এক টুকরো সিরাত ০২


মদিনা,

রাসুল (সঃ) স্বপ্নের মাধ্যমে জানতে পারলেন , কুরাশাইদের বানিজ্যিক কাফেলা শাম থেকে ফিরছে । মুলত কুশাইশদের অর্থনৈতিক ব্যাবস্থার বড় একটা অংশ ছিলো এই বানিজ্যিক কাফেলা । এই কাফেলায় ছিলো সমগ্র কুরাইশদের অংশ । আবু সুফিয়ান ছিলেন এই কাফেলার অধিনায়ক । কুরাইশের শক্তি অন্যতম উৎস ছিলো এই বানিজ্য আর বানিজ্যিক পুজি । তাদের এই বিত্ত বৈভব , অর্থনৈতিক ভাবে সক্ষমতা তাদের অহংকার , তাদের দাম্ভিকতাকে বারিয়ে দিয়েছিল । আর এই শক্তি এই দাম্ভিকতার বসেই তারা আল্লাহ্‌র রাসুল (সঃ) আর মুসলিমদের উৎপীড়ন নিপীড়ন করে মুসলিমদের মক্কা থেকে তারিয়ে দিয়েছিল। 

রাসুল (সঃ) সাহাবাদের বললেন "তোমরা বের হও আল্লাহ্‌ হয়ত এই মাল তোমাদের হস্তগত করে দেবেন । " কোন কোন সাহাবা বলবেন ,আমাদের সাওয়ারি তো মদিনার বাইরে গ্রাম এলাকায় । আমরা কিভাবে বের হবো? সেই সময় মদিনার বাইরে থেকে সাওয়ারি এনে এরপর আবু সুফিয়ানের কাফেলা আক্রমণের মত সময় ছিলো না। কাজেই রাসুল (সঃ) তাদের নিয়েই বের হলেই যাদের পক্ষে বের হওয়া সম্ভব । কিন্তু আবু সুফিয়ান অতান্ত বুদ্ধিমত্বার পরিচয় দিয়ে কাফেলা নিয়ে পালাতে সক্ষম হন । 

মক্কা,

আবু সুফিয়ানের পাঠানো দূত ইতিমধতে মক্কার এই খবর পৌছে দিয়েছে , যে মুহাম্মদের বাহিনী (সঃ) আবু সুফিয়ানের কাফেলায় আক্রমন করেছে । সে এমন ভাবে খবরটিকে বারিয়ে প্রচার করলো যে , কুরাইশদের মধ্যে হইচই পড়ে গেল । সে তার উঠের নাক কান কেটে ফেলল , উটের হাওদাটি উলটো করে বসল, নিজের পরিধেয় জামা ছিড়ে চিৎকার করে জানালো "হে কুরাইশ গোত্র ! বিপদ !বিপদ ভয়াবহ বিপদ , মোহাম্মদ আর তার সঙ্গীরা তোমাদের বানিজ্যিক কাফেলা পাকরাও করতে চায়!"

এই খরব শুনে মক্কার কুফফাররা জরুরি পরামর্শ সভার আয়োজন করল , এদিকে রাসূলুল্লাহর (সা.) ফুপু  আতিকার দেখা স্বপ্ন  আবু জাহলের কানে পৌছালো । তিনি দেখেছিলেন , 

যে একটা লোক উটে চড়ে দ্রুত মক্কার দিকে ধেয়ে আসছে এবং সে মক্কার অধিবাসীদেরকে চিৎকার করে ডাকছে। তার উট প্রথমে কাবাঘরের উপর, তারপর মক্কার এক পাহাড়ের চূড়ার উপর গিয়ে দাঁড়াল। তারপর সে কুরাইশদের সাবধান করে বলল, ‘তিনদিনের মধ্যে তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে!’ 

এ কথা বলে লোকটি একটি পাথর নিয়ে পাহাড়ের চূড়া থেকে ছুঁড়ে মারলো। পাথরটি মক্কার মাটিতে পড়ামাত্র বিস্ফোরিত হলো। মক্কার প্রতিটি ঘরে সেই বিস্ফোরণ থেকে ছিটকে আসা বস্তু এসে আঘাত হানলো।

এই স্বপ্নের কথা শুনে আবু জাহল চটে গেলো , সে ঔদ্ধন্তের সঙ্গে বলল , শোন আব্বাস! তোমাদের বংশের পুরুষরা তো নবুয়াতের দাবী করেছে , এখন কি মহিলারাও করতে শুরু করেছে?  আমরা তিনদিন অপেক্ষা করব , তিনদিনে যদি এই স্বপ্ন না ফলে তাহলে আমরা লিখে দেব তোমাদের পরিবারের চেয়ে মিথ্যাবাদি আর কেও নেই । 

আবু জাহল মুলত তার দাম্ভিকতা আর ঔদ্ধত্বের চরম সীমায় পৌছে গিয়েছিল । যে চাচ্ছিলো যেভাবেই  কুরাইশরা যেন  মুসলিমদের উপর আক্রমন করে । এমনি কি আবু সুফিয়ান যখন আরেক দুতের মাধ্যমে খবর পাঠালেন যে , কাফেলা এখন আশংখা মুক্ত । এরপরেও আবু জাহল দমল না সে ঘোষনা করল "লাতের কসম ! আমরা বদরের প্রান্তে উপস্থিত না হয়ে কিছুতেই ফিরব না। আমরা সেখানে মদ পান করব , উট জবাই করব , আমাদের নর্তকীরা সেখানে নাচবে । গোটা আরব আমাদের উল্লাস দেখবে । আমাদের এই দম্ভ কখনই শেষ হবে না।"

বদরের প্রান্ত, ১৭ই রামাদান, 

আব্দুর রহমান বিন আউফ (রাদি) এর কাছে এসে হঠাত এক তরুণ জিজ্ঞেস করল ,    হে চাচা! আবু জাহেল কোথায়? আমিও তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তার কাছে তোমার কি দরকার? সে উত্তর দিলঃ আমি শুনেছি, সে মহানবী (স) কে অনেক কষ্ট দিয়েছে। তাই আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, ‘আমি যদি তাকে দেখতে পাই, আমার ছায়া তাকে অতিক্রম করবে না, যতক্ষণ না আমি তাকে হত্যা করি কিংবা সে আমাকে হত্যা করে।’
তিনি বলেছেন, ‘আমি তার এ কথায় অভিভূত হয়ে গেলাম!’

কিছুক্ষণ পর আরেকজন তরুণ এসেই একই কথা জিজ্ঞেস করলো । 
তারপর আমি লক্ষ করলাম যে, ‘আবু জাহল সামান্য দূরে লোকজনদের মাঝে বিচরণ করছে। আমি তাদেরকে বললাম, ঐ হলো সেই ব্যক্তি যাকে তোমরা খুঁজছো।" 

যুদ্ধ তখন শেষ হয়েছে  রাসূলুল্লাহ (স) বললেন- “কে আছ এমন যে, দেখে আসবে আবু জাহলের অবস্থা কি হল।
আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ তখন সৈন্যদের মধ্যে অনুসন্ধান চালিয়ে আবু জাহেলকে খুঁজে পেলেন। 
আবু জাহল তখন মৃত প্রায় অবস্থায় ছিলো। এমতাবস্থায় আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ তার বুকের উপর উঠে বসলেন। আবু জাহল চোখ খুলে দেখলো আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ তার বুকের উপর। 
এতে আবু জাহল অপমানবোধ করে বললো, 'তুমি মক্কায় রাখাল ছিলে না?’
 ইবনে মাসউদ বললেন, ‘হে আল্লাহর দুশমন, আমি অবশ্যই মক্কাতে রাখাল ছিলাম। 
আবু জাহল বললো- হে উটপালক! তুমি অনেক বড় স্থানে চড়ে বসেছো। এত বড় সম্মানিত উচ্চাসনে এর আগে কেউ বসেনি। 
ইবনে মাসউদ বললেন, ‘আজকে কার দিন? আজকে কে বিজয়ী হয়েছে? আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল(স) বিজয়ী হয়েছেন।

Collected from Naseeha Facebook Group

1 Comments

Post a Comment

Previous Post Next Post