কুরবানী শুদ্ধ হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছেঃ-
১। কুরবানীর পশু যেন সেই শ্রেণী বা বয়সের হয় যে শ্রেণী ও বয়স শরীয়ত নির্ধারিত করেছে। আর নির্ধারিত শ্রেণীর পশু চারটি; উঁট, গরু, ভেঁড়া ও ছাগল। অধিকাংশ উলামাদের মতে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট কুরবানী হল উঁট, অতঃপর গরু, তারপর মেষ (ভেঁড়া), তারপর ছাগল। আবার নর মেষ মাদা মেষ অপেক্ষা উত্তম। যেহেতু এ প্রসঙ্গে দলীল বর্ণিত হয়েছে।[1]
একটি উঁট অথবা গরুতে সাত ব্যক্তি কুরবানীর জন্য শরীক হতে পারে।[2] অন্য এক বর্ণনামতে উঁট কুরবানীতেও দশ ব্যক্তি শরীক হতে পারে। ইমাম শওকানী বলেন, হজ্জের কুরবানীতে দশ এবং সাধারণ কুরবানীতে সাত ব্যক্তি শরীক হওয়াটাই সঠিক।[3]
কিন্তু মেষ বা ছাগে ভাগাভাগি বৈধ নয়। তবে তার সওয়াবে একাধিক ব্যক্তিকে শরীক করা যাবে। সুতরাং একটি পরিবারের তরফ থেকে মাত্র একটি মেষ বা ছাগ যথেষ্ট হবে। তাতে সেই পরিবারের লোক-সংখ্যা যতই হোক না কেন।
কিন্তু উঁট বা গরুর এক সপ্তাংশ একটি পরিবারের তরফ থেকে যথেষ্ট হবে কি? এ নিয়ে উলামাগণের মাঝে মতান্তর রয়েছে। কেউ বলেন, যথেষ্ট নয়। কারণ, তাতে ৭ জনের অধিক ব্যক্তির শরীক হওয়া বৈধ নয়। তা ছাড়া পরিবারের তরফ থেকে একটি পূর্ণ ‘দম’ (জান) যথেষ্ট হবে। আর ৭ ভাগের ১ ভাগ পূর্ণ দম নয়।[4]
অনেকের মতে একটি মেষ বা ছাগের মতই এক সপ্তাংশ উঁট বা গরু যথেষ্ট হবে।[5]
বলা বাহুল্য, একটি পরিবারের তরফ থেকে এক বা দুই ভাগ গরু কুরবানী দেওয়ার চাইতে ১টি ছাগল বা ভেঁড়া দেওয়াটাই অধিক উত্তম।
কুরবানীর সাথে একটি ভাগ আকীকার উদ্দেশ্যে দেওয়া যথেষ্ট নয়। যেমন যথেষ্ট নয় একটি পশু কুরবানী ও আকীকার নিয়তে যবেহ করা। কুরবানী ও আকীকার জন্য পৃথক পৃথক পশু হতে হবে। অবশ্য যদি কোন শিশুর আকীকার দিন কুরবানীর দিনেই পরে এবং আকীকা যবেহ করে, তাহলে আর কুরবানী না দিলেও চলে। যেমন, দুটি গোসলের কারণ উপস্থিত হলে একটি গোসল করলেই যথেষ্ট, জুমআর দিনে ঈদের নামায পড়লে আর জুমআহ না পড়লেও চলে, বিদায়ের সময় হজ্জের তওয়াফ করলে আর বিদায়ী তওয়াফ না করলেও চলে, যোহরের সময় মসজিদে প্রবেশ করে যোহরের সুন্নত পড়লে পৃথক করে আর তাহিয়্যাতুল মাসজিদ পড়তে হয় না এবং তামাত্তু হজ্জের কুরবানী দিলে আর পৃথকভাবে কুরবানী না দিলেও চলে।[6]
বয়সের দিক দিয়ে উঁটের পাঁচ বছর, গরুর দুই বছর এবং মেষ ও ছাগের এক বছর হওয়া জরুরী। অবশ্য অসুবিধার ক্ষেত্রে ছয় মাস বয়সী মেষ কুরবানী করা যায়। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘দাঁতালো ছাড়া যবেহ করো না। তবে তা দুর্লভ হলে ছয় মাসের মেষ যবেহ কর।’’[7]
কিন্তু উলামাগণ এ বিষয়ে একমত যে, ছ’মাস বয়সী মেষের কুরবানী সিদ্ধ হবে; তা ছাড়া অন্য পশু পাওয়া যাক অথবা না যাক। অধিকাংশ উলামাগণ ঐ হাদীসের আদেশকে ‘ইস্তিহবাব’ (উত্তম) বলে গ্রহণ করেছেন এবং বলেছেন যে, ঐ হাদীসের মর্মার্থ এ নয় যে, অন্য কুরবানীর পশু না পাওয়া গেলে তবেই ছ’মাস বয়সের মেষশাবকের কুরবানী বৈধ। যেহেতু এমন অন্যান্য দলীলও রয়েছে যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ঐ বয়সী মেষেরও কুরবানী বৈধ; প্রকাশতঃ যদিও কুরবানীদাতা অন্য দাঁতালো পশু পেয়েও থাকে। যেমন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘ছ’মাস বয়সী মেষশাবক উত্তম কুরবানী।’’[8]
উক্ববাহ বিন আমের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (একদা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর পশু বিতরণ করলেন। উকবার ভাগে পড়ল এক ছয় মাসের মেষ। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার ভাগে ছয় মাসের মেষ হল?’ প্রত্যুত্তরে তিনি বললেন, ‘‘এটা দিয়েই তুমি কুরবানী কর।’’[9]
২। পশু যেন নিম্নোক্ত ত্রুটিসমূহ থেকে মুক্ত হয়;
(ক) এক চোখে স্পষ্ট অন্ধত্ব। (খ) স্পষ্ট ব্যাধি। (গ) স্পষ্ট খঞ্জতা। (ঘ) অন্তিম বার্ধক্য। এ ব্যাপারে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘চার রকমের পশু কুরবানী বৈধ বা সিদ্ধ হবে না; (এক চক্ষে) স্পষ্ট অন্ধত্বে অন্ধ, স্পষ্ট রোগা, স্পষ্ট খঞ্জতায় খঞ্জ এবং দুরারোগ্য ভগ্নপদ।’’[10]
অতত্রব এই চারের কোন এক ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারা কুরবানী সিদ্ধ হয় না। ইবনে কুদামাহ বলেন, ‘এ বিষয়ে কোন মতভেদ আমরা জানি না।’[11]
ফুটনোটঃ[1] (আযওয়াউল বায়ান ৫/৬৩৪)
[2] (মুসলিম ১৩১৮নং)
[3] (নাইলুল আওত্বার ৮/১২৬)
[4] (ফাতাওয়া শায়খ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম ৬/১৪৯)
[5] (মাজালিসু আশরি যিলহাজ্জাহ, শুমাইমিরী, ২৬পৃঃ আল-মুমতে’ ইবনে উসাইমীন ৭/৪৬২-৪৬৩)
[6] (মানারুস সাবীল ১/২৮০)
[7] (মুসলিম ১৯৬৩নং)
[8] (মুসনাদে আহমাদ ২/৪৪৫, তিরমিযী)
[9] (বুখারী ২১৭৮, মুসলিম ১৯৬৫নং)
[10] (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ)
[11] (মুগনী ১৩/৩৬৯)
_____
কুরবানীর বিধান
কুরবানির বিধিবিধানের বিস্তারিত
আবদুল হামীদ ফাইযী
- হোম
- জীবনী
- _রাসূল (সা) এর জীবন থেকে
- _সাহাবীদের (রা) জীবন থেকে
- কুরআন ও হাদীস
- _বিষয়ভিত্তিক কুরআন
- _বিষয়ভিত্তিক হাদীস
- _নির্বাচিত ১০০ হাদীস
- _কিছু গুরুত্বপূর্ণ আয়াত
- গুরুত্বপূর্ণ আমল
- _দোয়া ও যিকির
- _কুরআন থেকে ৪০ টি দুআ
- _দৈনন্দিন জীবনে সুন্নাত
- ইসলামিক উক্তি
- _সেরা ১০০ টি ইসলামিক উক্তি
- _ড. বিলাল ফিলিপ্স এর উক্তি
- _মুসলিম মনীষীদের উক্তি
- বোনদের জন্য
- _পর্দা
- _মহিলাদের মজলিস
- _বিভিন্ন মাসায়েল
- ইসলামিক বই
- _ইসলামিক বই পরিচিতি
- _ইসলামিক বই ডাউনলোড
- _প্রিয় বইগুলো
- ইসলামিক প্রশ্নোত্তর
- _গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল
- _প্রশ্নোত্তরে ইসলাম
- বিবিধ বিষয়
- _ইমাম নববীর ৪০ হাদীস
- _ইসলামে সম্পত্তি বন্টণ
- _বাচ্চাদের ইসলামিক নাম
- _ইসলামিক পিকচার
0 মন্তব্য