মহান আল্লাহ্ তাআলা কোথায় আছেন?

আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্। তিনিই আমাদের একমাত্র রর এবং ইলাহ্। ইবাদত আরাধনার একমাত্র তিনিই যোগ্য। সুতরাং তাঁর সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান থাকা আমাদের জন্য ওয়াজিব বা অবশ্য কর্তব্য। সেইসাথে তিনি কোথায় সে বিষয়ে সম্যক ধারণা অর্জনের মাধ্যমে আমরা তাঁর প্রতি একাগ্রচিত্তে ধাবিত হতে পারি এবং যথার্থরূপে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিখানো পদ্ধতীতে ইবাদত-বন্দেগি পালনে সক্ষম হই। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, আমরা যার আদেশ পালন করি, যার কাছে দু’আ করি, যার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি, সব সময় যাকে মনে করি সেই পরম সত্ত্বার আসল অবস্থান সম্পর্কে আমরা অধীকাংশ সাধারণ মানুষই জানি না। মহান আল্লাহ্ কোথায়?

সত্যি বলতে কি আমাদের স্কুল-কলেজেগুলোতেতো নয়ই এমনকি মাদ্রাসাগুলোতেও শিক্ষার্থীদের মহান আল্লাহ্ এবং তাঁর গুণাবলী তথা ইসলাম সম্পর্কে বিশুদ্ধ আক্বীদা'র শিক্ষা দেওয়া হয় না। অথচ একজন মুসলিম এর জন্য আল্লাহ্ ও তাঁর গুণাবলী সংক্রান্ত বিষয়ে কোরআন-সুন্নাহ্ এবং সালাফে সালেহীনের আক্বীদাহ্ ভিত্তিক বিশুদ্ধ ইসলামী আক্বীদা জানা'র গুরুত্ব অপরিসীম।

একজন মুসলমান’কে আল্লাহ্ ও তাঁর গুণাবলী সম্পর্কে সেই আক্বীদাই পোষন করতে হবে, যেই আক্বীদাহ্ পোষন করতেন স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম ও আয়েম্মায়ে মুজতাহেদীনগণ তথা সালাফে সালেহীন।


আর তা হল:
মহান আল্লাহ্ স্বয়ং তাঁর অবস্থান ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে পবিত্র কোরআন-এ যেসব বর্ণনা দিয়েছেন এবং সহীহ্ হাদীস দ্বারা যা প্রমাণীত বা বর্ণিত তা আমাদের নির্দিধায়, বিনা শর্তে, বিনা তর্কে, কোনোরূপ পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সৃষ্টির সাথে তুলনা ব্যতীত সেভাবেই বিশ্বাস করতে হবে বা মেনে নিতে হবে যেভাবে বর্ণিত বা প্রমাণীত। আর যে সম্পর্কে কোন বর্ণনা নেই সেই সম্পর্কে চুপ থাকা বা নীরবতা পালন করা। এতে বাড়াবাড়ি কিংবা অবিশ্বাস এ-দুয়ের কোন স্থান নেই।

মহান আল্লাহ্ কোথায় আছেন?
এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর হল:
“সমগ্র জাহানের প্রতিপালক ও সংরক্ষক মহান আল্লাহ্ সপ্তাকাশের উপর অবস্থিত- সুমহান আরশের উপর সমুন্নত”।
তাঁর ক্ষমতা অসীম ও সর্বব্যাপি, সর্বত্র বিরাজমান। তিনি সব কিছু দেখেন ও শোনেন। কোন কিছুই তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়। তিনি আরশ-এ আ’যীমে থেকেই সব কিছু সুচারুরূপে পরিচালিত করেন।

মহান আল্লাহ্ নিজেই বলেন:
الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى ﴿طه5﴾
“তিনি পরম দয়াময়, আরশে সমাসীন হয়েছেন”।
“The Most Beneficent (Allâh) Istawâ (rose over) the (Mighty) Throne (in a manner that suits His Majesty)”.
[সূরা তাহা, ২০: ৫ আয়াত]

আরশের উপরে থাকা আল্লাহ্ তাআলার একটি অন্যন্য সিফাত (গুন)। আল কোরআন ও সহিহ্ হাদীসে এ বিষয়ে স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে, যেমন বর্ণনা রয়েছে আল্লাহ তাআলার শ্রবন করা, দেখা, কথা বলা, তাঁর হাত, পা, পৃথিবী’র আকাশে অবতীর্ণ হওয়া এবং এ জাতীয় অন্যান্য সিফাত/গুন সমূহ সম্পর্কে। কিন্তু তার ধরণ আমাদের অজানা [In a manner that suits His Majesty].

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম ও আয়েম্মায়ে মুজতাহেদীনগণ তথা সালাফে সালেহীনের আকিদা এবং মুক্তিপ্রাপ্ত দল বা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত এ আকিদাই পোষণ করেন যে, আল্লাহ্ তাআলার সিফাতসমূহে (গুন সমূহ) কোনোরূপ পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সৃষ্টির সাথে তুলনা ব্যতীত সেভাবেই বিশ্বাস করতে হবে যেভাবে কোরআন ও সহীহ্ হাদীসে বর্ণিত আছে।
কারণ:-

আল্লাহ তাআলা তাঁর সম্পর্কে নিজেই বলেন:
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ ﴿الشوري11﴾
“তাঁর অনুরূপ কোন কিছুই নেই। তিনি সব দেখেন এবং শুনেন।”
“There is nothing like unto Him, and He is the All-Hearer, the All-Seer.”
[সূরা শুরা-৪২:১১]

ইমাম মালেক রহ. কে যখন [আর-রহমান, যিনি আরশের উপরে সমাসীন; (সূরা তাহা ২০:৫)] এ আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। উত্তরে তিনি বলেছিলেন: استواء তথা আরশের উপরে সমাসীন বিষয়টি জানা, কিন্তু তার ধরণ অজানা, আর এ বিষয়ের উপর ঈমান আনা ওয়াজিব, তবে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা বিদ্‌আত’।

এ জন্যই আল্লাহ তাআলার যে-সমস্ত সিফাত/গুন কোরআন ও সহিহ্ হাদীসে আছে, তার কোনটাকে অস্বীকার করলে, সে (ব্যক্তি) ঐ আয়াত বা হাদীসকে অস্বীকারকারী হবে। যেমন: আল্লাহ্’র আরশের উপরে সমুন্নত থাকা কিংবা তাঁর অন্য সিফাত/গুনসমূহ। কারণ, এ সিফাত/গুন হচ্ছে পূর্ণতার, সম্মানের ও সর্বশীর্ষতার। তা কোন ক্রমেই আল্লাহর ব্যাপারে অস্বীকার করা যায় না।

কিন্তু!
পরবর্তী জামানার কিছু ওলামা যারা দর্শনের (philosophy) দ্বারা প্রভাবিত, তারা পবিত্র কোরআন’র কিছু কিছু আয়াত ও মহান আল্লাহ্’র কিছু সিফাতকে তাবিল বা দূরব্যাখ্যা দিয়ে ভিন্ন অর্থে নিয়ে যান। এধরনের তাবিল/দূরব্যাখ্যা’র কারণে বহু লোকের আকিদা নষ্ট হয়ে যায়। তারা আল্লাহ তাআলার এই পূর্ণ সিফাতকে পর্যন্ত অস্বীকার করে বসে। তারা সালাফগণের পথের বিরোধিতা করে। কিন্তু মূলে সালাফগণের রাস্তাই হচ্ছে বিশ্বাসযোগ্য, জ্ঞাননির্ভর ও হিকমতপূর্ণ।

হতাশার কথা হল:
যুগে যুগে কিছু ভ্রান্ত ফেরকাদের দ্বারা, কিছু ভ্রান্ত আক্বীদায় বিশ্বাসী গুমরাহ্ পথব্রষ্ঠ ব্যক্তি এবং বর্তমান সময়ের অনেক বড় বড় নামধারী আলেম, কিছু ইসলামিক পত্রিকা, পীর তন্ত্রে বিশ্বাসী ভন্ড সুফীরা আল্লাহ্'র অবস্থান ও তাঁর গুণাবলী সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ কিছু বিভ্রান্তিকর অনৈসলামিক আক্বীদা প্রচার করতে থাকে বা করে আসছে যা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম ও আয়েম্মায়ে মুজতাহেদীনগণ তথা সালাফে সালেহীনের আক্বীদাহ্ বিরোধী কুফুরী বিশ্বাস। যেমন: ওয়াদাতুল ওজুত এ বিশ্বাস করা যে, মহান আল্লাহ্ নিরাকার, তাঁর কোন আকার নেই! তিনি পৃথিবীর সর্বত্র সবকিছুতে বিরাজমান![নাঊযুবিল্লাহ্]

প্রকৃত পক্ষে এসব কথার কোন দলীল মহান আল্লাহ্ পবিত্র কোরআন এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র সহীহ্ হাদীসের কোন স্থানেই পাওয়া যাবে না যে, আল্লাহ্ পাক নিরাকার, তাঁর কোন আকার আকৃতি নেই বা তিনি পৃথিবীর সকল স্থানে সকল বস্তুর মধ্যে বিরাজ করছেন। এটি একটি অনৈসলামিক, ভ্রান্ত কুফুরী আক্বীদাহ্। উল্লেখ্য মহান আল্লাহ্’র আকার জানা নেই এটা সহীহ্ আক্বীদাহ কিন্তু যদি কেউ বলে তিনি নিরাকার, সর্বত্র বিরাজমান তবে তা হবে কুরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী কুফুরী আক্বীদাহ।

কেননা এ কথার অর্থ দাঁড়ায়, ভাল-মন্দ সকল বস্তু এবং স্থানেই মহান আল্লাহ্’র অস্তিত্ব বিদ্যমান। মানুষ-জ্বিন, গরু-ছাগল, কুকুর-শুকর, মসজিদ-মন্দির, উপাসনালয়-বেশ্যালয় ইত্যাদি শব্দগুলো ‘সবকিছুর’ই অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ্ সর্বত্র-সব কিছুতেই বিরাজমান হলে সৃষ্টি এবং স্রষ্টা এক ও অভিন্ন, সৃষ্টির সাথে স্রষ্টা লিন হয়ে আছেন বা বিরাজ করছেন ইত্যাদি ভ্রান্ত আক্বীদাগুলোকে মেনে নিতে হবে। যা একজন মুসলিম-এর আক্বীদাহ হতে পারে না।

এই কথাগুলো ইসলামের স্বর্ণযুগের পরে (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-র সহীহ্ হাদীস দ্বারা নিন্দিত যুগ) পরবর্তীদের দ্বারা প্রচার ও প্রসার লাভ করতে থাকে। মূলত: তারা ইবনে আরাবী (যাকে কাফের ফতোয়া দিয়েছিল সে যুগের ওলামায়ে কেরাম), হুসাইন ইবন মনসূর হাল্লাজ [যে নিজেকে আল্লাহ্ পাকের রুবুবিয়াতের/উলুহ্যিয়াত/ইবাদতের অংশীদ্বার দাবী করেছিল ও বলেছিল: আনল হ্বক (আমিই আল্লাহ্) {নাঊযুবিল্লাহ্} যাকে সে যুগের (৪০৯ মতান্তরে ৩০৯ হিজরী সনে) সমস্ত ওলামায়ে কেরাম ঐক্য মতের ভিত্তিতে কাফের/মুরতাদ ফতোয়া দিয়ে হত্যা করেছিল এবং তার লাশ বাগদাদের সবচেয়ে বড় পোল এ ২ (দুই) সপ্তাহ পর্যন্ত টাঙ্গিয়ে/ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। শুধুমাত্র মানুষকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য যে, সে আল্লাহ্’র প্রতি দৃষ্টাতা প্রদর্শন করেছিল।]
প্রমুখ বেদ্বীন সূফীদের নিকট থেকে এইসব ভ্রান্ত মতবাদগুলো প্রচার পেতে থাকে।

ঐ সকল সূফীদের কথা হল:
“কুকুর-শুকর এগুলো মূলত: আমাদের উপাস্য, আর গির্জায় অবস্থানকারী পাদ্রী আমাদের প্রতিপালক ছাড়া আর কিছুই নয়”। [নাঊযুবিল্লাহ্]

আর ইবনে আরাবীর কথ হল:
“বান্দা হল রব আর রবই হল বান্দা, হায় আমি যদি জানতাম কে আদেশ প্রাপ্ত?” [নাঊযুবিল্লাহ্]

তাইতো আজকাল ভ্রান্ত মতবাদে বিশ্বাসী অনেকে প্রচার করে এবং বহু সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে থাকে যে,

“মোমিনের কলবই আল্লাহ্’র আরশ”। [নাঊযুবিল্লাহ্]

“যত কাল্লা তত আল্লাহ্”। কারণ সব কাল্লার মধ্যেই আল্লাহ্’র অস্তিত্ব বিদ্যমান! [নাঊযুবিল্লাহ্]

একজন হক্ব আলেমত দূরের কথা সুস্থ বিবেক সম্পন্ন সামান্য জ্ঞানের অধিকারী একজন সাধারণ মুসলিম ব্যক্তি কখনই উল্লেখিত আক্বীদাহ্ রাখতে পারেন না এবং বিশ্বাস করা যাবে না। কারণ নি:সন্দেহে এধরণের বিশ্বাস রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম ও আয়েম্মায়ে মুজতাহেদীনগণ তথা সালাফে সালেহীনের আক্বীদাহ্ বিরোধী কুফুরী বিশ্বাস।

ইমাম বুখারীর রহ. এর উস্তাদ নাইম ইবনে হাম্মাদ রহ. বলেছেন:
যে ব্যক্তি আল্লাহকে তাঁর সৃষ্টির সাথে তুলনা করল সে যেন কুফরী করল। আর আল্লাহ তাআলা নিজের সম্বন্ধে যা বলেছেন তা যে ব্যক্তি অস্বীকার করল সে যেন কুফরী করল। আর আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজের সম্বন্ধে কিংবা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সম্বন্ধে যা বলেছেন তাতে কোন তুলনা নেই। [শরহে আকিদাহ্ তাহাবিয়া]

কোরআন ও সহিহ হাদীসে আল্লাহ তাআলার যেসমস্ত সিফাতের কথা বলা হয়েছে তার উপর ঈমান আনা ওয়াজিব। তাঁর সিফাতসমূহের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করা অথবা তার কিছু সিফাতকে যেভাবে আছে সেভাবেই স্বীকার করা আর কিছুকে পরিবর্তন করে বিশ্বাস/স্বীকার করা কিছুতেই জায়েয হবে না।

যে ব্যক্তি জেনেশুনে বিশ্বাস করবে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা শ্রবনকারী ও দর্শনকারী এবং তার শ্রবন ও দর্শন যন্ত্র/চোখ আমাদেরই মত কিংবা আল্লাহ্ পাক নিরাকার, তাঁর কোন আকার নেই কিংবা তিনি তাঁর সকল সৃষ্টিতে-সর্বত্র বিরাজমান [নাঊযুবিল্লাহ্]!

তবে সে কোরআন ও সহীহ্ হাদীসের বিরুদ্ধে যাবে এবং সে কুফুরী করবে।

মূলত: তাঁর শ্রবণ ও দর্শন তাঁর মত। তার জন্য এটাও বিশ্বাস করা দরকার যে, আল্লাহ আসমানের উপর আছেন, তার সম্মান অনুযায়ী, তাঁর কোন সৃষ্টির সাদৃশ্য হয়ে নয়। কারণ এ সিফাতসমূহ আল্লাহ তাআলার পূর্ণতা প্রকাশ করে। যা আল্লাহ তাআলা স্বয়ং তাঁর কিতাবে স্পষ্ট করে ব্যক্ত করেছেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাদীসেও তা বিদৃত করেছেন। আর সত্যিকারের ফিতরতও তা স্বীকার করে, আর সত্যিকারের বুদ্ধি বিবেচনাও তা মেন নেয়।

আর কোরআন, সহীহ হাদীস, সৎ বুদ্ধি, সহীহ অনুভূতি সমস্ত কিছুই উপরোক্ত কথাকে সমর্থন করে।

এবার আসুন পবিত্র কোরআন ও সহীহ্ হাদীসের আলোকে দলীল ভিত্তিক আমরা জেনে নেই আল্লাহ্ কোথায়?

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন:

الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى ﴿طه5﴾

“তিনি পরম দয়াময়, আরশে সমাসীন হয়েছেন”।

“The Most Beneficent (Allâh) Istawâ (rose over) the (Mighty) Throne (in a manner that suits His Majesty)”.
[সূরা তাহা, ২০: ৫ আয়াত]

“নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্, যিনি আকাশ সমূহ এবং পৃথিবীকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অত:পর তিনি আরশে অধিষ্ঠিত হয়েছেন”।
“Indeed your Lord is Allâh, Who created the heavens and the earth in Six Days, and then He Istawâ (rose over) the Throne (really in a manner that suits His Majesty).”
[সূরা আরাফ-৭: ৫৪]
এ কথায় কোনই সন্দেহ নেই যে আল্লাহ্’র কুরসি সমস্ত আসমান ও যমীনকে কে পরিবেষ্টন করে আছে এবং আরশ আকাশেই রয়েছে, যমীনে নয়।

“তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান”।
“His Kursî extends over the heavens and the earth, and He feels no fatigue in guarding and preserving them. And He is the Most High, the Most Great.”
[আয়াতুল কুরসি ২:২৫৫]

أَأَمِنْتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ أَنْ يَخْسِفَ بِكُمُ الْأَرْض(الملك 16
“তোমরা তার থেকে নির্ভয় হয়ে গেলে যিনি আসমানে আছেন, আর তিনি তোমাদের সহকারে জমিনকে ধ্বসিয়ে দিবেন না?”।
Do you feel secure that He, Who is over the heaven (Allâh), will not cause the earth to sink with you, then behold it shakes (as in an earthquake)?
[সূরা মূলক ৬৭: ১৬ আয়াত]
ইবনে আব্বাস রা. এই আয়াতের তাফসীরে বলেন: তিনি হলেন আল্লাহ্। (তাফসীরে ইবনুল জাওযি)।

“না তোমরা নিশ্চিন্ত হয়ে গেছ যে, আকাশে যিনি আছেন, তিনি তোমাদের উপর প্রস্তর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, অতঃপর তোমরা জানতে পারবে কেমন ছিল আমার সতর্কবাণী”।
“Or do you feel secure that He, Who is over the heaven (Allâh), will not send against you a violent whirlwind? Then you shall know how (terrible) has been My Warning?”
[সূরা মূলক ৬৭: ১৭ আয়াত]

يَخَافُونَ رَبَّهُمْ مِنْ فَوْقِهِمْ(النحل50)
“তারা তাদের উপরস্থ রবকে ভয় করে”।
“They fear their Lord above them, and they do what they are commanded.”
[সূরা নাহল, ১৬: ৫০]

আল্লাহ তাআলা ইসা আ. সম্বন্ধে বলেন:
بَلْ رَفَعَهُ اللَّهُ إِلَيْهِ(النساء 158)
“বরং তাঁকে উঠিয়ে নিয়েছেন আল্লাহ তা’আলা নিজের কাছে। আর আল্লাহ হচ্ছেন মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”।
“But Allâh raised him [’Iesa (Jesus)] up (with his body and soul) unto Himself (and he is in the heavens). And Allâh is Ever AllPowerful, AllWise.”
[সূরা নিসা, ৪: ১৫৮]

তিনি আরও বলেন:

وَهُوَ اللَّهُ فِي السَّمَاوَاتِ(الأنعام3)
“আর তিনিই আল্লাহ যিনি আসমানে ও পৃথিবীতে আছেন, তিনি তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য বিষয় জানেন এবং তোমরা যা কর তাও অবগত”।
“And He is Allâh (to be worshipped Alone) in the heavens and on the earth, He knows what you conceal and what you reveal, and He knows what you earn (good or bad).”
[সূরা আনআম, ৬: ৩]

তাফসীরে ইবনে কাসীর রহ: বলেন: সব তাফসীরকারকগণ এ ব্যপারে একমত পোষণ করেন যে, জাহিল বা পথভ্রষ্ট ফিরকাদের মত আমরা বলতে পারি না যে, আল্লাহ সর্বত্র আছেন। আল্লাহ তাআলা তাদের এ জাতীয় কথা হতে পাক পবিত্র ও অনেক ঊর্ধ্বে।

যদি তা বলা হয় তাহলে অদ্বৈতবাদীদের অনুসরণ করা হবে যারা মনে করে: সৃষ্টিকর্তা তার সৃষ্টির সাথে মিশে আছেন, তাই যেকোন সৃষ্ট বস্তুর পূজা বা উপাসনা স্রষ্ট্রারই উপাসনা [নাঊযুবিল্লাহ্]। অদ্বৈতবাদীরা মনে করে যে ঈশ্বর সর্বত্রই বিরাজমান। কিন্তু তাওহীদবাদীরা মনে মরে অসীম ক্ষমতাধর আল্লাহ্ তা’আলা তার জ্ঞান, শ্রবণশক্তি বা দৃষ্টিশক্তির দ্বারা তার সৃষ্টের সাথেই রয়েছেন। যেমন: মূসা ও হারূর (আলাইহি সালাম) কে বলেছিলেন:
“আল্লাহ বললেনঃ তোমরা ভয় করো না, আমি তোমাদের সাথে আছি, আমি শুনি ও দেখি”।
“He (Allâh) said: ”Fear not, verily! I am with you both, hearing and seeing.”
[সূরা ত্বোয়া-হা: ২০:৪৬]
এই দেখা ও শুনা তাঁর শারিরিক অবস্থান নয় বরং তাঁর বিশেষ ক্ষমতার প্রতি ইঙ্গিত। বার বার আল্লাহ বলেন যে, তিনি আকাশে আছেন বা অনেক ঊর্ধ্বে অবস্থান করছেন।

আল্লাহ্ অন্য জায়গায় বলেন:
وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنْتُمْ(الحديد 4)
“তিনি তোমাদের সাথে আছেন তোম"রা যেখানেই থাক”।
“And He is with you (by His Knowledge) wheresoever you may be.”
[সূরা হাদীদ, ৫৭: ৪ আয়াত]।

অত্র আয়াতের ব্যখ্যা হল; নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা আমাদের সাথে আছেন দেখার দ্বারা, শ্রবনের দ্বারা, যা বর্ণিত আছে তফসীরে জালালাইন ও ইবনে কাসীরে। এই আয়াতের পূর্বের ও শেষের অংশ এ কথারই ব্যখ্যা প্রদান করে। [কখনওই আল্লাহ্ সোবহানওয়াতাআলার কথা স্ববিরোধী হতে পারেনা এবং মহান আল্লাহ্ ভূলে যান না!]

ইরশাদ হচ্ছে:
“তিনি নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল সৃষ্টি করেছেন ছয়দিনে, অতঃপর আরশের উপর সমাসীন হয়েছেন। তিনি জানেন যা ভূমিতে প্রবেশ করে ও যা ভূমি থেকে নির্গত হয় এবং যা আকাশ থেকে বর্ষিত হয় ও যা আকাশে উত্থিত হয়। তিনি তোমাদের সাথে আছেন তোমরা যেখানেই থাক। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন”।

“He it is Who created the heavens and the earth in six Days and then Istawâ (rose over) the Throne (in a manner that suits His Majesty). He knows what goes into the earth and what comes forth from it, what descends from the heaven and what ascends thereto. And He is with you (by His Knowledge) wheresoever you may be. And Allâh is the All-Seer of what you do.”

[সূরা হাদীদ, ৫৭: ৪ আয়াত]

অর্থাৎ তিনি আমাদের সবসময় নিরীক্ষণ করছেন, আমাদের সব কাজ তিনি নিজেই দেখছেন এবং শুনছেন কিন্তু এ দেখা ও শোনার শক্তির স্বরূপ তাঁরই অসীম ক্ষমতা ও পরমসত্ত্বার সাথেই সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাঁর আকার আকৃতি বা ধরণ কোন সৃষ্ট বস্তুর মতো নয়।
পবিত্র কোরআন এ আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের উপরে থাকার অসংখ্য দলীল রয়েছে। যা এখানে বিস্তারিত উল্লেখ করা সময় সাপেক্ষ।

ইসরা ও মি’রাজে- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সপ্তম আসমানের উপর উঠানো হয়েছিল, তাঁর রবের সাথে কথোপকথনের জন্য। আর সেখানেই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়েছিল। (বুখারী ও মুসলিম)।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
ألاَ تأمَنُونيِْْ وَأنا أمِينُ مَنْ فيِ السَّمَاء (وهو اللهُ) (ومعني في السَّماء: علي السَّمَاء) (متفق عليه)
তোমরা কি আমাকে আমিন (বিশ্বাসী) বলে স্বীকার কর না? আমি তো ঐ সত্ত্বার নিকট আমিন বলে পরিগণিত যিনি আসমানের উপর আছেন। [আর তিনি হলেন আল্লাহ] (বুখারী ও মুসলিম)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন:
ارْحَمُوا مَنْ فيِ الارضِ يَرْحَمكٌمْ مَنْ في السَّمَاء (أي هو الله) (الترمذي وقال حسن صحيح)
যারা জমিনে আছে তাদের প্রতি দয়া কর, তবেই যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। (তিরমিযী হাসান সহীহ)

অন্য হাদীসে এসেছে:
سأَلَ رَسُولُ الله صلي الله عليه وسلَّمَ جَارِيَةً فَقَالَ لَهَا: أيْنَ اللهَ؟ فَقَالَتْ في السَّماءِ قَالَ مَنْ أنا؟ قَالَتْ أنْتَ رَسٌولُ اللهِ قَالَ: أعْتِقْهَا فإنَّها مُؤْمِنَةً . (مسلم)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ক্রীতদাসীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন:
বলতো আল্লাহ কোথায়? সে বলল: আসমানে।
তারপর তিনি বললেন: বলতো আমি কে? সে বলল: আপনি আল্লাহর রাসূল।(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একে মুক্ত করে দাও, কারণ সে মুমিনা। [মুসলিম]
[“হাদীসটি মুসলিম শরীফে বর্ণিত মুআবীয়া বিন হাকাম আস্ সুলামী (রা:) এর দীর্ঘ হাদীসের অংশ বিশেষ। এটি আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন স্বীয় স্বত্বার উপরে হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট দলীল। কেননা (أيْنَ) শব্দটি দিয়ে কোন বস্তুর অবস্থান সম্পর্কেই জিজ্ঞাসা করা হয়ে থাকে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মহিলা ক্রীতদাসীকে আল্লাহ্ কোথায়? এ কথা জিজ্ঞাসা করলেন, তখন মহিলাটি বলল: তিনি আকাশে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এ কথাকে মেনে নিলেন এবং বললেন: এটাই ঈমানের পরিচয়। তাকে মুক্ত করে দাও। কারন সে ঈমানদার। সুতরাং যতক্ষণ কোন মানুষ আল্লাহ্’র উপরে হওয়ার বিশ্বাস না করবে এবং এ কথার ঘোষনা না দিবে ততক্ষণ সে ঈমানদার হতে পারবে না”। {ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম;১২২/১২৩-শাইখ মুহাম্মদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন(রহ:)}]

আবু বকর রা. বলেন:
ومَنْ كَانَ يَعْبُدُ اللهَ فإنَّ اللهَ فيِ السماء حَيٌّ لا يمُوتُ (رواه الدارمي في الرد غلي الجهمية باسناد صحيح)
যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করে (সে জেনে রাখুক) নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা আসমানের উপর চিরঞ্জীব, কখনোই মৃত্যুমুখে পতিত হবেন না। (সুনানে দারেমী সহীহ সনদ)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ.-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আমরা কিভাবে আমাদের রব সম্বন্ধে জানতে পারব? উত্তরে তিনি বলেছেন: তিনি আসমানে আরশের উপর আছেন, সৃষ্টি হতে আলাদা হয়ে। অর্থাৎ আল্লাহ পাকের জাত আরশের উপর আছেন, সৃষ্টি থেকে আলাদা হয়ে। তার এই উপরে থাকা সৃষ্টির সাথে কোন সামঞ্জস্য নেই।

প্রসিদ্ধ চার ইমামগণও এ ব্যাপারে একমত যে, তিনি আরশের উপর আছেন, তিনি তাঁর কোন সৃষ্টির সাথে তুলনীয় নন।

মুসল্লী সিজদায় বলেন: (আমরা মহান উঁচু রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি)। দোয়া করার সময় সে তার হস্তদয়কে আসমানের দিকে উত্তলন করে।

যখন বাচ্চাদের প্রশ্ন করা হয়, বলত আল্লাহ কেথায়? তখন তারা তাদের স্বভাবজাত প্রবৃত্তির বশে বলে: তিনি আসমানে।

সুস্থ বুদ্ধি, বিবেক, আল্লাহ যে আসমানে আছেন তা সমর্থন করে। যদি তিনি সর্বত্রই বিরাজমান হতেন তবে অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা জানতেন এবং সাহাবীদের শিক্ষা দিতেন। দুনিয়ার বুকে এমন অনেক নাপাক অপবিত্র জায়গা আছে যেখানে তাঁর থাকার প্রশ্নই উঠে না।
যদি বলা হয়,
আল্লাহ তাআলা তার জাত সহকারে আমাদের সাথে সর্বস্থানে আছেন, তবে তার জাতকে বিভক্ত করতে হয়। কারণ, সর্বত্র বলতে বহু জায়গা বুঝায়। এটাই ঠিক যে আল্লাহ তাআলার পবিত্র জাত এক ও অভিন্ন। তাকে কোন অবস্থাতেই বিভক্ত করা যায় না। তাই ঐ কথার কোন মূল্য নেই, যে তিনি সর্বত্র বিরাজমান। আর এটা প্রমাণিত যে, তিনি আসমানে আরশের উপর আছেন। তবে তিনি তাঁর শ্রবেনর, দেখার ও জ্ঞানের দ্বারা সকল বিষয় সম্পর্কে সম্যক অবহিত।

গত শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন আলেমেদ্বীন সৌদি আরবের “শাইখ মুহাম্মদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন(রহ:)” তাঁকে প্রশ্ন করা হয়:
সন্মানিত শায়খ!
আল্লাহ আপনাকে হেফাযত করুন! আপনি বলেছেন, আরশের উপরে আল্লাহর সমুন্নত হওয়া বিশেষ এক ধরণের সুমন্নত হওয়া, যা কেবলমাত্র আল্লাহর বড়ত্ব ও মর্যাদার শানে প্রযোজ্য। আমরা কথাটির বিস্তারিত ব্যাখা জানতে চাই।

উত্তরে তিনি বলেন: আমরা বলি যে, আরশের উপরে আল্লাহর সমুন্নত হওয়া একটি বিশেষ ধরণের সমুন্নত হওয়া। যা আল্লাহ্’র বড়ত্ব ও সম্মানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আল্লাহ্ সমস্ত মাখলুকের উপরে হওয়ার সাথে আরশের উপরে সমুন্নত হওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। এই জন্যই এ রকম বলা ঠিক হবে না যে, আল্লাহ্ মাখলুকাতের উপর সমুন্নত হলেন অথবা আকাশের উপরে কিংবা জমিনের উপরে। অথচ তিনি সকল বস্তুর উপরে। অন্যান্য মাখলুকাতের ক্ষেত্রে আমরা বলি আল্লাহ্ তাআলা আকাশ-জমিনসহ সকল মাখলুকের উপরে আছেন। আর আরশের ক্ষেত্রে বলব যে, আল্লাহ্ আরশের উপরে সমুন্নত (ستوى...)। সুতরাং ইসতিওয়া (সমুন্নত হওয়া) গুণটি সাধারণভাবে উপরে হওয়া থেকে ভিন্ন প্রকৃতির। এই জন্যই আরশের উপরে আল্লাহ্’র সমুন্নত হওয়া গুণটি আল্লাহ্’র ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত এবং তা আল্লাহ্’র সত্বার সাথে সম্পর্কিত গুণ, যা আল্লাহ্’র সত্বা হতে কখনো বিচ্ছিন্ন হওয়ার নয়। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ:) দুনিয়ার আকাশে আল্লাহ্’র অবতরণ সংক্রান্ত হাদীসে এরূপ ব্যাখ্যাই প্রদান করেছেন।
যদি বলা হয় আল্লাহ্ ছয়দিনে আকাশ-জমিন সৃষ্টি করার পর আরশের উপরে সমুন্নত হয়েছেন। তার পূর্বে তিনি আরশের উপরে ছিলেন না। ইসতিওয়া অর্থ বিশেষ এক ধরণের উপরে হওয়া। তাই কোন বস্তু অন্য বস্তুর উপরে সমুন্নত হওয়ার অর্থ বস্তুটি তার উপরে আছে। কিন্তু উপরে থাকলেই সমুন্নত হওয়া জরুরী নয়। এই জন্যই প্রতিটি উপরের বস্তুকে সমুন্নত বলা যায়না। তার বিপরীত প্রতিটি সমুন্নত বস্তুই অপর বস্তুর উপরে বিরাজমান।
আমাদের কথা, আল্লাহ্’র শানে যে ধরণের সমুন্নত হওয়া প্রযোজ্য তিনি সে রকমভাবেই আরশে আযীমে সমুন্নত-এর অর্থ এই যে, আরশের উপরে আল্লাহ্’র সমুন্নত হওয়া আল্লাহ্’র অন্যান্য সিফাতের মতই। আল্লাহ্’র যাবতীয় গুনাবলী আল্লাহ্’র ক্ষমতা ও বড়ত্ব অনযায়ী তাঁর সিফাতও অন্য কোন সিফাতের মত নয়।
আল্লাহ তাআলা তাঁর সম্পর্কে নিজেই বলেন:
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ ﴿الشوري11﴾
“তাঁর অনুরূপ কোন কিছুই নেই। তিনি সব দেখেন এবং শুনেন।”
“There is nothing like unto Him, and He is the All-Hearer, the All-Seer.”
[সূরা শুরা-৪২:১১]

আল্লাহ্’র সত্বার মত কোন সত্বা নেই এবং আল্লাহ্’র গুণাবলীর মত কোন গুণাবলীও নেই।
একজন বিদ্‌আতী লোক ইমাম মালেক (রহ:) কে জিজ্ঞাসা করল যে, আল্লাহ্ আরশের উপরে কি অবস্থায় সমুন্নত আছেন? উত্তরে মহামান্য ইমাম বললেন: ‘আরশের উপরে আল্লাহ্’র সমুন্নত হওয়া একটি জানা বিষয়। এর পদ্ধতি কেউ অবগত নয়। তার উপরে ঈমান আনয়ন করা ওয়াজিব। তবে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা বিদ্‌আত’। পরবর্তীতে বিদ্যানগণ সকল সিফাতের ক্ষেত্রে ইমাম মালেক (রহ:) এর এ উক্তিটিকে একটি মূলনীতি হিসাবে গ্রহণ করেছেন। [ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম; পৃষ্ঠা:১২৮-১২৯-শাইখ মুহাম্মদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন(রহ:)]

স্বরূপ: আল্লাহ্’ই ভাল জানেন।

[সংক্ষিপ্তভাবে সমাপ্ত]

মূল:
শাইখ মুহাম্মদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন(রহ:)
শাইখ মুহাম্মদ বিন জামীল যাইনূ
শাইখ আখতারুল আমান বিন আব্দুস সালাম
শাইখ আখতারুজ্জামান মুহাম্মদ সুলাইমান

Post a Comment

Previous Post Next Post