অবশ্য আমার পক্ষের বিনিময় প্রদানে আমার হিসাব রক্ষক গা’বা (এলাকা) থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত দেরী হবে। (বর্ননাকারী) সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, আমি যুহরী (রহঃ) থেকে এটুকু মনে রেখেছি, এর থেকে বেশী নয়। এরপর যুহরী (রহঃ) বলেন, মালিক ইবনু আওস (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, তিনি উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ননা করতে শুনেছেন যে, তিনি বলেছেন, নগদ হাতে হাতে বিনিময় ছাড়া সোনার বদলে সোনা বিক্রি, গমের বদলে গম বিক্রি, খেজুরের বদলে খেজুর বিক্রি, যবের বদলে যব বিক্রি করা সুদ হিসাবে গণ্য। [সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ২৬/ক্রয় - বিক্রয়, হাদিস নম্বরঃ ২০০১]
আবূ সাঈদ খুদরী ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে খায়বারে তহসীলদার নিযুক্ত করেন। তিনি জানীব নামক (উত্তম) খেজুর নিয়ে উপস্থিত হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, খায়বারের সব খেজুর কি এ রকমের? সে বলল, না, মহান আল্লাহর কসম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এরূপ নয়, বরং আমরা দুই সা’ এর পরিবর্তে এ ধরনের এক সা’ খেজুর নিয়ে থাকি এবং তিন সা’ এর পরিবর্তে এর দুই সা’। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এরূপ করবে না। বরং মিশ্রিত খেজুর দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে দিরহাম দিয়ে জানীব খেজুর খরিদ করবে। [সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ২৬/ক্রয় - বিক্রয়, হাদিস নম্বরঃ ২০৬১]

আবূ সাইদ খুদরী ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাহাবীকে খায়বারের শাসক নিয়োগ করলেন। তিনি বেশ কিছু উন্নতমানের খেজুর তাঁর নিকটে নিয়ে আসলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, খায়বারের সব খেজুরই কি এরকম? তিনি বললেন, ‘আমরা দু’ সা’র বদলে এর এক সা’ কিনে থাকি কিংবা তিন সা’র বদলে দু’ সা’ কিনে থাকি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এরূপ কর না। মিশ্রিত খেজুর দিরহাম নিয়ে বিক্রি কর। তারপর এ দিরহাম দিয়েই উন্নতমানের খেজুর ক্রয় কর। ওযনে বিক্রয়যোগ্য বস্তুসমূহের ব্যাপারেও তিনি অনুরূপ বলেছেন। [সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৩২/ ওয়াকালাত, হাদিস নম্বরঃ ২১৫৫]

আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যাক্তি বাজারে পন্য আমদানী করে মহান আল্লাহ্ তা’আলার নামে কসম খেল যে, এর এতো দাম লাগানো হয়েছে, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তা কেউ বলেনি। এতে তার উদ্দেশ্য সে যেন কোন মুসলমানকে পন্যের ব্যাপারে ধোঁকায় ফেলতে পারে। এ প্রসঙ্গে আয়াত নাযিল হয়, যারা মহান আল্লাহ্ তা’আলার সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছমূল্যে বিক্রি করে। (৩ঃ ৭৭) [সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ২৬/ক্রয় - বিক্রয়, হাদিস নম্বরঃ ১৯৫৮]

আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে তোমরা বিরত থাকবে। সাহাবীগন বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সেগুলো কি? তিনি বললেন, (১) আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা। (২) যাদু (৩) আল্লাহ তাআলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, শরীয়ত সম্মত ব্যতীরেকে তাকে হত্যা করা (৪) সুদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের মাল গ্রাস করা (৬) রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং (৭) সরল প্রকৃতির সতী মুমিন নারীদের অপবাদ দেওয়া। [সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৪৭/অসিয়াত, হাদিস নম্বরঃ ২৫৭৮]

আবূ বুরদা (রহঃ) বলেন, আমি মদিনায় গেলাম; আবদুল্লাহ ইবনু সালামের সাথে আমার সাক্ষাৎ হল। তিনি আমাকে বললেন, তুমি আমাদের এখানে আসবে না? তোমাকে আমি খেজুর ও ছাতু খেতে দেব এবং একটি (মর্যাদাপূর্ণ) ঘরে থাকতে দেব। অতঃপর তিনি বললেন, তুমি এমন স্থানে (ইরাক) বসবাস কর, যেখানে সুদের কারবার অত্যন্ত ব্যাপক। যখন কোন মানুষের নিকট তোমার কোন প্রাপ্য থাকে আর সেই মানুষটি যদি তোমাকে কিছু ঘাস, খড় অথবা খড়ের ন্যায় নগণ্যবস্তুও হাদীয়া পেশ করে তা গ্রহণ করো না, যেহেতু তা সুদের অন্তর্ভুক্ত। [সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৫০/আম্বিয়া কিরাম (আঃ), হাদিস নম্বরঃ ৩৫৪২]

অতএব, আমরা কি সাবধান হবো না?

Post a Comment

Previous Post Next Post