মা ছোট্ট একটি শব্দ। অথচ কত বিশাল তার মর্ম। এক পৃথিবীর সব সুখ আর ভালো লাগার এক স্নিগ্ধ অনুভূতি ধারণ করে আছে ছোট্ট এই শব্দটি। মা মানেই ভালোবাসার এক সুনির্মল ঠিকানা। মা মানেই এক আকাশ মায়া-মমতা। মা মানেই জীবনজুড়ে আনন্দের ফল্গুধারা বয়ে যাওয়া।
ইসলামে মায়ের মর্যাদা সত্যি অতুলনীয়। কোরআন মাজিদ ও হাদিস শরিফে ব্যাপকভাবে মায়ের মর্যাদার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। কোরআন মাজিদের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলার ইবাদতের নির্দেশনার পাশাপাশি মা-বাবার সঙ্গে উত্তম আচরণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন, তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত না করতে এবং মা-বাবার সঙ্গে উত্তম আচরণ করতে। তাঁদের একজন অথবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাঁদের উফ (বিরক্তি ও অবজ্ঞামূলক কথা) বলবে না এবং তাঁদের ধমক দেবে না, তাঁদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বলবে। মমতাবশে তাঁদের প্রতি নম্রতার ডানা প্রসারিত করো এবং বলো, হে আমার প্রতিপালক! তাঁদের প্রতি দয়া করো, যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে প্রতিপালন করেছেন।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৩-২৪)
সন্তান গর্ভধারণ ও জন্মদানে মায়ের যে সীমাহীন অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করতে হয়, সেদিকটা চিন্তা করে মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করে তাঁর সঙ্গে উত্তম আচরণ করা প্রতিটি সন্তানের অবশ্য কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে সেদিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আমি তো মানুষকে তার মা-বাবার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। জননী সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করে এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। সুতরাং আমার (আল্লাহর) প্রতি এবং তোমার মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই কাছে।’ (সুরা লুকমান, আয়াত : ১৪)
উল্লিখিত আয়াতসহ কোরআনের এতদসংশ্লিষ্ট আরো বহু আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায়, আল্লাহর পরেই মা-বাবার অধিকার। সেই অধিকার কিভাবে আদায় করতে হবে, সেটাও বলা হয়েছে। মা-বাবার অধিকার সম্পর্কে হাদিসে বহু জায়গায় বর্ণনা এসেছে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! কে আমার উত্তম আচরণ পাওয়ার বেশি হকদার? তিনি বলেন ‘তোমার মা।’ সে বলল, তারপর কে? তিনি বলেন, ‘তোমার মা।’ সে আবারও বলল, তারপর কে? তিনি বলেন, ‘তোমার মা।’ সে পুনরায় বলল, এরপর কে? তিনি বলেন, ‘তোমার বাবা।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯৭১)
মহানবী (সা.) আরো ইরশাদ করেন, ‘জান্নাত মায়ের পদতলে।’ (নাসায়ি, হাদিস : ৩১০৪)
মায়ের মর্যাদা এতটাই বেশি যে মহান আল্লাহ তাঁর নবীদেরও মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও অনুগত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ঈসা (আ.)-এর বক্তব্য তুলে ধরতে গিয়ে ইরশাদ করা হয়, ‘আর আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আমি যেন আমার মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহার করি (অনুগত ও বাধ্য থাকি); আমাকে করা হয়নি উদ্ধত অবাধ্য ও দুর্ভাগা হতভাগ্য।’ (সুরা মারিয়াম, আয়াত : ৩০-৩২)
বনি ইসরাঈলের নবী মুসা (আ.)-এর প্রতিও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আমি বনি ইসরাঈল থেকে এই অঙ্গীকার নিয়েছি যে তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত করবে না, মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৮৩)
তাই আসুন, ইসলাম প্রদত্ত মায়ের মর্যাদা প্রদানের মাধ্যমে ইহকালীন ও পরকালীন সফলতা অর্জনের পথে অগ্রগামী হই।
লেখাঃ আব্দুল্লাহ আলমামুন আশরাফী (আল্লাহ্ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)
Post a Comment