ধারাবাহিক কুরআন ০৭


[১]
বানী ইসরাঈলের মধ্যে এক ধনী লোক ছিল, যার কোনো ছেলে মেয়ে ছিল না। তাই, তার সম্পদের উত্তরাধিকারী ছিল তার এক ভাতিজা। কিন্তু, সেই ভাতিজা তাড়াতাড়ি চাচার সম্পদ প্রাপ্তির আশায় চাচাকে হত্যা করে। (অন্য বর্ণনায়, ধনী লোকটির একজন মেয়ে ছিলো, সেই মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় ঐ ভাতিজা। তখন চাচা প্রস্তাব নাকচ করে। তারপর ভাতিজা তার চাচাকে হত্যা করে)
চাচাকে হত্যা করে রাতে লাশ গ্রামের অন্য জনের দরজার সামনে রেখে আসে। পরদিন সকালে ঐ ভাতিজা যে বাড়ীর দরজায় লাশ রেখে এসেছিল, সেই বাড়ীওয়ালার উপর হত্যার অপবাদ দেয়। অবশেষে, ঐ দুই দলের লোকদের মধ্যে মারামারি হওয়ার উপক্রম হলে তৃতীয় পক্ষের ক'জন জ্ঞানী লোক উভয় দলকে বলেন, “আল্লাহর রাসূল মূসা আঃ তোমাদের মাঝে বিদ্যমান থাকার পরও কেন তোমরা একে অপরকে হত্যা করবে?”

[২]
তখন তারা মূসা আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে ঘটনা বর্ণনা করলে তিনি তাদেরকে বলেন, “আল্লাহ তোমাদেরকে একটি গরু যবাহ্ করার নির্দেশ দিচ্ছেন।”
--“আপনি কি আমাদের সাথে উপহাস করছেন?”
--"আমি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।"

(শরীয়তের আদেশের বিষয়ে ঠাট্টা করা বোকামিই বটে। তখন যদি তারা যেকোনো একটি গরু জবাই করতো, তাহলেই যথেষ্ট হতো। কিন্তু, তারা কাঠিন্য অবলম্বন করে। ফলে আল্লাহ তাদের উপর কঠিন করে দেন) তারা জবাই না করার বাহানায় বলল,
--"তোমার রবকে বলো, গাভীটি কেমন হবে? তা যেন তিনি রব স্পষ্ট করে দেন।"
মুসা আঃ বলেন, আল্লাহ বলেছেন, "সেই গাভীটি হবে এমন গরু, যা বুড়ো নয় আবার বাচ্চাও নয়। মাঝামাঝি ধরনের।"
--"তোমার রবকে বলো, গাভীটির রং কেমন হবে? তা যেন তিনি রব স্পষ্ট করে দেন।" তারা বলল।
--রব বলেছেন, "তা হবে হলুদ রঙের গাভী। তার রঙ হবে উজ্জ্বল, দর্শকদেরকে যা আনন্দ দেবে।"
তারা আবার বলল, "তোমার রবকে জিজ্ঞেস কর, গাভীটির কি কি গুণ থাকতে হবে? আমরা এখনো সন্দেহের মধ্যে রয়েছি।"
তখন মুসা আঃ বললেন, "আল্লাহ বলেছেন, সেটি এমন গাভী, যা ব্যবহৃত হয়নি জমি চাষ করায় বা ক্ষেতে পানি দেওয়ায়। তবে, গরুটি সুস্থ হতে হবে, যার মধ্যে কোনো খুঁতও নেই।"

[৩]
তারপর ঐরকম সব গুন বিশিষ্ট গাভী মাত্র একটা পাওয়া যায়। কিন্তু গাভীর মালিক তাদের সমস্যার কথা শুনে অনেক মূল্য দাবী করে বসে। অবশেষে, তারা অনেক মূল্যের বিনিময়েই কিনতে বাধ্য হয়। তারপর গাভীটিকে জবাই করে এক খণ্ড গোসতো দিয়ে নিহত ব্যক্তির শরীরে আঘাত করা হলে সেই নিহত ধনী লোকটি তখন আল্লাহর হুকুমে জীবিত হয়ে ওঠে। লোকেরা তাকে প্রশ্ন করে, "তোমাকে হত্যা করেছিল কে?"
-“আমার এই ভাতিজা আমার সম্পদ হাতানোর জন্যে ও আমার মেয়েকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে আমাকে হত্যা করেছিল।" এটুকু বলার পর সেই লোকটি পুনরায় মরে যায়। তারপর জনগণ মৃত ব্যক্তির ভাতিজাকে ধরে কিসাস রূপে হত্যা করে দেয়। (তাফসীরে ইবনে কাসীর)

1 Comments

Post a Comment

Previous Post Next Post