তিনিই আমার রব


আপন বলতে একদম আপন কিংবা কাছের কাউকে আমরা বুঝি। তাই হয়তো কথায় কথায় বলে উঠি 'সে আমার সব থেকে আপন' আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় এই পৃথিবীতে আপনার আপন বলতে কে আছে? জাবাবে একেক জন একেক উত্তর দেবেন — কেউ বলবেন; মা, কেউ বাবা, কেউ বা বাবা-মা উভয়, যাদের বাবা-মা নেই তারা হয়তো অন্য কাউকে ম্যানশন করে বলবে।

আবার নতুন আবেগে ডুব দেয়া কোন তরুণ-তরুণীকে একথা জিজ্ঞেজ করলে তাদের উত্তরটা হবে আরেকটু ভিন্ন — তারা বলবে 'আমার বয় ফ্রেন্ডকে আমার সব থেকে আপন মনে হয়' 'আমার গার্ল্ডফ্রেন্ডকে সব থেকে আপন মনে হয়'— ইত্যাদি কথা। এটা হয়তো তারা মনে করে নয়তো এমনটিই তাদের ভাবনা। যাকে যত বেশি ভালোবাসবেন তাকে তো আপন ভাবতে মন চাইবেই — মন পিঞ্জরে তাকে ব্যতিত অন্য কারো স্থানই যে নেই!

এই ইহলোকে আমাদের একেকজনের একেক ব্যক্তি 'আপন'। এই লাইনটা পড়েছেন যারা খেয়াল করলে দেখবেন 'ইহলোক' কথাটা আছে, তার মানে এই দুনিয়া পর্যন্তই আপন মানুষগুলোর এক্সপায়ার ডেট। অন্তহীন পরকালে তাদের পাওয়ার সুযোগ দুষ্কর! তারা তো এই ভব মায়াতেই পাশে থাকবে — আবার এমনও হয় কেউ কেউ এই দুনিয়ার জীবনেই ধোঁকার এক রাশ জলে নাকানিচুবানি খাওয়ায়। ব্যস! আপনার মন কাঁচের মতো ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। মনে হয় মন ভাঙ্গা কিংবা আপন মানুষ হতে কোন রকম খারাপ আচরণের চেয়ে পৃথিবীতে খারাপ কিছু আর হয় না।

আপন মানুষের 'আপনিত্ব' নিয়ে জানলাম। লেখাটা পড়ে মনে হয় না আপনার এই পৃথিবীতে আদৌ আপন বলতে কেউ আছে! কিন্তু একজন আছেন — সব থেকে আপন। যিনি কখনো আপনাকে পর করবেন না। আচ্ছা সে কেমন? বলছি শোনোন;
তিনি বলেন :

“এবং যখন আমার কোন বান্দা আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞেস করে তখন তাদেরকে বলে দাও- নিশ্চয় আমি সন্নিকটবর্তী। কোন আহ্বানকারী যখনই আমাকে ডাকে করে তখনই আমি তার ডাকে সাড়া দিয়ে থাকি। সুতরাং তারাও যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমাকে বিশ্বাস করে- তা হলেই তারা সিদ্ধ মনোরথ হতে পারবে।” (সূরাহ বাকারাহ : ১৮৬)

আপনার রব আপনার অতি নিকটে তিনি আপনাকে ছেড়ে যান না। আপনার রব বলছেন :

“তোমার রব তোমাকে পরিত্যাগ করেননি এবং অসন্তুষ্টও হননি।” (সূরাহ আদ-দুহা : ০৩)

এই আয়াতের শানে নুযুল খুব চমৎকার। আল্লাহ হাবীব রাসূল (সাল্লাল্লাহু' আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট বেশ কিছুদিন ওহী আসা বন্ধ ছিল এতে তৎকালীন কুফফাররা রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু' আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে কথা শোনাতে লাগল 'মুহাম্মাদের রব মুহাম্মাদকে ভুলে গিয়েছে' — নাবী কারীম (সাল্লাল্লাহু' আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সান্তনা দিতে আল্লাহ সূরাহ আদ -দুহা নাজিল করলেন। আর জানিয়ে দিলেন তিনি তার পিয়ারা হাবীব রাসূল (সাল্লাল্লাহু' আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে কখনও ভুলেননি এবং তার উপর অসন্তুষ্টও হননি। সুবহানাল্লাহি ওয়াবি হামদিহি!

ঠিক তেমনি ভাবে দুনিয়ার জীবনে কেউ আপনাকে পর করলে আপনার রব আপনাকে সূরাহ আদ-দুহার মাধ্যমে ডাকেন। তিনিই আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, আপনাকে কখনো ছেড়ে যাবেন না। দুনিয়ার মেকি আপন মানুষগুলো মেকি প্রতিশ্রুতিতে আপনাকে ভুলাতে পরলেও আপনার রবের প্রতিশ্রুতি কখনও মিথ্যা হবার নয়। তথাকথিত, আপন মানুষগুলো সময়ের ব্যবধানে রূপ বদলায় কিন্তু তিনি? তিনি আপনার ডাকের অপেক্ষায় থাকেন। এত অবাধ্যতা, এত নাফরমানির পরেও আপনার প্রতি রাগ করে, আপনাকে ছেড়ে যান না।

এর পর আল্লাহ আপনার স্থায়ী ঠিকানা আখেরাতে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন এই দুনিয়ার নগন্যতা বুঝানোর জন্য কি সুন্দর বলছেন :

“আর অবশ্যই তোমার জন্য পরবর্তী সময় পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে উত্তম।” (সূরাহ আদ-দুহা : ০৪)

এরপর সুমহান রাব্বে কারীম তাঁর নাবীকে খুশি করার জন্য দুনিয়ার জীবনের কষ্ট, যাতনা, না-পাওয়ার বেদনার বিনিময়ে আখেরাতের অন্তহীন সুখের কথা বর্ণণা করছেন। তিনি বলেন :

“আর অচিরেই তোমার রব তোমাকে দান করবেন, ফলে তুমি সন্তুষ্ট হবে।” (সূরাহ আদ-দুহা : ০৫)

দুনিয়ার আপনজন দুনিয়া অবধিই, কিন্তু আসল আপনজন দুনিয়া ও আখেরাত উভয়খানেই রয় (লিল্লাহিল হামদ)। আপন যদি কাউকে করতেই হয় মহান রাব্বে কারীম আল্লাহ আযযা ওয়া জাল -কে করুন। তিনিই আপনার সব থেকে আপন।

হে আমার রব আমাদের আপনি আপন করে নিন সকল একাকিত্ব দূর করে আপনার সব থেকে কাছে টেনে নিন। আমীন!
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
লেখাঃ সিয়াম ভূঁইয়া (আল্লাহ্‌ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)

2 Comments

  1. জাযাকাল্লাহ খাইরান খাইরান ফা-ইন্নাল্লাহা শাকিরুণ

    ReplyDelete
  2. আল্লাহ আপনাদের এই মেহনত কবুল করুক ।

    ReplyDelete

Post a Comment

Previous Post Next Post