রাতের বিশেষ আমল : ১০০ আয়াত পাঠ করা



রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি রাতে ১০০ আয়াত তিলাওয়াত করবে, তাকে (আল্লাহর) আনুগত্যশীল বান্দাদের মাঝে লিপিবদ্ধ করা হবে।” [আলবানি, সিলসিলা সহিহাহ: ৬৪৩; আহমাদ, আল-মুসনাদ: ১৬৯৫৮; হাদিসটি সহিহ]

অর্থাৎ, সেই রাতে ইবাদত-বন্দেগি ও নফল নামাজ আদায়কারীদের মাঝে তাকেও গণ্য করা হবে।

রাতের বেলায় কুরআনের যেকোনো ১০০ আয়াত পড়লেই এই মর্যাদা পাওয়া যাবে। তথাপি, আমরা সহিহ হাদিস থেকে ফজিলতপূর্ণ ১০০ টি আয়াত বাছাই করেছি, যেগুলো রাতের বেলা পাঠ করার নির্দিষ্ট মর্যাদা রয়েছে। বাছাইকৃত এই ১০০ টি আয়াতকে ওযিফা হিসেবে নির্ধারণ করা যেতে পারে। তাহলে একই সাথে দুইভাবে লাভবান হওয়া যাবে, ইনশাআল্লাহ।

রাত শুরু হয় সূর্যাস্ত (মাগরিব) থেকে এবং ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত রাতের ব্যাপ্তি। সুতরাং মাগরিব থেকে ফজর পর্যন্ত সময়ের মাঝে ১০০ টি আয়াত পড়াই যথেষ্ট। ১০০ আয়াত একবারে পড়তে না পারলে কয়েকবারে পড়লেও চলবে। চলুন দেখে নিই।

❑ আয়াতুল কুরসি (বাকারার ২৫৫ নং আয়াত):
একবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের জাকাতের মাল-সম্পদ দেখাশুনার দায়িত্ব দেন আবু হুরায়রা (রা.)-কে। কিন্তু রাতের বেলা যাকাতের মাল থেকে এক ব্যক্তি চুরি করতে এসে পরপর তিনদিন ধরা খেয়ে যায়। তবে, বিভিন্ন কৌশলে ও মিথ্যা বলে সে বেঁচে যায়। সর্বশেষ দিন আবু হুরায়রা (রা.) তাকে রাসুলের কাছে নেওয়ার কথা বললে সে বলে, ‘তুমি আমাকে ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে এমন কতগুলো শব্দ শিখিয়ে দেবো, যার দ্বারা আল্লাহ তোমার উপকার করবেন।’ আমি বললাম, ‘সেগুলো কী?’ সে বললো, ‘যখন তুমি (ঘুমানোর জন্য) বিছানায় যাবে, তখন আয়াতুল কুরসি পাঠ করে ঘুমাবে। তাহলে তোমার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রক্ষক নিযুক্ত হবেন। সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান আসতে পারবে না।’ তখন আবু হুরায়রা (রা.) তাকে ছেড়ে দেন এবং এই ঘটনা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে জানান। তিনি এটি শুনে বললেন, ‘‘শোনো! সে নিজে ভীষণ মিথ্যাবাদী; কিন্তু তোমাকে সত্য কথা বলেছে। হে আবু হুরাইরা! তুমি কি জানো, তিন রাত ধরে তুমি কার সাথে কথা বলেছিলে?’’ আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, ‘জি না।’ তিনি বললেন, ‘‘সে ছিলো শয়তান!’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ২৩১১]

❑ সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত (সুরা বাকারাহ কুরআনের ২ নং সুরা):
রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি রাতের বেলা সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পাঠ করবে, সেটি তার জন্য যথেষ্ঠ হবে।” [বুখারি, আস-সহিহ: ৫০১০, মুসলিম, আস-সহিহ: ৮০৭]

❑ সুরা হাশরের শেষ ৩ আয়াত (৫৯ নং সুরা):
হাসান আল বাসরি (রাহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সকালে সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করবে, সে যদি সেদিন মৃত্যুবরণ করে, তবে তাকে শাহাদাতের (শহিদি মর্যাদার) সিল প্রদান করা হবে এবং সন্ধ্যায় তা পাঠ করলে, সে যদি সেই রাতে মৃত্যুবরণ করে, তবে তাকে শাহাদাতের সিল প্রদান করা হবে। [দারিমি, আস-সুনান: ৩৪৬২; হাসান আল বাসরি (রাহ.)-এর বক্তব্য হিসেবে এর সনদ সহিহ]

তাছাড়া, সুরা হাশর হলো মুসাব্বিহাত সুরাগুলোর একটি। আর মুসাব্বিহাত সুরাগুলো পাঠ না করে নবিজি ঘুমাতেন না।

❑ সুরা আস সফ (৬১ নং সুরা):
ইরবাদ্ব ইবনু সারিয়াহ্ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসাব্বিহাত সুরাগুলো পাঠ না করে ঘুমাতেন না। [তিরমিযি, আস-সুনান: ২৭১২; হাদিসটি সহিহ]

মুসাব্বিহাত সুরাগুলোর অন্যতম একটি হলো, সুরা আস সফ। অন্যগুলো হলো: সুরা হাশর, সুরা তাগাবুন, সুরা জুমু‘আহ ও সুরা হাদিদ।

❑ সুরা মুলক (৬৭ নং সুরা):
.
আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে ‘‘তাবারাকাল্লাযি বিয়াদিহিল মুলক’’ (অর্থাৎ সুরা মুলক) তিলাওয়াত করবে, আল্লাহ তাকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবেন।’ [আলবানি, সহিহুত তারগিব: ১৫৮৯; হাদিসটি হাসান]
.
❑ সুরা কাফিরুন (১০৯ নং সুরা):
সাহাবি নাওফাল (রা.) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিন, যা আমি বিছানায় এসে (ঘুমের পূর্বে) পাঠ করবো।’ তখন তিনি বললেন, ‘তুমি ‘‘ক্বুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন’’ পাঠ করবে এবং এটাকে শেষে পাঠ করে ঘুমাতে যাবে; কেননা এটা শির্ক থেকে মুক্তির ঘোষণা।’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ২৭০৯; আবু দাউদ, আস-সুনান: ৫০৫৫; হাদিসটি সহিহ]

❑ সুরা ইখলাস (১১২ নং) , সুরা ফালাক (১১৩ নং) ও সুরা নাস (১১৪ নং সুরা): [প্রতিটি সুরা ৩ বার করে]

আয়িশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রাতে ঘুমানোর সময় তাঁর দু’হাতের তালু জড়ো করে তাতে ফুঁ দিতেন এবং তাতে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পাঠ করতেন। এরপর দুই হাতের তালু দিয়ে দেহের যেখানে সম্ভব, সেখানে মুছে দিতেন। শুরু করতেন মাথার উপরিভাগ দিয়ে; এরপর চেহারা ও দেহের সামনের অংশ মুছতেন। এমনটি তিনি তিনবার করতেন।’ [বুখারি, আস-সহিহ: ৫০১৭]

সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাসের সর্বমোট আয়াত ১৫ টি। প্রতিটি সুরা ৩ বার করে পড়লে মোট আয়াত হয়ে যায় ১৫*৩=৪৫ টি।

এবার আমরা হিসাব করে নিই:

*সুরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত (০১)
*সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত (০২)
সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত (০৩)
সুরা আস সফ, মোট আয়াত (১৪)
*সুরা মুলক, মোট আয়াত (৩০)
*সুরা কাফিরুন, মোট আয়াত (০৬)
.
*সুরা ইখলাসে আয়াতসংখ্যা ৪; এটি ৩ বার পড়লে মোট আয়াত হয় (৪*৩=১২)
*সুরা ফালাক্বে আয়াতসংখ্যা ৫; এটি ৩ বার পড়লে মোট আয়াত হয় (৫*৩=১৫)
*সুরা নাসে আয়াতসংখ্যা ৬; এটি ৩ বার পড়লে মোট আয়াত হয় (৬*৩=১৮)
----------------------------------------------------
সর্বমোট আয়াত সংখ্যা = ১০১ টি

আবুল আহওয়াস (রাহ.) হতে বর্ণিত, প্রসিদ্ধ সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে ৫০ টি আয়াত পাঠ করবে, তাকে উদাসীনদের মাঝে লিপিবদ্ধ করা হবে না। আর, যে ব্যক্তি ১০০ আয়াত পাঠ করবে, তাকে আল্লাহর অনুগতদের মাঝে লিপিবদ্ধ করা হবে।’ [দারিমি, আস-সুনান: ৩৪৮৫; তাবারানি, মু‘জামুল কাবির: ১০১৩৫; এর সনদ মাওক্বুফ সহিহ]

১০০ আয়াত পাঠ করা যাদের জন্য কষ্টকর হবে, তারা ৫০ টি আয়াত অনায়াসে পড়তে পারেন। সেক্ষেত্রে (*) চিহ্ন দেওয়া সুরা ও আয়াতগুলো অগ্রাধিকার দিতে পারেন।

পোস্টটি শেয়ার করলে অনেক মানুষ উপকৃত হবে এবং শেয়ারকারী মানুষের আমলের নেকি পাবে (যারা তার শেয়ারের কারণে আমল করবে), ইনশাআল্লাহ।

[Tasbeeh]

1 Comments

Post a Comment

Previous Post Next Post